আমাদের পূর্ব পুরুষদের শত্রু-মিত্র পর্ব ২০
লিখেছেন লিখেছেন আনিসুর রহমান ০৮ নভেম্বর, ২০১৬, ১০:২০:১২ সকাল
অতীতে অনেক ইসলাম প্রচারক বা দায়ী ইল্লেললাহ ইসলাম প্রচারের জন্য বাংলাতে এসে ছিল। তাদের অনেকেই তাদের সাহস, মানবিকতা জন্য, এই অঞ্চলের জনতার প্রতি তাদের দরদ ভালবাসা ও কল্যাণকর কাজ জন্য জন্য, সার্বপরি মানুষে মানুষে ভাদাভেদ বিহীন ইসলামের ভ্রাতৃীতের ও তৌহিদের বানী প্রচারের তাদের ত্যাগ তিতিখ্যা এবং কুরবানীর জন্য কিংব্দন্তি পুরুষে পরিণত হয়ে গিয়ে ছিলেন। এমন কী তাদের মৃত্যুর পরও, তারা যে আদর্শ রেখে গিয়ে ছিলেন, তা এই অঞ্চলে ইসলামের প্রসারে অনুঘটেকের ভুমিকা পালন করছিল। তাদের এই প্রভাবকে খর্ব করার জন্য ব্রাহ্মবাদীদের কাছে দুইটি পথ খোলা ছিল। একঃ এই সমস্ত কিংব্দন্তিতে পরিণত হয়ে যাওয়া নায়েবে রসূলদের দিরুদ্ধে কুৎসা প্রচার করা। কিন্তু তৎকালে কুৎসা প্রচার করা আজকের মত এত সহজসাধ্য বিষয় ছিল না। কেননা তৎকালে আজকের মত মিডিয়ার উপস্থিতি ছিল না। অনেক চেষ্টা ও অপেক্ষার পর, আমজনতার সাথে তখন(১৫-১৬ শতকে) যোগাযোগের এক মাত্র মাধ্যম ছিল তাদের নব আবিস্কৃত যোগাযোগ মিডিয়া এই মঙ্গল কাব্য (পাঞ্চিলি, এই নামা-সেই নামা, পুঁথি, নাটক, যাত্রা)। কিন্তু তখন বিপদের উপর আপদ ছিল, মুসলমানরা আপদ হয়ে শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত। সামগ্রিক বিচারে এই ধরনের কাজ ছিল মারাত্নক ধরনের বিপদজনক এবং তৎকালীন অর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে মোটেও বাস্তব সস্মত নয়। আর দ্বিতীয় যে পথটি খোলা ছিল তা হল বাজিগর বনে যাওয়া (“বাজিগর”-ইচ্ছাকৃত ভাবে পরাজিত হয়ে খেলা জিতা), তা শুধু বাস্তব সস্মতই ছিল না বরং তা ছিল একটি পরিক্ষিত এবং প্রমানিত পথ। অর্থাৎ এই সকল মহান ইসলাম প্রচারকদের প্রভাবকে খর্ব করার জন্য তাদেরকে মহান থেকে মহানতর রূপে চিত্রিত করা, মানুষের আসন থেকে অনেক উদ্ধে তুলে দেবতার আসনে বসানো; যে ভাবে সেন রাজাদের সভাকবি জয়দেব বৌদ্ধ ধর্মের প্রর্বতক সিদ্ধার্থ গৌতমাকে মানুষের আসন থেকে উদ্ধে তুলে ভগবানের আসনে বসিয়ে বৌদ্ধার অনুসারীদেরকে পুনরায় সনাতন ধর্মে ফিরিয়ে আনতে সমর্থ হয়ে ছিল। ঠিক একই ভাবে তারা, ইসলামের প্রসারে এই সকল কিংব্দন্তিতে পরিণত হওয়া নায়েবে রসূলদের প্রভাবকে খর্ব করার জন্য, তাদেরকে তারা মঙ্গল কাব্যের সাহায্য নিয়ে মানুষের আসন থেকে দেবতার আসনে (সত্য পীর, জিন্দা পীর, গাওস, কুতুব) বসায়। যার বিষাক্ত ফলাফল আজ আমরা আমাদের চারপাশে নজর বুলালেই বুঝতে পারব; আমরা দেখতে পাব যে যারা একদা ইসলামের তৌহিদের বানী প্রচারের জন্য তাদের জান মালকে কুরবানী করেছিল তারাই আজকে পরিণত হয়েছে শিরকের উৎসে!
উদাহরস্বরূপ পান্ডুয়ার বিখ্যাত ইসলাম প্রচারক শেখ জালাউদ্দিন তাঁবরাজির কথা বলা যায়। বাংলাতে একেবারে প্রথম দিকে যারা ইসলাম প্রচার করেতে এসে ছিল, এই শেখ তাদের মাঝে উল্লেখযোগ্য একজন। সে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্য নিয়ে পারস্য থেকে বাংলার পান্ডুয়াতে এসে তার প্রচার কেন্দ্র (খানকা) স্থাপন করেন। তিনি এই অঞ্চলে এসে ব্রাহ্মবাদীদের হাতে নির্যাতিত আমাদের পূর্ব পরুষদের দিকে তার সাহায্যের হাত প্রসস্ত করে দেন। তিনি একজন যোগ্য নায়েবে রসুলের ন্যায় কালেমার দাওয়াত পৌঁছানের সাথে সাথে নির্যাতিত জনতার প্রতি তার মানবিক সাহায্যের হাতকে বারিয়ে দেন। তাদের জন্য অনেক কিল্যানকর কাজ করেন। লঙ্গরখানা খোলেন। কুরআন সুন্নার আলোকে আলোকিত তার ব্যাক্তিতে আকৃষ্ট হয়ে দলে দলে লোক ইসলামের ছায়া তলে আশ্রয় নেয়। এই নায়েবে রসূল নবদীক্ষিত বিরাট সংখ্যক মুসলমানদের শিক্ষা জন্য পদক্ষেপ নেন। তিনি স্থানীয় মুসলিম শাসাকদের এই অঞ্চলে শাসনে সহযোগিতা করেন। এই মহান নায়েবে রসূল ১২৪৪ খ্রীঃ পান্ডুয়াতে মৃত্যু বরন করেন। মৃত্যুর পরও এই আঞ্চলে ইসলামের প্রসারে তার প্রভার সমভাবে জারী ছিল। ব্রাহ্মবাদীদের চক্রান্তের ফলে সেও সময়ের সাথে সাথে সত্য পীর হিসাবে পরিচিতি পায়। ফলে যে এক সময় ছিল তৌহীদের একনিষ্ঠ সমর্থক ও প্রচারক, আজকে সে পরিণত হয়েছে শিরকের উৎস রূপে।
চলবে----
বিষয়: বিবিধ
৯১৮ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভালো লাগলো / অনেক ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন