আমাদের পূর্ব পুরুষদের শত্রু-মিত্র পর্ব ১৬
লিখেছেন লিখেছেন আনিসুর রহমান ০৪ অক্টোবর, ২০১৬, ০১:৪৯:৫৬ দুপুর
সুফীইজমের বিকৃত রূপ পীর মতবাদে, হিন্দু মতবাদকে প্রবেশ করানোর জন্য পীর মঙ্গল গাঁথার (বা মঙ্গল কাব্য) ন্যায় “পীর সাহিত্য” কে, ব্রাহ্মবাদীরা ব্যাবহার করে অন্যতম একটি শক্তিশালী অস্ত্র হিসাবে। গিরিন্দানাথ দাস (১৯৯৮) তার, কালকাটা থেকে প্রকাশিত বই, “পীর সাহিত্য গাঁথাত” তে, “পীর সাহিত্য” কে সংজ্ঞায়িত করেন এই ভাবে। সুফীইজমের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠা পীরমতবাদের অনুসারী পীরদের জীবনী মূলক সাহিত্য যারা ইসলাম প্রচার করে থাকে (কোন ইসলাম??) । এই “পীর সাহিত্য” কে মঙ্গল কাব্য বা শিব/পয়মন্ত পীর সাহিত্যও বলা হয়ে থাকে কেননা (গুরুবাদী পীরমতবাদের অনুসারী) এই পীরদের হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে সকলেই ভক্তি, শ্রাদ্ধা ও পুজা করে থাকে। ইসলাম (কোন ইসলাম?) প্রচারক এই সকল পীরদের জীবন চরিতের উপর ভিত্তি করে রচিত উপন্যাস, কাহীনি, নাটক, পুথি, সবই “পীর সাহিত্য” বা মঙ্গল কাব্যের অন্তভুক্ত।
মুসলিম সেনাপতি ইখতিয়ার –উদ্দিন মোহাম্মদ বিন বখতীয়ার খলজী(১২০৪ খ্রীঃ) কতৃক বাংলার বুকে মুসলিম শাসনের সুচনা ঘটার প্রায় চারশত বছর পর অর্থাৎ ব্রাহ্মবাদীরা যখন কোন ভাবেই বাংলার বুকে ইসলামের অপ্রতিরোদ্ধ অগ্র যাত্রাকে রোধ করতে পারছিল না; তাদের সমস্ত কৌশল যখন ব্যার্থ হচ্ছিল। ঠিক সেই সময়টাতে ষোড়শ শতকের প্রথম দিকে “দিল ম্যে বহতাহে রাম রহিম-(বালাকনামা, নয়ন চাঁদ ফকীর) এই ছক একে বুদ্ধার অনুসারীদের ন্যায় মুসলমানদের মাঝেও বিভ্রান্ত সৃস্টি করতে সচেষ্ট হয়। যদিও তাদের এই মন মুগ্ধকর বুলী শুনে মনে হয় তারা তাদের সৃষ্ট ঘৃন বর্ণভেদ প্রথাকে ত্যাগ করেছে কিন্ত প্রকৃত ব্যাপার তা ছিল না এবং যা পড়ে ভারতের পরাজিত মুসলমানরা হাড়ে হাড়ে বুঝে ছিল। ব্রাহ্মবাদীদের এই কৌশল (“দিল ম্যে বহতাহে রাম রহিম-) অল্প সময়ের মাঝে সাফ্যলের মুখ দেখে। তাওহীদবাদী মুসলিমরা নিজেদের অজান্তেই এই ফাঁদে পা দেয় এবং অচিরেই ব্রাহ্মবাদীদের সৃস্ট পীরতন্ত্রে হাত ধরে মুসলিম সমাজের সর্ব ক্ষেত্রে শিরক অনুপ্রবেশ করে, মুসলিম সমাজ ডুবে মাঝে যায় শিরকের মাঝে। ফলে ভারতের তাওহীদ হারা মুসলমানদের পরাজিত হওয়া ছিল সময়ের ব্যাপার মাত্র। ব্রাহ্মবাদীরা “পীর সাহিত্য” প্রচার করার শুরু করে ষোড়শ শতকের প্রথম অর্ধে (১৫৪৫) এবং এর ফলে মাত্র ১১০-১২০ বছরের মাঝে বাংলার শিরর্ক পন্থী মুসলমানরা পলাশীর প্রান্তে ইংরেজদের কাছে পরাজিত হয়ে ক্ষমতা হাড়ায়। ক্ষমতা হারানো কোন বড় বিষয় নয় কেননা ক্ষমতা হাড়ালে ক্ষমতা ফিরে পাওয়া; কিন্ত ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার জন্য যে গুণাবলী দরকার তার দশ ভাগের এক ভাগও তখন মুসলমানদের মাঝে অবশিষ্ট ছিল না ব্রাহ্মবাদীদের এই চক্রান্তের ফলে। বস্তুত তাওহীদ হারা মুসলমানদের পরাজিত করার জন্য ইংরেজদের দরকার ছিল না, যদি কোন সাহসী বীর তাদের মধ্য থেকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে সেই সময়ে ঘুরে দাড়াত তবে তারা অতি সহজেই মুসলমানদের পরাজিত করতে পারত এবং তাদের হাড়ান ক্ষমতা ফিরে পেত। তারা যদি তখন ক্ষমতা ফিরে পেত তবে খুব সহজেই এই অঞ্চলের মুসলমানদের তাদের তাদের আদি ধর্মে অর্থৎ সনাতন ধর্মে ফিরিয়ে নিতে পারত। ব্রাহ্মবাদীদের জন্য আফসোস তারা সেই সময়ে সেই ধরনের নেতার জন্ম দিতে ব্যার্থ হয়েছে। ইংরেজদের ক্ষমতা গ্রহণ তৎকালে তাওহীদ হারা মুসলমানদের জন্য বড় ধরনের বিপর্যয় বয়ে নিয়ে আসলেও এবং ব্রাহ্মবাদীদের জন্য অনেক সযোগ সুভিদা বয়ে নিয়ে আসলেও, ফলাফল হিসাবে এটা বস্তুত মুসলমানদের জন্য কল্যাণ বয়ে নিয়ে এসে ছিল!! কেননা এই বিপর্যয়ের ফলে মুসলমানদের দৃষ্টি খুলে যায় এবং অনেক পথ পেরিয়ে আরাব তাওহীদের দিকে ফিরে আসে।
চলবে---
বিষয়: বিবিধ
৯৫৮ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ লিখা মাশাআল্লাহ।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন