আমাদের পূর্ব পুরুষদের শত্রু-মিত্র পর্ব ১৫

লিখেছেন লিখেছেন আনিসুর রহমান ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০১:০৮:২৫ দুপুর

আমরা আগেই উল্লেখ্য করেছি, ব্রাহ্মবাদীদের পক্ষে যত সহজে বুদ্ধার ধর্মের মাঝে পরিবর্তন এনে বুদ্ধার অনুসারীদেরকে পুঃনরায় সনাতন ধর্মে ফরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়ে ছিল, সেভাবে মুসলমানদের ক্ষেত্রে তা সম্ভব ছিল না, যার কারনগুল আমরা পুরবেই উল্লেখ করেছি। একই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে, বৌদ্ধ ধর্মের ন্যায় ইসলামের মাঝে পরিবর্তন আনয়নের জন্য তারা পীর বা পীরিজমকে ব্যাবহার করে। যদিও তারা এই পীর মতবাদকে “তাসাউফ” বা সুফী মতবাত বলে প্রচার করেছে বা করছে কিন্ত প্রকৃত সত্য হল এই পীর মতবাদ হল “তাসাউফ” এর বিকৃত রূপ। আধ্যাত্মিক সুফীইজম (আত্নিক উন্নয়নের মধ্যদিয়ে আল্লাহর সাথে সম্পক স্থাপন) এর সাথে গুরুবাদী পীর মতবাদের (গুরু বা পীরের মাধ্যমে দুনীয়াবী বালামুসিবত থেকে পরিত্রাণ পাওয়া এবং মৃত্যুর পর পীরের হাত ধরে জান্নাতে পৌছা!) পার্থক্য সুস্পষ্ট। বস্তুত “তাসাউফের” উদ্ভব আরব ভুমিতে হলেও তা যখন অনেক পথ ঘুরে ইরানে এসে পৌঁছে, তা তাসাউফের মুল দর্শন থেকে বিচ্যুত, হয়ে পীর বা পীরইজম নামে পরিচিত পায়। ইরান থেকে “তাসাউফের” এই বিকৃত রূপ যখন বাংলা তথা ভারত উপমহাদেশে এসে পৌঁছে, তা ব্রাহ্মবাদীদের চক্রান্তের ফলে ইসলামী তাওহদী আদর্শের বিপরীতে যেয়ে সনাতন ধর্মের ন্যায় একটি ‘শিরকি মতবাদ’ (পীরইজম) ইসলামের নামে ভারত উপমহাদেশে জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সমর্থ হয়। উল্লেখ্য পীর শব্দটি আরবী নয় ফার্সি, ইরানী শব্দ পীরপয়গাম্বর থেকে আগত। পীর অর্থ হল, বৃদ্ধ ব্যাক্তি বা গুরু।

কী ভাবে সুফীইজমের বিকৃত রূপ পীর মতবাদে, হিন্দু মতবাদকে প্রবেশ করানো হয় তার একটি সুন্দর চিত্র পাই আমরা ডা. আহামদ শরীফের, বই, বাংলার সুফী সাহিত্যতে। ডা. আহামদ শরীফের মতে, হিন্দু মতবাদগুল হুবহু পীর মতবাদে প্রবেশ করানো হয়, এই ক্ষেত্রে শুধু (মুসলিম সমাজে গ্রহণ যোগ্যতার জন্য ) নাম গুল পরিবর্তন করে ইসলামী করন করা হয়। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, “নির্বাণ” (রোগ, শোক, দুঃখ ভোগ থেকে মুক্তি লাভ) মতবাদটি ইসলামী করন করে বলা হয়, “ফানা” (সব কিছু থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহ তে বিলীন হওয়া), কুণ্ডলীনি শক্তি (হিন্দু দেবীদের শক্তি) ইসলামী করনের ফলে হয় “লতিফা(পদ্ম)”, ষড়পদ্ম নাম করন করা হয় ষড় লতিফা। এই পীর মতবাদে ছয় লতিফা গুলও এসেছে, হ্রদয় থেকে কলব, আত্মা থেকে রূহ ---।

পীর পুজা, কবর পুজা, পীরের জামা বা পাগড়ীর পুজা, পীরের কবরের স্থানে দরগা তৈরী করে তার পুজা ইত্যাদি মতবাদগুল হিন্দুইজম থেকে হুবুহু পীরইজমে প্রবেশ করানো হয়, শুধু মাত্র নামগুল পরিবর্তন করে ইসলামী করন করা হয়, মুসলিম সমাজে গ্রহণ যোগ্যতার জন্য।

সেই সময়ে পীরইজমের হাত ধরে মুসলিম সমাজে হিন্দু মতবাদ গুল প্রবেশ করানোর ও তার গ্রহণ যোগ্যতার জন্য যে ছক তৈরী করা হয় তার মধ্য অন্যতম হল, পীর মঙ্গল গাঁথা, পুঁথি, পীর সাহিত্য ইত্যাদি। যেমন, পীর মঙ্গল গাঁথার হাত ধরে মুসলিম সমাজে প্রবেশ করান হয়, কোন বন জঙ্গলে প্রবেশ করার আগে বনবিবি (ডা. আহামদ শরীফের মত অনুসারে, মুসলিমদের এই বনবিবি হল হিন্দু বন দেবীর মুসলিম নাম) ও গাজীবাবার কাছে নিরাপত্তার জন্য সাহায্য প্রার্থনা বা দোয়া করা। সমুদ্র বা বড় নদীতে ভ্রমণের সময়, নিরাপদ ভ্রমণের জন্য, পাচ পীরের নামে জয় ধ্বনি করা ও বদর বদর বলা। মহামারী বা মড়ক বা প্লেগের সময় মানিক পীর, সোনা পীর ও সত্য পীরদের শিরনি দেওয়া ও গান গেয়ে মহামারী বা মড়ক থেকে মুক্তির জন্য সাহায্য প্রার্থনা করা। গৃহ শান্তি ও সারা বছর বিপদ আপদ বালা মুছিবত থেকে বেচে থাকার জন্য নব বর্ষের সময়ে সত্য পীর ও মানিক পীরকে শিরনি দেওয়া ও তাদের পুজা করা। তৎকালে শুধু মাত্র এই পীর মঙ্গল গাঁথার মাধ্যমেই ব্রহ্মবাদীরা মুসলিম সমাজের একটি উল্লেখ্যযোগ্য সংখ্যক অংশকে হিন্দু শিরকী সংস্কৃতিকে মুসলিম ধর্মের অংশ বলে বিশ্বাস করাতে সমর্থ হয় এবং দুর্বল ভাবে হলেও যার রেশ এখনও বাংলাতে বর্তমান দেখা যায়। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে সুফী মতবাদের নামে প্রবেশ করানো পীর মতবাদ বা পীরতন্ত্র সম্পকে নুন্যতম ধারনা না থাকার ফলে, এই পীরতন্ত্রর বভিন্ন বিষয় নিয়ে মুসলমানদের অনেকেই খামখাই বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, কেউ কেউ এই বলে বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে যে, অমুক পীর বলেছে, সে তার মুরিতদের তার সাথে করে জান্নাতে নিয়ে যাবে! কিংবা পীর তার মুরিদকে বিপদ আপদ বালা মুসিবত থেকে রক্ষা করতে পারে। তাই সে একজন ভন্ড পীর ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্ত প্রকৃত সত্য হল, ব্রাহ্মবাদীদের কৌশলি চালে সৃষ্ট গুরুবাদী, পীর মতবাদ বা পীরতন্ত্রের মূলমন্ত্র –ই হল এই বিষয়গুল। যার উপর ভিত্তি করে পীরতন্ত্র দাঁড়িয়ে আছে। সে ক্ষত্রে ঐ পীর কীভাবে ভন্ড হয়!!! কেননা সে তো পীরতন্ত্রের কথাগুলই বলছে। বস্তুত ভন্ড পীর, শরীয়তী পীর ইত্যাদি বিষয়গুলও কৌশলে প্রবেশ করানো হয়েছে গুরুবাদী, পীর মতবাদ বা পীরতন্ত্রের গ্রহণ যোগ্যতার জন্য।

চলবে----

বিষয়: বিবিধ

১০৬৩ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

377990
২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ দুপুর ০৩:৪১
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : পীরতন্ত্র মুসলিম সমাজে একটি ক্যান্সারের মত। সামান্য ব্যতিক্রম ছাড়া বেশিরভাগ কওমী আলেম এ ক্যান্সারে আক্রান্ত।
২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ দুপুর ০১:৫২
313335
আনিসুর রহমান লিখেছেন : মোঃ ওহিদুল ইসলাম আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। কেন কওমী আলেমরা “পীরতন্ত্রের” বেড়াজালে আটকে গেছে এবং কারা জন্য দায়ী আমার মনে হয় তা বুঝা খুব একটা কঠিন কাজ নয়। তাই শুধু শুধু কওমী আলেমদের দোষারূপ না করে, এই চক্কর থেকে তাদেরকে বের হয়ে আসতে তাদেরকে আমাদের সাহায্য করা দরকার।
In one words thay(কওমী আলেম ) needs a qualified doctor for cure (i.e.পীরতন্ত্রের” )

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File