আমাদের পূর্ব পুরুষদের শত্রু-মিত্র পর্ব ১৪
লিখেছেন লিখেছেন আনিসুর রহমান ০১ আগস্ট, ২০১৬, ১০:১১:৩২ সকাল
সিরদ্ধার্থ গৌতমা বা বুদ্ধের প্রবতিত ধর্ম তার জন্মস্থান ভারত উপমহাদেশ থেকে ‘বিলুপ্ত হওয়া’ আজও ঐতিহাসিকদের কাছে বিস্ময়ের বিষয়। বিখ্যাত ঐতিহাসিক আর এস গোয়াল (R S Goyal) প্রায় বিশ বছর আগে এই সম্পকে লিখেছেন,"According to many scholars hostility of the Brahmanas was one of the major causes of the decline of Buddhism in India."
“আনেক বিসেষজ্ঞের মতে বুদ্ধার অনুসারীদের প্রতি ব্রামণদের শত্রুতা বৌদ্ধ ধর্মের (তার জন্মস্থান ভারত উপমহাদেশ থেকে) বিলুপ্ত হওয়ার প্রধান কারন।”
এই শত্রুতার অংশ হিসাবে ধীরে ধীরে বুদ্ধার প্রকৃত সংস্কার বা শিক্ষার মাঝে বিকৃত সাধন করা হয়। যেমন বুদ্ধা মানুষের “নির্বাণ” (দুঃখ-বেদনা, রোগ-শোক,মোহ প্রভুতি থেকে মুক্তি) জন্য ‘অস্টগুন’**** অবলম্বন করতে বলেছেন, যা ‘মধ্যপন্থা’ নামেও পরিচিত কিন্ত তিনি কখনই মুক্তির জন্য তাকে পুজা করতে বলেননি। কিন্তু পরবতিতে মানুষের মুক্তির(নির্বাণ) জন্য বুদ্ধার প্রকৃত সংস্কার বা শিক্ষার মাঝে বিকৃত সাধন করে ‘অস্টগুন’ এর পরিবর্তে বুদ্ধার পুজার প্রচলন করা হয়। বুদ্ধাকে বসানো হয় ভগবানের আসনে। বুদ্ধাকে মানুষ থেকে দেবতার আসনে বসাতে যে ব্যাক্তি সবচেয়ে উল্লেখ্য যোগ্য ভুমিকা পালন করেন তিনি হলেন বুদ্ধার অনুসারীদের প্রতি চরম বৈরী, সেন রাজাদের সভাকবি জয়দেব। এই জয়দেব তার লিখিত “ দশাআবতার স্তোত্র”(দশ জন আবতারের বন্দনা) তে সিরদ্ধার্থ গৌতমা বা বুদ্ধাকে হিন্দুদের দশতম আবতার বা হিন্দু ভগবান কৃষ্ণের মূর্তিগ্রহণ রূপে চিত্রিত করেন। যেমন ইসলাম ধর্মের ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাই, নায়েবে রসুল বা ইসলাম প্রচারকদেরকে হিন্দু দেবতাদের ন্যায় অতি মানবিক গুণাবলী দিয়ে পীর ফকীর হিসাবে চিত্রিত করনের বিভিন্ন ধরনের চেস্টা। এই ভাবে বুদ্ধার ধর্মের মাঝে ধাপে ধাপে পরিবর্তন আনয়ন করা হয়, ফলে এক পর্যায়ে এসে দেখা যায় যে, এক জন সাধারন বুদ্ধার অনুসারীর পক্ষে হিন্দু ধর্ম ও বৌদ্ধ ধর্মের মাঝে পার্থক্য টানা কঠিন হয়ে পরে, যা বৌদ্ধ ধর্মের বিলুপ্তিতে উল্লেখ্য যোগ্য ভুমিকা পালন করে।
এখানে প্রশ্ন হতে পারে, বুদ্ধার প্রকৃত অনুসারীরা কেন এই পরিবর্তনের বিরুদ্ধে কোন ভুমিকা রাখল না। তার উত্তরে বিশাল ব্যাখ্যা বিশ্লেষনে না যেয়ে বলবো, মুসলমানরা যেমন তৎকালে ক্ষমতায় থাকা সত্বেও যোগ্য নেতার অভাবে ‘সত্যপীর’(পরে বিস্তারিত বর্ণনা দিব) সহ বিভিন্ন ইসলামী আকীদা বিরোধী মতবাদ প্রবেশকে ঠেকিয়ে রাখতে পারেনি, সে ক্ষেত্রে ক্ষমতাহীন, যোগ্য নেতাহীণ বুদ্ধার অনুসারীদের পক্ষে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কীইবা করা সম্ভব ছিল।
যদিও আজকের ভারতীয় বুদ্ধার অনুসারীরা এই বিষয়ে অনেক সচেতন এবং তাদের এই সচেতনতার প্রমান পাওয়া যায়, ১৯৯৫ সালের ২৩ শে ফ্রেবরুয়ারী, তৎকালীন ভারতের প্রধান মন্ত্রী নরসিমারাও এর কাছে সর্ব ভারতীয় ভিক্ষুক সঙ্ঘ থেকে লেখা এক পত্রে। সর্ব ভারতীয় ভিক্ষুক সঙ্ঘের প্রসিডেন্ট, প্রধান মন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করে লিখেন যে, অভিনেতা অরুন গভিল, টিভি সিরিয়াল রমায়নের “রাম” চরিত্রে অভিনয় করেছে কিন্ত সেই অভিনেতা একই নামে টিভি সিরিয়ালে বুদ্ধার চরিত্রে অভিনয় করছে। পত্রে তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, বুদ্ধা হল ঐতিহাসিক ব্যাক্তিত্ব কিন্তু রামা এবং হনুমান হল পৌরানিক চরিত্র। অথচ আজকের বাংলাদেশের মুসলমানদের মাঝে ইসলামী আকীদা বিরোধী বিভিন্ন কৌশলী প্রচারনার বিরুদ্ধে ভারতীয় বুদ্ধার অনুসারীদের ন্যায় তেমন কোন সচেতনতা দেখা যাচ্ছে না। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, “ধর্ম যার যার উৎসব সবার” বর্তমানে ইসলামী আকীদা বিরোধী এরূপ একটি কৌশলী প্রচারনা চলছে বাংলাদেশে আথচ এই প্রচারনা বিষয়ে কারো কোন সচেতনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
চলবে......
----------- -------- ------- --------- ------
সিরদ্ধার্থ গৌতমা বা বুদ্ধার শিক্ষার সারকথা হল তার আবিস্কৃত চার সত্য। (১) দুঃখ ভোগ (২) দুঃখ ভোগের কারন (৩) দুঃখ ভোগের বিনাশ এবং (৪) দুঃখ ভোগ থেকে মুক্তি লাভের উপায় বা পথ।
এই দুঃখ ভোগ থেকে মুক্তি লাভের জন্য বুদ্ধা ‘অস্টগুন’ অবলম্বনের উপদেশ দেন। এই অস্টগুনগুল হ’ল ঃ
(১) সঠিক বুঝঃ বুদ্ধার আবিষ্কৃত চার সত্যকে সঠিক ভাবে বুঝা।
(২)সঠিক চিন্তা ঃ বুদ্ধার আবিষ্কৃত চার সত্যকে ধারন করে তার চর্চা বা অনুশীলন করা।
(৩) ন্যায় বা ভাল কথা বলাঃ মিথ্য কথা, গালিগালাজ করা সহ বাহুল্য কথা পরিত্যাগ করা।
(৪) সঠিক কাজ বা ব্যাবহারঃ অহিংসা, চুরি ডাকাতি, অবৈধ সেক্স ইত্যাদি কাজ থেকে বিরত থাকা
(৫) সকল জীবের প্রতি দয়া করাঃ কোন প্রাণীকে হত্যা না করা।
(৬) সঠিক চিন্তা ভাবনা করা বা নিজের মনকে অন্যায় থেকে বিরত রাখাঃ যেমন নিজের মনকে হিংসা বিদ্বেষ থেকে বিরত রাখা।
(৭) গভীর চিন্তা ভাবনা বা মনোযোগিতাঃ দৈহিক ও মানসিক সুস্থাতার উপর গুরুত্ব দিয়ে নির্বাণের বিষয়ে গভীর মনোনিবেশ।
(৮) সঠিক ভাবে ধ্যনে করাঃ ধ্যানের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌছা।
বিষয়: বিবিধ
১২৫২ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সিরদ্ধার্থ গৌতমা বা বুদ্ধের প্রবতিত ধর্ম তার জন্মস্থান ভারত উপমহাদেশ থেকে ‘বিলুপ্ত হওয়া’ আজও ঐতিহাসিকদের কাছে বিস্ময়ের বিষয়। বিখ্যাত ঐতিহাসিক আর এস গোয়াল (R S Goyal) প্রায় বিশ বছর আগে এই সম্পকে লিখেছেন,"According to many scholars hostility of the Brahmanas was one of the major causes of the decline of Buddhism in India."
Additional Information
Search Results
Image result for distribution of buddhism in the world
Buddhism is practiced by an estimated 488 million in the world, 495 million, or 535 million people as of the 2010s, representing 7% to 8% of the world's total population. China is the country with the largest population of Buddhists, approximately 244 million or 18.2% of its total population
মন্তব্য করতে লগইন করুন