আমাদের পূর্ব পুরুষদের শত্রু-মিত্র পর্ব ১৩
লিখেছেন লিখেছেন আনিসুর রহমান ২৯ জুলাই, ২০১৬, ১২:০৬:৪৭ দুপুর
রমাদানের পূর্বে আমরা আলোচনা করছিলাম বাংলাতে আগত ইসলাম প্রচারক বা দায়ী ইল্লেলল্লাহ- নায়েবে রসুলদের সম্পকে। সেখানে আমরা প্রমান করে দেখিয়ে ছিলাম যে বাংলা তথা ভারতীয় মুসলমানদেরকে, “ইসলাম বিরোধীরা” ঐ সকল মহান ইসলাম প্রচারক বা দায়ী ইল্লেলল্লাহ বা নায়েবে রসুলদের পরিচয়কে, ভারতীয় মুসলমানদের কাছে তুলে ধরার সময়, তাদের প্রকৃত পরিচয়কে গোপন করে ভুয়া পরিচয় অর্থাৎ পীর, ফকীর, দরবেশ, সূফী হিসাবে তাদের কাছে তুলে ধরেছে ফলে ভারতীয় মুসলমানরা ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের অবদান ও কুরবানীকে ভুলে গিয়ে তাদেরকে হিন্দু দেবতাদের ন্যায় অতি মানবিক ব্যাক্তি হিসাবে জানে বা বুঝে। অন্য দিকে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য তারা যে আদর্শ রেখে গিয়ে ছিলেন তার স্থান দখল করেছে, ভক্তিবাদ তথা করব মাজার পুজা।
কারা এবং কেন এই উপমহাদেশে আগত ইসলাম প্রচারকদের প্রকৃত পরিচয়কে গোপন করে এই ভুয়া পরিচয়কে তুলে ধরল তা বুঝতে আমাদেরকে অনেকটা সহায়তা করবে বুদ্ধার জন্মস্থান ভারত উপমহাদেশ থেকে তার প্রবতিত ধর্মের বিলুপ্তির কারনগুল অনুসন্ধান করলে।
পাল রাজাদের রাজত্বকালে বাংলাতে বুদ্ধার অনুসারীরা ছিল সংখ্যা গরিষ্ঠ কেননা পালরা ছিল বুদ্ধার অনুসারী। কিন্তু পালদের পতনের সাথে সাথে ব্রাম্যবাদের সমর্থক সেনরা ক্ষমতা নেওয়ার সাথে সাথে এই চিত্র পাল্টে যায়। সেনরা বুদ্ধার অনুসারীদের উপর নিপীড়ন নির্যাতন শুরুর সাথে সাথে বুদ্ধার অনুসারীর সংখ্যা ক্রমানয়ে হ্রাস পেতে থাকে। এই ক্ষেত্রে আমাদের মনে রাখতে হবে যে শুধু মাত্র বল প্রয়োগ বা নিপীড়ন নির্যাতনের দ্বারা কোন ধর্ম বা আদর্শকে শেষ বা বিলুপ্ত করে দেওয়া যায় না। ব্রাম্যবাদের সমর্থকরা এটা ভালভাবেই জানত যে, শুধু মাত্র নিপীড়ন নির্যাতনের দ্বারা তারা কখনও তাদের কাংখিত লক্ষ্য হাশিল করতে পারবে না। তাই তারা দীঘ মেয়াদী পরিকল্পনার দ্বারা বুদ্ধ ধর্মের মাঝে পরিবর্তন আনয়নে সচেষ্ট হয় এবং তারা তাদের এই পরিকল্পনাগুল সাফল্যের সাথে বাস্তবায়ন করার মধ্য দিয়ে বুদ্ধের জন্মস্থান ভারত থেকে বুদ্ধার প্রভার বিলুপ্ত করে ব্রামবাদের প্রভাব পুং প্রতিষ্ঠায় সমর্থ হয়। বস্তুত খান জাহান আলী, শাহ জালাল প্রমুখ ইসলাম প্রচারকদেরকে হিন্দু দেবতাদের ন্যায় অতি মানবিক সত্বা হিসাবে এঁকে তাদেরকে সুফী, পীর --- হিসাবে চিত্রিত করার পিছনে একই ধরনের পরিকল্পনা কাজ করেছে। বুদ্ধার প্রচারিত ধর্মের মাঝে বিকৃত সাধান করে তার ধর্মের অনুসারীদের পুনরায় হিন্দু ধর্মের মাঝে ফরিয়ে নিয়ে যেতে পারার কারন হল বূদ্ধ ধর্মের জন্মস্থান ভারত। কিন্তু ইসলাম ধর্মের ক্ষেত্রে তারা ব্যার্থ হয় কারন হল, ইসলামের জন্মস্থান ভারত নয়, তাই ভারতে বসে বুদ্ধ ধর্মের ন্যায়, আরবীতে লিখিত ইসলামের বিধি বিধানের মধ্যে সকলের কাছে গ্রহণ যোগ্য পরিবতন আনয়ন করা আকেবারেই অসম্ভব কাজ। এই অসম্ভব কাজে সকলের কাছে না হোক, একটা উল্লেখ্য যোগ্য সংখ্যক মুসলমানদের কাছে গ্রহণ যোগ্য করার একমাত্র পথ হল, অন্তর্জাতিক ভাবে মুসলমানদের মাঝে যে বিভিন্ন ফেরকা বা মতবাদের প্রকাশ ঘটে তাকে সাফল্যের সাথে ব্যাবহার করে এই পরিবর্তনের চেস্টা করা। বস্তুত এই ধরনের পরিকল্পনা অংশই হ’ল, খান জাহান আলী, শাহ জালাল প্রমুখ ইসলাম প্রচারকদেরকে হিন্দু দেবতাদের ন্যায় অতি মানবিক সত্বা হিসাবে এঁকে তাদেরকে সুফী, পীর, দরবেশ হিসাবে চিত্রিত করা।
চলবে ----
বিষয়: বিবিধ
১১৮৪ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন