আমাদের পূর্ব পুরুষদের শত্রু-মিত্র পর্ব ৯

লিখেছেন লিখেছেন আনিসুর রহমান ১৮ মে, ২০১৬, ১২:৫৪:৫০ দুপুর

বাংলাদেশে ইসলাম প্রচারের জন্য আগত এই সব মহান ব্যাক্তিরা, যারা আজ আমাদের কাছে সূফী, পীর, ফকীর, দরবেশ ইত্যাদি নামে পরিচিত, তাদের এদেশে আসার উদ্দশ্য ও মিশন কী ছিল? এই প্রশ্নটি আজকের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিলিয়ন ডলারের একটি প্রশ্ন। কেননা এর উত্তরের মাঝেই নিহিত রয়েছে বাংলাদেশের চলমান “ইসলামী অন্দোলন” (Islamic Movement) বেগবান করার সকল উপাদান। এই বিলিয়ন ডলারের প্রশ্নটির উত্তর বুঝতে হ’লে আগে আমাদেরকে বুঝতে হবে, ইসলাম প্রচারক, সূফী, দরবেশ, পীর, ফকির, আওলীয়া বলতে কী বুঝি এবং পূর্বের ইসলামী স্কলার বা শেখরা তাদের সম্পকে আমাদের কী উপদেশ দিয়ে গেছেন। এই বিষয় গুল সম্পকে একটি পরিষ্কার ধারনা থাকলে উত্তরটি বুঝা সহজ হবে ফলে ইসলাম বিরোধীরা তাদের সম্পকে যে ভ্রান্তির বেড়াজাল তৈরী করেছে তা ভেঙ্গে বের হয়ে আসাটা খুব কঠিন হবে না। বুঝার সুভিদার্থে নিন্মে এই বিষয়গুল নিয়ে একটি নাতি দীঘ আলোচনা করা হল।

ইসলাম প্রচারকঃ ইসলামে বহুল ব্যাবহিত ও পরিচিত একটি শব্দ হ’ল “দাওয়াত” বা দাওয়া। ‘দাওয়াত’ একটি ব্যাপক অর্থ বোধক শব্দ। ইসলামী পরিভাষায় দাওয়াত শব্দের অর্থ হ’ল, “ মানুষকে সকল প্রকারের দাসত্ব থেকে মুক্ত করে এক আল্লাহর দাসত্বের দিকে আহব্বান করা।“ ‘দাওয়া’ প্রদানকারী ব্যাক্তিকে বলে ‘দায়ী ইলাল্লাহ’ এবং ইসলাম প্রচারক বলতে আমরা তাদেরকেই বুঝে থাকি। অতীতে যত নবী রসুল আগমন করেছিল তারা সবাই ‘দায়ী ইলাল্লাহ’ দায়িত্ব পালন করেছেন। তারা সবাই শত বাধা বিঘ্ন, বিপদ আপদ বালা মুসিবত ও বৈরী পরিবেশকে ধৈর্যের সাথে মোকাবেলা করে মানুষকে গাইরুল্লাহর (শয়তানের) দাসত্ব অনুগত্য বর্জন করে এক আল্লাহর দাসত্ব অনুগত্য করার জন্য আহ্বান জানিয়ে ছিলেন। নবী করীম () শুধু নিজে ইসলাম প্রচার করেননি সাথে সাথে, তার অনুসারী সাহাবাদেরও বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠীয়ে ছিলেন ইসলাম প্রচারের জন্য যেমন মুসাইব ইবন উমাইরকে পাঠীয়ে ছিলেন মক্কা থেকে মদীনাতে ইসলাম প্রচারের জন্য ইসলাম প্রচারের একেবারে প্রথম দিকে। মুয়াদ ইবনে জাবালকে পাঠীয়ে ছিলেন ইয়েমেনে শাসন কার্য পরিচালনা করা ও ইসলাম প্রচারের জন্য। যেহেতু শেষ নবী মহাম্মদ () এর পর আর কোন নবী/রসুল আসবে না তাই তার অনুসারী মুসলমানদের উপর এই গুরু দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে। এ কারনে আমরা দেখি যে নবী করীম () তিরোধানের অব্যাহিত পর পর তার অনুসারীরা ভারত উপমহাদেশ সহ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে ইসলাম প্রচারের জন্য। কেননা এই কাজের উপর কুরআন ও সুন্নায় বিশেষ গুরুত্ব আরপ করা হয়েছে। যেমন

সূরা আল নূরে আল্লাহ বলেন

রসুলের দায়িত্ব তো কেবল সুস্পস্ট রূপে (দাওয়াত) পৌছে দেওয়া। (২৪ ঃ ৫৪)

তোমাদের মাঝে এমন একদল লোক থাকতে হবে যারা কল্যানের দিকে দিকে আহ্বান করবে, ন্যায় কাজের নির্দেশ দিবে এবং অন্যায় কাজে বাধা দিবে। (৩ঃ ১০৪ )

ঐ ব্যাক্তির চাইতে উত্তম কথা আর কার হতে পারে, যে আল্লাহের দিকে দাওয়াত দেয় এবং নিজে নেক আমল করে আর বলে, আমি এক জন মুসলিম। (হা মিম সিজদা ঃ ৩৩)

তবে এ ক্ষেত্রে আমাদের মনে রাখতে হবে যে, ইসলামে এই দাওয়াতী কাজ কোন নিদৃস্ট দল বা গ্রপের উপর সীমাবদ্ধ নয় বরং এই দায়িত্ব সকল বিশ্বাসীর উপর ন্যাস্ত কেননা নবী করীম () তার উম্মাকে উপদেশ দিয়ে গিয়েছেন, তোমার যদি শুধু কুরানের একটি মাত্র আয়াতও জান তা অপরের নিকট পৌছে দেও। এই জন্য আমরা দেখি যেখানে যেখানে আরবরা বানিজ্য করতে গিয়েছে সেখানেই তার ইসলামের দাওয়াত স্থানীয় লোকদের কাছে পৌছে দিয়েছে।

তাসাউফ বা সূফীইজমঃ ইসলামের অতীন্দ্রবাদ বা রহস্যবাদকে আরবীতে বলে “তাসাউফ” ( যা আক্ষরিক অর্থে ওলের পোশাক)। ইংরেজী ভাষায় তাদেরকে “সুফীইজম” উল্লেখ করা হয়েছে। বিখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া (রঃ) বলেন, তাসাউফ বা সুফীদের সর্ব প্রথম ইরাকের বসরা অঞ্চলে দেখা যায়। যারা দুনীয়ার জীবনের সকল মোহ ত্যাগ করে সংসার বিরাগী হয়ে ইসলামী বিধি বিধান পালনের ক্ষেত্রে কঠোরতা অবলম্বন করে ছিল, যা অন্য কথাও দেখা যায়নি। পরবতিতে দেখা যায় যে তাসাউফের অনুসারী অখ্যাত মুরব্বীরা এমন অনেক কিছু তাসাউফের অন্তভুক্ত করে নেয় যা ইসলামের সাথে সংঘষিক এবং যা তাদের অনুসারীরা বীনা প্রশ্নে মেনেও নেয়। যেমন নাজ, গান, এমন কী হ্যাসিস, গাঁজা সেবন।

অপর ইসলামী চিন্তাবিদ শেখ ইবন আল জাওজী (রঃ) তাসাউফের উপর “তালাবিস ইবলীস” নামক একটি বই লিখেছেন। সেখানে সে তাসাউফের অনুসারীদের ‘সূফী’ নামকরনের উৎপত্তি সম্পকে বলতে যেয়ে দুইটি কারন উল্লেখ করেন। তাসাউফের অনুসারী প্রথম ব্যাক্তি, যে তার জীবনকে উৎসরগ করেছিল ক্বাবার চারপাশে ইবাদত বন্দিগী করার মধ্য দিয়ে, তার নাম ছিল ‘সুফা’। ঐ ব্যাক্তির নাম অনুসারে পরবতিতে যারা তার পথকে অনুসরণ করেছে তাদেরকে বলা হয় সূফী। শেখ ইবন আল জাওজী সূফী নাম করনের কারন সম্পকে অন্য যে কারনটি তার বইতে উল্লেখ করেছেন তা হল, তাসাউফের অনুসারীরা ওলের পোশাক পরত। তৎকালে ওলের পোশাক ছিল দামে অনেক অনেক সস্তা, যা ছিল শরীরের চামড়ার জন্য অমসৃণ ও খসখসে এবং যা ছিল দুনীয়ার জীবনের প্রতি মোহ ত্যাগকারী, সংসারত্যাগী সাধু সন্নাসীদের পোশাক। ওলকে আরবীতে ‘সুফ’ বলা হয়, তা থেকে সূফী শব্দটি এসেছে।

আমরা যে ভাবেই দেখিনা কেন এই তাসাউফ বা সুফীইজমের কোন অস্থিত ছিল না নবী করীম জীবন দশায় কিংবা সাহাবা আকরামদের সময়ে। তাসাউফের আবির্ভাব ঘটে এর অনেক অনেক পরে, হিজরি ২০০ শতকে ( নবী করীম সাঃ মক্কা থেকে মদীনাতে হিজরতের দুই শত বছর পর)

তবে এ কথাও ঠিক যে নবী করীম () সময়েও এই ধরনের কিছু লোকদের দেখা আমরা পাই যারা দুনীয়ার জীবনের প্রতি মোহ ত্যাগ করে কঠোর ইবাদত বন্দিগী করার জন্য প্রতিজ্ঞা করেছিল। এ ধরনের একটি ঘটনার কথা আমরা দেখতে পাই, নবী করীম () এক হাদিস থেকে। এক দিন তিন জন লোক নবী করীম () বসায় এসে উম্মহাতু মুমেনিনদের কাছে জানতে চেয়ে ছিল নবী করীম() ইবাদত বন্দীগি সম্পকে। যখন তাদেরকে জানান হ’ল নবী করীম () এরকম এরকম ইবাদত বন্দীগি করে; তখন তারা তাদের ইবাদত বন্দীগিকে তুচ্ছ মনে করল। তারা নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করে বলল, আল্লাহ () নবী করীমের () আগের ও পিছের সকল গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন। তখন তাদের মধ্যে একজন বলল, “ আমি আমার সারা জীবন রাতভর ইবাদত বন্দীগি করে কাটিয়ে দিব, ঘুমাব না”। অপর আরেক জন বলল, “ আমি সারা বছর রোজা রেখে পার করে দিব, কখনও তা ভাঙব না”। তখন তৃতীয় ব্যাক্তি বলল, “ আমি মহিলাদের কাছ থেকে অনেক দূরে থাকব এবং কখনও বিয়ে করব না”। এ কথা নবী করীম () জানতে পেরে, তিনি ঐ তিন ব্যাক্তিকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমরা কী সেই লোক যে এরকম এরকম বলেছ”। জবাবে তারা ‘হ্যাঁ’ বললে তিনি বললেন, “যার হাতে আমার প্রান, সেই আল্লাহ্‌র শপথ, আমি তোমাদের চাইতে সবচেয়ে বেশী পরহেজগার ও খোদাভিরু ব্যাক্তি। তা সত্বেও আমি রোজা রাখি এবং রোজা ভেঙ্গে ফেলি, আমি ঘুমাই এবং মহিলাদের বিয়ে করি। যে আমার অনুসরণ করে না সে আমার দলের নয়। (সহি বুখারী, খন্ড ০০৭, বই ০৬২, হাদিস ০০৭)

চলবে -----

বিষয়: বিবিধ

১১৭৬ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

369677
২০ মে ২০১৬ রাত ১০:৫৫
সঠিক ইসলাম লিখেছেন : তাসাওউফ তত্ত্ব ও বিশ্লেষণ http://ia802705.us.archive.org/30/items/IslamiBoi/Tasauf_Theory__Analysis.pdf
369692
২১ মে ২০১৬ রাত ০৪:৩৪
আনিসুর রহমান লিখেছেন : Thanks for your informative Link about তাসাওউফ তত্ত্ব ও বিশ্লেষণ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File