আমাদের পূর্ব পুরুষদের শত্রু-মিত্র পর্ব ৮
লিখেছেন লিখেছেন আনিসুর রহমান ১৭ মে, ২০১৬, ০৪:৪৬:৫৩ রাত
ইসলাম প্রচারক ও যোদ্ধা খান জাহান আলী (রঃ): বাগেরহাট অঞ্চলের সুপ্রসিদ্ধ ইসলাম প্রচারক ও যোদ্ধা খান জাহান আলী, সে উলগা খান এবং খান ই আযম নামেও পরিচিত। তার নামের সাথে উলগা শব্দটি তার জন্মস্থান তুরস্ককে নির্দেশ করে। খান ই আযম উপাধিটি নির্দেশ করে, সে বাংলার সুলতান নাসিরদ্দিন মাহামুদ শাহর একজন প্রতিনিধি বা অফিসার ছিলেন। সে বাংলার সুলতানের কাছ থেকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যনগ্রোভ অঞ্চল, সুন্দরবন অঞ্চলকে জায়গীর হিসাবে পেয়েছিলেন। তিনি অক্লান্ত চেষ্টার দ্বারা গভীর বনাঞ্চলকে পরিষ্কার করে মানুষ বসবাসের উপযোগী করেছিলেন। তিনি অনেক রাস্ত ঘাট, পুল কালভাড নির্মাণ করেন। ইসলামী আরকিটেক্টের সুন্দর নির্দেশন হল তার নির্মিত বাগেরহাটের সাট্ট গম্বুজ মসজিদ যা এখন ইউনেস্ক ঘোষিত “ওয়াল্ড হেরিটেজ” (World heritage) এর অন্তগত। খান জাহানের নির্মিত বিল্ডিংগুল ইসলামী নির্মাণ শিল্পের এক বিস্মইয়কর উজ্জ্বল নির্দেশন হয়ে দড়িয়ে আছে। যোশহর, খুলনা এবং বরিশাল অঞ্চলে নির্মিত অনকে বিল্ডিং-এ, সে শৈল্পিক নির্দেশনার ছাপ দেখা যায়। এই অঞ্চলে খান জাহান আলীর (রঃ) ইসলাম প্রচারের ফলাফল স্বরূপ বৌদ্ধ ও হিন্দু ধর্মের অনুসারী মুসলমান হন। হযরত খান জাহান আলী (রঃ) শুধু তার অধিকৃত অঞ্চলে ইসলাম প্রচার করে ক্ষান্ত হননি বরং ইসলামী শাসন কায়েম করে ছিলেন। তার শাসিত অঞ্চলকে বলা হত খলিফাবাদ (বর্তমান বাগেরহাট)। এটা মনে করা হয় যে বিখ্যাত ইসলাম প্রচারক ও যোদ্ধা খান জাহান আলী মুসলিম বৈরী হিন্দু রাজাদের সাথে সংগ্রামে অবতীর্ণ হন। তিনি জেহাদের মাধ্যমে তাদের হাত থেকে যোশহর, খুলনা এবং বরিশাল অঞ্চলকে উদ্ধার করে মুসলমানদেরকে তাদের অত্যচারের হাত থেকে রক্ষা করেন এবং ইসলামী রাজ্যের সীমানা বর্ধিত করেন।
এই ধরনের রয়েছে আরও শত শত কাহিনী। বাংলার সাতগঞ্জ আঞ্চলে ইসলাম প্রচারক জাফর খান গাজী এবং শাহ সাইফদ্দিন ঐ অঞ্চলের বৈরী হিন্দু রাজার সাথে যুদ্ধ করে তার অত্যাচারের হাত থেকে ঐ অঞ্চলের লোকদের রক্ষা করেন এবং ইসলামী রাজ্যের সীমানা বর্ধিত করেন। আমাদের অতি পরিচিত বিখ্যাত ইসলাম প্রচারক শেখ জাল্লালুদ্দিন (শাহ জালাল) মুসলিম সেনাপতি সিকান্দর গাজীর সাথে কাথে কাথ রেখে সিলেটের মুসলিম বৈরী হিন্দু রাজা গৌরগবিন্দের সাথে জেহাদে অবতীর্ণ হন। তারা মুসলিম বৈরী হিন্দু রাজা গৌরগবিন্দকে পরাজিত করে তার হাত থেকে লোকদের রক্ষা করেন এবং ইসলামী রাজ্যের সীমানা বর্ধিত করেন।
ইসলাম প্রচারক শাহ ইসমাইল গাজী (১৪৭৪) পশ্চিম বাংলার মেন্দারন এবং পূর্ব বাংলার ঘোড়াঘাট মুসলিম বৈরী অত্যাচারী হিন্দু রাজাদের হাত থেকে উদ্ধার করে মুসলমানদেরকে তাদের অত্যচারের হাত থেকে রক্ষা করেন এবং ইসলামী রাজ্যের সীমানা বর্ধিত করেন। এমন কী বাংলার মুসলিম শাসকদের বিপদের সময়েও তা থেকে উদ্ধারের জন্য এই সকল মহান ইসলামের শান্তির বানীর প্রচারকরা অগ্রনী ভূমিকা পালন করেছেন। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় সুলতান গিয়াসুদ্দিন আযম শাহের মৃত্যুর পর রাজা গণেশ যখন বাংলার মসনদে বসে মুসলমানদের উপর জুলুম নির্যাতন শুরু করে দেয়, তখন জৌনপুরের বিখ্যাত ইসলাম প্রচারক নুরে কুতুবুল আলম তার হাত থেকে মুসলমানদের উদ্ধারের জন্য এগিয়ে আসেন।
এই পর্যন্ত আলোচনা থেকে পরিষ্কার ভাবেই বুঝা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে যারা ইসলাম প্রচারের জন্য এসেছিল তাদের অধিকাংশই সূফী বা দরবেশ ছিল না। এই সকাল মহান ইসলামের শান্তির বনীর প্রচারকরা আজ আমাদের মাঝে নেই কিন্ত রেখে গেছে তাদের সংগ্রাম ও ত্যাগের ইতিহাস, জীবন যাত্রা ও কাজের ধরন। আর তাদের এই রেখে যাওয়া জীবন যাপন এবং কাজের ধরনই আমাদেরকে জোড়াল ভাবে বলে দিচ্ছে যে তারা সূফী বা দরবেশ ছিলেন না।
চলবে ----
বিষয়: বিবিধ
১০৩৭ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন