আমাদের পূর্ব পুরুষদের শত্রু-মিত্র পর্ব ৭
লিখেছেন লিখেছেন আনিসুর রহমান ১২ মে, ২০১৬, ০৭:২৭:৪০ সকাল
আমরা আলোচনা করছিলাম আমাদের মহান পূর্ব পুরুষদের সংগ্রাম ও শত্রু মিত্র সম্পকে। আজকে যখন বাংলাদেশের সব চাইতে বিনয়ী ও মহৎ গুনের অধিকারী একজন নির-অপরাধ মহান নেতাকে বিভিন্ন তৈরী করা অভিযোগ এনে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে হত্যা করে হল, সেই সময়ে আমাদের মহান পূর্ব পুরুষদের জীবন সংগ্রাম ও শত্রু মিত্রদের সম্পকে জানা খুব জরুরী হয়ে পরেছে। আমাদের শুত্রু মিত্রদেরকে চিনহিত করার মধ্য দিয়ে এই অসহনীয় অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে পারব বলে মনে করি, ইনশাআল্লাহ্।
শহীদ মাখদুম শাহ দেওলাহ (রঃ) ঃ স্থানীয় লোকদের ঐতিয্য থেকে জানা যায় যে, এই মহান ইসলাম প্রচারকের উদ্ধতন পূর্ব পুরুয ছিলেন নবী করীম () বিখ্যাত সাহাবা মুযাজ ইবনে জাবাল (রাঃ)। শহীদ মাখদুম শাহ ইসলাম প্রচারের উদ্দশ্য নিয়ে ইয়েমেন থেকে থেকে যাত্রা শুরু করেন এবং চলতে চলতে ভারতের মুলতানে (বর্তমান পাকিস্তানের অংশ) এসে পৌছান। সেখানে সে মুলতানের বিখ্যাত ইসলাম প্রচারক জালালদ্দিননের(রাঃ) সাথে স্বাক্ষাৎ করেন এবং বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ আলোচনা করেন। জলালদ্দিন, শহীদ মাখদুম শাহ দেওলাহকে বাংলাতে যেয়ে ইসলাম প্রচারের জন্য উপদেশ দেয়। এখানে প্রশ্ন আসতে পারে জালালদ্দিননের (রাঃ) কীভাবে বাংলার অবস্থা সম্পকে জ্ঞাত হল? তার উত্তরন হল, বাংলার সাথে বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের মুসলমানদের বিভিন্ন ভাবে যোগাযোগ ছিল সেই পালদের শাসনের সময় থেকে, যেমন বাণিজ্যিক সম্পক যা আমরা পূর্বে ই বিস্তারিত আলোচনা করেছি। বস্তুত এই প্রশ্নের উত্তরটি জানা আমাদের জন্য বেশ গুরুত্ব বহন করে। কেননা স্থানীয় ঐতিয্য গুল, আমরা যদি ভালভাবে পরিক্ষা নিরীক্ষা করি তবে যেখব যে, বাংলার যে যে অঞ্চলে এই সকল মহান ইসলাম প্রচারকরা গিয়ে ছিল, তাদের সে অঞ্চলে আসার কারন সম্পকে সঠিক তথ্য স্থানীয় লোকেরা না জানার ফলে এবং স্থানীয় লোকেরা সে শূন্য স্থান পুরন করতে যেয়ে তৈরি করেছে বিভ্রান্তি। তাই আমরা দেখতে পাই, কোন নিদৃস্ট অঞ্চলের লোকদের মাঝে, জনৈক ইসলাম প্রচারকের ঐ আঞ্চলে আসার কারন সম্পকে প্রচলিত আছে বিভিন্ন আজগুবী কথা। স্থানীয় ঐতিয্যে গুল নিয়ে একটু ঘাটা ঘাটি করলেই এ সম্পকিত প্রচুর তথ্য পাব আমরা। যেমন, অমুক প্রচারকের আধ্যতিক গুরু বলেছেন, “আমি গায়বী এলহাম পেয়েছি তোমাকে বাংলার অমুক এলাকায় যাওয়ার জন্য, তাই আমি তোমাকে বাংলার অমুক এলাকায় যাওয়ার উপদেশ দিচ্ছি, কিংবা তমুক প্রচারক স্বয়ং স্বপ্ন দেখেছে বাংলার অমুক অঞ্চলে যাওয়ার জন্য কিংবা ঐ প্রচারকের গুরু গায়েবী ভাবে মাটি পেয়ে বলেছে, যাও এই মাটি সাথে করে নিয়ে যাও, চলার পথে যে স্থানের মাটি এই মাটির সাথে মিলবে, সেটাই হবে তোমার গন্তব্য স্থান, উল্লেখ্য বিখ্যত ইসলাম প্রচারক হযরত শাহ জালল (রঃ), বাংলার সিলেটে তার ইসলাম প্রচার কেন্দ্র (খানকা বা দরবার শরীফ) প্রতিষ্ঠা করার কারন সম্পকে এই ধরনের কথা প্রচলিত আছে। আবার তখনকার দিনে আজকের মত এত সহজ লভ্য যানবাহন ছিল না, তাদের এ দেশে আসার রুট সম্পকে স্থানীয় লোকদের কোন সঠিক জ্ঞান না থাকার ফলে, তার যে যানবাহন ব্যাবহার করে বাংলাতে এসেছে সে সম্পকে প্রচলিত আছে বিভিন্ন আজগুবী কথা, যেমন বগুরার মস্তানগরের বিখ্যাত ইসলাম প্রচারক শাহ সুলতান বাল্ক (মৎসসাওয়ার) সম্পকে প্রচলিত আছে তিনি মাছের পিঠে চড়ে এসে ছিলেন!! া বিষয়ে আলোচনা দীঘ না করে আমরা আমাদের মুল আলচনায় ফিরে আসি, শহীদ মাখদুম শাহ, মুলতানের বিখ্যাত ইসলাম প্রচারক জালালদ্দিননের (রাঃ) সাথে আলাপ আলোচনা করে বাংলাতে ইসলাম প্রচারের গুরুত্ব বুঝতে পারার পর তার ইসলাম প্রচারের গন্তব্য নির্ধারণ করেন বাংলাতে। সে বাংলাদেশের পাবনাতে এসে তার ইসলাম প্রচার কেন্দ্র (খানকা) প্রতিষ্ঠা করেন। সে তার কেন্দ্র থেকে ইসলামের শান্তির বানী প্রচার শুরু করলে স্থানীয় হিন্দু রাজার রোষানলে পতিত হন। ঐ হিন্দু রাজা শহীদ মাখদুম শাহ দেওলাহ ও তার অনুসারীদের উপর জুলম নির্যাতন চালন এবং মাখদুম শাহ দেওলাহ ও তার অনুসারীদের উপর আক্রমণ করে তাদের হত্যা করেন। পাবনার শাহজাদপুরে নবী করীম () বিখ্যাত সাহাবা মুযাজ ইবনে জাবালের বংশধর শহীদ মাখদুম শাহ দেওলাহ এবং তার অনুসারীদের কবর বিদ্যামান আছে। ইসলাম প্রচারের জন্য তার অবদান ও কুরবানীর কথা স্মরন করে প্রতি বছর তার ইসলাম প্রচার কেন্দ্রে (খানকাতে) হাজার হাজার লোক জমাযেত হয়।
শাহ সুলতান বাল্ক মৎসসওয়ারী (রঃ) ঃ তার নামের পাশে উপাধি হিসাবে লিখা হয় মৎসসাওয়ারী যার অর্থ হল মাছের পিঠে আরোহণ কারী, লোক মুখে মুখে এটা প্রচলিত আছে যে এই মহান ইসলাম প্রচারক মাছের পিঠে আরোহণ করে বাংলাতে এসে ছিলেন!!! অবশ্য আমি গুগল সার্চ ঘেঁটে দেখিছি যে অনেকেই এখন মাছের পিঠে চরে এ দেশে আসার কথা না বলে লিখে থাকেন “মাছের মত দেখতে নৌকায় চড়ে এদেশে এসেছেন। তিনি বালকের রজকুমার ছিলেন। তার শিক্ষক ছিল সিরিয়ার দামেস্ক নগরীর বিখ্যাত ইসলাম প্রচারক তাউফিক। সব দিক বিবেচনায় রেখে তার শিক্ষক তাকে বাংলাতে যেয়ে ইসলাম প্রচারের জন্য উপদেশ দেন। শাহ সুলতান মৎসসওয়ারী (বঃ) বাংলাতে এসে বগুরার মহাস্থানগড়ে তার ইসলাম প্রচার কেন্দ্র (খানকা) প্রতিষ্ঠা করেন। স্থানীয় লোকদের বিশ্বাস অনুসারে, সে মহাস্থানগড়ে তার ইসলাম প্রচার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করার পর মহাস্থানগড়ের অত্যাচারী হিন্দু রাজা পুশুরামের বৈরীতার মুখামুখী হন। রাজা পুশুরাম তার প্রচার কেন্দ্র (খানকা) অক্রমন করলে সে পুশুরামকে পরাজিত ও হত্যা করে অত্র অঞ্চলের লোকদেরকে পুশুরামের অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষা করেন এবং ইসলামী রাজ্যের সীমানা বর্ধিত করেন।
চলবে---------
বিষয়: বিবিধ
১২৪২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন