আমাদের পূর্ব পুরুষদের শত্রু-মিত্র পর্ব ৬
লিখেছেন লিখেছেন আনিসুর রহমান ০৭ মে, ২০১৬, ০৬:৪৪:২৪ সকাল
বখতীয়ার খলজীর বাংলা বিজয়ের পূর্বে অনেক ইসলাম প্রচারক বাংলার যমীনে এসে ছিলেন। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, বর্তমান বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে এসে ছিলেন শাহ নিয়ামততুল্ল্যাহ বুতাশিকেন,পশ্চিম বাংলার মঙ্গলকোটে ও বরধমানে এসে ছিলেন শাহ মহামুদ গজনবী তার ১৭ জন অনুসারী নিয়ে। এর থেকে প্রতীয়মান হয় যে বখতীয়ার খলজীর বাংলা বিজয়ের পূর্বে বাংলার বিশাল অঞ্চল ব্যাপিয়া ইসলাম প্রচারের নেটওয়াক ও প্রচার কেন্দ্র বিদ্যামান ছিল।
এই নেটওয়াক ও প্রচার কেন্দ্র (খানকা) ছিল চিটাগাং থেকে বগুরা, ঢাকা থেকে থেকে মাইমিনসিংহ, মাইমিনসিংহ থেকে রাজশাহী পর্যন্ত। এই ইসলাম প্রচারকরা যারা আমাদের সমাজে সূফী, পীর, আওলীয়া, দরবেশ নামে সমাধিক পরিচিত তারা সবাই সেমিটিক বা আরব ছিল না। তাদের কেউ কেউ তুরস্ক,পারস্য ও মধ্য এশিয়া থেকে এসেছিল। এই প্রচারকরা যখন ইসলাম প্রচারের মিশন নিয়ে বাংলাতে আসেন, তাদের অধিকাংশই তখন অবিবাহিত ছিলেন। পরবতিতে তারা স্থানীয় মেয়েদেরকে বিবাহ করে এই দেশকে আপন করে নেন।
এই মহান ইসলাম প্রচারকেরা বাংলার ইসলাম বৈরী সমাজে ইসলাম প্রচারের মিশন নিয়ে এসে যে বাধা বিঘ্ন ও সংগ্রামে নিয়োজিত হয়ে ছিলেন সে সম্পকে কোন ঐতিহাসিক দলিল দস্তাবেজ পাওয়া যায় না কিন্ত বংশ পরস্পরা লোকদের মুখে মুখে তাদের জীবন কাহীনি প্রচারিত হয়ে যা আমাদের কাছ এসে পৌছেছে তা থেকে তাদের এই আঞ্চলে আসার উদ্দেশ, কাজের ধরন, সংগ্রাম এবং কুরবানী ও অবদান সম্পকে একটি চিত্র পাওয়া যায় । নিন্মে এই ধরনে মাত্র কয়েকজনের শত্রু মিত্র ও জীবন সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরা হল এই সম্পকে চিন্তা ভাবনা ও গবেষণা করার জন্য।
বাবা আদম (রঃ) ঃ এই মহান ইসলাম প্রচারক ঢাকার অদূরে বিক্রমপুরে ইসলাম প্রচারের জন্য এসে ছিলেন। তিনি তার ইসলাম প্রচারের কেন্দ্র (খানকা) বানিয়ে ছিলেন মুন্সীগঞ্জ জেলার (রামপাল) কাছাকাছি আবদুল্লাহপুরে। বাবা আদম সুদূর সৌদি আরবের মক্কা থেকে ঢাকার অদূরে মুন্সীগঞ্জ জেলার (রামপাল) কাছাকাছি আবদুল্লাহপুরে আসার কারন সম্পকে স্থানীয় ঐতিয্য থেকে যা পাওয়া যায় তা হল, মুন্সীগঞ্জের (রামপাল) নিকটে কানাচেং নামক গ্রামের জনৈক ব্যাক্তি তার ছেলের আকীকা উপলক্ষে গরু জবেহ করলে এবং তা সেখানের স্থানীয় হিন্দু রাজা বল্লাল সেনের কর্ণ গোচর হলে সেখানে বসবাসরত মুসলমানরা রাজা বল্লাল সেনের রোষানলে পরেন এবং তার নির্যাতনের শিকার হন। তার এলাকা থেকে বিতাড়িত মুসলমানরা তখন এই বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য মক্কাতে যেয়ে বাবা আদমের সাথে দেখা করেন। এর থেকে বুঝা যায় যে, একজন দক্ষ যোদ্ধা ও ইসলাম প্রচারক হিসাবে নিশ্চয় তখন বাবা আদমের খ্যাতি ছিল অনেক, অন্যথায় তার কাছে সাহায্য সহযগিতা চাওয়া কোন অর্থ বহন করে না। তারা বাবা আদমকে সকল ঘটনা খুলে বলে তার সাহায্য সহযোগিতা কমনা করেন। এই বীর মুজাহিদ তখন কোন ধরনের দ্বিধা ছাড়াই তাদের সাহায্য করার জন্য তার হাত প্রসস্ত করে দেন। বাবা আদম তার সাথে ছয় থেকে সাত হাজার মুজাহিদ বাহীনি নিয়ে সুদূর মক্কা থেকে বাংলার বিক্রমপুরে এসে তার শিবির গড়েন এবং অন্যায়ের প্রতিকার করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেন।
হিন্দু রাজা বল্লাল সেন বাবা আদমের বিরুদ্ধে বার বার যুদ্ধ করেও পরাজিত হচ্ছিল। তখন এই মহান ইসলাম প্রচারক তার তরবারী বল্লাল সেনকে দিয়ে বলল, “তুমি একমাত্র এই তারবারীর সাহায্যে আমাকে হত্যা করতে পারবে”। এরপর যুদ্ধ হলে বাবা আদম শাহাদাত বরন করেন। কিন্ত এই যুদ্ধের ফলাফল বল্লাল সেনের জন্য কোন কল্যাণ বয়ে আনেনি। কেননা এর অল্পকাল পরে বল্লাল সেন ও তার পরিবার পরিজন আগুনে আত্নহুতি দিয়ে মৃত্যু বরন করে।
মুন্সীগঞ্জ জেলার (রামপাল) কাছাকাছি আবদুল্লাহপুর গ্রাম বাংলাদেশের অন্যান্য গ্রামের মত একটি সাধারন গ্রাম কিন্ত এখানে বাবা আদমের কবরটি এর গুরুত্ব অনেক গুন বাড়িয়ে দিয়েছে। জলাল উদ্দিন ফাতেহ শাহের শাসন আমলে (১৪৮৩) মালিক কাফুর নামক জলাল উদ্দিন ফাতেহ শাহের এক আফিসার বাবা আদমের কবরের পাশে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। অর্থাৎ বাবা আদমের কবরটি মসজিদটি থেকে আনেক অনেক পুরাতন। এই সম্পকিত বিস্তারিত তথ্য আমরা পাই মসজিদের গায়ে খোদাইকৃত মেমরেন্ডাম থেকে।
বল্লাল সেনের সাথে বাবা আদমের জেহাদের কাহিনী জনৈক আনন্দ ভাট লিখিত একটি বই “বল্লাল চরিত্র” তে পাওয়া যায়। অবশ্য অন্যন্য হিন্দুদের ন্যায় সেও হিন্দু রাজা বল্লাল সেনের গুন কিত্তন করেছে এবং বাবা আদমকে একজন অপরাধী হিসাবে তুলে ধরেছেন। বাবা আদমের পাচ হাজার মুজাহিদ বাহিনীরর নেতৃত্র দেওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে তার বইতে। অবশ্য বল্লাল সেনের শেষ পরিনীতি বা ভাগ্য সম্পকে স্থানীয় ঐতিয্য যা বলে, তিনি তার বইতে তাই উল্লেখ করেছন। কিন্ত আনন্দ ভাট তার বইতে এ ঘটনার সময় কাল সম্পকে কিছু উল্লেখ করেননি।
চলবে ------------
বিষয়: বিবিধ
১১৮৪ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন