আমাদের পূর্ব পুরুষদের শত্রু-মিত্র পর্ব ৪
লিখেছেন লিখেছেন আনিসুর রহমান ০২ মে, ২০১৬, ০৬:০৮:৪৫ সন্ধ্যা
ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজীর বাংলা বিজয়ের উপর একটি সুন্দর বর্ণনা পাওয়া যায় বিখ্যাত মুসলিম ঐতিহাসিক মিনহাজ ই সিরাজীর “তাবাকাত ই নাসিরী” তে। তিনি বর্ণনা করেন, ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজী যে সময়ে বিহার জয় করেন সে সময়ে বাংলার শাসক ছিল লক্ষণ সেন। তিনি তখন গঙ্গা তীরের পুন্য ভুমি নদীয়া থেকে শাসন কার্য পরিচালনা করতে ছিলেন। তার দরবারের জ্ঞানী ব্রামন পণ্ডিতরা তাকে জানায় যে, তাদের পুরাতন শাস্ত্রে আছে যে, তার এই রাজ্য টার্কদের (তুরস্ক) দ্বারা বিজিত হবে। এমনকি তারা লক্ষণ সেনকে নদীয়া ছেরে নিরাপদ স্থানে চলে যেতেও পরামর্শ দেয়। রাজার এক প্রশ্নের উত্তরে তারা জানায় যে, তাদের শাস্ত্রে এই আক্রমণ কারীর দৈহিক আকার আকৃতি সম্পকেও বর্ণনা আছে। তারা জানায় যে সেই ব্যাক্তি হবে এরকম “যখন ঐ ব্যাক্তি তার দুই পায়ের উপর ভর করে সোজা হয়ে দাড়াবে এবং তার দুই হাতকে নীচের দিকে মুক্ত করে দিবে, তখন তার দুই হাত যেয়ে পৌছবে তার দুই হাটুর নীচে। ঐ ব্যাক্তির হাতের আংগুল পায়ের গুলকে স্পশ করবে”। লক্ষণ সেন তার লোক লস্কর পাঠিয়ে মুসলিম সেনাপতি ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজীর দৈহিক গঠন সম্পকে খোঁজ নিয়ে দেখতে পান যে তা, তার দরবারের জ্ঞানী ব্রামনদের বর্ণনার সাথে হুবহু এক। এই খবর দরবারে পৌছলে ত্রাসের সৃষ্টি হয় কিন্তু জ্ঞানী ব্রামন পণ্ডিতদের উপদেশ সত্বেও লক্ষণ সেন নদীয়া ত্যাগ করতে রাজী হয়নি। এই ঘটনার অল্প কিছুকাল পর মুসলিম সেনাপতি ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজী নদীয়া আক্রমণ করে। বখতিয়ার খলজী দ্রুত ঘোড়া হাকিয়ে যখন রাজ দরবারে পৌছে তখন তাকে অনুসরণ করতে পেরে ছিল মাত্র তার আঠারো জন সৈন্য। সেই সময়ে লক্ষণ সেন তার দুপুরের খাবার গ্রহণের জন্য মাত্র খাবার টেবিলে বসেছেন। সে বাহিরে শোর-গোলের শব্দ শুনে প্রকৃত ঘটনা বুঝে, দুপরের খাবার ফেলে রেখে, কোন ধরনের প্রতিরোধের চেস্টা না করে, পিছনের দরজা দিয়ে নৌকা যোগে ঢাকার বিক্রমপুরে পালিয়ে যায়। এই ভাবে নদীয়া কোন ধরনের প্রতিরোধ ছাড়াই মুসলমানদের অধীকারে চলে আসে। অতপর বখতিয়ার খলজী লাখুন্তী (গৌড়) চলে যায় এবং গৌড়কে তার রাজ্যের রাজধানী ঘোষণা করে।
ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজী এবং তার সাথে আগত সৈনিকেরা তাদের পরিবার পরিজনকে সঙ্গে করে বাংলাতে এসে ছিল। বিজয়ের পর বাংলাকে তারা তদের বসবাসের স্থান হিসাবে বেছে নিয়ে ছিল। ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজী বাংলাতে বহু মসজিদ, মক্তব ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করার মধ্য দিয়ে এই অঞ্চলে ইসলামী সমাজ তৈরির ভত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। বখতিয়ার খলজী ভারতের সম্রাট মহাম্মদ ঘোড়ীর সাথে সুসম্পক রক্ষা করে চলত। এই সেনাপতি বাংলার দিনাজপুরে (দেবকোট) ১২০৬ সালে মৃত্যু বরন করেন। প্রকৃত পক্ষে ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজী বাংলার যমীনে মুসলিম শাসনের প্রতিষ্ঠাতা। তার এই বিজয় শুধু মাত্র নিপীড়িত নির্যাতিত বৌদ্ধার অনুসারী ও নিন্ম বর্ণের হিন্দুদের মুক্তির পথ দেখিয়ে ছল তাই নয় বরং তার এই বিজয় এই অঞ্চলের মুসলমানদের সুসংগঠিত করে ছিল, দিয়ে ছিল তাদের সাহায্য সহোযোগিতা এবং নিরাপত্তা। মুসলমানরা বিজয়ের বেশে বাংলাতে না আসলে কী হত তার প্রমান পাই, সল্প সময়ের জন্য বাংলার সিংহাসনে বসা রাজা “রাজা গণেশের” ইসলাম বিদ্বেষী কার্য-কালাপ থেকে। চলবে--------
বিষয়: বিবিধ
১১৮৮ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন