আমাদের জাতীয় পরিচয় কী
লিখেছেন লিখেছেন আনিসুর রহমান ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০৭:২০:৪৯ সকাল
আমার জন্ম বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে। জন্মের পর আমি আমার জীবনের প্রায় অর্ধেকের বেশী সময় বাংলাদেশে বসবাস করেছি। এই দীর্ঘ সময়ে কখনো আমি আমার প্রাত্যহিক আচার আচরণ (way of life) আর্থাৎ কৃস্টি-কালচার সম্পর্কে কোন প্রশ্নের সস্মুখীন হইনি। তাই এই সম্পর্কে কোন জ্ঞান অর্জনের দারকার মনে করিনি। কিন্ত বাংলাদশের বাহিরে এসে, প্রবাস জীবনের একেবারে শুরুতেই হচাট খেলাম, বুঝতে পারলাম বাংলাদেশের কৃস্টি-কালচার সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন না করে বিরাট ভুল করেছি। কেননা এখানে ধারাবাহিক ভাবে আমাদের কৃস্টি-কালচার সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্নের সস্মুখীন হতে হছছে এবং এ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকার ফলে কখনো কখনো বিব্রতকর অবস্থায় পরতে হয়। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই আমাদের কৃস্টি-কালচার সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনে প্রবিত্ত হই, নতুন করে আবিষ্কার করি আমাকে, আমার জাতি সত্তাকে। আবিষ্কার করি আমাদের পূর্ব পুরুষদের কৃস্টি-কালচার (way of life) বিশ্বাস ও সংস্কার, আবিষ্কার করি এক মহান জাতি সত্বাকে, বুঝতে পাড়লাম আমরা এক মহান জাতীর উত্তরসুরী।
বুঝার সুভিদার্থে নিন্মে কিছু নমুনা প্রশ্ন ও তাদেরকে দেও আমার উত্তর দেওয়া হ’ল।
ছাত্র থাকাকালীন প্রশ্ন ( আমি University of Waikato, Hamilton, New Zealand, University of Technology Sydney, Australia ছাত্র ছিলাম)
তুমি কেন ড্রিংস (মদ ) খাওনা?
আমার উত্তরঃ আমি কেন, কোন মুসলমানই মদ খায় না। এটা মুসলীম কালচার বিরোধী।
তুমি কেন পোকার মেশিনে(জুয়া) খেল না?
আমার উত্তরঃ আমি কেন, কোন মুসলমানই পোকার মেশিনে(জুয়া) খেল না। এটা মুসলীম কালচার বিরোধী।
তোমার কেন কোন মেয়ে বন্ধু নেই?
আমার উত্তরঃ আমি কেন, কোন মুসলমানের মেয়ে বন্ধু নেই। এটা মুসলীম কালচার বিরোধী।
আবাক করলে তুমি নাচ() জান না!!
আমার উত্তরঃ আমি কেন, কোন মুসলমনই নাচ জানে না। এটা মুসলীম কালচার বিরোধী।
তুমি কেন নাইট ক্লাব, পাব এ যাও না?
আমার উত্তরঃ আমি কেন, কোন মুসলমনই নাইট ক্লাব, পাব এ যায় না। এটা মুসলীম কালচার বিরোধী।
হালাল কী? তুমি হালাল ছাড়া কোন খাবার খাও না কেন?
আমার উত্তরঃ যে অল্পকিছু খাবারকে কুরাআন- সুন্নাহ আমাদের জন্য খওয়া নিষেধ করেছে তা ব্যাতীত সকল খাবার আমরা হালাল বলী।
আমি কেন, কোন মুসলমানই হালাল ছাড়া কোন খাবার খায় না। এটা মুসলীম কালচার বিরোধী।
তুমি কেন ডান হাত দ্বারা খাবার খাও?
আমি কেন, সকল মুসলমানই ডান হাত দ্বারা খাবার খায়। এটা মুসলীম কালচারের আংশ।
তোমরা কেন শুকরের মাংস খাও না?
আমার উত্তরঃ আমি কেন, কোন মুসলমানই শুকরের মাংস খায় না। এটা মুসলীম কালচার বিরোধী।
কিছু সাধারন প্রশ্ন যা ধারাবাহিক ভাবে এই প্রশ্ন যা প্রত্যহ শুনতে হয়, বিশেষভাবে যখন নন-মুসলীম দাওয়া কাজে থাকি।
বাংলাদেশীরা কেন হজ্জ বাংলাদেশে না করে সৌদি আরবে যায়?
আমার উত্তরঃ বাংলাদেশের শতকরা ৯৫% জনতা ইসলামের অনুসারী। তারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মিলিয়ন মিলিয়ন ইসলামের অনুসারীদের অংশ। যাদের জাতীয়তা এক, তারা সকলে একই উম্মা(জাতি), এই উম্মর নাম, “মুসলমান”। যদিও ভৌগলিক অবস্থানের কারনে, কেউ বাংলাদেশী, কেউ ভারতী, কেউবা বাংলাদেশী আমেরিকান ইত্যাদি নামে পরিচিত, যদিও ভৌগলিক অবস্থানের কারনে, কারো গায়ের রং সাদা, কারো বা হলুদ, করো বা কালো, যদিও বা কেউ ডাল ভাত খায়, কেউ রুটি কাবাব খায়। ভৌগলিক অবস্থান গত কারনে তাদের মাঝে বিদ্যমান এই ছোট খাট পার্থক্য গুল এক জাতি গঠনে কখনোও বাঁধা হয়ে দাড়ায়নি। কেননা তারা এক জাতি(উম্মা),“মুসলমান”, আর এই জাতির পিতা হ’ল ইব্রাহিম ()। যিনি আল্লাহ() নির্দেশ, মক্কা নগরীতে কাবা শরীফের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছেন। যিনি আল্লাহ() নির্দেশ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষদেরকে হজ্জের জন্য এখানে সমেবেত হতে বলেছেন। হজ্জের মধ্যদিয়ে পৃথিবির লক্ষ কোটি মুসলমান যে বার্তা আমাদের কাছে দিছছে, তা হ’ল, মুসলমানরা এক জাতি, তাই তার আল্লাহ() নির্দেশ তাদের জাতির পিতা, ইব্ররাহীম() সুন্নাকে অনুসরণ করার জন্য এই মক্কা নগরীতে সমেবেত হয়েছে। তারা সকলে ভাই ভাই এবং তারা সকলে একই কালচার, মুসলিম কালচারকে তাদের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ধারন করেছ।
অমুসলিমরাও কী হজ্জ করার জন্য মক্কা নগরীতে যেতে পারবে?
আমার উত্তরঃ না, মুসলিম ছাড়া অন্যদের মক্কা নগরীতে প্রবেশ নিষেধ। কেননা মক্কা নগরী মুসলিমদের নগরী, মক্কা নগরী মুসলিম জাতির ঐকের প্রতীক, এই নগরীকে প্রত্যেক মুসলমান তার প্রানের চেয়েও বেশী ভালবাসে।
তোমরা কেন এখানে বাংলাদেশী, ইন্ডিয়ান, পাকিস্তানী, লেবাননী, অজি সবাই একত্রে ইসলাম সম্পর্কে লোকদের তথ্য দিচ্ছ?
আমার উত্তরঃ প্রথমত মুসলীম হিসাবে এটা আমাদের ধর্মীয় দায়িত্ব। তাছাড়া তুমিতো দেখতেই পারছ, কিভাবে মুসলমানদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হছেছ। এই সমাজের একজন সচেতন সদ্যস হিসাবে, সমাজিক সম্প্রতির জন্য, ইসলাম সম্পর্কে লোকদের সঠিক তথ্য জানানো সামাজিক দায়িত্ব বলে মনে করি।
এখানে বাংলাদেশী, ইন্ডিয়ান, পাকিস্তানী, লেবাননী, অজি সবাই একত্রে কাজ করছি কারন হল ভৌগলিক কারনে আমাদের বিভিন্ন পরিচয় থাকলেও, দিন শেষে আমরা সবাই একই উম্মার অংশ, একই কালচারের অনুসারী অর্থাৎ মুসলীম জাতী।
এই ধরনের প্রশ্নের উত্তর খুজতে যেয়ে আমি যা আবিষ্কার করলাম, তা হল জাতি হিসাবে আমাদের প্রধান পরিচয় হল, মুসলমান এবং এই মুসলীম জাতির পিতা হল ইব্রাহিম ()। আমাদের জীবনে ইসলামের প্রভাব এত প্রবল যে, বাংলাদেশ থেকে সুদূর অস্টেলীয়াতে এসেও আমরা “হালাল খাবার” খুঁজছি এবং হালাল ইনন্ডাস্টি প্রতিষ্ঠা করেছি। হালাল ফাইনেন্স খুঁজছি এবং হালাল ইনন্ডাস্টি প্রতিষ্ঠা করেছি। আমাদের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার জন্য ইসলামী প্রিস্কুল, স্কুল প্রতিষ্ঠা করছি ইত্যাদি। স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে কাজের স্থানে নামাজের ব্যাবস্থা করছি। অর্থাৎ আমরা বুঝি বা না বুঝি, মানি বা না মানি, বাংলাদেশের বৃহৎ জনগুস্টির জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত, জীবনযাপন বা কালচার বা সংস্কৃতি যা’ই বুঝি না কেন তা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে “ইসলাম” দ্বারা। এটাই হ’ল বাস্তব সত্য, যার প্রমান দিছছে আমাদের প্রতিদিনের জীবনযাপন প্রনালী। সুতরাং জাতি হিসাবে আমরা মুসলিম এ বিষয়ে আমি দ্বিমতের কোন স্থান দেখছি না।
বিষয়: বিবিধ
১২৬০ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জাতি হিসাবে আমরা বাংগালী মুসলমান। বাংলাদেশে আমাদের পাশাপাসি আরও অনেক জাতি বসবাস করে, যেমনঃ বাংগালী হিন্দু, বাংগালী খৃষ্টান, অবাংগালী বিহারী মুসলমান, আরও আছে বিভিন্ন পাহাড়ী উপজাতিরা। প্রত্যেকেরই আলাদা আলাদা স্বভাব-চরিত্র, সংষ্কৃতিক বৈশিষ্ঠ আছে।
মহান আল্লাহ আমাদর সবাইকে হেদায়েত দিয়ে সৎ-মুসলমান হিসাবে দুনিয়া ও আখেরাতে নেক কামিয়াবী দান করুন, আমীন।
কিন্ত আমি মনে আমাদের জতীয় পরিচয় এমন হওয়া উচিত যাতে তা বাংলাদেশে বসবারত বিভিন্ন জাতি, উপজতি ও বিভিন্ন ধর্মে বিশ্বাসী লোকদেরকাছে কাছে গ্রহনযোগ্য হয়। সমাজের ঐক্য ও উন্নতির জন্য এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন