আক্কেল আলী ও খেজুর আলী (রম্য রচনা)বিষয় পুলিশের চাকরী ১২
লিখেছেন লিখেছেন আনিসুর রহমান ০৮ মে, ২০১৫, ০২:৫৭:৫০ রাত
বারো
শুকুর খান ঘড়ি দেখে তার ভাইকে বলল, ভোটের সময়ত কখন শেষ হয়ে গিয়েছে। এখনও গণনা শেষ করে নাই। যা যেয়ে দেখে আয়ত সবাই কী কড়তাছে, ঘুমাইতাছেনি। কিছুক্ষণ পড়ে তার ভাই প্রিজাইডিং আফিসারের সই(signature) ছাড়া ভোটের ফলাফলের সিট নিয়ে এসে তার ভাইকে দিল। আক্কেল বলল মুকুড় ভাই এইডা কী ভোটের ফলাফলের সিট আনছেন, এতে প্রিজাইডিং আফিসারের কোন সই(signature) নাই। এ কথা মুকুর খান শুনা মাত্র ক্ষেপে যেয়ে বলল, সই আবার কী, আমরা যেটা বলুম সেইটাই ঠিক, আমার সাথে ওস্তাদী, একে বারে থোতা ভাইংঙ্গা হাতে ধরাইয়া দিমু, শালা বুঝে বেশী। শুকুর খান তার ভাইকে শান্ত করে বলল, মুকুর দারা আগে আমাদের চিটাগাং এর মেয়র মামা আজব নাজীরকে ফোন করে দেখি। মুকুর তখন বলল, মামা আবার মেয়র হইল কবে? সে না মেয়র নির্বাচনে দারাইছে মাত্র। শুকুর বলল, মুকুর এটা তুমি কিতা কউ, আমরা এখানে বসে যা কড়তাছি, আমাদের চিটাগাং এর লোকজনতো মামার জন্য তাই করতাছে। কথা বুঝ নাই, যেদিন ম্যাডাম তারে চিটাগাং এর মেয়র পদের জন্য সিলেক্ট করেছে, সে দিন থেকেই সে চিটাগাং এর ইলেক্টেট()মেয়র, বুঝ নাই। দেখ নাই তার প্রধান প্রতি পক্ষ অবস্থা দেখে নির্বাচনের মাঠ ছেরে ভাগছে, শুধু নির্বাচনের মাঠ ছেরে নয়, অবস্থা বেগতিক দেখে জুলুম নির্যাতনের ভয়ে রাজনীতির মাঠ ছেরেও ভাগছে।
কাকতলীয় ভাবে এই সময়ে চিটাগাং থেকে শুকুর খানের মামা তারে ফোন করলো। শুকর খান ফোন ধরে সাথে সাথে মামাকে ইলেক্টেট/ সিলেক্টেট মেয়র হওয়ার জন্য ক্যাংগ্রেচুলশন জানালে, তার মামা আজব নাজীর খুশীতে বাক বাক হয়ে বলল, ভাগিনা এই জন্য তোমারে আমার ভাল লাগে। অফিশিয়ালী ইলেক্টেট/ সিলেক্টেট মেয়র হওয়ার আগেই তুমি আমারে ক্যাংগ্রেচুলশন জানালে। মামা বলল, ভাগিনা তোমাদের দিকের খবর কী? শুকুর খান বলল, মামা পুলিশ ,র্যাব এবং প্রশাসন সাথে থাকলে --- এই সময়ে এক সাংবাদীক এসে আজব নাজীরকে তার অফিশিয়াল মেয়র হওয়ার সুসংবাদ দিল। খুশীর চোটে আজব নাজীর ফোনের লাইন কেটে দিয়ে সাংবাদিকে বসতে বলে, মিষ্টি আনার জন্য লোক পাঠাল। সাংবাদীক বলল, স্যার যদি কিছু মনে না করেন আমি কী আপনাকে কয়েকটা প্রশ্ন করতে পারি। খুশীতে বাক বাক মেয়র বলল, আবশ্যই, সাংবাদিক বলল, স্যার এই প্রশ্ন বীদ্ধ নির্বাচনে আপনি মেয়র হয়ে কী খুশী? এ কথা শুনা মাত্র ইলেক্টেট/ সিলেক্টেট মেয়র তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে বলল, ঐ আতেলের ঘরে আতেল, আমার সাথে বিটলামী, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, চিটিং বাটপারি করে, কোটি কোটি টাকা খরচ করে মেয়র হইছি। এত কষ্ট করে কোন কিছু পাওয়ার পর এই দুনীয়ায় পাগল ছাড়া, এমন কাকে পাবা যে খুশী না হয়ে বেজার হবে। মেয়র সংবাদিকের হাত থেকে কথা রেকর্ড হতে থাকা মোবাইল ফোনটা কেড়ে নিয়ে তা সজোরে মাটিতে ছুরে ফেলে ভেঙে ফেলল। নজীর বলল, এই ধরনের আজব প্রশ্ন কোন সংবাদিক করতে পারে তা আমার জানা ছিল না! মনে রাখিস তোর মত এমন সংবাদিক চরাইয়া চরাইয়া আমি এত দূর আইছি, বজ্জাতের বজ্জাত, আজকে আমার বহুতই খুশীর দিন এই জন্য তোর বেয়াদপী মাপ করলাম। তবে মনে রাখিছ ভবিৎষতে যদি এমন আজব প্রশ্ন করছস তো তরে একেবারে আজব দেশে গায়েব করে দিব।
শুকুর খান প্রিজাইডিং আফিসারের সই(signature) সহ ভোটের ফলাফলের সিট তার সাথে আনা ফাইলে রেখে আক্কেলকে বলল, বহুত ধকল গেছে, বহু পরিশ্রম করেছি, চল বারে যাই---এ সময়ে হঠাৎ তার মোবাইল ফোন বেজে উঠল। সে বিরক্ত মুখে ফোন ধরে বলল, হ্যালো কে, আপর পাশ থেকে তার বন্ধু বলল, আমি বোতল নিমাই। শুকুর খান খুশী হয়ে বলল, নিমাই চল জংলা বারে যাই। নিমাই বলল, দোস্ত যাইতে তো চাইছিলাম কিন্ত----- শুকুর তার কথা কেরে নিয়ে বলল, কিন্তু কী? দোস্ত এখনও তো ব্যালটে ছিল মারা হয় নাই----- শুকুর আবারো তার কথা কেরে নিয়ে বলল, বুঝছি সারা দিন বোতল নিয়া ছিলা, ভোটের সময় শেষ হইছেতো কী হইছে, আমি এখনেই লোকজন নিয়া আসছি, দশ মিনিটে তোর কাম শেষ করে দিব, তুই শুধু প্রিজাইডিং আফিসাকে আটকাইয়া রাখ। তার পড়ে এক সাথে জংলা বারে হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ। তারপর হঠাৎ একটু আগে পাওয়া বাতিল ভোট সংক্রান্ত তথ্য মনে পরায়, সে বোতল নিমাইকে বলল, তুই কী ব্যালট পেপারে কোন সিল মারছস, এই পর্যন্ত একশতটার মত। শুকুর খান তখন নিমাইকে বলল, সিল মারা বন্ধ রাখ, কেননা তোর মত মদ, হিরুইন, চরস ও গ্যাঁজা খেয়ে আমাদের কেউ কেউ বুলেটের মত ব্যালটে সিল মারার ফলে, বাতিল ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে এই নির্বাচন গ্রীনিজ রেকডে স্থান পাবে, তাতে কোন ভুল নাই। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল, শুকুর খান এসে দেখে বোতল নিমাইয়ের দেওয়া ভোটের ৯০% ভোট হল বাতিল ভোট।
নিমাই, আক্কেল ও শুকুর খান জংলা বারের দিকে যাছেছ। আবারও শুকুরের ফোনটা বেজে উঠল। ফোনে কথা বলা শেষ করে গুমরা মুখে শুকুর বলল, আমাদের এখন তালতলা ভোট কেন্দ্রের প্রিজাইডিং আফিসারের বাসায় যেতে হবে। এ কথা শুনা মাত্র নিমাই ও আক্কেল এক সাথে বলে উঠল, কেন কেন? শুকুর বলল, উপরের নির্দেশে আমাদের এখন তার সই করা ও সকল প্রাথিকে দিয়ে দেওয়া ফলাফল সিট পরিবতন করে নতুন আরেকটা তার সই করা ফলাফল সিট নিতে হবে। এই নতুন সিটে কুদ্দুসের (লাটিম মার্কা) পূরবের পাওয়া ৬১ ভোটকে বারিয়ে ৩৮০ করতে হবে, ফলে তার প্রতি পক্ষ এরশাদ কবীরকে(কুমরা মার্কা) পরাজিত দেখিয়ে তাকে জয়ী দেখানো যাবে।
কাজ সমাধা করে তিন জন বারে বসে কয়েকটা বিয়ারের ক্যেন শেষ করার পর হঠাৎ বারে চলমান টিভির স্ক্রিনে একটি সংবাদ শুনে তাজ্জব বনে যায়। খবর, বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও নাগরিক অযুত-সহস্র কমিটির সভাপতি বাটপার হক বলছে, বাংলাদেশের এই নির্বাচন সারা বিশ্বের জন্য একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে, এই ধরনের জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণের মধ্য দিয়া শান্তিপুন ভাবে, সকল প্রকারের কারচুপি মুক্ত নির্বাচন অনুসঠান বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল।
খবর শুনে বোতল নিমাই বলল, কইছিলাম না দোস্ত এক মাত্র মেডামেই পারবে বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে এই ভাবে সম্মান বৃদ্ধি করতে। বোতলের প্রভাবে আক্কেল বলল, ভাইজান, আপনে একখান খাটি কথা কইছেন । কেননা এই কিছিমের কারচুপি মুক্ত অবাধ নির্বাচন, দুনীয়ার কেউ দেহা তো দূর শুনেও নাই! এই সময়ে শুকুর খানের মোবাইল ফোনটা আবার বেজে উঠল, আক্কেল এবং নিমাই উভয়েই বোতলের প্রভাবে, শুকুরের নামকে বিকৃত করে বলল, কুকুর ভাই আপনার মোবাইলটাই যত নস্টের গোঁড়া, এইডার জন্যই হেরা আপনারে খুঁজে পায় ও নবাবী চাল চেলে আপনাকে পাগলা কুত্তার মত খাটায়। আইডারে হালান। বোতলের প্রভাবে শুকুর খানের সকল রাগ গিয়ে পরল নিরীহ মোবাইল ফোনের উপর এবং সে পাগলা কুত্তার মত রাগে গড় গড় করতে করতে জোরে ছুরে ফোনটা উপর থেকে নিজে ফেলে দিল।
বিষয়: সাহিত্য
১৪৪২ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ
পিলাচ
মন্তব্য করতে লগইন করুন