আক্কেল আলী ও খেজুর আলী (রম্য রচনা) ১১ বিষয় পুলিশের চাকরী
লিখেছেন লিখেছেন আনিসুর রহমান ৩০ এপ্রিল, ২০১৫, ০১:৩২:৩২ দুপুর
একাদশ
বিশেষ কারনবশত পর্ব দশ এর পূর্বে পর্ব একাদশ পোস্ট করা হল, পর্ব দশ পড়ে পোস্ট করা হবে। আক্কেলের কারনে অনেক সত্য তথ্য প্রকাশ হয়ে পড়ায় আম্বা হাম্বা কঠিন সময় অতিক্রম করছে, তাই পুলিশ মন্ত্রী মগা উদ্দিন মগা সভাপতিত্বে চলছে জরুরী মিটিং । মটিং-এ উপস্থিত আম্বা হাম্বার সবাইকে এসম্পকে তাদের বক্তব্য দেওয়ার জন্য মগা আমন্ত্রন জানালে, উত্তেজিত আম্বার এক নেতা বলল, এই বেআক্কেলটারে লাত্তি মেরে পুলিশের চাকুরী থেকে বের করে দেওয়া হউক। সাথে সাথে মুরগী শাহরিয়া বলল, আক্কেল আমার ভাগিনা এই জন্য বলছি না, দলের মধ্যে সব ধরনের লোক থাকতে হয়, সবাই যদি চিটার বাটপার হয়, তবে দল অচিরেই ধ্বংস হয়ে যাবে। শাহরিয়ার কথা শেয হওয়ার সাথে সাথে মিটিং এ বিশৃংখলা দেখা দিল। এক জন বলল, আপনার ভাগীনা আপনিতো এ কথা বলবেনই। আরেক জন বলল, আপনি নিজেইতো এক নাম্বার বাটপার , কেন স্বধীনতার পর আপনি বিকৃত ছবি ও ভুল তথ্য ও বিভিন্ন কাহীনি করে কেয়ামতে ইসলামকে ফাসান নাই, আপনার কাজের জন্য আপনি অবশ্যই ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। এবার আপনিই বলেন, পানি যদি তখন আপনার ভাগীনার মত ভাল মানুষ হতেন, তবে কী আজকে আমরা আমাদের জন্য এক নম্বর বিপদ আপদ কেয়ামতে ইসলামের নিরপরাধ নেতাদের ধরে ধরে ফাঁশি দিতে পারতাম। এই ভাবে শাহরিয়া চারিদিক থেকে আক্রমণের শিকার হতে থাকে এবং মিটংএ বিশৃংখলা দেখা দেয়। পুলিশ মন্ত্রী মগা বহু চেস্ট্রা করে মিটিং এ শৃংখলা ফরিয়ে এনে বলল, আমি আপনাদের কথা মানলাম, আপনারা সবাই জানেন যে এই আক্কেলের জন্য আমি একটা বড় ধরনের বিপদ থেকে রক্ষা পাই। তাই আমি তাকে একটা সুযোগ দিতে চাই, মগার এই কথার পর আবার চারিদিক থেকে মৃদু গুঞ্জন শুরু হল। তাই মগা তারাতারি বলল, আপনারা আমাকে যতটা ভাল মনে করেছেন আমি আসলে ততটা ভাল না। তাই বলে আবার মনে করবেন না যে, আমি আপনাদের নাম আমার হত্যা, খুন গুম এর লিস্ট এ রাখবো। মগার এই প্রচ্ছন্ন হুমকী বুঝতে কারো দেরী হল না। তাই মুহুতের মধ্যে সকলের সুর পাল্টে গেল। মগা সাহেব আপনি যে পরামর্শ দিয়েছেন তার থেকে ভাল কিছু আমি আর দেখছি না। সকলে মাথা নেরে বলল, জী জী আপনার কথাই ঠিক ঠিক ঠিক। সবাই এ বিষয়ে একমত হল যে, আক্কেলকে এক মাসের জন্য চাকুরী থেকে ছুটি দিয়ে, হাম্বা লীগের সাথে ট্রনিং এ পাঠানো হবে। এর উদ্দেশ হল আক্কেল হাম্বা লীগের সাথে থেকে তাদের কাজের ধরন বুঝবে, ফলে সে ভবিৎষতে হাম্বা লীগের সাথে অহেতুক ঝামেলায় জরিয়ে পড়ার হাত থেকে রক্ষা পাবে।
আজ ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৫, আজ ঢাকাবাসিদের কাছে একটি বিশেষ দিন, অনেক অপেক্ষার পর আজ তারা তাদের ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে পারবে। অপর দিকে আজকে আক্কেলের ট্রেনিং এর প্রথম দিন। স্থান, জাতির পিতা মাতা স্কুল, মুঘলটুলী। আক্কেল ও হাম্বা লীগ প্রধান শুকুর খান দারিয়ে আছে। হঠাৎ সেখানে শুকুরের ভাই মুকুর খান হাজীর। শুকুর খান মুকুরকে দেখে বলল, তুই এখানে কেন তোর না আবুল কলেজে থাকার কথা। মুকুর বলল, ভাইয়া কাজ শেষ করেইতো আইছি, চিন্তা করবেন না। শুকুর বলল, মানে বুঝলাম না। মুকুর বলল, কিছু কিছু কেন্দ্র ভোটের আগের রাত্রে প্যালট পেপারে ছিল মেরে বাক্স ভর্তি করার নিদেশ আছে। আমাদের কেন্দ্র এই নির্দেশের আওতায় ছিল বিধায় তা আমি বাস্তবায়ন করে এখানে এসেছি। শুকুর বলল, তাতো বুঝলাম, কিন্ত তুই এখানে কেন? ভোটের দিন ভোট দিতে না পেরে জনতা যদি গোলমাল করে। মুকুর বলল, ভাইয়া সেই চিন্তা করবেন না, আমাদের লোক ছারাও সেখানে, পুলিশ, র্যাব রয়েছে, ভোটারতো দূর কাক পক্ষীও ঢুকতে পারবে না। এবার শুকুর খান আক্কেল আলীর দিকে তাকিয়ে বলল, ঐ চান্দু বুঝছচ পুলিশের কী কাজ। আক্কেল বলল, জী জী, পুলিশের কাজ হল কেউ যদি ভোট দেওয়ার কথাও মুখে আনে হেতেরে পিটাইয়া এক্কেলে হুতাইয়া ফালামু, কী ঠিক কই নাই। শুকুর খান আক্কেলের পাছায় জোরে একটা লাথি মেরে বলল, এই শালায় সব সময় বেশী বুঝে, আমি কী তোরে মারতে কইছি না ভোট কেন্দ্রে যাতে ঢুকতে না পারে সেকথা বলছি। শালা বলদের ঘরে বলদ মানুষ জনকে মেরে হাত পা ভেঙ্গে হাসপাতালে পাঠালে, সত্য প্রকাশ হয়ে পরবো না। আক্কেল জী ভাই এইবার বুঝছি, তখন শুকুর বলল, চান্দু বোঝতো বোঝ, তয় দেরী করে বুঝ । তখন শুকুর খান আক্কেলকে এক বস্তা ব্যালেট পেপার দিয়ে বলল, যা কাজ শুরু কর, ‘বাস’ মার্কায় ছিল মার। আক্কেল দ্রত ছিল মারতে শুরু করল কিন্ত কয়েক শত ব্যালট প্যেপারে ছিল মারার পর হঠাৎ তার খেয়াল হল আরে ‘বাস’ মার্কাতো বিরোধী দলের প্রতীক, সে মনে মনে বলল, হায় আল্লাহ্ আমি কী কানে উল্টা শুনলাম, এক দৌর দিয়ে কেন্দ্র থেকে বের হয়ে এদিক উদিক ঘুরেও শুকুর খানের টিকিটা খুঁজে পেল না। শুকুর খানকে না পেয়ে তার ভাই মুকুর খানকে যেয়ে ঘটনা বলল, মুকুর খান রেগে গিয়ে বলল, শালার পাঠানি, ঘিলুও নাই আবার কানেও উল্টা শুনে, এখন থেকে আম্বা প্রতীক “পেক্টল বোমা” তে ছিল মারা শুরু কর। আক্কেল ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই সব ব্যালট পেপারে “পেক্টল বোমা”তে ছিল মেরে দিল। কিছুক্ষণ পড়ে শুকুর খান এসে আক্কেলকে জিজ্ঞাস করল। ছিল মারা শেষ, আক্কেল হাসতে হাসতে বলল জী কোন চিন্তা করবেন না “পেক্টল বোমা”তে ছিল মেরে তামা তামা করে ফেলেছি। শুকুর খান এবার রেগে গিয়ে বলল, শালায়তো দেখি কানেও কম শুনে। দেখত দেখি কী বিপদের মাঝেই ফালাইলো। হিসাব কিতাব সব উল্টা পাল্টা হয়ে গেল না! ঐ উল্লুকা পাঠা তোরে কে বলেছে “পেক্টল বোমা”তে ছিল মারতে। আক্কেল তখন বলল আপনার ভাই মুকুর। শুকুর তখন মুকুরকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলে মুকুর সাথে সাথে তা অস্বীকার করল এবং বলল সে তার নিজের ভুল আমার ঘাড়ে চাপাতে চেষ্টা করছে। এই নিয়ে কেন্দ্রের পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু হল, শুকুর খান উপরের নির্দেশে তারাতারি আক্কেলকে আরেক কেন্দ্রে নিয়ে যায় এবং বলল যা এবার শুধু “পেক্টল বোমা”তে ছিল মার। আক্কেল কাজে লেগে গেল, সে সব ব্যালট পেপারে “পেক্টল বোমা”তে ছিল মেরে শেষ করে শুকুর খানকে ফোন দিল। শুকুর খান এসে বলল, তুই সব ব্যালট পেপারে ছিল মারছস কেন? তোর মাথায় কী কোন ঘিলু নাই। জীবনে তুই দেখছ ১০০% ভোট কাস্ট হতে। ১০০% তো ১০০% তাও আবার একটি মাত্র দল সব ভোট পাইছে। না তোরে দিয়া কাজ হবে না। তুই যমুনা কেন্দ্রে গিয়া বসে বসে দেখ আমরা কী করি, কোন কীছু আগ বারিয়ে করতে যাবি না। আক্কেল যমুনা কেন্দ্রে এসে দেখল বিরাট ধরনের উত্তেজনাকর অবস্থা। এক আম্বা কমিশনার প্রাথি বলছে, আমারে হারায়ে বিরোধী দলের একজনকে জিতাবেন এইইয়া আমি মাণটাম না। শুকুর খান যতই তারে বুঝাতে চেষ্টা করে সব কয়টা আসন আমরা নিলে, এটা যে চোরা নির্বাচন সবাই বুঝে যাবে। এতে সে রেগে গিয়ে বলল, আমারে হারাইতে চেষ্টা করলে রক্ত গঙ্গা বয়ে যাবে। দিশেহারা শুকুর খান তার উপরের বসদের ফোন করে সব বলল, তখন তারা বলল, তুমি তোমার চেষ্টা করেছ, তাই যথেষ্ট, তাদের হিসাব পড়ে , আগেতো বিপদ কাটাই। ছেলেদের বাদ দিয়ে বরং তুমি মহিলা প্রাথিদের চেষ্টা কর। অবশেষে শুকুর খান পাঁচ জন মহিলাকে ম্যানেজ করার কথা উপরে জানালে, তারা খুশী হয়ে বলল, তুমি আমাদের বাচালা নইলে কী বিপদেই না পরতাম। শুকুর খান বলল, স্যার বহুত কষ্ট হইছে তাদের রাজী করাইতে, ভাগ্যিস ছেলেদের মত তাদের কোন বিষেশ বাহীনি ছিল না!! ফোনে কথা শেষ করে এবার খুশীতে বাক বাক শুকুর খান আক্কেলকে জিজ্ঞাসা করল, কী বুঝলা চান্দু, আমাদের কাম কাজের ধরন কিছু বুঝতে পারলা। আক্কেল বলল, ভাই এবার একেবারে পরিষ্কার ভাবে সব বুঝে গেছি। তখন শুকুর খান বলল, ভাল ভাল, তা কী বুঝছ চান্দু দেখিতো, তুমি আমাকে বলত, আমাদের ম্যাডাম যে বলেছে, “অনেক ত্যাগের বিনিময়ে আমরা ভোটের অধিকার রক্ষা করেছি”, তার মানে কী? এবার আক্কেল বুদ্ধিমানের মত বলল, ভাই তার মানে হইল, মানুষ ঘরে বসে ছুটি কাটাবে এবং আরাম করবে, আর আমরা তদের কষ্টকে লাঘব করার জন্য তাদের হয়ে তাদের ভোট দিয়ে দিব। শুকুর খান বলল, এইতো বুঝা শুরু করছ চান্দু, চালাইয়া যাও। আমাদের সাথে আরও কিছু দিন থাক সব বুঝে যাবা চান্দু।
বিষয়: বিবিধ
১৩৬৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন