আক্কেল আলী ও খেজুর আলী (রম্য রচনা) বিষয় পুলিশের চাকরী ৫

লিখেছেন লিখেছেন আনিসুর রহমান ১৭ মার্চ, ২০১৫, ১২:২৬:৫৬ দুপুর

আক্কেল আলী মটরবাইক নিয়ে দ্রত ছুটে চলছে কিন্তু যখন সে বিরোধী দলীয় নেতার বাসার গেটের সামনে পৌছল তখন বাঁধা প্রাপ্ত হ’ল, সন্ত্রাস দমন মন্ত্রী ময়না পাখী তার মটর বাইক এক রকম জোর করে থামিয়ে কোণ ধরনের সালাম কালামের পরোয়া না করে গুয়ারের মত বলল, অই অফিসার , আমার এই ইট, বালু, রড, সিমেন্ট বোঝাই লড়ীর চালকরা দুই দিন ধইরা না খাইয়া আছে, তুমি এহানে থাইকা পাহারা দাও, হেতেরা খাইইয়া আসুক। আক্কেল ইট, বালু, রড, সিমেন্ট বোঝাই লড়ীর সমনে লুঙ্গী পড়া সন্ত্রাস দমন মন্ত্রী ময়নাকে দেখে বাসা বড়িতে কাজ করা রাজমিস্ত্রী মনে করল। তাই কাজের সময় বাধা প্রাপ্ত হয়ে বিরাট খেপে গিয়ে বলল, অই হালা দুই পয়সার রাজমিস্ত্রী আমি কী তোর বাপ দাদার চাকর, এইখানে বইসা বইসা তোর কথায় চৌকিদারি কাজ করবাম। হাতের ডাণ্ডাটা দেখিয়ে বলল, এইডা দেখছস হালার পুত, সরকার এইডা আমারে ডাংগুলী খেলার জন্য দেয় নাইকা বরং তোর মত বান্দরকে পিটাইয়া পাছার খাল তোলার জন্য দিছে। এক্কেবারে ডান্ডা দিয়া পিটাইয়া তোরে আমি মাটিতে হোতাইয়া হালামু (শুয়িয়ে ফেলব)।কথায় আছে অল্প শোকে কাতর অধিক শোকে পাথর। সন্ত্রাস দমন মন্ত্রী ময়না রাগে দুঃখে একেবারে পাথর হয়ে গেল। কয়েক মিনিট কোন কথা বলতে পারল না, হুস ফিরার পর তার পাশে দাঁড়ানো তার প্রধান সহকারী রমাকে উদ্দেশ্য করে বলল, ঐ রমা হুনছস এই শালা বাইনার পুত -------- কী সব কইবার লাগতাছে। আমার হাতিয়ার কই? তুই অহনোও দারাইয়া আছস,যত সব আবাল লইয়া পরছি আমি। এই বলে রমার গালে জোরে একটা থাপ্পর বসিয়ে দিল। থাপ্পড় খেয়ে রমা ভয়ে দিগ বিদিগ হারিয়ে অস্ত্রের জন্য ময়নার গাড়ীর দিকে দৌর দিল। অতঃপর ময়না আক্কেলকে লাত্তি মারার জন্য যেতে গিয়ে আবিষ্কার করল, আক্কেল আলী দুই হাতে তার ডাণ্ডা ধরে মারমুখী ভাবে দারিয়ে আছে। খানিকটা ভয় পেয়ে পিছিয়ে যেয়ে, রাগে, দুঃখে, ক্ষোপে গাধার মত চিৎকার চেঁচামিচি শুরু করে দিল। ফলে চারিদিকে একটা ছোট খাটো একটা ভির জমে গেল। এ দিকে পুলিশ কমিশনার মানিক চান মগা উদ্দিন মগার সমাবেশে যাওয়ার পথে এই সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথে তারাতারি তার গাড়ীর গন্তব্য ঘুরিয়ে দিল বিরোধী দলীয় নেতার বাসার দিকে। ইতিমধ্যে ময়নার সহকারী রমা, ময়নার গাড়ী থেকে দা, কুড়াল, বন্দুক, পিস্তল, এল এম জী , পেট্রল বোমা ও সদ্য আমদানী করা অস্ত্র “প্যাজল” সহ সন্ত্রাস বিরোধী সকল হাতিয়ার নিয়ে হাজির। সব ধরনে হাতিয়ার আনার করন হল, ময়না প্রায় নিয়মিতই তার প্রতিপক্ষকে নিপীড়ন নির্যাতন করে। কিন্ত সে প্রতি দিন একই ধরনের অস্ত্র ব্যাবহার করে না, একেক দিন একেক ধরনের অস্ত্র ব্যাবহার করে আনন্দ পায়। আর এই মহৎ কাজের সময় সে তার পছন্দ মত হাতিয়ার না পেলে, রেগে যায়, এ কথা তার সহকারী রমা ভালভাবেই জানে, এজন্য সে সব ধরনে হাতিয়ারের একটা ট্রলি এনে ময়নার সামনে হাজির করল। ময়নাকে উদ্দেশ্য করে সে বলল, স্যার সব ধরনের হাতিয়ার নিয়ে এসেছি, স্যার এখন আপনি যেটা চান সেইটাই ব্যাবহার করতে পরবেন। ময়না বলল, সাব্বাস রমা এত দিনে একটা কমের কাম করছস। দে দে পেট্রল বোমাটা দে, এই হলারে আওজকা(আজকে) পেট্রল বোমা মাইরা পোরামু।

পেট্রল বোমাটা হাতে নিয়ে আগুনের জন্য নিজের শরীরের সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করে গ্যাস লাইটের ব্যাটন দাবাল ময়না কিন্ত রাগের মাথায় মাত্রা অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের ফলে গ্যাসলাইটি ভাঙ্গে গেল। এতে সে রেগে গিয়ে বলল, তরে গ্যাসলাইট রাখতে কইছে কে, ম্যাজ রাখতে পারছ না। এসিস্টেন সহকারী মজিদ বলল, (যে কিনা যার পর নাই প্রধান সহকারীর উপর ক্ষেপা কেননা প্রধান সহকারীর পদটা তারই পাওয়ার কথা কিন্ত রমা মামা চাচার জোরে তাকে ডিঙ্গিয়ে পদটা নিজে বগলদাবা করেছে।) দেখছেন স্যার দেখছেন, এর মত প্রধান সহকারী থাকলে আপনেরতো বিপদ বারতে দেরি হইবো না। ময়না সময় নষ্ট না করে হাতিয়ারের ট্রলি থকে একটা পিস্তল হতে নিয়ে সাথে সাথে আক্কেলকে টার্গেট করে গুলী ছুড়ল। কিন্ত পিস্তলটি আনলোড থাকায় কোণ গুলী বের হল না। ময়না পাগলের মত পিস্তলের ট্রিগার চেপেই চলল, তখন সহকারী মজিদ বলল, স্যার স্যার স্যার আর ট্রিগার চেপে কী হবে, আমাদের আকাইমা রমা এতে কোণ গুলী লোড করে নাই। এতে ময়না রমার উপর বিরাট খেপে গিয়ে বলল, তুই ঠিক কাথাই কইছস এই হালার পুত কোন কামের না, উল্লুক কোহানকার , কোন একটা কাজও ঠিক মত করতে পারে না, শালা ভোন্দা গাজী, এই কথা বলে রমার পাছায় জরে একটা লাথি মেরে বলল, যা বাইনারপুত ,---- যা বাড়ী যা তোর মত এই কিছিমের পাঁঠা আমার দরকার নাইকা। এবার সে এসিস্টেন সহকারী মজিদকে বলল, মজিদ মিয়া তুমি আগামী কাল থেকে সোজা রমার চ্যেয়ারে গিয়া বসবা এখন তুমি আমারে ট্রলি থেকে একটা তোমার পছন্দ মত একটা হাতিয়ার দাওতো দেখি। মজিদ দেখল চামচামি করার এই সুর্বন সুযোগ, সে বলল, স্যার যে কী বলেন আপনার মত এত সুন্দর ভাবে আমি কী পছন্দ করতে পারি, এই নেন হাতিয়ারের ট্রলি, আপনি শুধু বলে দিন কোণ হাতিয়ারটা আপনি পছন্দ করেন, আমি এখনই সেটা রেডি করে দিছি। ময়না ট্রলির থেকে সদ্য অমদানী করা অস্ত্র ‘প্যাজল’টা নিয়ে মজিদের হাতে দিয়ে বলল, তরাতারি এটা রেডি করে দাও। সদ্য অমদানী করা অস্ত্র ‘প্যাজল’ অত্যান্ত কর্যকরি একটা অস্ত্র যা দিয়ে কোণ একটা ডাকাত দলকে সহজেই বিপদে ফেলে পরাস্ত করা যায়। এটা দিয়ে লক্ষ্য বস্তুতে আঘাত করার সাথে সাথে আক্রান্ত ব্যাক্তির গায়ের রং পরবতিত হয়ে কুচ কুচে কালো হয়ে যায় এবং তার শরীর থেকে এক ধরনের দুর্গন্ধ বের হতে থাকে, ফলে আক্রান্ত ব্যাক্তিকে পুলিশের সাথে মারামারিতে ব্যাস্ত ডাকাত দলের অন্য সদস্যদের পক্ষে তাকে তাদের সদ্যস্য বলে চিনা কঠিন হয়ে পরে, শুধু তাই নয় এই অস্ত্রে দারা আঘাত প্রাপ্ত ব্যাক্তি তিন ঘণ্টার জন্য তার কথা বলার শক্তিও সাময়িক ভাবে হারায়। ফলে তার দলের সদ্যস্যরা পালানোর সময় তাকে চিনতে না পারার জন্য ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। এই অস্ত্রের আরেকটি সুভিদা হল, এটাকে এমন ভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যে, হাতিয়ারটির সামনের দিককে মনে হয় পিছনের দিক আর পিছনের দিককে মনে হয় সামনের দিক আর এই জন্যই এই অস্ত্রটির নাম ‘প্যাজল’ । এই হাতিয়ারটি আনা হয়েছিল পুলিশ বাহীনির জন্য কিন্ত ময়না কোণ নিয়ম নীতির ধার না ধেরে এটা নিজের বেআইনি আস্ত্র ভান্ডারে যোগ করেছে। ময়নার সহকারী বেশী চামচামি করতে যেয়ে নিজের বিপদ নিজে ডেকে নিয়ে আসল কেননা এটার ব্যাবহার সে জানে না ফলে সে প্যাজল নিয়ে নিজে বিরাট এক প্যাজলে পড়ল। মজিদ এই নতুন অস্ত্রের সামন পিছ, আগা-মাথা, কোণ কিছু বুঝতে না পেরে, মনে মনে বলতে লাগল, আল্লাহই জানে আজকে কপালে না জানি কোন শনি আছে। ময়না তারা দিলে, সে নিজের অজান্তেই যন্ত্রটা ময়নার হাতে তুলে দিল। ময়নাও অস্ত্রটার সমন পিছ কিছু বুঝতে না পেরে বলল, ঐ মজিদ এইডা সমনের দিগ না। মজিদ খানিক ক্ষণ চিন্তা করে গভীর ভাব নিয়ে পণ্ডিতের মত মাথা নেরে বলল, স্যার এইটা উল্টা হইছে। ময়না এবার মজিদের কথা অনুসারে অস্ত্রটা ঘুরিয়ে ধরল এবং আক্কেলকে লক্ষ্য করে গুলী করল কন্তু গুলী এসে লাগল ময়নার শরীরে, ময়নার গায়ের রং পরিবতিত হয়ে গল তিন ঘণ্টার জন্য সে কথা বলার শক্তি হারাল।

ময়না গুলীটা তার গায়ে এসে লাগার সাথে সাথে মনে করল সে বুঝি মারা যাছে। সে দৌরে গিয়ে ট্রলি থেকে কুড়ালটা হাতে নিয়ে মজিদের উদ্দেশ্যে হুংকার দিয়ে বলল, মইজ্জা, মরার আগে আমি যদি তরে কুড়াল দিয়া কোবাইয়া দুই ভাগ না করিছিতো আমার নাম ময়না পাখী না। ময়নার এই রূপ দেখে মজিদ হাতিয়ারের ট্রলী ফেলে দিল দৌর।

চলবে

বিষয়: সাহিত্য

১৩৬০ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

309462
১৭ মার্চ ২০১৫ দুপুর ০১:৫৩
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : দারুণ!!!! আপনি যেন এক রসে ভরা হাড়ি! ময়না, মজিদ, রমাদের নিয়ে যা শুরু করেছেন, তা কোথায় গিয়ে থামবে কে জানে।

আপনি পূর্বে কখনো আপনার লিখা পড়িনি বা পড়ার সুযোগ হয়ত হয়য় নি, আজ পড়লাম, লিখার হাত আপনার অনেক ভাল, পড়তে বেশ আরাম বোধ হয়। ব্লগে মাঝে মাঝে এমন কিছু রম্য লিখা পরিবেশন করে ঝিমিয়ে পড়ে লোকদের কাতুকুতু দিয়ে জাগিয়ে তোলা খুব দরকার, সে কাজটি অত্যন্ত নিপুণভাবে করেছেন আপনি।

আপনার জন্য বিশেষ শুভেচ্ছা এবং ধন্যবাদ।

চলবে, আমিও দমে যাবার পাত্র নই, আপনার পিছু ধাওয়া করবই।
২৮ মার্চ ২০১৫ দুপুর ০৩:১৮
252516
আনিসুর রহমান লিখেছেন : Thanks for your comment.Sorry for delay respond.
309469
১৭ মার্চ ২০১৫ দুপুর ০২:৩৪
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
২৮ মার্চ ২০১৫ দুপুর ০৩:১৯
252517
আনিসুর রহমান লিখেছেন : Thanks for your comment

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File