আক্কেল আলী ও খেজুর আলী (রম্য রচনা) বিষয় পুলিশের চাকরী -৪
লিখেছেন লিখেছেন আনিসুর রহমান ১১ মার্চ, ২০১৫, ০৭:০৯:১১ সন্ধ্যা
আক্কেলদের বাসায় কলিং বেলটি অনবরত বেজেই চলছে। আক্কেলের মা রান্না ফেলে মনে মনে বকতে বকতে, সারা দেশটা আম্বা হাম্বায় ভইরা গেছে, জীবনের কোন নিরাপত্তা নাইকা, বাসার বাইরে বাইর(বের) হইলে, হয় ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ নয়তো পেট্রল বোমাবাজদের কবলে পরতে হয়। আহারে আমার আক্কেল এত বড় একজন পুলিশ আফিসার, হেরে (তারে) কীনা এই হাম্বার দল থানার ভিতরে গিয়া ঠাটাইয়া চড় মাড়ল, দিনে দিনে দেশটা মগের মুল্লুক হইয়া যাইবার(যেতে) লাগতাছে। আর হইবই বা না কা(কেন), দেশে কি কোন আচার বিচার বাকী আছে------ দরজা খুলে মুরগী শারিয়াকে দেখতে পেয়ে বলল, আরে শাহরিয়া যে এই সময়ে, শাহরিয়া বলল গতকাল আমরা সবাই মিলে মাছ ধরতে গিয়ে ছিলাম, আনেক মাছ ধরছি, সেই মাছ দিতে আইছি(এসেছি)। এ সময়ে হঠাৎ আক্কেল আলী বাসার ভিতরে গেল, বাসার দরজা খোলা দেখে আক্কেল আলী বলল, আম্মু বাসার দরজা খোলা কেন? আক্কেলের মা কোণ উত্তর না দিয়ে আক্কেলকে এই অসময়ে বাসায় আসতে দেখে, ভয় পেয়ে কোন ধরনের বিরতি ছাড়া একটার পর একটা প্রশ্ন করে যেতে লাগল। বাবা কী হইছে? নাকি হাম্বাগো লাত্তি-গুতা খাইইয়া পালাইয়া আইছ? বাবা আমগো অমুন চারকীর(চাকরীর) দরকার নাইকা? আক্কেল তার মাকে আসস্ত করে বলল, আম্মা আমার কিছু হয় নাইকা এরপর পুলিশ মন্ত্রীর দিপদের পরার কথা খুলে বলল। এতে আক্কেলের মা বেজায় খুশী হয়ে বলল, ভালা হইছে, উচিত শিক্ষা হইছে, এই বজ্জাতগো যদি কুত্তা বিলাইয়ে কামরইয়া খাইত তয় দিলে বহুতই শান্তি পাইতাম। দেশে আইন কানুন বইলা কিছু নাইকা, হেরা(তারা) দেশডারে অক্কলে দোযগখানা বানাইয়া হালাইছে(ফেলেছে)। যা যা হারামজাদা যা অহন পাগল ছাগলের হাতে মাইর ধোইর খাইয়া মর। আল্লাহ যেন করে, পাগলাটা যেন(যেনো ) ঐ শয়তানডার পা ভাইঙ্গা হতে ধরাইয়া দেয়। আক্কেল অবাক হয়ে বলল, আম্মু তুমি জানলা কেমবায় ঐ পাগলাটা হেতের পা ভাংবার চাইতাছে। আক্কেলের মা বলল, বাবা এসব জানবার লাগেনা, এরহম হারামী, বজ্জাত, শয়তানগোর আখেরী নতিজা এই রকমই হয়। আক্কেল দ্রত তার রুমে ধুকে ছোট একটা বাক্স হাতে নিয়ে তার মাকে বলল, আম্মা দিনকাল বহুতই খরাব, দরজা লাগিয়ে দাও এই বলে দ্রত বের হয়ে গেল। আক্কেলের মা দরজা লাগাতে লাগাতে আক্কেলকে উদ্দেশ্য করে বলল, বাবা তারাতারি বাসায় আইস, তোমার মামা একটা বড় একটা রুই মাছ দিয়া গেছে, আজকে আমরা হেইডার মুরিঘন্ট বানাইয়া সবাই এক সাথে বসে খাব।
এদিকে মন্ত্রী মগাউদ্দিন মগার পা ধরে হেমায়েত পাগলা ঠায় বসে আছে ; অনেক ক্ষণ হয়ে গেল আক্কেলও আসছে না। মগাউদ্দিন মগা পুলিশ কমিশনারকে ফোন দিল, পুলিশ কমিশনার ফোন রিসিভ করলে সে বলল, অই কমিশনার খালী বড় বড় কথা বইলা বেরাও, কেজের বেলায় তো তোমার টিকিটাও খুজে পাওয়া যায় না। এদিকে যে হেমায়েত নামক এক পাগল আমার পা ভাইঙ্গা হতে ধরাইয়া দিবার লাগছে, সেদিকে তোমার খেয়াল আছে। তোমার কমিশনারগিরি একেবারে ছুটাইয়া দিমু। কমিশনার বলল, স্যার স্যার আমি মেডামের সাথে মিটিংএ ছিলাম, সে আপনার কথা জিজ্ঞাস করতে ছিল, বলতে ছিল, কেন একজনের জন্য সারা দেশের যোগাযোগ বন্ধ করা হইছে। স্যার স্যার আমি কোন মতে তারে বুঝাইতে গিয়া দেরি হইয়া গেছে। কমিশনারের কথায় মন্ত্রী ভয় পেয়ে বলল, বল কি মেডাম এই কথা তোমারে জিগাইসে। কমিশনার বলল তবে আর বলি কী স্যার। মগা বলল, কমিশনার এই শালার পাগল ছাগলের পাল্লায় পইরা মাথাটা আমার আউল্লা ঝাউল্লা হইইয়া গেছে, মনে কিছু নিও না । কমিশনার অনেক কষ্টে নিজের রাগকে দমন করে বলল, স্যার দেহেন দিহি কী কথা, আমি কী আপনার সাথে বেয়াদপী করতে পারি, তয় স্যার কথা আছে, আউজকা(আজকে ) আপনি ছাড়া যদি অন্ন কোণ হালার পুত এই কথা কইত, হেতের খবরই আছিল। হেতের সব হাডি গুডি ভাইঙ্গা যদি হাতে ধরাইয়া না দিতাম তো আমার নাম মানিক চাঁদই না। স্যার আপনে তো আপনি, আমি কি আপনার কথায় রাগ করতে পারি। মন্ত্রীর মনে ভয় ধরিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে বলল, স্যার একটা খারাপ খবর আছে। মগা উদ্দিন মগা রেগে গিয়ে বলল, রাখো তোমার খারাপ সংবাদ, আমিই যদি এই শালার পাগলার কামড়ে মরি, দেশ দিয়া আমি কী করমু, দেশ গোল্লায় যাক, আগে আমারে বাচাউ, নইলে কলম ---কিছু খারাপ কথা বলতে যেয়েও নিজের বিপদের কথা চিন্তা করে, অনেক কষ্টে মগা নিজেকে দমন করল। পুলিশ কমিশনার মনে মনে বলল, শালা, ক্ষমতা হাতে পাইয়া ধরাকে সরা জ্ঞান কড়তাছস, আইব য়াইব আমগো দিনও আইব, সেদিন, তোরে ধইরা পাছায় বাঁশ ও হাতে হারিকেন ধরাইয়া দিয়া বেত মরতে মারতে কইমু ক(বল) হারামজাদা ক(বল) আমি জা কইতে কই শুধু তা ক(বল)। মগা বলল কী কমিশনার চুপ মাইরা গেলা যে, যা বলতে চাইছিলা বলে ফেল। কমিশনার বলল, স্যার দেশের খবর না আমি আসলে আপনার ‘পা’ ধরে রাখা লোকটা সম্পর্কে বলতে চেয়ে ছিলাম। মগা বলল, এ কথা আগে বলবা না, তারাতারি বল তার সম্পর্কে কী জানতে পেরেছে। কমিশনার বলল, স্যার আসলে, আপনার ‘পা’ ধরে রাখা লোকটা সম্পর্কে, যতটুকু খবর পেয়েছি, তাতে বুঝা যাচ্ছে সে সম্ভবত একজন ভয়ংকর মৌলবাদী জঙ্গী, পাবনা থেকে এসেছে, তার নামে অনেকগুল খুনের কেস আছে, সে একজন সুইসাইড বোমারু, বোমা মারার আগে ধরা পরায় ,সে এখনও বেচে আছে। মগা বলল, এই ধরনের একজন একজন সুইসাইড বোমারু, ভয়ংকর মৌলবাদী জঙ্গীকে কেন তোমরা টাকা খাইয়া ছারলা। কমিশনার বলল, না স্যার আমরা তারে টাকা খেয়ে ছারি নাই আর স্যার সে টাকা দিবইবা কোথা থেকে, সে তো একটা ফকিরের ঘরে ফকীর, নিজেই খাইতে পায়না আর আমগো দিব টাকা। বরং আমরা তারে রিমান্ডে নিয়া এমন ধোলাই দিছি হেতের মাথার স্ক্রু সব ঢিলা হইয়া গেছে গা। মগা বলল, বল কী কমিশনার একদিকে সুইসাইড বোমারু, ভয়ংকর মৌলবাদী জঙ্গী অন্য দিকে আবার পাগলও। হায় হায় আজকে না ঘুম থেকে জেগে ঐ বজ্জাত সন্ত্রাস দমন মন্ত্রী ময়না পাখীর মুখ দেখছিলাম , এবার মরছিরে মরছি, হায় হায় পরওয়ারদিগার তুমি আমারে এই কোণ বিপদের মাঝে ফালাইলা। হেমায়েতের দিকে ভালভাবে লক্ষ্য করে দেখল, তার কাধে একটি কাপড়ের ব্যগ ঝুলানো এবং স্পস্টতই বুঝা যাছে ব্যাগের ভিতরে কোণ কছু লুকানো আছে, মগা ভাবল নিশ্চয় ব্যাগের ভিতরে বোমা আছে, আজকেই তাকে এই জঙ্গী হেমায়েত পাগলা বোমা দিয়ে উরিয়ে মারবে। একটা বিরাট ভয় এসে তার উপর ভর করল। অন্য দিকে বোমা গুজব দ্রত চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল, ফলে তার আস পাসের লোকজন নিরাপত্তার কথা ভেবে দ্রত কেটে পড়ল। এতে সে মানুষিক ভাবে একেবারে ভেংগে পড়ল। যে মগা কোণ দিন আল্লাহ্ রসুলের নাম নেই নাই, সেই মগাই আজকে বিপদে পরে মনে মনে আল্লাহ্ কাছে হাত তুলে বির বির করে দোয়া করতে থাকল, হে আল্লাহ তুমি আমার সকল গুনা খাতা মাফ কইরা দাও। মাওলা এমন কোন কারাপ কাজ নাই যা জীবনে করি নাই। বিরোধী দলের লোকদেরকে খামাখাই রিমান্ডের নামে হাড্ডি গুড্ডি ভাইঙ্গা দিছি। ক্ষমতার জন্য, মালের জন্য, প্রভাব বিস্তারের জন্য কত নিরপাধ লকদেরকে যে হত্যা, খুন, গুম করেছি, তার কোণ হিসাব নিকাশ নাই। মাওলাগো সবচেয়ে বড় বেয়াদপী করেছি নাস্তিক- মুরদাতদের পক্ষে কাজ করেছি আর তোমার প্রিয় বান্দা আলেম-ওলেমাদের খামাখাই ধইরা ধইরা জেলে ভরছি। তাদেরকে খামাখাই মৌলবাদী জঙ্গী বইলা, নিপীড়ন নির্যাতন করেছি। জাতীয় ফুল শাপলা এবং জতীয় ফল কাঁঠাল বাগেনের মধ্যে, তারা যখন তাদের সমাবেশ শেষে গভীর রাত্রে , তাহাজুদ নামায ও তোমার নামের জিকির করতে ছিল, তখন তাদেরকে বীনা কারনে শুধু মাত্র ক্ষমতা হারানোর ভয়ে নির্বিচারে গুলির পর গুলী চালাইয়া হত্যা করেছি ও লাশ গুম করেছি। জনতাকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য বলেছি, আপনারা যেটাকে ওলেমাদের রক্ত মনে করছেন সেটা আসলে রক্ত নয় লাল রং--- ---- পুলিশ কমিশনার মানিক মগার বির বির করে আওরানো কথা গুল ভালভাবেই বুঝতে পারলো। এতে খুশীতে তার দাত বের হয়ে পড়ল, মনে মনে বলল, শালা বহুত পেরেশান করছস, এবার বুঝ কত ধানে কত চাল, মগাকে উদ্দেশ করে বলল, স্যার আপনে কোন চিন্তা করবেন না , আমি এখনেই আসতাছি। এই বলে সে ফোন রেখে দিল।
চলবে ---
বিষয়: বিবিধ
১৫৩৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন