আক্কেল আলী ও খেজুর আলী (রম্য রচনা) বিষয় পুলিশের চাকরী -৩

লিখেছেন লিখেছেন আনিসুর রহমান ০৫ মার্চ, ২০১৫, ০৮:৫৪:০০ সকাল

থানায় বসে বসে আক্কেল আলী ও খেজুর আলী গাল গল্প করছে। আক্কেলের গালে সেদিন খাওয়া থাপ্পরের দাগটা এখনও স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। ঐই দাগের দিকে খেজুরের নজর পরায় খেজুর বলল, আক্কেল তোমার মুখে এইটা কিশের দাগ? আক্কেল বেজার মুখে বলল, খেজুর তুমি এত তারাতারি ভুললা কেমবায়। গতকালই না ঐ হাম্বার ঘরে হাম্বা, হেই ল্যাংড়ার ঘরে ল্যাংড়াডা আমার গালে এই দাগ ফালাইছে। খেজুর বলল আক্কেল ভুল হইয়া গেছে, মনে কছু নিয় না। আক্কেল বলল, খেজুর, তুমি কেন তোমার হুযুররে কউ না আমগোর জন্য দোয়া করতে যেন ঐ হালার ল্যাংরার হাত থেকে বাচতে পারি। খেজুর বলল, আক্কেল সে কি আগে ল্যাংড়া ছিল, তোমারে থাপ্পড় মারার পরে সে ল্যাংড়া হয় নাই। যদিও তুমি তারে গুলি করে ল্যাংড়া করছ কিন্ত এসবই আমার হুযুরের দোয়া। তাদের কথার মাঝে ছোকরা বয়সের এক কনস্টবল মাথা ঠুকিয়ে বলল, স্যার মনে কোন দুঃখ নিয়েন না। খালী স্যার আপনি একলা এই শালার হম্বার হতে মাইর খান নাই, এই দেখেন না আজকের পেপারে কী লিখছে। খেজুর দ্রত তার থকে খবরের কাগজটি নিয়ে পড়া শুরু করলো। খবর রাজশাহীর এক থানায় হাম্বা লীগের এক ছেলের বড় ভাইকে পুলিশ ক্রিমিনাল কেছে আটক করলে হাম্বা লীগের পোলাপান বিল্লা হয়ে পুলিশকে মেরে হাসপাতালে পাথিয়েছে। ঘটনার ---- আক্কেল বলল, থাক থাক আর পরতে হইবোনানে, আমারতো ভয় ভয় লাগতাছে। খেজুর আমার কী মণে হইতেছে জানো, মনে হয় আর সবার মত আমগোও এই হালার আম্বা-হাম্বার লাত্তি-গুতা খাইইয়া পালাইতে হইব। নয়লে(না হলে ) না জানি কবে এই হালার আম্বা-হাম্বা গোস্টির হতে মাইরদোর খাইয়া হেস মেস জীবনডা না হারাইতে হয়। দেহ দিহি এই হালার আম্বা-হাম্বা নিয়া কি বিপদের মাধ্যেই না পরলাম।

এ সময় খবর আসলো, মানণীয় পুলিশ মন্ত্রী মগাউদ্দিন মগা এক সমাবেশে বক্তিতা করতে যেয়ে ভয়ংকর মৌলবাদী জঙ্গী কতৃক আক্রান্ত হয়ে পরেছে। দেশ ব্যাপী এক হুলাহুল ব্যাপার শুরু হয়ে গেল। পুলিশ রাস্তা ঘাট বন্ধ করে দিয়ে তাকে উদ্ধারের জন্য ছুটল। আক্কেল আলী ও খেজুর আলী তাদের গাড়ি নিয়ে সেদিকে রওনা দিল। ঘটনা স্থানে যেয়ে আক্কেল আলী দেখল, বিশাল লম্বা চুড়া পলোয়ানের মত এক লোক পুলিশ মন্ত্রীর পা এমুন কায়দা করে ধরছে যে, সে যদি মন্ত্রীকে নিজে ইচ্ছা করে না ছারে তবে অন্য কারো পক্ষে তা ছাড়ানো খুবই মুশকিল। এক জন চামচা টাইপের হাম্বা লীগের ছেলে মন্ত্রীর পা ছারাতে যেয়ে লোকটার কামর খেয়ে পালিয়েছে। এখনও তার কামড়ের জায়গা থেকে দর দর করে রক্ত ঝরছে। তা দেখে অন্যন্যরা সাহস হারিয়ে মন্ত্রীকে রক্ষায় আর আগিয়ে আসছে না। সব থেকে বড় বিপদ হল এই সমাবেশে সংবাদিক সহ হাজার হাজার জনতা উপস্থিত, এই অবস্থায় মন্ত্রী আদেশ দিয়া গুলী মেরে ঐ লকটার খুলী উরাইয়া দিয়া সমস্যার সমাধান করবো তারও কোন উপায় নাই। লোকটা কেবলেই মন্ত্রীকে বলছে স্যার আমাকে মাফ কইরা দেন। মন্ত্রী যতই বলে, যা তোরে মাফ কইরা দিলাম। কিন্ত লোকটা মন্ত্রীর পা না ছেরে বরং আবারো বলছে স্যার আমাকে মাফ কইরা দেন। পুনঃ পুনঃ এই চলতেছে। আক্কেল আনেকটা সাহস নিয়ে গিয়ে ঐ লোকটিকে প্রশ্ন করল, ঐ মিয়া আফনের নাম কী? কোথা থেকে আইছেন। লোকটা আক্কেলের কথা পছন্দ করল, বলল আমার নাম হেমায়েত আলী, আমি পাবনা থেকে এসেছি। অতপর আক্কেল আলী পুলিশ মন্ত্রী মগাউদ্দিন মগাকে জিজ্ঞাসা করল, স্যার ঘটনা কী হেতে কেন আফনার কাছে বার বার মাফ চাইতাছে। এ কথা শুনার সাথে সাথে মগাউদ্দিন মগা হা হা করে হাসতে লাগল কিন্তু পরক্ষণেই আবার হু হু করে কাদা শুরু করল। এই আবস্থা দেখে আক্কল আলী বলল হালার যত পাগল ছাগল লইয়া পরছি। এতে মন্ত্রী খেপে গিয়ে বলল, দুই পয়সার এক জন অফিসার হইয়া আমারে তুই পাগল কইলি? আক্কেল আলী সাথে সাথে কথা ঘুরিয়ে বলল, তওবা তওবা কী যে কন স্যার, আফনেরে কী আমি এই কথা কইবার পারি, আফনে হইলেন আমাদের মা বাব। মন্ত্রী আরও খেপে গিয়ে বলল, অই মিয়া আমারে কী বোদাই মনে করছনি, আমার কান নাই, আমি শুনি নাই, আমার চোখ নাই আমি দেখি নাই। তখন আক্কেল আলী বলল, স্যার আফনি আপনি ঠিকই শুনছেন , ঠিকই দেখছেন মাগার বুঝবার পারেন নাইকা। মন্ত্রীর রাগ বেরে এবার চরমে গিয়ে পৌছল কোন মতে রাগ দমন করে বলল, অই মিয়া আমিকি কম বুঝিনি, হেরা কী আমারে আমার সক্কল দেইখা মন্ত্রী বনাইছে না আক্কল দেইখা মন্ত্রী বানাইছে। মন্ত্রীর আবস্থা দেখে ঘাবরে গিয়ে আক্কেল বলল, মানে মানে স্যার বলছিলাম কী আসলে আমিই আফনারে বুঝাইবার পারি নাইকা। মন্ত্রী বলল, সেইটা না বলবা। এবার আমারে বল তুমি পাগল ছাগল কেন বললা? আক্কেল বলল, স্যার আমি পাগল-ছাগল আফনেরে কই নাই, আমি কইছি অই বজ্জাত হেমায়তকে, দেহেন না পাগলের মত কেমতে হালায় আপনার পা ধইরা টানা টানি লাগাইছে। বহুত ভয়ে ভয়ে আছি স্যার না জনি হেমায়েত পাগলায় আফনার ঠ্যাঙডা ভাইঙ্গা হাতে ধরাইয়া দেয়। এতে মন্ত্রী ভয় পেয়ে বলল, ঐ বজ্জাতটা কী হাচা হাচা পাগলনি। আক্কেল তার হাসিটা অনেক কষ্টে দমন করে নিরীহ গোবেচারার মত বলল, কেমতে কই স্যার হইলে হইতেও পারে,দেহেন না নামডা হেমায়েত, আইছে আবার পাবনা থ্যাইকা । স্যার আপনারে নিয়া বহুতই চিন্তার মাধ্যে আছি। কহন কী ঘইটা যায় বলাতো যায় না,হায়াত মউদ সবই আল্লাহ্‌ হাতে। স্যার আপনি ভয় পাবেন না। আমি আছি না। এখুনি ঐ পাগলারে বুঝাইতাছি। তার আগে স্যার আফনি যদি আমারে কইতেন আফনি আমার কথা শুইনা এক বার হাসলেন এবং একবার কাঁদলেন কেন? তুমি আমারে ঐ পাগলার হাত থেকে বাচাইবাতো, স্যার যে কী কন, আমি আফনারে কথা দিছি না। আবশ্যই আফনারে বাচামু। এবার বইলা ফালান। তবে শুন, প্রথম বার আমি কাঁদলাম এ কারনে যে ঐ পাগলায় কেন আমার কাছে খামাখা মাফ চাইতাছে তা আমি জানি না বলে; আর পরে হাসলাম এই জন্য যে সে কী জন্য খামাখা আমার কাছে মাফ চাইতাছে তা না জানার পরও আমি তাকে মাফ কইরা দিছি বলে। আক্কেল বলল স্যার আমারে পাঁচটা মিনিট সময় দেন এক দৌরে যামু আর আসমু আর আফনার সমস্যার সমাধান কইরা দিমু।

চলবে---

বিষয়: বিবিধ

১০৬৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File