আক্কেল আলী ও খেজুর আলী (রম্য রচনা) বিষয় পুলিশের চাকরী ২
লিখেছেন লিখেছেন আনিসুর রহমান ০১ মার্চ, ২০১৫, ০১:২৩:৪৫ দুপুর
আক্কেল আলীদের বাসার দরজায় করার শব্দে তাদের আলাপের ব্যাঘাত ঘটে। আক্কেল উঠে যেয়ে দরজা খুলে খেজুরকে দেখতে পেয়ে বলে, আরে খজুর যে, হঠাৎ এসময়ে। খেজুর বলল, ভাল সংবাদ আছে, চাকুরী হয় গেল বলে। আক্কেল বলল, কউ কী মিয়া, খোলসা কইরা কউত। কী চাকুরী? আর পামুইবা কেমবায়। খেজুর তখন বলল, খুবই গোপন বিষয়, কাক পক্ষী যেন টের না পায়। আক্কেল বলল আরে মিয়া তুমি আমারে চিন না, আমি কী জীবনে কোন দিন কাউরে আসল কথা (সত্য কথা) কইছি(বলেছি) যে, তুমি কথা ফাশের ভয় পাইবার লাগছ। খেজুর বলল, তয় শুন, হয়রানির ভিতরে দিন রাত পুলিশ থাকতে থাকতে একেবারে চ্যাপ্টা হইয়া গেছে; জনবল কইমা ছাফা হইয়া গেছে, তাদের এখন অনেক লোক দরকার। আক্কেল বলল, কেন কেন কমছে কেন? খেজুর বলল, আবার জিংগায়(জিজ্ঞাস করে) কমলো কেন? আন্ধা নিহি। দেখবার লাগছ না, তারা এক দিকে জনতার মাইর খাইতাছে, অন্য দিকে হাম্বা লীগের পোলাপান খামাখাই যখন তখন লাত্তি –গুতা মারতাছে। চল তোমার শাহরিয়া মামার কাছে যাই, আশা রাখী হেতে আমগো জন্য পুলিশের একটা চাকরির ব্যাবস্থা করতে পারবো। আক্কেল বলল কিন্তু আমার যে কোন ডিগ্রী নাইকা। খেজুর বলল, আরে মিয়া এসব তুমি কী বলতাছ, কেন দেখ নাই আমাদের আশরাফ ফাস্ট ক্লাশ ফাস্ট হইয়াও ইউনিভারসিটির ল্যাকচারের চাকুরীটা পায় নাই, পাইলো গিয়া কোনমতে সেকেন্ড ক্লাশ পাওয়া হাম্বা লীগের খাম্বা হক। এই দেশে আসল সাটিফিকেট দিয়া কোন কাম হয় না—আক্কেল বলল, বুঝছি বুঝছি আর কইবার লাগবোনানে। শাহরিয়া, আক্কেলকে বলল, ঐ আক্কেল কার লগে প্যাচাল পারবার লাগছ। অক্কেল বলল, মামা আমগোর খেজুর। শাহরিয়া বলল, বাহিরে কেন, ঘরের ভিতরে এনে বসাও আলাপ আলোচনা করি।
খেজুর এসে মামাকে সব ঘটনা খুলে বলল, মামা বলল, তুমি এইডা জানলা কেমবায়, এইডা তো খুবই গোপনীয় বিষয়। খেজুর বলল, মামা আমার হুযুরের থেকে জেনেছি, কিন্তু মামা এইবার আমাদের চাকুরীর ব্যাবস্থা করে দিন । শাহরিয়া বলল, ঠিক আছে ঠিক আছে দেখী কী করা যায়। এ বলে সে বাসার উদ্দেশ্যে পথ ধরল।
আজকে আক্কেল আলী ও খেজুর আলীর পুলিশের চাকরির প্রথম দিন। হঠাৎ তাদের আফিসে হন্ত-দন্ত হয়ে হাম্বা লীগের দুই ছেলে মারতে মারতে এক ছেলেকে নিয়ে ঢুকল ও জিজ্ঞাসা করল আফিসার ইন চার্জকে। আক্কেল আলী খেজুর আলীকে দেখিয়ে দিল। তারা খেজুর আলীকে আদেশের শুরে বলল, এই আফিসার নবাবের মত বইসা আছেন কেন? আমাদের দেইখা সালাম কালাম কই? এই যে নেন পেট্রল বোমাবাজকে ধরে এনেছি , এরে লকার ভরেন ও আমাদের পুরস্কারের জন্য কাগজ পত্র দেন। আক্কেল বলল, খেজুর এরেতো আমি চিনি, অতিব ভাল ছেলে। এতে হাম্বা লীগের ছেলেরা রেগে গিয়ে বলল, অয় হালা এই মাল আবার কবে আইল এবং খুব জড়ে আক্কেলের গালে একটা চড় মারল , আচমকা কোন কিছু বুঝে উঠার আগে চড় খেয়ে আক্কেল বলল, বাবারে বাবারে গেছিরে গেছিরে। এতে খেজুর রেগে গিয়ে হাম্বা লীগের ছেলে দুইটিকে লক আপএ পুরল এবং নীরিহ ছেলেটাকে ছেরে দিল।
কিছুক্ষণ পর খেজুর আলীর টেবিলের ফোনটা ক্রিং ক্রিং শব্দে বেজে উঠল,খেজুর আলী ফোনটি রিসিপ করে বলল হ্যালো, ঐ পাশ থেকে একজন বলল, আমি পুলিশ কমিশনার বলছি, এই থানার ইন চার্চ কে? খেজুর বলল আমি স্যার। এবার ঐ পাশ থেকে পুলিশ কমিশনার রাগান্বিত স্বরে বলে চলল, মিয়া তোমারে চাকরি দিছে কে? তুমি কি মঙ্গল গ্রহ থেকে আইছ? কোন সাহসে তুমি আমুক নেতার গুন্ডা ভাতিজাকে লকআপে ঢুকাইছ? এবার খেজুর ব্যাখা করে বলল, স্যার অন্য কোন বিষয় হলে কথা ছিল। সে আমার থানায় এসে আমার লোকের গায়ে হাত তুলেছে। পুলিশ কমিশনার বলল, কেন তোমারে ট্রেনিং এর সময় বলে নাই, তোমরা অপরাধী ও নিরঅপরাধী নির্বিশেষে বাংলাদেশের সমস্ত জনতাকে লাত্তি-গুতা, হত্যা, খুন-গুম করতে পারবা কিন্তু---। খেজুর আলী কমিশনারকে কথা শেষ করতে না দিয়ে মাঝ পথে বলল, হ হ শুনছি শুনছি, আপনিইতো বলছিলেন স্যার গুলি, হা ডু ডু , গুল্লাছুট খেলার জন্য দেন নাই। আক্কেল আলী খেজুর আলীর এ কথা শুনার সাথে সাথে তার বন্দুকটা নিয়ে লকআপ এ বন্দী হাম্বা লীগের নেতার দিকে রওয়ানা দিল, আর খেজুরকে উদ্দেশ্য করে এ কথা বলতে থাকল, হালার পুতেরে আওজকা(আজকে) খাইছি, কী ভুলটাই না করছি গুলি নিয়ে হা ডু ডু , গুল্লাছুট খেলার কথা ভুলছি, আক্কেল আলী সময় নষ্ট না করে টারগেট লক্ষ্য করে গুলী করল। ঐ পাশ থেকে হঠাৎ গুলীর শব্দ শুনে কমিশনার মনে করলো হাম্বা লীগ এর পোলাপান বুঝি থানা আক্রমণ করেছে। ভবিৎষতে ভাল ধরনের ঝামেলায় জরিয়ে পরার কথা চিন্তা করে ভয় পেয়ে গেল। তাই সে ভয়ে ভয়ে বলল, আফিসার তুমি ঠিক আছতো, কিশের শব্দ। খেজুর আলী বলল, স্যার সব ঠিক আছে, কোন চিন্তা করবেন না, আপনার কথামত হাম্বা লীগের ঐ দুই হারামীর ঠ্যাঙ গুলী কইরা ভাংইগা দিছি। এই কথা শুনা মাত্র পুলিশ কমিশনার নিজের আসন্ন বিপদের কথা ভাবিয়া ঘামতে লাগল। রাগে দুঃখে হিতাহিত জ্ঞান হারাইয়া খেজুর আলীকে বলল, শালা ভোন্দা গাজী গরুর লেজ। আবালের ঘরে আবাল। শালা বেয়াকুফ আমার পুরা কথা শুনার আগে তোরে মাদবরী করতে কইছে কে? হালার বলদ জানস না আম জনতার জন্য এক নীতি আর আম্বা ও হাম্বা লীগের জন্য আরেক নীতি। তখন খেজুর আলী বলল , স্যার এই কথা আপনি আগে কইবেন না। খেজুরের এই কথা শুনে কমিশনার রাগে গর গর করতে করতে বলল শালা আরেক বার যদি আমার পুরা কথা না শুনে উল্টা পাল্টা কাজ করছ তো তরে আমি বোমা দিয়া উরামু, তরে আমি--- কমিশনার হঠাৎ চেয়ার থেকে পরে যেয়ে বলল, বাবারে বাবারে গেলামরে গেলামরে। খেজুর আলী রেগে গিয়ে বলল, মর শালা, আমারে কয় বোমা দিয়া উরাইবো। আক্কেল আলী বলল, এক্কেবারে উচিত শিক্ষা হইছে।
চলবে ---
বিষয়: বিবিধ
১২৬৬ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এই আক্কেল টুক যদি আমাদের পুলিশদের থাকত!
মন্তব্য করতে লগইন করুন