গণ-আন্দোলন থেকে গণ-অভ্যুত্থান: ১৯ কারণে সফলতার দ্বারপ্রান্তে

লিখেছেন লিখেছেন আনিসুর রহমান ১৬ জানুয়ারি, ২০১৫, ০৬:৫৭:২০ সকাল

বর্তমানে দেশে একটি অনির্বাচিত সিভিলিয়ান স্বৈরাচারী সরকার পুলিশ, বিজেবি ও র্যেব দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে আছে। গণবিরোধী ও অবৈধ সরকারের পতনের লক্ষ্যে রাজপথ এখন অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে। বীর জনতা অবরোধ কর্মসূচি সফল করে ফ্যাসিবাদী ও জুলুমবাজ সরকারের প্রতি গণঅনাস্থা জানিয়েছে। সচেতন জনগণ ও সকল শ্রেণী পেশার মানুষ বাকশালী সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত কোন ভাবেই রাজপথ ছাড়বে না। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন গণবিস্ফোরণে সরকারের বিদায় এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

বর্তমান গণ-আন্দোলনের যৌক্তিকতা ও সফলতার দ্বারপ্রান্তে যে কারণে:

১. বর্তমান গণ-আন্দোলনের গ্রাউন্ড ও যৌক্তিকতা সর্বজনস্বীকৃত। দেশের সচেতন নাগরিকসহ বিরোধী দলের নেতা কর্মীরা মনে করেন রাজপথের ব্যাপক আন্দোলন ছাড়া বর্তমান রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের আর কোনো পথ নেই। ৫ জানুয়ারীর প্রহসনের নির্বাচনকে নিয়ম রক্ষার নির্বাচন মেনে নিয়ে পুরো এক বৎসর সরকারকে সময় দেয়া এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের মাধ্যমে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট দেশের নাগরিকবৃন্দের মধ্যে একটা পরিস্কার বার্তা দিতে সক্ষম হয়েছে যে জবরদখলকারীরা শান্তিপূর্ণ সমাধানের সব পথ বন্ধ করে দিয়েছে এবং অবৈধ ক্ষমতাসীনরা মধ্যবর্তী নির্বাচনের সংলাপ থেকে সরে যাওয়ায় আন্দোলন ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই।

২. ২০ দলীয় জোটের প্রধান বিএনপির চেয়ারপারসনকে তার অফিসে অন্তরীণ রেখে জবরদখলকারীরা বর্তমানে বেশ বিব্রত পরিস্থিতে রয়েছে বিধায় জনরোষ প্রতিনিয়ত বিরোধী দলের গণ-আন্দোলনের নৈতিক ভিত্তি শক্ত করেছে।

৩. বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া শুধু গণ-আন্দোলনের ডাকই দেননি, দলের নেতা কর্মীর সাথে একাত্ম হয়ে বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকেও তৃণমূল নেতা কর্মী এবং বিক্ষুব্ধ নাগরিকদের প্রতিরোধের প্রেরণার উৎস হয়ে আছেন। অন্তরীণ অবস্থা থেকে তার হৃদয়গ্রাহী আহবান দেশব্যাপী সাড়া জাগিয়েছে।

৪. বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আবেদনময়ী ও বাস্তবধর্মী বক্তব্য চলমান গণ-আন্দোলনকে বেগবান করেছে। তার 'বেটার বাংলাদেশ' গড়ার দৃপ্ত প্রত্যয় আন্দোলনে যোগ করেছে নতুন মাত্রা যা তরুণ প্রজন্মসহ সকল স্তরের নাগরিকদের আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ার প্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করছে। তারেক রহমানের জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে তার বক্তব্য জনগনের কাছে পৌছানো বাধাগ্রস্থ করতে আজ্ঞাবহ আদালতের মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আর এর মাধ্যমে গণ আন্দোলনের প্রাথমিক বিজয় অর্জিত হয়েছে বলে মনে করেন অনেকে।

৫. স্বৈরাচারী সরকার গণ-আন্দোলনে হতবিহ্বল হয়ে দেশকে গৃহ যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। দেশে গৃহযুদ্ধ অত্যাসন্ন। কারণ আমরা সাধারণত দেখি যে, আন্দোলনরত মানুষ তাদের ক্ষোভ বিভিন্নভাবে প্রকাশ করে থাকেন। কিন্তু অবৈধভাবে ক্ষমতাসীনরা রাষ্ট্রশক্তির সুযোগ সুবিধা ব্যবহার করে তাদের পেটোয়া বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে শুরু করেছে দেশের জনগনের বাসা বাড়িতে হামলা আর গুলি চালিয়ে গুপ্ত হত্যার মত ন্যাক্কারজনক ঘটনা। গাপালগঞ্জের র্যাব আর পুলিশের বন্দুকের বুলেট এই সরকারের প্রাণ ভ্রমরা। কিন্তু গাপালগঞ্জের র্যাব আর পুলিশের বিরুদ্ধে দেশের সাধারণ জনগণ ছাড়াও দেশের সকল আইন শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত বাকি সদস্যদের ক্ষোভ ফুসে উঠছে। তাই দেশের অস্তিত্বের স্বার্থে বর্তমান গণ আন্দোলন যৌক্তিক পরিণতির দিকে যেতে বাধ্য। আর বর্তমান গণ-আন্দোলনের বিপরীতে জবরদখলকারী সরকার কোনো ধরনের যৌক্তিক বক্তব্য উপস্থাপন করতে না পারায় গত ১২ তারিখের আওয়ামীলীগের সমাবেশ ফ্লপ করেছে।

৬. বিদেশী মিডিয়া, দাতা সংস্থা ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনসমূহ এবং উন্নয়ন সহযোগীরা দেশের নাগরিকদের প্রতিক্রিয়ার পক্ষে অবস্থান নিচ্ছে। যে কারণে শেখ হাসিনা ক্ষিপ্ত হয়ে বিভিন্ন দেশের সাথে কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত আচরণ করেই চলছেন।

৭. দেশের সকল নাগরিকের চিন্তায় এই কথা বদ্ধমূল হয়েছে যে, শেখ হাসিনার অবৈধ সরকারকে কঠোর আন্দোলন ছাড়া রাজনৈতিক সমাধানে বাধ্য করা সম্ভব নয়। তাই গণ আন্দোলনকে গণ অভ্যুত্থানে রুপান্তরের প্রচেষ্টায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ পুরো জাতি

৮. বর্তমান জবরদখলকারীদের দ্বারা সংশোধিত সংবিধান ও আদালতকে নগ্নভাবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থে ব্যবহারের কারণে দেশের জনগণ মর্মে মর্মে অনুধাবন করছে যে শেখ হাসিনা তার পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের বাকশালের চেয়েও ভয়ংকর একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করেছেন।

৯. ভয়, ভীতি এবং প্রলোভন দিয়ে দেশের সকল মিডিয়ার কন্ঠ রোধ করার কারণে দেশবাসী বিক্ষুব্দ হয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আন্দোলনকে প্রতিনিয়ত বেগবান করছে।

১০. বিগত কয়েকদিনের অবরোধে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সংখ্যক সুবিধাভোগী বিশেষ করে দুই একটি জেলার পুলিশ ব্যতিত অন্যরা আর আগের মত বিরোধী দলের নেতা কর্মীর উপর ঝাপিয়ে পড়ছে না।

১১. আওয়ামী লীগের দলীয় সুবিধাভোগি কিছু কার্টুন চরিত্র ব্যাতিত এখনো দেশের জনগণ যাদেরকে ইতিবাচক হিসেবে দেখে থাকে তারাও বর্তমান ফ্যাসিবাদী আচরণকে ভবিষ্যত রাজনীতি ও নিজেদের নিরাপত্তার অন্তরায় বলে মনে করছে বিধায় তারা মাঠ থেকে দূরত্ব বজায় রাখছে।

১২. দেশের আপামর জনসাধারণের মনে যৌক্তিক বদ্ধমূল ধারণা জন্মেছে যে এ গণ আন্দোলন ব্যর্থ হলে দেশের স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্ব বিলীন হবে এবং বাংলাদেশ স্ট্রাটেজিক্যালি সম্প্রসারনবাদের করতলগত হবে।

১৩. দেশের নাগরিকদের কাছে প্রতীয়মান যে মুক্তিযুদ্ধের ফসল গণ শত্রুদের কাছে চলে যাওয়ায় আজকের দু:সহ রাজনৈতিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে যা তারেক রহমানের কন্ঠে প্রতিধনিত হওয়ায় জনগণ তার সাথে একাত্বতা অনুভব করে গণ আন্দোলনকে গণ গণঅভ্যুত্থানের দিকে নিয়ে যাচ্ছে

১৪. বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের বাইরের সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি দেশের সুশীল সমাজ ও বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংগঠনগুলোও সরকারকে সংলাপসহ রাজনৈতিক সমাধানের জন্য প্রেসার গ্রুপ হিসেবে কাজ করা শুরু করেছে বিধায় গণ-আন্দোলনের পালে নতুন হাওয়া যোগ হয়েছে।

১৫. বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে এখন আর কেউ কারো স্থায়ী বন্ধু বা শত্রু নয়। ভারতের সমর্থন এখন আর কোনো দলের পক্ষে থাকবে না বলে প্রকাশ্যে ঘোষণা আসার পর এটা পরিস্কার যে, ভারত বাংলাদেশের জনগণের বিরদ্ধে অবস্থান নিয়ে উটকো ঝামেলায় জড়িয়ে নিজেদেরকে আর বিতর্কিত করতে চাইবে না। এছাড়া ক্ষমতাসীন বিজেপির সাথে বিএনপি বা তার জোটের সহমর্মিতার সাথে কাজ করার পূর্ব অভিজ্ঞতাও রয়েছে।

১৬. সর্বোপরি মুক্তিযুদ্ধের সময়েও বিএলএফ সৃষ্ঠি করে স্বাধীনতা যুদ্ধকে সাবোটাজ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। এমনকি সম্প্রতি শিরীন শারমিন সম্পাদিত 'তাজ উদ্দিন আহমেদ নেতা ও পিতা' গ্রন্থে পরিস্কারভাবে উল্লেখ করেছেন যে 'মুজিব বাহিনী' তৎকালীন প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজ উদ্দিন আহমেদকে হত্যা পর্যন্ত করতে চেয়েছিল। তাই চলমান আন্দোলনকে সরকারের পক্ষ থেকে অথবা ঘাপটি মেরে থাকা সুযোগ সন্ধানীরা সাবোটাজ করার চেষ্টা করতে পারে। কিন্তু বিরোধী দলের গণ আন্দোলন থেকে রূপ নেয়া গণ অভ্যুত্থানকে দমিয়ে রাখার শক্তি কারোর নেই, এটা নিশ্চিত।

১৭. বর্তমান গণ-আন্দোলনকে বিরোধী দলসহ দেশের মানুষ বাচা মরার সংগ্রাম হিসেবে দেখছেন। কারণ এ আন্দোলন থেকে পিছপা হওয়ার অর্থ হলো নিজেকে বর্তমান ফ্যাসিবাদের কাছে জিম্মি করার পাশাপাশি নিজের জীবনকে অন্যের হাতে সপে দেয়া। খেলা যখন শুরু হয়েছে জীবন আর মরণের তাই কাপুরুষের মত মরণের চেয়ে বীরের মত মরাই উত্তম মনে করবে বিরোধী দলের নেতা কর্মীসহ দেশের মুক্তিপাগল জনগণ। 'বীর মরে একবার আর কাপুরুষ মরে বার বার'। এই মন্ত্রই বর্তমান গণ আন্দোলনকে গণ অভ্যুত্থানের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

১৮. পরিশেষে এবারের গণ-আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত নেতা কর্মীসহ সাধারণ জনগনের তালিকা করা হচ্ছে। আন্দোলনে ত্যাগী নেতা কর্মীকে যথাযথ মূল্যায়নের পাশাপশি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের বীর সৈনিক হিসেবে জাতি যাতে তাদেরকে কৃতজ্ঞচিত্তে চির দিন স্মরণ রাখে তার দিকে লক্ষ্য রাখা হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। যার কারণে এবারের আন্দোলনে নেতা কর্মীরা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত বিধায় আন্দোলন সফল হতে বাধ্য।

১৯. দেশে রক্তপাত ও আশু গৃহযুদ্ধ ঠেকাতে আজ আবারো দেশ প্রেমিক সকল নাগরিকের ঐক্য অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছে । যে ঐক্য রক্ষা করবে সম্প্রসারণবাদের কবলে জিম্মী জাতিকে এবং মুক্ত করবে দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী ও ধর্মীয় মূল্যবোধসম্পন্ন সকল মানুষের ঐক্যের প্রতীক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষ ফিরে পাবে তাদের ভোটের অধিকার, দেশে পূণ: প্রতিষ্টিত হবে গণতন্ত্র আর আইনের শাসন। গণ-আন্দোলনে সফলতার মাধ্যমে গণতন্ত্রের প্রতীক বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশনায় জাতি অপেক্ষার প্রহর গুনছে নতুন করে গড়তে তারেক রহমানের 'বেটার বাংলাদেশ'।

লেখক: গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক, সাবেক সহকারী অধ্যাপক শাহ জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।

copy past 100%

বিষয়: বিবিধ

৯৯৮ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

300386
১৬ জানুয়ারি ২০১৫ দুপুর ১২:০৩
আবরণ লিখেছেন : @আনিসুর রহমান। আপনার বিশ্লেষনধর্মী লেখাটি পড়ে ভাল লেগেছে। আপনার লেখা পড়ে আন্দোলনরত লক্ষ দেশ প্রেমিক মানুষ আরও বেশী দেশপ্রেম নিয়ে চলমান আন্দোলনে শরিক হবে । ভাল থাকবেন। ধন্যবাদ।
১৭ জানুয়ারি ২০১৫ সকাল ০৬:২৭
243139
আনিসুর রহমান লিখেছেন : Thanks for reading my post and your comment
300396
১৬ জানুয়ারি ২০১৫ দুপুর ০২:১৪
সুশীল লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
১৭ জানুয়ারি ২০১৫ সকাল ০৬:২৯
243140
আনিসুর রহমান লিখেছেন : Thanks for your comment

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File