বঙ্গবন্ধু থেকে রাজাকার

লিখেছেন লিখেছেন আনিসুর রহমান ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৬:০৮:৩৭ সকাল

সম্প্রতি লন্ডনে বিএনপি সিনিয়র ভাইস চ্যেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান যুক্তি তর্ক উপস্থাপন করে শেখ মুজিবুর রহমানকে রাজাকার বলা যায় কিনা জানতে চাইলে সমবেত উপস্থিতি তাতে সম্মাত হয়। বিষয়টির একটি নির্মোহ বিশ্লেষণ করব।

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ প্রথম রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভূমিকা কি ছিল সে বিষয়ে মাঝে মাঝে অনেকে শংসয় ব্যক্ত করেন। জানতে চান । তাদের জন্য ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ দৈনিক বাংলায় প্রকাশিত জিয়াউর রহমানের ‘একটি জাতির জন্ম’ পাঠ অনেক প্েরশ্নর উত্তর। এ প্রবন্ধ থেকে জানা যায় ১৯৫২ থেকে কিশোর জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশের স্বাধীনতার লক্ষে মানষিক প্রস্তুতি সম্পর্কে। প্রবন্ধটিতে ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু’ শব্দ দুটি নিয়ে আমার সংশয় রয়েছে। সংবাদ কর্মের সাথে যুক্ত থাকার কারনে আমি চেষ্টা করি নিয়ামত সংবাদের উপর চোখ রাখতে। সংবাদ পর্যালোচনায় দেখা যায় শব্দ দুটি কেউ কেউ ব্যবহার করেন, আবার অনেকে করেননা। এইতো সেদিন একটি লেখায় লিখলাম “বিএনপি চ্যেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া” আমাদেরসময় লিখল “খালেদা জিয়া” । বেগম খালেদা জিয়াকে এক নামে বিশ্বের সবাই চেনেন। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তাঁর ভুমিকার জন্য বিবেকবান দেশপ্রোমিক মানুষ মাত্রই অন্তর থেকে তাকে শ্রদ্ধা করে। আমি নিজেকে একজন বিবেকবান দেশপ্রোমিক মানুষ মনে করি। যাক সে কথা। নিষ্ঠুর শাষক শেখ মুজিবের সময়কালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শব্দ দুটি সম্পাদকের যুক্ত কিনা সে প্রশ্ন অত্যন্ত বৈধ।

গন মাধ্যমের কন্ঠ রোধ ফ্যাসিষ্টদের এক অন্যতম বৈশিস্ট। শেখ মুজিব তার ফ্যাসিবাদি মনোভাবের কারনে বহুদলীয় গণতন্ত্রের স্থলে একদলীয় বাকশাল কায়েম করেন। এর সাথে বন্ধ করে দেন চারটি বাদে সকল সংবাদপত্র বন্ধ করে দেন। শেখ হাসিনার শাসন ও তার পিতার শাসন থেকে কম নিষ্ঠুর নয়। তিনিও বন্ধ করে দিয়েছেন বহুদলীয় ব্যবস্থা। রুুদ্ধ করেছেন গনমাধ্যমের কন্ঠ। দৈনিক বাংলা শেখ মুজিবের শাসনামলে টিকে থাকতে পারলেও বন্ধ হয়ে গেছে তার কন্যার শাসনামলে। ‘একটি জাতির জন্ম’ প্রকাশ করাই কি তবে দৈনিক বাংলার মৃত্যু ঘন্টা বাজিয়ে দিয়েছিল? যাহোক বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা খেতাবটি তৎকালীন ডাকসু ভিপি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে ১৯৬৯ সালের ২৩ শে ফেব্রুয়ারী শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রদান করেন। ১৯৭৩ সালের ১ জানুয়ারি ছাত্রদের প্রতিবাদ মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে মতিউল ইসলাম ও মির্জা কাদের নামের দুই ছাত্রকে হত্যা ও সাংবাদিক সহ আরো ছয়জনকে গুরুতর আহত করার প্রতিবাদে পল্টন ময়দানে বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা খেতাবটি সেই একই ব্যাক্তি প্রতাহর করে নেন। সুতরাং শেখ মুজিবুর রহমানকে মরনত্তোর রাজাকার খেতাব দেয়ার যথার্থতাই এখনকার বিবেচ্য। আমি শুধু তথ্য তুলে ধরব। সিদ্দান্ত নেয়ার ভার পাঠকের।

রাজাকার কে? রেজাকার বা রাজাকার হলো ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী কর্তৃক গঠিত একটি আধাসামরিক বাহিনী। এটি অখন্ড পাকিস্তানপন্থী বাঙালি এবং উর্দুভাষী অবাঙালি অভিবাসীদের নিয়ে গঠিত হয়। অবরুদ্ধ বাংলাদেশে স্বাধীনতার জন্যে লড়াইরত মুক্তিবাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য ১৯৭১ সালের মে মাসে খুলনায় প্রথম রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়। খানজাহান আলী রোডে একটি আনসার ক্যাম্পে ৯৬ জন জামায়াতে ইসলামী কর্মী সমন্বয়ে জামায়াতে ইসলামীর পূর্ব পাকিস্তান শাখার সহকারী আমীর মাওলানা এ কে এম ইউসুফ প্রথম রেজাকার বাহিনী গঠন করেন। তবে পরবর্তীকালে জনগণের কাছে 'রেজাকার' শব্দটি 'রাজাকার' শব্দে পরিণত হয়। আরবী শব্দ রি'দাকার (ﺭﺎﻜﺎﻀﺭ) থেকে মূলত শব্দটির উৎপত্তি। এর অর্থ স্বেচ্ছাসেবক (স্বেচ্ছায় যারা কাজ করেন)।[১] রেজাকার বাহিনী কোরআন ছুঁয়ে শপথ নিতেন, "আমি আইনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তানের সংবিধানের প্রতি সত্যিকার আনুগত্য প্রদর্শন করব এবং জীবন দিয়ে হলেও পাকিস্তানকে রক্ষা করব।" সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ তার উপন্যাস নাটকে ঘৃণ্য অর্থে ‘তুই রাজাকার’ শব্দটির সফল ব্যবহার করেন। এখন আসুন ৭ই মার্চ থেকে ২৫শে মার্চ পর্যন্ত সময়ের ঘটনা প্রবাহ ধারাবাহিক ভাবে দেখা যাক-

৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ঘোষণা আমাদের কাছে এক গ্রীন সিগন্যাল বলে মনো হলো। [একটি জাতির জন্ম - জিয়াউর রহমান]। ৭ ই মার্চ ঢাকার সেনা সংখ্যা ছিল ১২ হাজার। ঐদিন স্বাধীনতার ঘোষণা ও সামরিক নির্দেশনা পেলে পাকিস্তানী বাহিনিকে পরাস্থ করা সম্ভব হত। কারন তখন মোতায়েন কৃত সেনার মাঝে নন পাকিস্তানীর সংখ্যা বেশী ছিল। মাইলস ব্যন্ড এর শিল্পী হামিন - সাফিন এর মামা তখন সেনাবাহিনীতে একজন মেজর হিসাবে গোয়েন্দা শাখায় কর্মরত। তিনি একটি ম্যাপ তৈরী করেন যাতে দেখানো হয় পাকিস্তানীর সেনাবাহিনীর কে কোথায় আছে। ম্যাপটি মুজিবের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ সময় ম্যাপে দেখানো ‘ঢাকা বিমান বন্দর, চট্টোগ্রাম সমুদ্রবন্দর, এবং দেশের একমাত্র তেলের ডিপোটি ধ্বংশ করে দিলে পাকিস্তানী বাহিনি সহজে শক্তি বৃদ্ধি করকে পারতনা। বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট থেকে ১১ টা ট্যাঙ্ক ঢাকায় নেয়া হয়। ঢাকার অলিতে গলিতে যাতে নিঃশব্দে চলতে পারে সেজন্য ট্যাঙ্ক গুলোয় রাবার বেল্ট পরানো হয়। ২৫ মার্চ সংগঠিত প্রশিক্ষিত বাহিনীকে তছনচ করে দিতে পাকিস্তানী হানাদদাররা প্রথমেই হামলা করে রাজারবাগে। সেইসাথে গনহত্যা চালায় পুরা ঢাকা শহরে। ঐ হামলায় পাকিস্তানী হানাদদাররা ট্যাঙ্ক ব্যবহার করে।

১৩ই মার্চ শুরু হলো বঙ্গবন্ধুর সাথে ইয়াহিয়ার আলোচনা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে পাকিস্তানীদের সামরিক প্রস্তুতি হ্রাস না পেয়ে দিন দিনই বৃদ্ধি পেতে শুরু করলো। প্রতিদিনই পাকিস্তান থেকে সৈন্য আমদানি করা হলো। বিভিন্নস্থানে জমা হতে থাকলো অস্ত্রশস্ত্র আর গোলাবারুদ। সিনয়র পাকিস্তানী সামরিক অফিসাররা সন্দেহজনকভাবে বিভিন্ন গ্যারিসনে আসা যাওয়া শুরু করলো।

এ সময় বিবিসির বাংলা বিভাগের প্রধান সেরাজুর রহমানের বড় ভাই এয়ার কমোডর মাহবুবুর রহমান তাঁর এক সহকর্মীর মাধ্যমে ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবকে অবগত করেন যে আলোচনার আরালে প্রতিরাতে পাকিস্তানী কমান্ডো দেশে অবতরণ করছে পাকিস্তানের ক্ষমতা হস্তান্তরের ইচ্ছা মেটেও নেই। সংবাদদাতাকে শেখ মুজিব বলেন ‘কিছু হবেনা। নাকে তেল দিয়ে ঘুমা। অফিসারটি ঢাকা ক্যান্টমেন্টের অফিসার্স মেসে মদ খেয়ে মাতাল অবস্থায় সব তথ্য ফাঁস করে দিলে মাহবুবুর রহমানকে কৌশলে ঢাকা ডেকে এনে গ্রেফতার করা হয়। ৬৬ দিনের নির্মম নির্যতনে চিরকালের মত সুস্থতা হারান ।

১৮ই মার্চ জেনারেল ওসমানি বায়তুল মোকাররামের সামনে অবসর প্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের নিয়ে এক মিছিল করেন। মিছিলে এ কে খন্দোকারও ছিলেন। মিছিল শেষে তাঁরা ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে গিয়ে শেখ মুজিবের সাথে দেখা করে পাকিস্তান সময় ক্ষেপন করে শক্তি বৃদ্ধি করছে তাদের ক্ষমতা হস্তান্তরের ইচ্ছা মেটেও নেই। মুজিব তাদের এ বিষয়ে একটি রিপোর্ট তৈরী করে তাজ উদ্দীনের কাছে দিতে বলেন।

মার্চে চট্টগ্রামে নৌ-বাহিনীরও শক্তি বৃদ্ধি করা হলো। মুজিব ১৯, ২০, ২১, ২৩ এবং ২৪ মার্চ পাকিস্তানীদের সঙ্গে তৎকালীন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল(বর্তমানে রুপসী বাংলায়) দফায় দফায় বৈঠক করেছিলেন । এমনকি বৈঠকে স্বাধীকারের জন্য চার দফা চুক্তিতেও উপনীত হয়েছিলেন। এই আপসরফার আলোচনার সময়কালে ঢাকায় পাকিস্তানী সৈন্য সংখ্যা দাড়ায় লক্ষাধিক।

১৯৭১ সালে ঢাকায় সামরিক শাসক টিক্কা খানের গণসংযোগ কর্মকর্তা মেজর সিদ্দিক সালিক তার লিখিত ‘উইটনেস টু নারেন্ডার’ পুস্তকে দাবি করেছেন ২৩শে মার্চ পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ও পূর্ব পাতিস্তান আওয়মিলীগের প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের মধ্যে আলোচনাকালে মুজিব ইয়াহিয়াকে এ অনুরোধ করেন ... “আমাকে গ্রেফতার করুন। অন্যথায় চরমপন্থীরা স্বাধীনতা ঘোষণা করতে পারে।”

২৪শে মার্চ শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাষায় “ব্রিগেডিয়ার মজুমদার ঢাকা চলে এলেন। সন্ধ্যায় পাকিস্তানী বাহিনী শক্তি প্রয়োগে চট্টগ্রাম বন্দরে যাওয়ার পথ করে নিল। জাহাজ সোয়াত থেকে অস্ত্র নামানোর জন্যেই বন্দরের দিকে ছিল তাদের এই অভিযান। পথে জনতার সাথে ঘটলো তাদের কয়েকদফা সংঘর্ষ। এতে নিহত হলো বিপুল সংখ্যক বাঙালী। সশস্ত্র সংগ্রাম যে কোনো মুহূর্তে শুরু হতে পারে, এ আমরা ধরেই নিয়েছিলাম। মানসিক দিক দিয়ে আমরা ছিলাম প্রস্তুত। পরদিন আমরা পথের ব্যারিকেড অপসারণের কাজে ব্যস্ত ছিলাম। তারপর এলো সেই কালো রাত। ২৫শে ও ২৬শে মার্চের মধ্যবর্তী কালো রাত। রাত ১টায় আমি বললাম, আমরা বিদ্রোহ করলাম। ... তাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলাম। আমি সংক্ষেপে সব বললাম এবং তাদের নির্দেশ দিলাম সশস্ত্র সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে। আমি তাদের একটা সামরিক পরিকল্পনা দিলাম। তখন রাত ২টা বেজে ১৫ মিনিট। ২৬শে মার্চ। ১৯৭১ সাল। ” সূত্রঃ একটি জাতির জন্ম

এবার দেখা যাক ধানমন্ডী ৩২ নং এ মার্চ ২৫ কি ঘটেছিলো:

২৫ শে মার্চ ইয়াহিয়া এবং ভুট্টোর ভেতর ৪৫ মিনিটের ১টি মীটিং হয়।শেখ মুজিব পূর্বঘোষণা অনুযায়ী ২৫শে মার্চে ইয়াহিয়ার ভাষনের জন্য অপেক্ষা করেন। ইয়াহিয়া বিকাল ৫: ৪৫ এ প্রেসিডেন্টস হাউজ থেকে বেরিয়ে সোজা ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে যান এবং সেখান থেকে গোপনে এয়ারপোর্ট যান। এর সাক্ষি ছিলেন এ কে খন্দোকার। [ক্যাঃ রফিকের কলাম , ২৫ মার্চ , ২০১০ , ইত্তেফাক]

সন্ধ্যা ৬:০০ :

সুপরিচিত পাকিস্তানী সাংবাদিক তারিক আলীর পিতা মাজহার আলী এবং রেহমান সোবহান শেখ মুজিবের সাথে দেখা করেন এবং তাকে জানান মিলিটারী ক্র্যাকডাউন আসন্ন।

[ সূত্র: বাংলাদেশের অভ্যুত্থান এবং একজন প্রতক্ষ্যদর্শীর ভাষ্য , রেহমান সোবহান , ভোরের কাগজ প্রকাশনী , ১৯৯৪ ]

শেখ মুজিব এরপরও ইয়াহিয়ার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকেন এবং আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ১জন সংবাদবাহক স্থানীয় এবং বিদেশী সাংবাদিকদের মাঝে ১টি প্রেসনোট বিলি করেন যেটিতে উল্লেখ করা হয়:

“প্রেসিডেন্টের সাথে আলোচনা চুড়ান্ত হয়েছে, ক্ষমতা হস্তান্তরের মতানৈক্য হয়েছে এবং আমি (বংগবন্ধু) আশা করি প্রেসিডেন্ট তা ঘোষনা করবেন”।

এবিষয়ে অ্যান্থনি মাসকারেনহাস বলেন:

“আমার দুঃখ হয় , এই নির্বুদ্ধিতা সম্পর্কে আমার কোন মন্তব্য নেই”

[ সূত্র: রেপ অব বাংলাদেশ , অ্যান্থনি মাসকারেনহাস , অনুবাদ মযহারুল ইসলাম , ১৯৭৩ , পৃষ্ঠা:১১৩ ]

শেখ মুজিব তখনো ১ টি ফোনকলের অপেক্ষায় ছিলেন।এবং ডঃ কামাল হোসেন কে বার বার জিজ্ঞেস করছিলেন কোন ফোন এসেছে কিনা।

প্রতিবারই ডঃ কামালের উত্তর ছিলো না সূচক।

ফোনটি আসার কথা ছিলো পাকিস্তান সেনাবাহিনীর লেঃ জেনাঃ পীরজাদার কাছ থেকে। তিনি ছিলেন ইয়াহিয়ার নির্বাচিত প্রতিনিধি। এর কারন হল ইয়াহিয়া বলেছিলো তার ভাষণ প্রচারের আগে পীরজাদার সাথে শেখ মুজিবের ১টি ছোট বৈঠক হবে।

সেই ফোনকল আর আসেনি কোনদিন।শেখ মুজিবও বুঝতে পারেন সব আশা শেষ। ইয়াহিয়া ধোঁকা দিয়েছে।


সন্ধ্যা ৭:০০:

সিডনী শনবার্গের রিপোর্ট [ ২৯ মার্চ , নিউইয়র্ক টাইমস ] থেকে যেটা জানা যায় দেশজুড়ে বিভিন্ন জায়গায় বাঙালী বিহারীর সংঘর্ষ হয় এবং শেখ মুজিব ১টি বিবৃতিতে এর নিন্দা জানান।

রাত ৮:০০ ৮:৩০:

এরকম একটা অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে এইচ এম কামরুজ্জামান , ক্যাপ্টেন মনসুর আলী , তাজউদ্দীন আহমদ এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম শেখ মুজিবের সাথে দেখা করে চলে যান। “সে সময় তাজউদ্দীন আহমদ স্বাধীনতার ঘোষণা লিখে নিয়ে এসেছিলেন । সাথে টেপ রেকর্ডার ও ছিল। কিন্তু দেশদ্রোহী হতে হয় সে ভয়ে শেখ মুজিব লিখিত বা মৌখিক ভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে অস্বীকৃতি জানান। [সূত্রঃ নেতা ও পিতা]


সিদ্ধান্ত ছিল তারা আত্মগোপন করবেন এবং ভারতে চলে যাবেন। মুজিব বললেন তিনি থেকে যাবেন, গ্রেফতার বরণ করবেন।[সূত্রঃ মাসুদুল হক, দৈনিক ইনকিলাব, ২৬ মার্চ ২০০৫।]

শেখ ফজলুল হক মনি ২৫ শে মার্চ সন্ধ্যায়ই টুংগীপাড়া চলে যায় এবং শেখ কামাল রাত ৯টায় ধানমন্ডী ৩২নং ছেড়ে যান।

[ সূত্র : শেখ মুজিব , এস.এ. করিম, ইউপিএল, ২০০৫, পৃষ্ঠা ১৯৫ ]

অজয় রায়ের স্বাধীনতার ঘোষণা বিষয়ক আর্টিকল থেকে যেটা জানা যায় রাত ৯ :০০ টায় সাইমন ড্রিং শেখ মুজিব কে ফোন করেছিলেন , [সোর্স: ৩১ মার্চ ১৯৭১ , ডেইলী টেলিগ্রাফ।]

এই তথ্যটির ১ টি ক্লু পাওয়া যায় ২৯ মার্চ ১৯৭১ , ডেইলী টেলিগ্রাফ।

সাইমন ড্রিং এর আরেকটি রিপোর্টে: রাত ৯:১০: ঠিক এই সময়েই প্রথমবারের মত গোলাগুলির শব্দ শুনেছেন জানান রেহমান । রাত ১০:৩০: এ সময় আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ প্রধান আব্দুর রাজ্জাক এর ১টি ফোন আসে শেখ মুজিবের কাছে এবং “ইপিআর কে ডিসার্মড করা হয়েছে” শেখ মুজিব কে এতটুকু বলতে না বলতে লাইন কেটে যায়।

[ সূত্র : শেখ মুজিবের বাসভবনে সে সময় অবস্থানরত পারিবারিক কর্মচারী মমিনুল হক খোকা , প্রাগুক্ত , পৃষ্ঠা – ৪৪৭-৪৮ ]

১১:৩০: ওয়াজেদ মিয়ার বক্তব্য অনুসারে ঝন্টু (জিয়াউর রহমানের উপদেষ্টা জাকারিয়া চৌধুরীরা ভাই) ধানমন্ডী ৩২নং এ আসেন। শেখ মুজিব কে ঝন্টু অপারেশন সার্চলাইট এবং নির্বিচার গোলাগুলির খবর জানান।

ঝন্টুর মাধ্যমে পরিস্থিতি অবগত হয়ে শেখ মুজিব হাসিনা , রেহানা এবং জেলীকে ১টি ফ্ল্যাটে পাঠিয়ে দেন আতœগোপন করার জন্য।

শেখ মুজিবের পরিবারের সদস্যদের আতœগোপনের জন্য ঐ ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেয়া হয়েছিলো।

ওয়াজেদ মিয়া নিজেও ১১:৩০ এর পর ধানমন্ডী ৩২নং ত্যাগ করেন।

[ সূত্র: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ, ইউপিএল, ২০০০, পৃ ৮৪ ]

“সেদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শেখ মুজিবের বাসায় ছিলো মানুষের ঢল।কিন্তু ইয়াহিয়ার ঢাকাত্যাগের খবর প্রকাশ হয়ে পড়ায় এবং সেনাবাহিনীর মতিগতি দেখে সন্ধ্যার পর থেকেই ঢাকার সর্বত্র বাড়তে থাকে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা।

এ পরিস্থিতিতে শেখ মুজিব ১ বিবৃতিতে বিভিন্নস্থানে সেনাবাহিনীর গুলিবর্ষনের প্রতিবাদে হরতাল আহ্বান করেন।”

[ সূত্র : বংগবন্ধু শেখ মুজিব , জীবন ও রাজনীতি , ১ম খন্ড , সম্পাদক মোনায়েম সরকার , বাংলা একাডেমী ২০০৮ , পৃষ্ঠা:৪৪৭ ] রাত ১:০০:

রাত ১ টায় অপারেশন সার্চলাইট শুরু করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মত পাক আর্মির ১ম দলটি ক্যান্টনমেন্ট থেকে বেরিয়ে ফার্মগেটের নিকট ব্যারিকেডের সম্মুখীন হয়। এদিকে রাত ৯:৩০ তেই সেনাবাহিনীর বহর কে বাধা দেয়ার জন্য রাস্তায় গাছ ফেলে অসংখ্য মানুষের জমায়েত হয় সেখানে। প্রতিরোধ তখনই শুরু হয়ে যায় পাক আর্মির বিরুদ্ধে।

[ স্ত্রূ : উইটনেস টু সারেন্ডার , সিদ্দিক সালিক , ইউপিএল , ১৯৭৭ , পৃষ্ঠা ৭৩]

রাত ১:১০ ১: ৩০:

ঠিক এই সময়টাতেই শেখ মুজিব অস্বাভাবিক কাপুরোষিত ভাবে আতœসমর্পন করেন।

এ বিষয়ে অপারেশন বিগবার্ডের ইনচার্জ জহিরুল আলম খান নিজেই বই লিখেছেন : দ্য ওয়ে ইট ওয়াজ।

৭ই মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা না দিয়ে মুক্তিকামী মানুষের আবেগকে পুঁজি করে, কোটি মানুষের জীবনকে অবিভক্ত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হবার দর কষাকষি করার রসদ হিসাবে ব্যবহার করেন শেখ মুজিব। জেনে শুনে কাল ক্ষেপন করে পাকিস্তানী বাহিনীকে সামরিক শক্তি বৃদ্ধির সুযোগ করে দেন তিনি। সমগ্র দেশবাসীর মহাবিপদে নেতৃত্ব না দিয়ে হাসিনা , রেহানা , জলি, ওয়াজেদ, মনি ইত্যাদি আত্মীয়কে নিরাপদ আশ্রয়ে পাঠিয়ে দিয়ে এবং নিজে আত্মসমর্পন করে নিজ নিরাপত্তা নিশ্চিত করায় তাকে কি রাজাকার বলা যায়না?

লন্ডন, ২২/১২/২০১৪

আখতার মাহমুদ, লেখক ও সাংবাদিক

১০০% Copy-Past

বিষয়: বিবিধ

১৫৫৩ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

296830
২৪ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ০৭:২২
পললব লিখেছেন : নির্বাচন মানেই জনগণের ভোটে পাশ করে ক্ষমতায় গিয়ে দেশ শাসন করা।আর আওয়ামীলীগ তাই ক্ষমতার লোভে ১৯৭০ এর নির্বাচন করেছিল এবং সংখ্যাগরীষ্ট হয়ে পাকিস্তানের শাসনভার নিয়ে চেয়েছিল। কিন্তু বিধিবাম!যারা শাসন করতে চায় তারা কিভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করে???
২৪ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ০১:৩৭
240410
আনিসুর রহমান লিখেছেন : আপনার বক্তব্য অনুসারে এক সাথে দুই নৈাকায় পা দেওয়া যায় না। কিন্তু আওয়ামী লীক প্রমান করে দেখিয়েছে যে তারা তা সাফ্যলের সাথেই পেরেছে!!! অর্থাৎ একই সাথে তারা মুক্তিযুন্ধ করেছে এবং পাকিস্তানের প্রধান মন্ত্রী হওয়ার জন্য চেষ্টা করেছে(যদিও প্রতারিত হতে হয়েছে পাক সামরিক জান্তা দারা)। বাস্তব ইতিহাস যা হোওক না কেন, বর্তমান বাস্তবতা হল আওয়ামী লীগ একমাত্র মুক্তিযুন্ধের দল আর অন্যরা সব রাজাকার!!! আওয়ামী লীগ কাচের ঘরে বসে ঠিল ছুরতে যেয়ে যত বিপতি বাধিয়েছে; ফলে আটকিয়ে রাখা সত্য থলের ভিতর থেকে বের হয়ে পরেছে এবং সেই সত্যের ভারে নৌকা দুবার উপক্রম। এই যুদ্ধে নৌকা পতীক তার সত্যের ভারে ডুবে না মিথ্যার সাহায্য নিয়ে ভেষে থাকতে পারে তা হল দেখার বিষয়। আমরা অপেক্ষায় রইলাম। আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।


296844
২৪ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ০৯:১৫
হতভাগা লিখেছেন : ৭ই মার্চ স্বাধীনতার সংগ্রাম বলার পরও কি কারণে মুজিব ইয়াহিয়া-ভুট্টোর সাথে ঢাকা-করাচি আলাপ করে গেলেন ৮-২৫ তারিখ পর্যন্ত ?
২৪ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ০১:৫০
240418
আনিসুর রহমান লিখেছেন : বাস্তব ইতিহাস যাহোওক না কেন, বর্তমান বাস্তবতা হল আওয়ামী লীগ একমাত্র মুক্তিযুন্ধের দল আর অন্যরা সব রাজাকার!!! এক্ষেত্রে এই ধরনের সকল বিষয়/ ঘটনা ব্যাখা করতে যাওয়া যে বোকামি পুন কাজ তা বুঝতে মনে হয় বেশী বুদ্ধির দরকার পড়ে না।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File