বাংলাদেশের বিচার বিভাগ ব্যক্তির পাপেটে পরিণত হয়েছে : লন্ডনে সেমিনারে ব্রিটিশ আইনজীবীরা
লিখেছেন লিখেছেন আনিসুর রহমান ২১ জুন, ২০১৪, ০৭:১৩:৩৬ সকাল
বাংলাদেশে নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ এবং বিচার বিভাগ এক ব্যক্তির পাপেটে পরিণত হয়েছে। গণতন্ত্র বন্দি বুলেটের নিশানায়। বৃহস্পতিবার লন্ডনে খ্যাতিসম্পন্ন ল’ ফার্ম হলবর্ন চেম্বার্স অয়োজিত সেমিনারে ব্রিটিশ আইনজীবীরা এসব কথা বলেন। দ্য অনারেবল সোসাইটি অব লিংকন্স ইন ‘অ্যাওয়ারনেস অ্যান্ড ওয়ার্নিং অ্যাবাউট বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করে।
ব্রিটিশ আইনজীবীরা বলেন, এ অবস্থা চলতে পারে না। এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার জন্য তারা লিখিতভাবে ব্রিটিশ সরকারের কাছে আবেদন জানাবেন। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হলবর্ন চেম্বারের প্রধান এবং মানবাধিকার ব্যক্তিত্ব ব্যারিস্টার স্টুয়ার্ট স্টিভেন্স। এতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ব্যারিস্টার অ্যান হোওস, ব্যারিস্টার এস কে কুমার, ব্যারিস্টার ডেভিড রেকটার, ব্রিটিশ বাংলাদেশী ব্যারিস্টার অ্যান্ড সলিসিটর এ কে এম কামরুজ্জামান, ব্যারিস্টার আয়েশা কোরেশী, ব্যারিস্টার টিআইএম ওয়েলচ, ব্যারিস্টার ক্রিস্টিলি, ব্যারিস্টার ফ্রাংকো, ব্যারিস্টার মারিয়া গঞ্জালেস, ব্যারিস্টার এ গ্যালাহার এবং ব্রিটিশ বাংলাদেশী ব্যারিস্টার হুসেইন শামসুজ্জোহা।
সেমিনারে বক্তারা বাংলাদেশের বর্তমান সরকারকে অবৈধ উল্লেখ করে এই সরকারের নেতা এবং মন্ত্রী-এমপিদের সঙ্গে ব্রিটেনের কোনো ব্যবসা-বাণিজ্য থাকলে তার ওপর অবিলম্বে অবরোধ আরোপের দাবি জানান। প্রয়োজনে তাদের ব্রিটেনে প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপেরও আহবান জানান তারা। আইনজীবীরা বলেন, বাংলাদেশের প্রধান একটি রাজনৈতিক দলের নেতা তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচার না করার জন্য গণমাধ্যমের প্রতি হুমকি-ধমকি প্রমাণ করে দেশটিতে গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা নেই।
ব্যারিস্টার অ্যান হোওস বাংলাদেশের গণমাধ্যম সম্পর্কে তার লিখিত বক্তব্যে দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের ওপর সরকারের অত্যাচার, সাগর-রুনির হত্যার বিচার না হওয়া প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশে বাক ও ব্যক্তিস্বাধীনতা এখন শূন্যের কোঠায়।
মূল প্রবন্ধে ব্যারিস্টার স্টুয়ার্ট স্টিভেন্স বলেন, বাংলাদেশে নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ এবং বিচার বিভাগ এক ব্যক্তির পাপেটে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করছে। দেশটির বিশেষ বাহিনী র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র্যাব এখন জনগণের কাছে খুনি বাহিনী হিসেবে পরিচিত।
অবিলম্বে র্যাব বিলুপ্তির দাবি জানিয়ে ব্যারিস্টার স্টিভেন্স একইসঙ্গে র্যাব সম্পর্কে ব্রিটিশ সরকারকে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করারও দাবি জানান। গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে হাস্যকর উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ওই নির্বাচনে একজন এমপি সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ প্রকাশ্যে বলেছেন, তিনি নিজেই জানেন না কীভাবে তিনি এমপি হয়েছেন। এর চেয়ে হাস্যকর নির্বাচন আর কী হতে পারে?
খ্যাতিমান এই আইনজীবী বলেন, যে নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণ নেই সেই নির্বাচন বৈধ হতে পারে না, সেই সরকারও বৈধ হতে পারে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন দুটিই অনুপস্থিত। এমন একটি নির্বাচন যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছেও গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। হাউজ অব কমন্স, মার্কিন সিনেট এবং ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টেও একাধিকবার বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ব্যারিস্টার স্টিভেন্স বলেন, ওইসব শুনানি শেষে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। কিন্তু সরকার এসব আহ্বানকে গুরুত্ব না দিয়ে উল্টো বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের গুম-খুন করে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে।
বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ব্রিটিশ সরকারকে আরো কঠোর হওয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে দেশটিতে আদালত নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারছে না। বিচারকদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে দলীয় আনুগত্য বিবেচনায়। এমনকি দলীয় আনুগত্যের কারণে খুনের আসামিকেও বিচারক নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
সেমিনারে ব্রিটিশ বাংলাদেশীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার হাফিজুর রহমান, ব্যারিস্টার আশরাফ আরেফিন, অ্যাডভোকেট লিয়াকত আলী, অ্যাডভোকেট মাহমুদ হাসান ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সদস্য শামীম চৌধুরী।
বিষয়: বিবিধ
৯৮৯ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
UK রে তো এখন জিম্বাবুয়েও পাত্তা দেয় না
মন্তব্য করতে লগইন করুন