আমাদের হুজুররা !!!
লিখেছেন লিখেছেন আনিসুর রহমান ২০ জুন, ২০১৪, ১২:৫৮:৩৭ দুপুর
আমাদের সমাজ হুজুরদের একটা প্রতিমুর্তি তুলে ধরেছে তার সেলফ ডিফাইনড ক্যারেকটারাইজেশনের মাধ্যমে। সেটা এমন যে, হুজুর মানে জুব্বা-টুপি পরা দাড়িওয়ালা একজন মানুষ যে কুরআন পড়ে আর পড়ায়, মিলাদ পড়ায় আর চল্লিশার খতম পড়িয়ে দুচার-পাঁচ হাজারটাকা আয় করে কোনরকমে সংসার চালায়।তার সংসার টানাটানির, অনেকগুলা বাচ্চাকাচ্চা। হুজুররা হবে নিরীহ, তারা একগালে থাপ্পর খেলে আরেকগাল পেতে দেবে। তারা অযুর ফরয, নামাযের ওয়াজিব আর রোজা ভঙ্গের কারণ নিয়ে ওয়ায করবে, এর বাইরে কিছু বলতে পারবে না। আর মোল্লাদের বউ হবে কালো বোরকা আবৃত এক মহিলা, যে জগত সংসার সম্পর্কে কোন ধারনা রাখেনা, বেলন চাপড়িয়ে রুটি বানায়, আর ফ্যাচফ্যাচ করে কান্নাকাটি করে।
তাই হুজুরদের এর বাইরে কিছু করতে দেখলেই সুশীল সমাজের মাথায় আগুন ধরে যায়। হুজুর কেন রাজনীতিতে নাক গলাবে? হুজুর কেন সোশাল সিস্টেম(Social System) নিয়ে কথা বলবে? এ অধিকার তাকে কে দিয়েছে? হেফাযতে ইসলামের আবির্ভাবে সুশীলরা একারণেই এত ক্ষেপে গিয়েছে। হুহু! হুজুররা সংবিধান নিয়ে, আইন নিয়ে কথা বলার কে? তাদের থাকতে হবে কুটিরের অন্ধকারে, আর মানুষ মরলে খতম পড়াবে। তারা আবার দাবি-দফা আনে? এত সাহস! হুজুরদের এত সাহস থাকতে নেই। হুজুররা আরবি ছাড়া কিছু জানতে পারবে না। তারা ব্লগ কী জানবে না, ইন্টারনেট কী তা কল্পনাও করতে পারবে না!
তেমনিভাবে হুজুরের পকেটে টাকা দেখলে শাহরিয়ার কবিরদের গোঁফে রামটান পড়ে। হুজুরের টাকা? নিশ্চয়ই জামাত-শিবির দিয়েছে! হেন-তেন, ‘রাজাকার’, ‘যুদ্ধাপরাধী’ - বস্তাপচা ডায়ালগ! অথচ সাহাবাদের অনেকেই অত্যন্ত ধনী ছিলেন। কিন্তু শফী কীভাবে হেলিকপ্টারে চড়ে, এই চিন্তায় সুশীল গংদের দুচোখের পাতা এক হয় না। যদিও পঁচিশ টাকা বেতনের সরকারি কেরানি কীভাবে বিএমডব্লিউ হাঁকায় সে প্রশ্ন কেউ তোলে না। তারা তো আর হুজুর না! অন্যে করলে কায়দা, আর হুজুর করলেই ‘আল-কায়েদা’ আর কি!
বাস্তবিকই আমাদের হুজুররা অত্যন্ত নিরীহ। হুজুরদের বেশিরভাগই খুবই সরল প্রকৃতি, কৃত্রিম জগতের প্যাঁচ খুব একটা বোঝেন না। আর এই সুযোগ নেয় ভণ্ড সুশীলগুলো। দেশের সব সমস্যার মূলে হুজুরদের উপস্থাপন করা যায়। একটার পর একটা ইস্যু আসে, আর রাস্তা থেকে হুজুর ধরে এনে জেলে আটকে রাখা যায়, পিটিয়ে হাত-পা ভেঙ্গে দেওয়া যায়। কেউ কিছু বলার নেই। হুজুরদের তো আর কেউ লক্ষ টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে আনার মত নেই। হুজুরদের সরলতার সুযোগ নিয়ে তাদের উপর গুলি নিক্ষেপ করা যায়, তাদের মৃত্যু নিয়ে তামাশা করা যায়! তাদের রক্তকে রঙ বলা যায়! তাদের মানুষ হিসেবে না ধরলেও চলে!!
তেমনিভাবে শফী হুজুরের একটা কথার জের ধরে তাকে কি গালিটাই না দেওয়া হল! একটা নব্বই বছরের বৃদ্ধকে ‘নারীলোভী’, ‘তেঁতুল হুজুর’, ‘বেয়াদপ’-কী বলতে ছেড়েছে? আরবি অক্ষর না চেনা লোকগুলো কওমি মাদ্রাসার প্রিন্সিপালকে তওবা করতে বলল! শফীসাহেব নিতান্তই সরলমনের মানুষ। অত অপমানের পরও তাই তিনি কাউকে শত্রু ভাবতে রাজি নন। এ সুযোগটা নিল ভন্ডের দল। সব সমস্যার মূলে হেফাযতকে উঁচিয়ে ধরা গেল। অতগুলো হুজুরের বুকের রক্তকে রঙ বলা গেল! তাদের মরণ ছাপিয়ে তান্ডব-তান্ডব করা গেল! ব্র্যাকেটের মধ্যে হেফাযতের সহিংসতা উল্লেখপূর্বক কলাম লেখা গেল। ঝোলা গোঁফওয়ালা অমানুষগুলো একাত্তর টিভিতে যা খুশি বলে গেল! যারা ভিকটিম তাদেরকেই গালি দেওয়া গেল। জবাব দেওয়ার কেউ তো নেই!
একইভাবে সেক্যুলার ভার্সিটিগুলোতে সারাবছর খুন-লুটপাটের মহোৎসব আর ধর্মঘটে অচল থাকলেও সুশীলদের চোখ পড়ে মাদ্রাসার ওপর। মাদ্রাসা নাকি দেশবিরোধী, স্বাধীনতা বিরোধী! সেক্যুলার ভার্সিটিতে সারাবছর অস্ত্রের মহড়া চললেও অস্ত্র সব উদ্ধার হয় মাদ্রাসার মধ্য থেকে। সেখানে আইপিএস বিষ্ফোরণের শব্দকে পারমাণবিক বোমা জ্ঞান করে মাদ্রাসা ব্যান করার দাবি তোলা যায়! মাদ্রাসার ছাত্ররা ঢেঁকুর তুললেও পরিপাকতন্ত্র থেকে বিধ্বংসী হাইড্রোক্লোরিক এসিডের সংকেত পায় সুশীল সমাজ! কাজেই মাদ্রাসা ছাত্রদের ধরো-মারো!! তাদের পক্ষে দুটো কথা বলার মত তো কেউ নেই। মাদ্রাসার ছাত্ররা তো মানুষ না, কুকুর!! না, কুকুরেরও একটা অধিকার সমাজ স্বীকার করে; হুজুরদের সেটাও থাকতে নেই!
‘এই দিনই দিন নয় আরো দিন আছে’। ‘দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা শুধিতে হইবে ঋণ’! হুজুররা অনেক মার খেয়েছে। এবার কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার দিন। দিন বদলের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। যে দৃশ্য দৃষ্টিগোচরে আসছে সেখানে একটা হুজুর প্রজন্ম গড়ে উঠছে, যারা আঘাতের বদলে আঘাত ফিরাতে জানে। কোন এক ভাই একদিন বলেছিলেন, সামনে আসছে সালফিউরিক এসিড হুজুরেরা। সুশীলদের সুশীলতাকে লাঠির আঘাতে তাড়ানো যাদের কাজ! অনেক সহ্য করা হয়েছে। এবার ঘাত-প্রতিঘাতের পালা!
অলরেডি কাঁপুনি আরম্ভ হয়ে গিয়েছে সুশীলদের। ইনুসাহেব যেমন আকাশে বাতাসে জঙ্গি খুঁজে পান! জলবায়ু মোকাবেলাই হোক, আর কাকতাড়ুয়ার কাক তাড়ানোই হোক, - সবখানেই জঙ্গি। বলেতে চাচ্ছিলাম, সব কিছুর মূলে আছে ভয়! সামনের এই সালফিউরিক হুজুরেরাই হল তাদের ভাষায় 'জঙ্গি।' এই হুজুর প্রজন্মের ভয় নিশ্চিত সুশীলদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে!!
সামনের এই হুজুরেরা ইটের বদলে পাটকেলটি দেবে! নরম পেয়ে 'আলিমদের নামে যা খুশি বলে যাবে, যা খুশি করে যাবে, - তা হবে না। মানুষের মত ব্যবহার হবে মানুষের সাথেই। পশুর সাথে মানুষের মত আচরণ করে লাভ কি? কাজেই, সুশীল সাবধান! বিবেচনাহীন পথচলা বিপদের কারণ হতে পারে যে কোন সময়ে।
বিষয়: বিবিধ
২২৭০ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমি সেদিনের অপেক্ষায়
যেদিন হাসিনার পোলাডার হাত কেউ কেটে নিয়েছে
হাসিনা হাউ মাউ করে কাদছে।
দেখতে চাই সেদিন
যেদিন হাসিকে বাড়ী থেকে উতখাত করা হবে
সে মাঠি কামড়িয়ে কাদছে।
সেদিন দেখতে খুব ইচ্ছে করছে
যেদিন হাসিনার আত্মীয়তে প্রহসনের ট্রাইবুনারে বোরখা পরা কেউ ধর্ষনের মিথ্য স্বাক্ষীতে ফাসিতে ঝূলাবে।
দেখতে চাই রাজপথের ধিকৃত হাসিনাকে
কঠিন রোগে আক্রান্ত অভিশপ্ত হাসিনা
জাতির কাছে মাফ চাইছে।
আমরা যা চাই, তা হবার নয়। কারণ
আল্লাহর পরিকল্পনাযে আমার মত নয়।
তবে এটা ঠিক, কাল হাশরের মাঠে এমনটি অবশ্যই হবে। এতে দ্বিমত নেই। কারণ যে যা করেছে তার সেই শাস্তিই হবে।
ধন্যবাদ। আপনার পোষ্টটি দারুণ হয়েছে।
Brother I think No good deeds are go in vein, likewise, we must pay our injustice/Zalum. I think it is very important to have a excelent plan and a very good strategy, to fight aganist this anti-Islamic outlaw, fasciest regime; if we want success.
মন্তব্য করতে লগইন করুন