বাংলাদেশে সুপ্রিমকোর্ট সরকারের হাতিয়ার : জাতিসংঘকে হংকংভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠনের(Asian Legal Resource Centre) চিঠি
লিখেছেন লিখেছেন আনিসুর রহমান ০৩ জুন, ২০১৪, ০৪:০৯:২৪ বিকাল
বাংলাদেশে সরকারের সমালোচকদের হয়রানি করার জন্য সুপ্রিমকোর্ট সরকারের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে বলে জাতিসংঘকে এক চিঠিতে জানিয়েছে এশিয়ান লিগ্যাল রিসোর্চ সেন্টার।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের ২৬তম সভার বিতর্কের জন্য এ প্রতিবেদনটি জমা দিয়েছে হংকংভিত্তিক এ মানবাধিকার সংগঠনটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকার এখনো বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের নিয়োগ, পদায়ন এবং পদোন্নতি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। সুপ্রিমকোর্টের রায় অনুসারে বিচার বিভাগের জন্য একটি আলাদা সচিবালয় প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে আইন মন্ত্রণালয় বিচার বিভাগ নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত রেখেছে।
এতে বলা হয়, বিচার বিভাগীয় গুরুত্বপূর্ণ ও লোভনীয় পদে পদোন্নতির মূল যোগ্যতা রাজনৈতিক আনুগত্য। অধস্তন আদালত থেকে উচ্চতর আদালতে এমনভাবে নিয়োগ দেয়া হয় যাতে সরকারের রাজনৈতিক অভিলাষ পূরণ হয়।
বিচারকদের পদোন্নতি ও পদায়নে মুখ্য ভূমিকা রাখে প্রেসিডেন্ট, ক্ষমতাসীন দলের নেতা, মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যদের সঙ্গে আত্মীয়তা।
যে সুপ্রিমকোর্ট সরকারকে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছিল তারাই এখন সরকারের সমালোচকদের হয়রানি করার হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিশেষ করে র্যাব ও পুলিশ নাগরিকদের অপহরণ ও গুমে জড়িয়ে পড়লেও সুপ্রিমকোর্ট ভিকটিমদের পরিবারকে কোনো আইনি প্রতিকার দিতে পারেনি। চলমান ভয়াবহ মানবাধিকার লংঘনের মতো দুষ্কর্মের সহযোগীতে পরিণত হয়েছে পুরো বিচার বিভাগ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ এ সংক্রান্ত জাতিসংঘ সনদে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বাধ্য। তাছাড়া বাংলাদেশের সংবিধানেও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।
আমার দেশ ও মাহমুদুর রহমান প্রসঙ্গ
প্রতিবেদনে আমার দেশ বন্ধ এবং আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে হয়রানির এবং অধিকার সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এএসএম নাসিরউদ্দিন এলানের গ্রেফতার ও হয়রানির বিষয়টি বিশদভাবে তুলে ধরা হয়।
এতে বলা হয়, দেশের শীর্ষস্থানীয় সরকার বিরোধী পত্রিকা আমার দেশ সম্পাদককে গত বছরের ১১ এপ্রিল গ্রেফতার করা হয়। এরপর পুলিশ আমার দেশ-এর ছাপাখানা বন্ধ করে দেয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিকল্প প্রেস থেকে আমার দেশ প্রকাশ বন্ধের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গত বছরের ২৭ মে থেকে আমার দেশ কর্তৃপক্ষ হাইকোর্টের চারটি বেঞ্চের শরণাপন্ন হয়েছেন। কিন্তু কোনো বেঞ্চই শুনানি শেষ করেনি।
কোনো আইনসঙ্গত কারণ ছাড়াই আমার দেশ সম্পাদককে বিনা বিচারে আটক এবং পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধ করে রাখা হয়েছে বলে মন্তব্য করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিচার করার মতো নৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক এবং অবকাঠামোগত সুবিধা বাংলাদেশের বিচার বিভাগের নেই। শাসকদের অপরাধকে আড়াল করে টিকে আছে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ। দুর্নীতি ও রাজনীতির সেতুবন্ধন বাংলাদেশের পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে গ্রাস করেছে। মৌলিক মানবাধিকারকে অস্বীকার এবং আইনের শাসনদের চাপা দিতে বাংলাদেশের আইন, নির্বাহী এবং বিচার বিভাগ হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করছে।
বিষয়: বিবিধ
৯১৬ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন