ইতিহাসের মানদণ্ডে মাযহাবের (مذهب) উৎপতি ও ক্রম বিকাশ পর্ব ৩

লিখেছেন লিখেছেন আনিসুর রহমান ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৭:৩৮:৩৪ সন্ধ্যা

মঙ্গল নেতা হালাকু খান এর হাতে ১২৫৮ খ্রীস্টাব্দে বাকদাদ এর পতন ও আব্বাসীয় খলিফা/রাজা মুন্তাসিমকে হত্যার মধ্যদিয়ে আব্বাসীয় বংশের পতনের সুচনা ঘটে। কিন্তু বার’শ শতকের একেবারে শেষ দিকে সেলুকাজ(তুর্কী) নেতা উসমান( উথমান) গাজীর নেতৃতে যে সাম্রাজ্যর/খেলাফতের উত্থান ঘটে (১২৯৯-১৯২২খ্রীঃ) ইতিহাসের পাতায় তা অটোম্যান সাম্রাজ্য নামে খ্যাত; এই সাম্রাজ্যর প্রতিষ্ঠাতা উসমান এর নাম অনুসারে একে উসমানীয়া খেলাফাও বলা হয়ে থাকে এবং এটা ছিল মুসলমানদের শেষ খেলাফা/ সাম্রাজ্য। অব্যাহত বিভিন্ন মুখী ষরযন্ত্রের ফলে, উনিশ শতকে এসে তার পতন ঘটে কলনিয়াল(European Colonial Power) শক্তির হাতে।

আমরা আগের পর্ব গুলতে উল্লেখ করেছি যে, খেলাফা-এ-রাশেদার পর উম্যাইইয়া এবং আব্বাসীয় (৬৬১-১২৫৮ খ্রীঃ) খেলাফত কালে “ইজমার” দরজা দুরহ বা কঠিন হলেও তখনও “ইজতিহাতের” দরজা খোলা ছিল; ফলে চারটি মাযহাব অর্থাৎ হানিফী, মালেকি, শাফেয়ী ও হাম্বলী (রহঃ) সহ আরও অনেক মাযহাবের প্রকাশ ও বিকাশ ঘটে যেমন, মহান ইমাম আল জুহুরী, ইবন আবু লায়লা, ছুফফান-আত-তাহহুরী, জারীর(রহঃ) এর মাযহাব। যদিও সে সময় মযহাব গোঁড়ামি ও মাযহাব কেন্দ্রিক উপদলে বিভক্ত হেওয়ার প্রবনতা শুধু সাধারণ জনতাই নয়, অলেম-ওলেমাদের মাঝেও প্রবল ভাবে বর্তমান ছিল। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, আল –হুসেন ইবন মাসুদ ( বিখ্যত বই শারাহ-আস-সুন্নাহ’র লেখক) তার নামের শেষে শাফি যোগ করে লিখত আল –হুসেন ইবন মাসুদ-আস- শাফি অর্থাৎ সে শফি(রহঃ) মাযহাবের ইমাম বা অনুসারি। এভাবে আলেমরা যেরূপ নিজেদের বিভিন্ন মাযহাবের পরিচয়ে পরিচিত করতে থাকে, সেরূপ আম জনতাও বুঝে হোক বা না বুঝে নিজেদেরকে, হানিফী(রহঃ), শাফিয়ী(রহঃ), মালেকী(রহঃ) ও হাম্বলী(রহঃ) বলে পরিচয় দিতে থাকে। এত সব ঘটনার পরও সে সময় “ইজতিহাত” এর দরজা সকলের জন্য উন্মুক্ত ছিল।

কিন্তু উসমানীয়া খেলাফত কালে(১২৯৯-১৯২২খ্রীঃ)“ইজতিহাদের” উপর আঘাত আসে। এ সময় সকল আলেম-ওলেমারা সর্বসস্মত ভাবে এক ফাতোয়া জারীর মাধ্যমে “ইজতিহাদের” দরজাকে স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয়। তার কারন হিসাবে তারা উল্লেখ করে যে, শারিয়া কেন্দ্রিক যত প্রকারের সমস্যা বা ইস্যু থাকতে পারে তার সবগুলর উপরেই ইতিমধ্যে আলকপাত করা ও সমাধান করা হয়ে গিয়েছে, সুতরাং

দের[/i]” প্রয়োজনও শেষ হয়ে গিয়েছে।১
এই ফাতয়ার ফলে, মাযহাব সম্বন্ধে এক নতুন মতবাদের সৃষ্টি হয়ে আম জনতার মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। তা হ’ল কেউ নিজেকে মুসলমান হিসাবে জাহির(দাবী) করতে চাইলে, হানিফী(রহঃ), শাফিয়ী(রহঃ), মালেকী(রহঃ) ও হাম্বলী(রহঃ) এই চার মাযহাবের যে কোন একটির মাঝে থেকে নিজের পরিচয় দিতে হবে। কেউ যদি এই চার মাযহাবের যে কোন একটি অনুসরণ না করে বা মানতে অস্বীকার করে, সে সময় তাকে কাফের বলে গণ্য করা হত। এমন কি কেউ যদি এক মাযহাব এর গণ্ডী পেরিয়ে অন্য মাযহাবের দিকে যেত তবে তাকে উৎপথগামী(Hertic) বা “জীন্দীক” বলে গণ্য করা হত!!!!

১। Muhammad Husein Adh-dhahabee ‘ash share’ah al- Islaameeyah, (Egypt: Daar al-kutub al-Hadeeth, 2nd, ed 1968, p12

বিষয়: বিবিধ

১৪৭৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File