দুনিয়া(Physical World) এবং আখেরাত(Meta Physical World) পর্ব ১১
লিখেছেন লিখেছেন আনিসুর রহমান ০২ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৫:৩৪:২৪ সকাল
কুরআন হাদীসে আমাদের দুনিয়ার জীবনকে “পরীক্ষা ক্ষেত্র” হিসাবে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, মানুষের এই ছোট দুনিয়ার জীবনটা মুসাফিরের ন্যায়। অপর দিকে আখেরাতের জীবনকে প্রকৃত জীবন বলে উল্লেখ করা হয়েছে এবং যেহেতু আখেরাতের জীবনই প্রকৃত জীবন তাই আখেরাত সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। এই বর্ণনা এত বিরাট ও বিশাল যে, এখানে বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ সীমিত। তাই আমরা আখেরাত সম্পর্কে দুইটি গুরুত্বপুর্ণ বিষয় যা উল্লেখ না করলে আমাদের এই আলোচনা অসম্পুর্ণ থেকে যাবে, সে সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করে দুনিয়া(Physical World) এবং আখেরাত(Meta Physical World) সম্পর্কিত আলোচনার পরি সমাপ্তি টানবো। বিষয় দুটি হল- একঃ ইসলামের আলোকে কারা জান্নাতে(Meta Physical world) যাওয়ার সৈভাগ্য অর্জন করবে এবং কখন? জন্নাতে যাওয়ার যোগ্যতাই বা কি? যারা জন্নাতে যাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবে না তাদের পরিনতই বা কী হবে? দুইঃ বিজ্ঞানের আলোকে আখেরাতের উপর বিশ্বাস রাখা কতটা যুক্তি যুক্ত নাকি আখেরাত সম্পর্কিত পুরো বিষয়টা বিজ্ঞানের আলোকে উদ্ভট ও অযৈতিক? নাকি নাস্তিক-মুরদাতদের পরিভাষায়, আখেরাত (Meta Physical world) হাস্যকর কল্পনা। মানুষ মরতে ভয়পায় বলেই উদ্ভাবন আখেরাতের(Meta Physical world) জান্নত ও জাহান্নাম (Heaven & hell belong to Meta Physical world)। আখেরাত (Meta Physical world) হচ্ছে জীবনের বিরুদ্ধে এক অশ্লীল কুৎসা; আখেরাতের(Meta Physical world) কথা বলা হচ্ছে জীবনকে অপমান করা!!!
একঃ ইসলামের আলোকে কারা জান্নাতে(Meta Physical world) যাওয়ার সৈভাগ্য অর্জন করবে এবং কখন? জন্নাতে যাওয়ার যোগ্যতাই বা কি? যারা জন্নাতে যাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবে না তাদের পরিনতই বা কী হবে?
কুরআন ও সন্নাহর তথ্য অনুসারে কারা জান্নাতে যাওয়ার সৈভাগ্য অর্জন করবে তার একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা নিন্মে দেওয়া হলঃ—
হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ(রা) থেকে বর্ণিত, রসূল(সা) আমাদের বলেন, ----------- মুসলিম ভিন্ন কেউ জান্নাতে(Meta Physical World) প্রবেশ করতে পারবে না? --- (বুখারী, মুসলিম)
হাদীসঃ হযরত উসামা() থেকে বর্ণিত, রসূল(সা) আমাদের বলেছেন, যে ব্যাক্তি ‘লাইল্লাহা ইল্লাল্লাহু’ এর নিশ্চিত বিশ্বাস নিয়ে ইনতিকাল করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (মুসলিম)
হাদীসঃ হযরত বুরাইদা(রা) থেকে বর্ণিত, রসূল() আমাদের বলেন, জান্নাতিদের( The inhabitant of meta physical world) এক শত বিশটি সারি হবে। তন্মধ্যে এই উম্মতের (উম্মতে মহাম্মদী) হবে আশিটি সারি এবং অন্যান্য সকল উম্মতের হবে চল্লিশটি সারি। (মুসলিম)
হাদীসঃ হযরত আয়িশা() থেকে বর্ণিত, রসূল() আমাদের বলেছেন, কিয়ামতের দিন যারই হিসাব গ্রহণ করা হবে সে ধবংস হয়ে যাবে। হযরত আয়িশা() বলেন, ইয়া রাসুল() আল্লাহ ত’আলা কি বলেন নি, যাদের ডান হাতে আমলনামা দেওয়া হবে তদের হিসাব সহজ হবে। জবাবে রসূল() বলেন, টা পেশ বৈ কিছুই নয়। আর কিয়ামতের দিন যার চুলচেরা হিসাব নেওয়া হবে, তাকে নিঃসন্দহে আজাব দেওয়া হবে।(বুখারী)
জন্নাতে যাওয়ার যোগ্যতাঃ
মুমিন হতে হবেঃ
হাদীসঃ হযরত আবু হুরায়রা কতৃক বর্ণিত, রসূল() আমাদের বলেছেন, মু’মিন না হওয়া পর্যন্ত তোমরা জন্নাতে যেতে পারবে না। আর তোমাদের নিজেদের মধ্যে ভালবাসা সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত তোমরা মু’মিন হতে পারবে না। ------ (মুসলিম) ।
সকল প্রকার শির্ক(আল্লাহ সাথে অপরকে অংশি করা) থেকে মুক্ত হতে হবে।
হাদীসঃ হযরত জাবির(রা) কতৃক বর্ণিত, তিনি বলেন জনৈক্য ব্যাক্তি নবী করিম(সা) কাছে এসে জিজ্ঞাসা করেন, ইয়া রসুলুল্লাহ জন্নাত ও জাহান্নাম প্রদান কারি বস্তু দুইটি কি কি? তিনি বলেন যে আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক না করে মারা গেল সে জান্নাতী। আর যে ব্যাক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করে মারা গেল সে জাহান্নামী।(মুসলিম)
আল্লাহ() ও তার রসূলকে ভালবাসতে হবেঃ
হাদীসঃ হযরত আবু হুরায়রা কতৃক বর্ণিত, রসূল() আমাদের বলেছেন, সেই পবিত্র সত্ত্বার কসম, যার হাতে আমার প্রান, তোমাদের কেউ প্রকৃত ইমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না তার কাছে, তার পিতা ও তার সন্তানের চেয়ে আমি বেশী প্রিয় হই। (বুখারী)
কুরআনঃ যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং সৎকম করেছে আমি কাউকে তার সমর্থের চাইতে বেশী বোঝা দেই না, তাড়াই জান্নাতের অধিবাসী, তারা তাতেই চিরকাল থাকবে। (০৭ :৪২)
কাফেরা কি জন্নাতে যাওয়ার সৈভাগ্য অর্জন করবে?
না কাফেরা জন্নাতে যাওয়ার সৈভাগ্য অর্জন করবে না।
কুরআনঃ নিশ্চয় যারা আমার আয়াতসমুহকে মিথ্যা বলেছে এবং এ গুল থেকে অহংকার করেছে, তাদের জন্য আকাশের দ্বার উন্মক্ত করা হবে না এবং তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যে পর্যন্ত না সুচের ছিদ্র দিয়ে উট প্রবেশ করে। আমি এমনি ভাবে পাপিদেরকে (জুলুমকারী) শাস্তি প্রদান করি । তাদের জন্য নরকাগ্নির শয্যা রয়েছে এবং উপর থেকে চাদর। আমি এমনি ভাবে জালেমদেরকে শাস্তি প্রদান করি। (০৭: ৪০-৪১)
হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবন হারিস (রা) কতৃক বর্ণিত, তিনি বলেন আমি আব্বাস(রা) বলতে শুনেছিঃ আমি বললাম ইয়া রসুলুল্লাহ! আবু তালিব আপনার নিরাপত্তার ব্যাবস্থা করেছিল, আপনাকে সার্বিকভাবে সাহায্যও করে ছিল এবং আপনার জন্য সে (কাফেরদের) প্রতি অসন্তুস্ট ছিল। এটা তার কোন উপকারে আসবে কি? তিনি বললেন হাঁ! আমি তাকে দোযকের অতল গহ্বরে পেয়ে ছিলাম। আমই তাকে সেখান থেকে বের করে আগুনের উপরিভাগে নিয়ে আসেছি। (মুসলিম)
হাদীসঃ হযরত আয়িশা(রা) থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন, আমি বললাম ইয়া রসুলুল্লাহ! ইবন জুদআন জাহেলী যুগের আত্মীয় স্বজনদের সদব্যাবহার করত এবং গরীব মিসকিনদের খাদ্য দান করত, এ সকল ভাল কাজ তার জন্য কোন উপকারে আসবে কি? নবী করিম(সা) বললেনঃ তা তার কোন উপকারে আসবে না, কেননা, সে কোন দিন এ কথা বলেনি, হে আমার রব কেয়ামত দিবসে আমার গুনাগুল ক্ষমা করে দাও। (মুসলিম)
মুমিনরা কখন জন্নাতকে দেখার সৈভাগ্য অর্জন করবে?
মুমিনরা তাদের মৃত্যুর সাথে সাথে জান্নাতকে দেখার সৈভাগ্য অর্জন করবে। এ ছাড়া তারা তদের আমলে বরযখ (কবরের জীবন) জীবন এ সকাল স্যান্ধা তদের স্থায়ী আবাস জন্নাতকে দেখতে পাবে।
হাদীসঃ হযরত আবু হুরায়রা(র) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ঈমানদার ব্যাক্তির রূহ কবয করার পর দুজন ফেরেশতা এসে তার রূহ উদ্ধাকাশে(Meta Physical World) তুলে নিয়ে যায়। বর্ণনাকারি হাম্মাদ(র) বলেন, আবু হুরায়রা(র) এখানে ঐ রূহের সুগন্ধী ও মিশকের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন আসমানের বাসিন্দারা বলতে থাকে কোন পবিত্র আত্না দুনিয়া() হতে আগমন করেছে। আল্লাহ তোমার প্রতি ও তোমার আবাদকৃত শরীরের প্রতি রহমত নাজিল করুন। অতঃপর তাকে তার রবের নিকট নিয়ে যায়(iএবং তারা বলতে থাকে তার স্থানে (ইল্লিন) নিয়ে যাও। কেয়ামত পর্যন্ত তোমরা এখানে বসবাস করবে। আর যখন কোন কাফির ব্যাক্তির রূহ বের হয়, বর্ণনাকারি হাম্মাদ (র) বলেন, আবু হুরায়রা(র) এখানে ঐ রূহের দুগন্ধ ও তার প্রতি অভিসম্পাতের কথা উল্লেখ করেছেন। তখন আকাশের অধিবাসিরা বলতে থাকে কোন খবীস আত্না দুনিয়া দুনিয়া হতে আসেছে, অতঃপর তাকে তার স্থানে(সিজ্জীন) নিয়ে যাওয়া হয়।------(মুসলিম)
যারা জন্নাতে যাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবে না তাদের পরিনতই বা কী হবে?
যারা জন্নাতে যাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবে না তাদের পরিনতি জাহান্নাম। তবে তাদের মাঝে একটি দল ( জুলুমকারী মুমিন) জান্নাত ও জাহান্নামের মঝামাঝি “আরাফ” নামক স্থানে অবস্থান করবে।
কুরআনঃ উভয়ের(জন্নাত ও জাহান্নাম) মাঝ খানে একটি প্রাচীর থাকবে এবং “আরাফের” উপর আনেক লোক থাকবে। তারা(আরাফবাসীরা) প্রত্যেকে (জান্নাতি ও জাহান্নামিদেরকে) তার চিনহ দ্বারা চিনবে। তারা জান্নাতিদেরকে ডেকে বলবে, তমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। তারা তখনও জান্নাতে প্রবেশ করবে না কিন্তু (জান্নাতে) প্রবেশ করার ব্যাপারে আগ্রহী হবে। (০৭:৪৬)
চলবে--
বিষয়: বিবিধ
১৬৩৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন