দুনিয়া(Physical World) এবং আখেরাত(Meta Physical World) পর্ব ৯
লিখেছেন লিখেছেন আনিসুর রহমান ০১ নভেম্বর, ২০১৩, ০৬:৫৩:০৫ সকাল
পর্ব ৮ এ আমরা বিজ্ঞানের আলোকে বিস্তারিত আলোচনা করে দেখিয়ে ছিলাম যে, যদিও আমরা আজকের যুগকে জ্ঞান বিজ্ঞানের চরম বিকাশের যুগ বলে জানি বিন্তু বাস্তবতা হল বিজ্ঞানের চরম বিকাশের যুগও আমরা আমাদের বিরাট বিশাল মহাবিশ্বের শুধু মাত্র ক্ষুদ্র একটি অংশ সম্পকে জানতে পেরেছি। এমন কি আমাদের এই মহাবিশ্ব(Physical World) কত বড় সে সম্পকে আমাদের কোন ধারনা নেই। আমরা আখেরাত(Meta Physical World) সম্পকে আরও বিস্তারিত বলার পূর্বে, আজকে এসে আমরা আমাদের মহাবিশ্বকে(Physical World) কতটুকু জনতে ও বুঝতে পেরেছি, সে সম্পকে একজন মহাকাশ বিজ্ঞানী কি বলে তা দেখবো। জাপানী মহাকশ বিজ্ঞানী ড. অসিহিডি কোজী* বলেন, আমাদের মহাকাশ বিজ্ঞানীরা এই মহাবিশ্বের শুধু মাত্র ক্ষুদ্র অংশের উপরে গবেষণা করেছে। আমরা আমাদের মনোসংযোগ করেছি এই মহাবিশ্বের ক্ষুদ্র অংশের কাজকে বুঝার জন্য। ইহার কারন হল দূরবীক্ষণ যন্ত্র ব্যাবহার করে আমরা এই মহাবিশ্বের সমস্ত অংশ দেখার পরিবতে শুধু মাত্র অংশকে দেখতে পাই।
সুতরাং স্পস্টতই আমরা বুঝতে পারছি যে, আমাদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা, প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা, সর্বপরি মহাবিশ্বের বিশালতা, আমাদের মহাবিশ্বকে জানা ও বুঝার ক্ষেত্রে বিরাট প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে রেখেছে। এই যখন চিত্র সেখানে আমরা এই মহাবিশ্বকে(Physical World) অতিক্রম করে আরেক মহাবিশ্বে(Meta Physical World) পৌছার কথা ভাবা, দূর আশা ছাড়া আর কিছু নয়। তাই এখন যদি আমরা আখেরাতকে(Meta Physical World) জানতে ও বুঝতে চাই তবে, কুরআন ও সুন্না ভিন্ন আমাদের সস্মুখে আর কোন পথ খোলা নেই।
আখেরাতকে(Meta-Physical world) বুঝার জন্য নবী করিম() একটি গুরুত্বপুন হাদিস হল, “সে জগত(Meta-Physical world) হইবে এরকম, যা কোন চোখ কখনোও দেখেনি, কোন কান কখনোও শুনেনি, কোন হৃদয়ে কখনোও আসেনি।” (মুসলিম শরিফ)। এই হাদিস থেকে আমরা যে গুরুত্বপুন বাতা(Messege) পাই তা হল, এই দুনিয়াতে অবস্থান করে আমাদের পক্ষে আখেরাতকে(Meta-Physical world) জানা বা বুঝা অসম্ভব। তার পরও আল্লাহ() দয়া করে আমাদেরকে আখেরাত সম্পকে ধারনা দিতে চেয়েছেন কুরআন- সুন্নার মাধ্যমে। তার কারন(Allah know best) সম্ভবত এক, আমাদের দুনিয়ার জীবন আখেরাতের(Meta Physical World) তুলনায় একেবারে এতই ক্ষুদ্র যে, তা নিয়ে তুলনা করার কোন প্রশ্নই উঠে না। আমাদের প্রাত্যহিক অভিজ্ঞতা থেকেও আমরা তা উপলব্ধি করতে পারি। দুই, দুনীয়া(Physical World) ও আখেরাতের(Meta Physical World) মাঝে যে বিরাট বিশাল ব্যবধান; যেমন, দুনিয়ার শান্তি ও আখেরাতের শান্তি, দুনিয়ার ভোগ-বিলাশ ও আখেরাতের ভোগ-বিলাশ, দুনিয়ার আনন্দ ও আখেরাতের আনন্দ, দুনিয়ার পছন্দনীয় জিনিস/বস্তু ও আখেরাতের পছন্দনীয় জিনিস/বস্তু , দুনিয়ার মানসিক অবস্থা ও আখেরাতের মানসিক অবস্থা, দুনিয়ার আমোদপ্রমোদ ও আখেরাতের আমোদপ্রমোদ ইত্যদি বিষয় গুল সম্পকে ধারনা দেওয়ার জন্য। তিন, আল্লাহ() আমাদের জন্য এই দুনিয়াকে পরীক্ষা ক্ষেত্র করে পাঠিয়েছেন, এই পরীক্ষায় সাফল যারা তাদের জন্য কি পুস্কার নিহিত আছে এবং ব্যাথতার ফলা-ফল কি ভয়ংকর হবে সে সম্পকে সাম্যক ধারনা দেওয়ার জন্য। চার, ভাল কাজকে উৎসাহিত করা এবং মন্দ কাজকে নিঃরুৎসাহিত করার জন্য; ইত্যদি ইত্যদি।
আমরা কুরআন এবং হাদীসের, দুনীয়ার(Physical World)বিষয় বস্তু উপর বর্ণিত প্রতিটি বর্ণনা যেরূপ পরিষ্কার ভাবে বুঝি তদ্রুপ আখেরাতর()বিষয় বস্তু উপর বর্ণিত প্রতিটি বর্ণনা, পরিষ্কার ভাবে বুঝি না; এর কারন আমরা পূর্বে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। যেহেতু আখেরাত সম্পকিত বর্ণনা পরিষ্কার ভাবে বুঝা অসম্ভব, তাই এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন ব্যাক্তি নিজের অনুকূলে বিভিন্ন প্রকারের অপব্যাখা দিচ্ছে। বিশেষ ভাবে এখানে আমি বাংলাদেশের নাস্তিক- মুরদাতদের অপব্যাখা সম্পকে আলোচনা করবো; কারন হল ইসলাম উপর তাদের ভুল ধারনা বা সঠিক জ্ঞানের অভাবের জন্য তারা কুরআন ও হাদীসের আখেরাত সম্পকিত বর্ণনা গুল পরিষ্কার ভাবে বুঝতে না পেরে, তাদের সীমাবদ্ধ জ্ঞানের আলোকে, যে মনগড়া উলটপালট ব্যাখা দিচ্ছে তা সাধারন মুসলমানগণ বুঝতে না পেরে বিভ্রান্ত হচ্ছে। প্রথমে একটি ছোট সত্য ঘটনার সাহায্যে আমরা বুঝতে চেস্টা করবো, বাংলাদেশী নাস্তিক- মুরদাতদের মত কোন কিছু সম্পকে প্রকৃীত ধারনা না রেখে, নিজেদের অজ্ঞতার আলোকে তা বুঝতে গেলে কি ধরনের বিপত্তি ঘটতে পারে। ঘটনাটি হল, একবার এক বিখ্যাত এক মহাকাশ বিজ্ঞানী গ্রাম্য এলাকায় অবস্থিত একটি সংস্থা থেকে নিমন্ত্রন পেয়ে সেখানে যান। সে অত্যন্ত বিখ্যাত ব্যাক্তি হওয়ায়, প্রচুর জনতা আসে তার কথা শুনতে। সে তার নাতী-দৈঘ্য বক্তিতায় মহাকাশের উপর বিভিন্ন বিষয় বলার সাথে সাথে এ তথ্যও জানায় যে, আমাদের পৃথীবি তার নিজের অক্ষে(Orbit) ঘুরার সাথে সাথে সূর্যে চারিদিকেও আবর্তন। বক্তব্য শেষে যখন বিজ্ঞানী চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন তখন এক বৃদ্ধা মহিলা বিজ্ঞানীর সাথে কথা বলতে আসে। বৃদ্ধা মহিলা অত্যন্ত রাগান্বিত স্বরে বিজ্ঞানীকে বলে, মিস্টার বিজ্ঞানী, আপনি জ্ঞানের নামে এসব আবল-তাবল কি বললেন, আজকে আমি আমার চুল সাদা করে ফেলেছি কিন্তু পৃথিবিকে কখনও ঘুরতে দেখিনি!!!
আখেরাত(Meta Physical World) সম্পকে বাংলাদেশী নাস্তিক-মুরদাতদের জ্ঞান/ধারনা গ্রাম্য ঐ সাদা চুলওয়ালা বুড়ির মত, এর চেয়ে না এক চুল বেশী বা না এক চুল কম।
চলব--------
** Dr. Yoshihide Kozai: He is a professor of emeritus at Tokoy University, Hongo, Tokyo, Japan, and was the director of the National Astronomical Observatory, Mitaka, Tokyo, Japan.
বিষয়: বিবিধ
১৩৭৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন