দুনিয়া(Physical World) এবং আখেরাত(Meta Physical World) পর্ব-৮
লিখেছেন লিখেছেন আনিসুর রহমান ২৩ অক্টোবর, ২০১৩, ০৬:৫৫:০৭ সন্ধ্যা
আখেরাত(Meta Physical World)ঃ- আমাদের মহাবিশ্বের প্রান্ত আছে ধরে তার চিত্র দেওয়া হল।
চিত্রঃ আমাদের মহাবিশ্ব (Pictured here is an artist’s concept of what it might look like.)
এখন আমরা যদি আমাদের মহাবিশ্বের(Physical World) সমান্তরাল আর একটি বিশ্বকে কল্পনা করি তবে সেটাকে আমরা বলবো Meta Physical World। কেননা ইংরেজী শব্দ Meta বলতে বুঝায়, বাস্তবে বর্তমান, কোন কিছুর সমান্তরাল কোন কিছু; যা প্রকৃীত পক্ষে বাস্তবে বর্তমান নেই বা যা আমাদের জ্ঞান দ্বারা ধরা যায় না এবং Metaphysics বলতে বুঝি দর্শনের ঐ শাখাকে, যেটা বিদ্যমান প্রাকৃীতি, জ্ঞান এবং সত্য এই বিষয়গুল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে। আমরা কুরআন ও হাদিসের আলোকে আখেরাত(Meta Physical World) বলতে বুঝি, আমাদের মহাবিশ্বের(Physical World) সমান্তরাল অপর ছয়টি বিশ্বকে(Meta Physical World),যা আমাদের জ্ঞান দ্বারা ধরা যায় না এবং যেখানে আমাদের মহাবিশ্বের(Physical World) অবস্থান হল সর্ব নিন্ম স্তরে। এখন যে প্রশ্নটি সবার আগে চলে আসবে তা হল আমরা কি মহাকাশ ভ্রমণের মাধ্যমে আমাদের এই দুনিয়া থেকে আখেরাতে চলে যেতে পারবো, দূর ভবিৎসতে; যেমন আমরা আজকে পৃথীবি থেকে চাঁদে কিংবা মঙ্গল গ্রহে যেতে পারছি। এ বিষয়টি নিয়ে আজকের বিজ্ঞানই বা আমাদের কি তথ্য দিচ্ছে? আর কুরআনিক বিজ্ঞান বা কুরআন ও হাদীসই বা আমাদের কি বলছে?
মহাকাশ ভ্রমণ সম্পকে কুরআন আমাদেরকে জনায়
(ঘ) হে জিন ও মানবকুল নভমন্ডল ও ভুভমন্ডলের প্রান্ত যদি তোমাদের সাধ্যে কুলায়, তবে অতিক্রম কর। বিন্তু ছাড়পত্র ব্যাতীত তোমরা তা অতিক্রম করতে পাড়বে না। (৫৫:৩৩)
(ঙ)অতঃপর আল্লাহ্() যাকে পথ প্রদর্শন করতে চান তার বক্ষকে ইসলামের জন্য উন্মুক্ত করে দেন এবং যাকে বিপথগামী করতে চান তার বক্ষকে সংকীর্ণ করে দেন যেন সে সবেগে আকাশে আরোহণ করছে। (৬:১২০)
এখানে ৫৫ নং সুরার ৩৩ নম্বর আয়াত থেকে আমরা যে তথ্য গুল পাই তা হল: --এখানে আল্লাহ() প্রথমে জিন জাতিকে আহ্বান করেছে মহাকাশের প্রান্ত অর্থাৎ আমাদের মহাবিশ্বের(Physical World) সীমানা অতিক্রম করতে, যদি সে সমর্থ তাদের থাকে অর্থাৎ দুনিয়ার(Physical World) সীমানা বা প্রান্ত অতিক্রম করে আখেরাতে (Meta Physical World) যেতে। বিন্তু এই আয়াতের পরবর্তী অংশে আল্লাহ() আমাদের জানাচ্ছেন যে ছাড়পত্র ব্যাতীত তোমরা তা অতিক্রম করতে পাড়বে না; অর্থাৎ আমরা(জিন ও মানুষ) যদিও আমাদের মহাবিশ্বের প্রান্ত সীমা পযন্ত ভ্রমণ করতে সমর্থ হইও, তথাপিও আমরা আমাদের মহাবিশ্ব(Physical World) অতিক্রম করে আরেক মহাবিশ্ব(Meta Physical World) এ যেতে পারবো না ছারপ্ত্র ব্যাতীত।
প্রথমত ৫৫ নং সুরার ৩৩ নম্বর আয়াতে জিন জাতিকে মানুষের আগে উল্লেখ করার কারন হল, মানুষ মাত্র সেদিন মহাকাশ ভ্রমণের প্রযুক্তি আয়ত্ত করেছে, কিন্তু জিন জাতি কুরআন নাজিলেরও অনেক অনেক আগে থেকে মহাকাশ ভ্রমণের কৌশল জানতো, কুরআন আমাদেরকে জিনদের মহাকাশ ভ্রমণ এবং তার উদ্দেশ্য সম্পক্যে তথ্য দেয়। নিন্মে এ সম্পকিত কুরআনের একটি আয়াত দেওয়া হল। “ আমি আকাশকে প্রত্যেক বিতারিত শয়তান(জিন) থেকে নিরাপদ করে দিয়েছি। বিন্তু যে চুরি করে শুনে পালায়, তার পশ্চাৎ ধাবন করে জ্বলন্ত উল্কাপিন্ড।(১৫ঃ১৭-১৮)।” দ্বিতীয়ত আল্লাহ() আমাদের জানাছেন যে, আমরা যদিও চেষ্টার ফলে সকল প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে মহাকাশ ভ্রমণ করতে সমর্থ হই বিন্তু কখনই আমরা দুনিয়া ও আখেরাতের মাঝের মধ্যকার প্রতিবন্ধকতা ( যা নবী করিম সাঃ আসমানের দরজা বলে উল্লেখ করেছন) অতিক্রম করে দুনিয়া থেকে অন্য জগতে(Meta Physical World) যেতে পারবো না।
বুঝার সুভিদার্থে, প্রথমে মহাকাশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে অন্যন্য যে প্রতিবন্ধকতা গুল বাধার কারন হয়ে দাড়ায় সে সম্পকে আলোচনা করবো। কুরআন আমাদেরকে মহাকাশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকারের বাধা বা সমস্যা সম্পকে জানায়। যেমন নীচের আয়াতটি(৬:১২০), আমাদেরকে জানায় যে আমরা যতই আমাদের পৃথীবি থেকে দূরে চলে যেতে থাকবো, ততই আমাদের বক্ষ (আক্সিজেনের অভাবের জন্য ) সংকুচিত হয়ে আসবে। “অতঃপর আল্লাহ্() যাকে পথ প্রদর্শন করতে চান তার বক্ষকে ইসলামের জন্য উন্মুক্ত করে দেন এবং যাকে বিপথগামী করতে চান তার বক্ষকে সংকীর্ণ করে দেন যেন সে সবেগে আকাশে আরোহণ করছে। (৬:১২০)”
এভাবে আমরা যদি দেখি, তবে দেখবো যে মহাকাশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে রয়েছ পদে পদে ভয়ংস্কর বিপদ ও প্রতিবন্ধকতা যেমন, black hole, gravitational force ইত্যাদি। আলোচনার সুভিদার্থে ধরে নেই যে আমরা কোন না কোন ভাবে মহাকাশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে সকল প্রকারের প্রতিবন্ধকতা গুলি অতিক্রম করতে সমর্থ হয়েছি। তবে কি আমরা দুনিয়া(Physical World) থেকে ভ্রমণ করে আখেরাতে(Meta Physical World) যেতে পারবো?
আমরা জানি যে কোন কিছুর বেগ(Speed) আলোকের(Light) বেগের থেকে বেশী হতে পারে না। আবার আলোকের বেগ এত বেশী যে, যদি আমরা আলোকের বেগ অর্জন পারি, তবে প্রতি সেকেন্ডে সাত বার আমরা আমাদের পৃথিবীকে ঘুরে আসতে পারবো; অর্থাৎ আলোকের বেগের কাছাকাছি বেগে চললে বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা ঘুরে আবার বাংলাদেশে ফিরে আসতে সময় লাগবে এক সেকেন্ডের চেয়ে অনেক কম সময়!! কিন্তু এই আলোকের বেগে চললেও আপনার পৃথিবী থেকে সুযে(Sun) যেতে সময় লাগবে আট মিনিট। আবার একই গতিতে চলে, যদি পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে আবস্থিত তারায় যেতে চান তবে সময় লাগবে চার বছরেরও বেশী। এরূপ ভাবে একই গতিতে চলে যদি আমাদের গ্যালাক্সীর(Milky Way or Near Galaxy) এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে চাই, তবে সময় লাগবে একশত হাজার বছর এবং দুই মিলিয়ন বছর লাগবে এন্ডোমিডা নিউবিলাতে(Andromeda Nubela) পৌছাতে। আবার আমরা আমাদের সর্ব বৃহৎ ও সর্বাধুনিক দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্য নিয়ে, মহাবিশ্বের সর্ব শেষ যে অংশটুকু পর্যন্ত দেখতে পাই, সে দূরত্ব পর্যন্ত পৌছতে লাগবে; পাঁচ লক্ষ হাজার মিলিয়ন বছরের চেয়েও বেশী সময়!!! আব্যেশিক ভাবেই ঐ পরিমাণ দূরত্ব অতিক্রম করে আবার গন্তব্যে ফিরে আসতে একই পরিমান সময় লাগবে। অথচ আমরা বাঁচি মাত্র ৮০/৯০ বছর, সেখানে আমরা এরূপ লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি বছর ব্যাপিয়া ভ্রমণের কথা চিন্তাতো দূর কল্পনাও করতে পারি না।
অপর দিকে আমরা যদি আলকের গতি বেগের চেয়ে মিলিয়ন মিলিয়ন গুন বেশী বেগ(Speed)অর্জন করতে পারি তবে হয়তো আমরা আমাদের মহাবিশ্বের প্রান্ত(Edage) পর্যন্ত ভ্রমণ করতে সক্ষম হবো। বিন্তু এখানেও সমস্যা, আর এই সমস্যার মুল কারন হল সময়(Time)। যখন আলোকের বেগের() থেকে বেশী গতি বেগ নিয়ে আমরা মহাকাশ ভ্রমণের চেস্টা করবো, তখন যে বিষয়টি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে তা হল এই “সময়” । আলোকের গতি বেগের চেয়ে বেশী বেগ অর্জ আলোকের বেগের() থেকে বেশী গতি বেগ অর্জন করার সাথে সাথে আমাদের শরীর ত্রিমাতিক বস্তুর(Three Dimensional object) ন্যায় আচরণ করার পরিবতে চৌমাত্রিক বস্তুর(Four Dimensional object) ন্যায় আচরণ করবে এবং দিকও(Direction) পরিবর্তীত হয়ে সময়ের দিকে(Time Like Direction) যাওয়ার পরিবর্তে স্থানের দিকে(Space Like Direction) ধাবিত হবে। ফলে বস্তুর ভর(Mass) এত বেড়ে যাবে যে, ওটাকে সরাতে যে বিরাট বিশাল পরিমাণ বল বা শক্তির প্রয়োজন হবে, তা তৈরি করা আকেবারে অসম্ভব হবে। এ ক্ষত্রে বিখ্যত বিজ্ঞানী আইনইস্টান গাণিতিক ভাবে দেখান যে, যখন বস্তুর গতি আলোকের গতির কাছাকাছি হবে তখন বস্তুর ভর বাড়তে বাড়তে এতই বিশাল হবে যে, ওটাকে সরাতে যে বিরাট বিশাল পরিমাণ বল বা শক্তির প্রয়োজন হবে এবং ঐ পরিমাণ শক্তি তৈরি করা অসম্ভব।
সুতরাং স্পস্টত আমরা দেখছি যে, বতমানে মহাকাশ বিজ্ঞান যে পরযায়ে আছে, সেখানে দাড়িয়ে আমরা মহাকাশ ভ্রমণের মাধ্যমে দুই মহাবিশ্বের মধ্যকার প্রতিবন্ধকতাকে(যা নবী করিম সাঃ আসমানের দরজা বলে উল্লেখ করেছন) অতিক্রম করে আমাদের মহাবিশ্ব(দুনিয়া) থেকে অপর মহাবিশ্বে(আখেরাত) যাওয়ার কথাতো দূরে থাক; এমন কি আমরা আমাদের সর্ব বৃহৎ ও সর্বাধুনিক দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্য নিয়ে, মহাবিশ্বের(দুনিয়া) সর্ব শেষ যে অংশটুকু পর্যন্ত দেখতে পাই, সে দূরত্ব পর্যন্ত পৌছার কথা ভাবতে পারি না।
আমরা আমাদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারনে, আমাদের মহাবিশ্বের(Physical World) বাহিরে অন্য বিশ্বগুল(Meta Physical Worlds) সম্পকে কোন কিছু জানতে পারছি না বলে; আজকে এসে বিজ্ঞানের আলোকে, দূর ভবিৎসতে সেই জগত(Meta Physical Worlds) সম্পকে জানার সকল পথকে বন্ধ দেখতে পেয়ে; সেই জগতকে(আখেরাতকে) একেবারে অস্বীকার করা কোন ভাবেই যুক্তি –যুক্ত হতে পারে না বরং যুগে যুগে নবী রাসুল বা সত্যপন্থী ব্যাক্তি কতৃক দেও আখেরাত সম্পকীত সংবাদকে গ্রহণ করা অধিক যুক্তি যুক্ত।
বিষয়: বিবিধ
২০৫৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন