দুনিয়া(Physical World) এবং আখেরাত(Meta Physical World) পর্ব-৪

লিখেছেন লিখেছেন আনিসুর রহমান ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৬:২০:০৮ সন্ধ্যা

Damascus University এর মোহাম্মদ আয়াজ –উল- খাতিবের মতামত অনুসারের কুরআনের ৬৬৬৬ আয়তের মধ্যে ৭৫০ অয়াত হল বৈজ্ঞানিক তথ্য সম্বন্ধীয়, যা কুরআনের মোট অয়াতের আট ভাগের এক ভাগ। এই সবগুল আয়াত আমাদের এই পৃথিবী সহ মহাবিশ্ব(Physical World) সম্পকে যে তথ্য দেয় বিস্ময়কর ভাবে তা সঠিক, নমুনা স্বরূপ এরূপ কয়েকটি আয়াতের বিস্তারিত বননা দিয়ে আমরা আগের পর্বে দেখিয়ে ছিলাম যে কুরআনের দেওয়া মহাবিশ্ব(Physical World) সম্পকিত তথ্য গুল কতখানি সঠিক। বস্তুত আল্লাহ্‌() শুধু আমাদের এই মহাবিশ্ব(Physical World) সম্পকিত বৈজ্ঞানিক তথ্য দিয়ে ক্ষান্ত হন নাই বরং বারবার এই বিষয়টির দিকে দৃস্টি আকষন করেছেন বিভিন্ন ভাবে।

“তাহারা কি তদের উপরস্থ আকাশের দিকে দৃষ্টিপাত করে না –আমি কি ভাবে তা নিমান করেছি এবং সুসভিত করেছি। তাতে কোন ফাটল (ভুল) নেই। “–(৫০:৬)

আমরা যতবারই চেষ্টা করিনা কেন, যতবারই আমরা আল্লাহর সৃস্টির ফাটল বা ভুল ধরতে চেষ্টা করিনা কেন; সেটা আমরা Hubble Teloscope, satelite, space ship এর সাহায্যই হোক অথবা খালি চোখেই হোক বা অন্য কনভাবেই হোক না কেন, প্রতিবারই আমাদের সে চেষ্টা ব্যাথতায় পযবসিত হতে ব্যাধ্য। আমাদের দৃষ্টি ব্যাথ হয়ে ফিরে আসবে বিন্তু আল্লাহ্‌র সৃস্টিতে কোন ফাটল বা ভুল পাবো না। কুরআনের দুইটি আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ্‌() অত্যান্ত সুন্দরভাবে এই বিষয়টি আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন--

“তিনি সপ্তআকাশ স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছন। তুমি করুণাময় আল্লাহতালার সৃষ্টিতে কোন তফাত দেখতে পাবে না। আবার দৃষ্টি ফিরাউ কোন ফাটল ( ভুল) দেখতে পাউ কি? অতঃপর তুমি বারবার তকিয়ে দেখ- তোমার দৃষ্টি ব্যাথ ও পরিশ্রন্ত হয়ে তোমার দিকে ফিরে আসবে।”(৬৭:৩-৪)

আমরা জানি কুরআন কোন বৈজ্ঞানিক কিতাব নয় এবং ইসলামের সকল বিধানগুল প্রধানত দুই প্রকারের (১) আল্লার হক বা আমল এবাদা (Matter related to worshiping Allah that is salah, zakah, hazz etc ) (২) বান্দার হক বা আমল মুমেলাত (Matter related to public dealing that is social, commercial, economical, political etc). তা সত্বেও আমরা দেখছি যে, কুরআনের আয়াতের একটি বড় অংশ(১/৮) হল এই মহাবিশ্বের বিভিন্ন নিয়ম-কানুন()সম্পকিয় আয়াত; শুধু কি তাই, আল্লাহ্‌() বার বার আমাদের দৃষ্টি আকষন করেছেন এই আয়াতগুলর প্রতি, এই আয়াতগুল নিয়ে চিন্তা- গবেষণা করার জন্য, পবীক্ষা-পযবেক্ষেন করে এর সঠিকটা দেখার জন্য। সাথে সাথে একথাও বলে দিয়েছেন যে, আমরা যতভাবেই চেষ্টা করি না কেন তাতে কোন ভুল খুঁজে পাব না।

“তবে কি তারা কুরআন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে না। না তাদের অন্তর তালাবদ্ধ।” (৪৭:২৪)

কিন্তু কেন? কেন আল্লাহ্‌() এই বিজ্ঞানিক তথ্য গুলর প্রতি এত গুরুত্ব আরব করেছেন? অথচ এই বিজ্ঞানিক আয়াত গুলর সাথে না আছে(১) আল্লার হক বা আমল এবাদা এর কোন সম্পক না আছে ) বান্দার হক বা আমল মুমেলাত এর কোন সম্পক। বস্তুত এই প্রশ্নের উত্তর যদি আমরা খুঁজে পাই তবে আমরা শুধু আখেরাত(Meta Physical World) নয় এর সাথে সাথে দীন ইসলামের অনেক গুরুত্বপুন্য প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাব। আর এ প্রশ্নের উত্তর বুঝার প্রথম ধাপ হল, দুনিয়া(Physical World) এবং আখেরাত(Meta Physical World) সম্পকিত কুরআন বিরুদ্ধবাদীদের আনা বিভিন্ন অভিযোগ এবং এ সম্পকিত তদের অপব্যাখার স্বরূপ বুঝতে পারা । এপ্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, কুরআনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সংখ্যা অনেক কেননা প্রতিদিনই কুরআনের বিরুদ্ধবাদীরা, কুরআনের বিরুদ্ধে একটার পর একটা ভ্রান্ত অভিযোক এনে শত শত বই প্রকাশ করছে। নিন্মে আমরা এ ধরনের কয়েকটি অভিযোগ নিয়ে আলোচনা করবো।

পুরনো মানুসেরা ছিল শিশু ; অন্ধকার পৃথিবী ও সংকীন মহাজগতের(Physical World) অধিবাসী। সব কিছুই ছিল তাদের কাছে রহসয়; মহাজগত(Physical World) বলতে যা বুঝি আমরা, তারা তা বুঝত না; তাদের মহাজগত(Physical World) ছিলো খুবই ক্ষুদ্র জগত।----- মহাজগত বলতেই আজ অনন্ত অসীমের ধারনা জাগে আমাদের মনে, পুরনো মানুসদের মনে এমন ধারনা জাগত না। ( আমার অবিশ্বাস, হুমায়ুন আজাত,পৃষ্ঠা ৬৩)

বিশ্ব বা মহাজগত(Physical World) কখন সৃষ্টি হয়েছিল?ইহুদি খ্রীস্টান ও ইসলাম ধর্মে বিশ্বসৃষ্টির যে বিবরণ পাওয়া যায়, তাতে বোঝা যায় তদের বিশ্বাসে মহাজগত(Physical World)সৃষ্টি হয়েছিলো অতীতের এক নিদস্ট সময়ে; আর সে অতীত বেশি অতীত নয়। তাদের ভাবনায় ওই সময়টা অবশ্য অত্যন্ত দীঘ, কেননা হাজার বছর তাদের চিন্তায় ছিলো মহাকালের মত। ( আমার অবিশ্বাস, হুমায়ুন আজাত,পৃষ্ঠা ৭২-৭৩)

বহু ধর্ম রয়েছে পৃথিবীতে। একটি সরল প্রশ্ন জগতে পারে যে বিধাতা যদি থাকেন, তিনি যদি একলাই স্রষ্টা হন, তবে তিনি কেনো এতো ধর্ম পাঠালেন? ------- তিনি তা করেননি কেন? ( আমার অবিশ্বাস, হুমায়ুন আজাত,পৃষ্ঠা ৭৭)

প্রত্যাদেশ অসম্ভব কল্পিত ব্যাপার।-------- প্রত্যাদেশগুলতে অন্তত কোন প্রমান থাকে না, যা পরেই বুঝা যায় এগুলো বিধাতার বানী। এগুলোতে থাকে বহু ভুল ও স্ববিরোধীতা; এগুলোতে থাকে কিছু সরল নীতিকথা, আর নিদেশ, যার জন্য বিধাতার দরকার পরে না।(আমার অবিশ্বাস, হুমায়ুন আজাত,পৃষ্ঠা ৯৭)

পরলোক(Meta Physical world) হাস্যকর কল্পনা। মানুষ মরতে ভয়পায় বলেই উদ্ভাবন পরলোক(Meta Physical world) স্বগ-নরক(Heaven & hell belong to Meta Physical world)। পরলোক(Meta Physical world) হচ্ছে জীবনের বিরুদ্ধে এক অশ্লীল কুৎসা; পরলোকের(Meta Physical world) কথা বলা হচ্ছে জীবনকে অপমান করা। পরলোকে বিশ্বাস(Meta-Physical world) জীবনকে করে তোলে নিরথক।(আমার অবিশ্বাস, হুমায়ুন আজাত,পৃষ্ঠা ৯৮)

অনেক অভিযোগের মধ্য থেকে এই অভিযোগগুল সিলেক্ট করার কারনঃ--

১। এই অভিযোগগুলই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কুরআন বিরুদ্ধবাদীরা বিভিন্ন ভাবে করে থাকে

২। এই অভিযোগগুল সরাসরি দুনিয়ার নিয়ম (Physical Law ) এবং আখেরাত(Meta Physical World)এর সাথে সম্পক যুক্ত।

৩। এই অভিযোগগুলর উত্তর বুঝার সাথে সাথে আমরা, একটা পরিস্কার ধারনা পাবো কুরআনের সঠিকতা এবং আব্যশিক ভাবেই কুরআনের দেওয়া আখেরাত সম্পকিত তথ্যের সঠিকতা সম্বন্ধে।

অভিযোগ -১

পুরনো মানুসেরা ছিল শিশু ; অন্ধকার পৃথিবী ও সংকীন মহাজগতের(Physical World) অধিবাসী। সব কিছুই ছিল তাদের কাছে রহসয়; মহাজগত(Physical World) বলতে যা বুঝি আমরা, তারা তা বুঝত না; তাদের মহাজগত(Physical World) ছিলো খুবই ক্ষুদ্র জগত।----- মহাজগত বলতেই আজ অনন্ত অসীমের ধারনা জাগে আমাদের মনে, পুরনো মানুসদের মনে এমন ধারনা জাগত না। ( আমার অবিশ্বাস, হুমায়ুন আজাত,পৃষ্ঠা ৬৩)

এই অভিযোগটি অতি পরিচিত একটি অভিযোগ । যদি আমরা বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিলের আলোকে বিচার করি তবে দেখবো যে এই অভিযোগটি আকবারে সঠিক। কেননা এই বিষয়টি আমরা পূবে আলোচনা করে দাখিয়ে ছিলাম যে মাত্র ৫০০ বছর আগেও মানুষ তাদের মহাজগত(Physical World) আরও সঠিক ভাবে বলতে গেলে দুনিয়ার নিয়মগুল(Physical Law) ব্যাপারে তারা একেবারে অন্ধকারে ছিল। সেই অন্ধকার সময়ে কুরআন আমাদের দুনিয়ার নিয়মগুল(Physical Law) ব্যাপারে, যে জটিল আথচ গুরুত্বপুন তথ্য দেয় তা আজকের বিজ্ঞানের মানদন্ডে সঠিক প্রমাণিত হওয়া (যার বিস্তরিত বননা আমরা পূবে দিয়েছি) এটা প্রমান করে কুরআনের দেওয়া আখেরাত(Meta Physical World) তথা সকল তথ্যই সঠিক। সুতরাং এ কথা স্পস্ট যে কুরআন হল অন্ধকারের মাঝে আলো। কুরআনের দেওয়া এই তথ্যগুল বুঝতে আমাদের সময় লেগেছে ১৪০০ বছর। ১৪০০ বছর পর এসে High tech Instruments এর সহায়তায় আজ আমরা বুঝছি, ১৪০০ বছর আগে কুরআনের দেওয়া দুনিয়ার নিয়ম (Physical Law ) সম্পকিত তথ্যগুল সঠিক। এই সঠিকতাই প্রমান করে কুরআনের অনুসরণ আমাদের ১৪০০ বছর পিছানোতো দূরের কথা বরং আমাদের কত বছর আগাবে বা আলর পথে নিবে তা নিয়ে আমাদের চিন্তা করা দরকার।

চলবে---

বিষয়: বিবিধ

১৬৩৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File