দুনিয়া(Physical World) এবং আখেরাত(Meta Physical World) পর্ব -৩

লিখেছেন লিখেছেন আনিসুর রহমান ৩১ আগস্ট, ২০১৩, ০৪:৩৪:৫৪ রাত



আগের পর্বে আমরা দেখিয়ে ছিলাম যে, কুরআন যে সময় নাজীল হয় সে সময়ের মানুষ আখেরাত(Meta Physical World) সম্পকে অনঅবহিত ছিল শুধু তাই নয় বরং তারা এই দুনীয়ার নিয়মগুল(Physical Law) সম্পকেও অনঅবহিত ছিল। আবার তারা যে শুধু এই দুনীয়ার নিয়মগুল(Physical Law) সম্পকে অনঅবহিত ছিল তা যদি আমরা বলি তবে অধেক সত্য বলা হবে কেননা পুরো সত্য হল তৎকালে দুনীয়ার নিয়মগুলর(Physical Law) স্থান দখল করে নিয়ে ছিল ভ্রান্ত বিশ্বাস ও কুসংস্কার। সেই সময়ে কুরআন আমাদেরকে সকল প্রকার ভ্রান্ত বিশ্বাস ও কুসংস্কার এর মূলে কুঠারাঘাত করে দুনীয়ার নিয়মগুল(Physical Law) সম্পকে যে তথ্য দেয় তা আজকের বিজ্ঞানের মানদন্ডে সঠিক বলে প্রমাণিত। কোন প্রকারের আধুনিক যন্তপাতির সাহায়্য ব্যাতিরকে এরূপ নিভুল ভাবে, প্রচলিত ভ্রান্ত বিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিপরীতে দারিয়ে, দুনীয়ার নিয়মগুল(Physical Law) সম্পকে কুরআনের তথ্য দেওয়া, শুধু এটাই প্রমান করে না যে কুরআন আল্লাহর কিতাব বরং এটাও নিদেশ করে কুরআনের দেওয়া অন্যান্য তথ্যগুল নিভুল হতে ব্যাধ্য। সুতরাং এই সিদ্ধান্তে আসা মোটেই অযৈক্তিক হবে না যে, কুরআনের দেওয়া আখেরাত(Meta Physical World) সম্পকিত তথ্যগুল নিভুল হতে ব্যাধ্য। বিষয়টি পরিস্কার ভাবে বুঝাবার জন্য আমারা এই মহাবিশ্ব(দুনীয়া) এবং এই মহাবিশ্বের (Physical World) উপর কুরআনের দেওয়া বিভিন্ন তথ্য (আয়াত) থেকে কিছু তথ্য নিয়ে নীচে সংক্ষিপ্তকারে আলোচনা করলাম।

এই মহাবিশ্ব(Physical World) কত বড় ও বিশাল? আজও আমারা তা জানিনা কিন্তু এততুকু জানতে পেরেছি যে, আমাদের এই মহাবিশ্ব (Physical World) এত বড় ও বিশাল যে, আমাদের প্রতিদিনের মানদণ্ডে পরিমাপ করা সম্ভব নয়, কেননা মাইল/মিটর একক() খুবই ছোট একক এই মহাবিশ্বের(Physical World) আয়তনের তুলনায়। এই মহাবিশ্বর(Physical World) মহাকাশীয় বস্তুগুলর মধ্যকার দুরত্ব পরিমাপ করা হয় আলোর গতির মানদন্ডে।(এক সেকেন্ডে আলো যায় ১৮৬০০০ মাইল বা ৩০০০০০ কিলোমিটার সুতরাং এক বৎসরে আলো যে পরিমান দূরত্ব অতিক্রম করবে তা হল= ১x৬০x৬০x২৪x৩৬৫x১৮৬০০০= মাইল বা ট্রিলিয়ন মাইল= এক আলোক বৎসর।) আথাৎ এই মহাবিশ্বর(Physical World) আকার এত বিশাল যে এই মহাবিশ্বর(Physical World) সম্পকে জানাটা প্রায় অসম্ভব। তবে বিজ্ঞানীরা আজকে এই মহাবিশ্বর(Physical World) বয়স কত এবং কীভাবে এর উৎপত্তি হইয়ছে তা বের করতে পেরেছে। এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি সংক্রানতো ব্যাখা যে সুত্রের সাহ্যাযে বুঝা যায় তার নাম Big Bang Theory, এই সূত্র অনুসারে, আমাদের এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে, “কোন কিছু ছাড়া”। কিন্তু যেহেতু “কোন কিছু ছাড়া” কথাটি আমাদের কাছে কোন অর্থ বহন করে না, তাই মহাকাশ বিজ্ঞানীরা বিষয়টিকে বর্ণনা করেছন এভাবে “ এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়ে ছিল, একটি ছোট বিন্দুতে (যার আয়তন ছিল শূন্য এবং ভর ছিল অসীম ঘনত্ব সস্পন্ন) প্রচণ্ড বিস্ফরনের মধ্যদিয়ে।” অন্যদিকে কুরআনও আমাদের হুবহু একই তথ্য দেয়।

(আল্লাহ্‌) আকাশ ও জমিন সৃস্টি করেছেন “কোন কিছু ছাড়া” (৬:১০১)।

বিগব্যাং থিউরী অনুসারে একেবারে আদিতে অথাৎ এই মহাবিশ্ব সৃস্টির শুরুতে, এই মহাবিশ্ব মধ্যস্থ সমস্ত বস্তু একত্রে “মুখবদ্ধ ছিল” অথাৎ একটি অখন্ড বস্তু ছিল। পরবতীতে তা ভাঙ্গে অন্যান্য মহাকাশীয় বস্তু যথা চাঁদ, সুয্য, গ্রহ, নক্ষত্র, তারা ইত্যাদি সৃস্টি। এ ঘটনাটি কুরআনের সূরা আম্বিয়য় ৩০ নং আয়াতে কত সুন্দর ভাবেই না বননা করা হইয়েছে ঃ---

কাফেররা কী ভেবে দেখে না আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী (একত্রে) “মুখবদ্ধ ছিল” তারপর আমি (আল্লাহ্‌) উভয়কে খুলে দিলাম------ (আল-কুরআন)

আধুনিক মহাকাশ বিজ্ঞানের সবজন গ্রাজ্য এক নীতি অনুসারে এটা প্রতিস্টিত যে, চাঁদ, সুয্য, গ্রহ, নক্ষত্র, তারা ইত্যাদি সৃস্টির এক পযায়ে সমগ্র মহাবিশ্ব “ধুয়ার কুণ্ডলী” অথাৎ ঘন গ্যাসীয় গরম পদাথ ছিল। **১

বিজ্ঞানীরা এখন এই“ধুয়ার কুণ্ডলী”থেকে নতুন তারকার সৃস্টি পরযবেখন করতে পেরেছে। রাতের আকাশকে আমরা যে অসংখ্য তারাকে জ্বল জ্বল করতে দেখি, তা এই “ধুয়ার কুণ্ডলী” থেকে এসেছে। এই বিষয়টিকে নিদেশ করে কুরআনের মাধ্যমে আল্লাহ্‌ আমাদের জানানঃ—

অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোযোগ নিলেন যা ছিল “ধুয়ার কুণ্ডলী”। (৪১:১১)

কুরআন বিভিন্ন মহাকাশীয় বস্তু যথা চাঁদ, সুয্য, গ্রহ, নক্ষত্র, তারা ইত্যাদি উল্লেখের সাথে সাথে ঐ গুল সম্পেকে অনেকগুল গুরুত্বপপুন তথ্য আমাদের দেয়, যেমন আজকে High tech science & technology সাহায্যে আমরা জানি যে, বিভিন্ন মহাকাশীয় বস্তু যথা চাঁদ, সুয্য, গ্রহ, নক্ষত্র, তারা ইত্যাদি কোনরকম পিলার বা খুঁটির সাহায্য ছাড়া সবাই নিজ নিজ কক্ষ পথে সন্তরণ করে। এই তথ্যটি কুরআন আমাদেরকে জানায় একটি আয়াতের মধ্য নিয়ে

তিনিই(আল্লাহ্‌) সৃস্টি করেছেন রাত্রি ও দিন, সুয্য ও চন্দ্র সবাই নিজ নিজ কক্ষ পথে সন্তরণ করে। (২১:৩৩)

কুরআনের অপর এক আয়াতে বলা হয়েছে, সুয্য মহাশূনে স্থির অবস্থায় অবস্থান করে না বরং একটি নিদৃস্ট কক্ষ পথে প্ররিভ্রমণ করে।

সুয্য তার নিদৃস্ট কক্ষ পথে (Orbit) প্ররিভ্রমণ করে, এটা পরাক্রমশীল সবজ্ঞ আল্লাহ্‌র নিয়ন্ত্রণ। (৩৬:৩৮)

কুরআনের এই তথ্য আজকে এসে মহাকাশিয় গবেষণার ফলে আবিস্কার হয়েছে। দক্ষ মহাকাশ বিজ্ঞানীদের গননা অনুযায়ী সুয্য এক অকল্পনীয় গতি (৭২০,০০০ কিঃ মিঃ/ ঘণ্টা) অথাৎ ৭২০,০০০ কিঃ মিঃ/ ঘণ্টা নিয়ে একটি নিদৃস্ট দিকে ভেগা(Vega) নামক তারাকে কেন্দ্র করে একটি নিদৃস্ট কক্ষ পথে (Orbit)প্ররিভ্রমণ করছে। এই কক্ষ পথের নাম সোলার আপেক্স(Solar Apex)। তার অথ দাড়ায় সুয্য প্রতিদিন ১৭২৮০০০০ কিলোমিটার পথ প্ররিভ্রমণ করছে। সুয্যের সাথে সাথে অন্যন্য গ্রহ, নক্ষত্র যারা সুয্যের মহাকষ সিস্টেমের অধীন সেগুলও এই একই দূরত্ব অতিক্রম করছে। আথৎ প্রতিদিন ১৭২৮০০০০ কিলোমিটার পথ প্ররিভ্রমণ করছে। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, এই মহাবিশ্বে প্রায় ২০০ বিলিয়ন (১ বিলিয়ন= ১০১০) গ্যালাক্সী আছে। আবার প্রতিটি গ্যালাক্সীতে অনুমানিক ২০০ বিলিয়ন তারা অছে। আবার প্রতিটি তারার অধীনে অনেকগুল গ্রহ এবং প্রতিটি গ্রহের অধীনে কিছু উপগ্রহ থাকে। এই মহাকাশীয় বস্তু যথা চাঁদ, সুয্য, গ্রহ, নক্ষত্র, তারা, গ্যালাক্সী প্রভুতিও সুয্যের ন্যায় একটি পরিকল্পীত গতির অধীনে নিদৃস্ট পথ পরিভ্রমণ করে। উপরে উল্লেখিত তথ্যে গুলকে আমরা সংক্ষিপ্তকারে বলতে পারি যে, সমগ্র মহাবিশ্বটাই(Physical World) হল বিভিন্ন ভ্রমণ পথ এবং কক্ষ পথের সমাহার যা কুরআনে বনিত তথ্যের (আয়াতের) সাথে হুবহু এক!

পথ বিশিষ্ট আকাশের কসম। (৫১:৭)

কুরআনের অনেক আয়াতের(Sign) মধ্য থেকে, মাত্র কয়েকটি আয়াত(Sign) নিয়ে উপরের নাতীদৈঘ আলচনার মাধ্যমে আমরা পরিস্কারভাবে প্রমান করে দেখালাম যে, ১৪০০ বৎসর আগে,যখন Science & Technology বলতে সে সময়ের মানুষের কোন ধারনা ছিল না; সে সময়ে করআন আমাদেরকে তৎকালে প্রচলিত সকল প্রকার ভ্রান্ত বিশ্বাস ও কুসংস্কার এর বিপরীতে দারিয়ে, কোন প্রকারের আধুনিক যন্ত্রপাতির সাহায়্য ব্যাতিরেকে,দুনীয়ার নিয়মগুল(Physical Law) সম্পকে যে তথ্য দেয় তা আজকের বিজ্ঞানের মানদন্ডে সঠিক বলে প্রমাণিত। আজকে এ কথা দিবালকের মত স্পস্ট যে কুরআন আমাদেরকে আমাদের এই মহাবিশ্ব(Physical World) সম্পকে যে তথ্য দিয়েছে তা আজকের বিজ্ঞানের মানদন্ডে সঠিক বলে প্রমাণিত। এর উপর ভিত্তি করে এ কথা বলা কোন ভাবেই অযৈক্তিক হবে না যে, কুরআনের দেওয়া অপর মহাবিশ্ব আখেরাত(Meta Physical World) সম্পিত তথ্য গুল সত্য হতে ব্যাধ।

**১ The first three minutes, A modern view of the origin of the universe, Weinberg, pp 94-105

চলবে----

বিষয়: বিবিধ

১৬৬৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File