ঈদের গল্প
লিখেছেন লিখেছেন আনিসুর রহমান ০৮ আগস্ট, ২০১৩, ১০:৫২:২৭ সকাল
ঈদ মোবারক
ঈদের শুভেচ্ছা রহিল সবার জন্য
আমার এই গল্পটির অংশ বিশেষ আমার পূর্বের একটি লেখায় ব্যাবহার করে ছিলাম। আজকে ঈদ উপলক্ষে পুরা গল্পটি পোস্ট করলাম।
ঈদের গল্প
এই কাহিনী খলীফা হারন-অর-রশিদ এর সময়কার। সে সময় এক জ্ঞানবোদ্ধা রমক ( ইটালি) থেকে খলীফা হারন-অর-রশিদের দরবারে এসে হাজির হয়ে, দরবারের উদ্দেশে তিনটি প্রশ্ন রাখে। প্রশ্ন তিনটি ছিল :—(১) আল্লাহকে (আউজুবিল্লা--) কে সৃষ্টি করেছ? (২) আল্লাহ কোন দিকে মুখ করে আছেন? (৩) আল্লাহ এখন কি করছেন?
এ প্রসঙ্গে আমাদের জানা দরকার যে তৎকালে খলীফাদের দরবারে জ্ঞানী –গুণীদের অনেক কদর ছিল। কিন্তু প্রশ্ন তিনটি ছিল অত্যান্ত জটিল বিধায় দরবারে হাজির সকলেই উত্তর দিতে অপারগতা প্রকাশ করে ব্যতিক্রম শুধু এক জন। এই ব্যাক্তি ছিল বয়সে নবীন এবং তার জ্ঞান-গরিমার জন্য সকলের কাছে সুপরিচিত। অতঃপর ঐ নবীন ব্যাক্তি প্রশ্নের জবাব দেয়ার আগে কতিপয় শর্ত আরোপ করে। এখানে উল্লেখ্য যে তৎকালে খলীফাদের দরবারের প্রথা অনুসারে ধর্ম- বর্ণ নির্বিশেষ সকল জ্ঞানবোদ্ধাদের অনেক সস্মান দেওয়া হত এবং তারা দরবারে উচ্চ আসনে বসতেন। ঐ নবীন ব্যাক্তির শর্তগুলর মধ্যে অন্যতম একটি শর্ত ছিল, আসন পরিবর্তন, অর্থাৎ ঐ নবীন ব্যাক্তি বসবে উচ্চ আসনে, যা প্রকিত পক্ষে ঐ রমক জ্ঞানবোদ্ধা জন্য নিধারিত, আর ঐ জ্ঞানবোদ্ধা বসবে অপেক্ষাকিত নিচু আসনে, যা প্রকিত পক্ষে ঐ নবীন ব্যাক্তির জন্য নিধারিত। ঐ রমক জ্ঞানবোদ্ধা তাতে সস্মতি জানালে আসনের পরিবর্ত ঘটে। প্রথম প্রশ্নের উত্তরের জন্য উচ্চ আসনে বসা ঐ নবীন ব্যাক্তি নিচু আসনে বসা রমক জ্ঞানবোদ্ধাকে জিজ্ঞাসা করে, আপনি কি উল্টো করে গণনা করতে পারেন (অর্থাৎ ৯, ৮,৭------)। উত্তরে ঐ রমক জ্ঞানবোদ্ধা বলে এটা অতি সহজ কাজ। তখনঐ নবীন বাক্তি ঐ রমক জ্ঞানবোদ্ধাকে সংখ্যা দশ (১০) থেকে উল্টো করে গণনা শুরু করতে বলে। কিন্তু শর্ত হিসাবে এ কথা বলে দেয় যে, সে (নবীন বাক্তি) থামতে না বলার আগে সে (রমক জ্ঞানবোদ্ধা) যেন গণনা না থামায়। তার ঐ শর্তেও রমক জ্ঞানবোদ্ধা সস্মতি দেয়। সুতরাং যথারিতি গণনা শুরু হয়। ১০, ৯, ৮,--------১ অতঃপর জ্ঞানবোদ্ধা থেমে যায়। তখন ঐ নবীন বাক্তি ঐ জ্ঞানবোদ্ধাকে উদ্দেশ্য করে বলল, “ কেন তুমি আমাদের দুজনের মধ্যকার শর্ত ভঙ্গ করে গণনা বন্ধ করলে কারন আমিতো তোমাকে এখনও গণনা বন্ধ করতে বলি নাই?” উত্তরে বিস্ময়ে হতবাক জ্ঞানবোদ্ধা বলিল, “ হে যুবক তুমিত দেখছি, গণিতের “ক” ও বুঝ না। তাই এমন অবুঝের মত কথা বলছ। তুমি কি জান না যা দুনিয়ার সবাই জানে এবং এটা গাণিতিকভাবে প্রমানিত সত্য যে সংখ্যা এক(১) এর পর আর কোন সংখ্যা নেই, অর্থাৎ সংখ্যা এক (১) দিয়েই শুরু এবং এক দিয়েই শেষ, আর এটাই হল গাণিতিকভাবে প্রমানিত সত্য; যা পাগল এবং নিরেট বোকা ছাড়া দুনিয়ার বাকি সকলেই মেনে নিয়েছে। সুতরাং কোনভাবেই তুমি আমাকে শর্ত ভঙ্গ করার অভিযোগে অভিযুক্ত করতে পারো না।” তখন ঐ যুবক বলল, “ যদি তুমি সংখ্যা এক (১) দিয়েই শুরু এবং এক দিয়েই শেষ, গাণিতিকভাবে প্রমানিত এই সত্যকে মেনে নাও তবে এটা মেনে নিতে কি বিষয় তোমাকে বারন করছে, যে আল্লাহই শুরু(হুয়াল আওয়াল্লু) এবং আল্লাহই শেষ(হুয়াল আখেরু) । অবশ্য যদি না তুমি পাগল অথবা নিরেট বোকা হও তবে ভিন্ন কথা।” নিজের যুক্তির ফাঁদে নিজেই ধরা পরে ঐ জ্ঞানবোদ্ধা অবশেষ সন্তুষ্ট চত্তে ঐ যুবকের উত্তরকে মেনে নেয়।
সুতরাং গাণিতিকভাবে অতি সহজেই আমরা এ সিদ্ধাতে আসতে পারি যে আল্লাহকে() কে সৃষ্টি করেছে এ প্রশ্ন অবান্তর বা তা কোন অর্থ বহন করে না, যেমন গাণিতিকভাবে প্রমানিত সত্য হল সংখ্যা এক (১) দিয়েই শুরু এবং এক দিয়েই শেষ।
কুরআন এবং সুন্নাহর পরিভসায় আল্লহ()এক নাম হল “হুয়াল আওয়াল্লু” – তিনিই শুরু এবং আল্লহ()অপর এক নাম হল “হুয়াল আখেরু” - তিনিই শেষ।
কুরআনের ১১২ নং সূরার ১নং আয়তের মধ্যামে গাণিতিকভাবে প্রমানিত এই সত্যর দিকে আমাদের দৃষ্ট আকর্ষণ করে, আল্লাহ() বলেন, “ “বলুন, আল্লাহ() এক(১)” । (১১২:১)
জ্ঞানবোদ্ধার দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে জন্য অর্থাৎ আল্লাহ() কোন দিকে মুখ করে আছেন? ঐ যুবক দরবারের মাঝে একটি বড় আকারের প্রদীপ এনে তাতে অগ্নি সংযোগ করলে রাজ দরবার উজ্জ্বল আলোকে আলোকিত হয়ে পরে। তখন ঐ যুবক রমক জ্ঞানবোদ্ধাকে উদ্দেশ্য করে বলে, “ জনাব আপনি কি বলতে পারবেন ঐ প্রদীপের আলো কোন দিকে মুখ করে আছে?” জবাবে ঐ রমক জ্ঞানবোদ্ধা বলে, “এটা কোন জানার মত বিষয় হল, ঐ প্রদীপের আলো যে চতুর্দিকে মুখ করে আছে এটাতো তিন বৎসরের একজন বালকও তার সাধারন জ্ঞান-বুদ্ধির দ্বারা বলে দিতে পারে কারন আমরা চতুর্দিক থেকে এর আলো পাচ্ছি।” তখন ঐ যুবক রমক জ্ঞানবোদ্ধাকে উদ্দেশ্য করে বলে, “আল্লাহ্ হল আসমান এবং জমিনের নূর(আলো)** সুতরাং আল্লাহ্ সবল দিকেই মুখ করে আছেন, এটা বুঝার জন্য জ্ঞানবোদ্ধা হওয়ার দরকার নেই, কারন এটা তিন বৎসরের একজন বালকও তার সাধারন জ্ঞান-বুদ্ধির দ্বারা বুঝতে পারে। পুনরায় ঐ রমক জ্ঞানবোদ্ধা তার নিজের তৈরি যুক্তির ফাঁদে নিজেই ধরা পরে অবশেষ সন্তুষ্ট চত্তে ঐ যুবকের উত্তরকে মেনে নেয়। (**আল্লাহ নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের নূর (আলো) --- সূরা নুর, আয়াত ৩৫ )
জ্ঞানবোদ্ধার শেষ প্রশ্নের উত্তরে জন্য অর্থাৎ আল্লাহ এখন কি করছেন? ঐ যুবক রমক জ্ঞানবোদ্ধাকে উদ্দেশ্য করে বলে, “ জনাব আপনি কি বলতে পারবেন এখন আপনার বিবি, ছেলে-মেয়ে কি করছে ?” জ্ঞানবোদ্ধা উত্তরে না সুচক জবাব দিলে, ঐ যুবক, রমক জ্ঞানবোদ্ধাকে উদ্দেশ্য করে বলে, এক মাত্র আল্লাহ্ () –ই অদেখা বিষয় সম্বন্ধে বলতে পারে। কারন আমাদের জ্ঞান সীমাবদ্ধ, আমরা নিদৃষ্ট সীমানার বাহিরে দেখি না, আমরা নিদৃষ্ট সীমানার বাহিরে শুনি না, এমন কি আমরা আমাদের নিদৃষ্ট জ্ঞানের বাহিরের বিষয় বুঝি না। তার পরও আমরা আমাদের জ্ঞানের বড়াই করি, আল্লাহ্ () সম্পর্কে বিতর্ক করি। যাহোক আপনার শেষ প্রশ্নের উত্তরে আমার পর্যবেক্ষণ থেকে এতটুক বলতে পারি, “এই মুহূর্তে আল্লাহ্ () এক ব্যাক্তিকে তার “উচ্চ আসন” থেকে “নিচু আসনে” বসিয়েছেন এবং অপর ব্যাক্তিকে তার “নিচু আসন” থেকে “উচ্চ আসেনে” বসিয়েছেন**। জ্ঞানবোদ্ধার আর বুঝতে বাকি থাকে না যে ঐ যুবক কোন দুই ব্যাক্তির কথা বলছে। লাজবাব জ্ঞানবোদ্ধা অবশেষ মুসলমানদের প্রশংসা করতে করতে খলিফার দরবার ত্যাগ করে।
**আল্লাহ () পবিত্র কুরআনে রাসুল(সঃ) কে উদ্দেশ্য করে বলেন, বলুন ' ইয়া আল্লাহ ! তুমিই সার্বভৌম শক্তির অধিকারী। তুমি যাকে ইচ্ছা রাজ্য দান কর এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা রাজ্য ছিনিয়ে নাও এবং যকে ইচছা সম্মান দান কর আর যাকে ইচ্ছা অপমানে পতিত কর। তোমারই হাতে রয়েছে যাবতীয় কল্যাণ।' (সুরা আল ইমরান,আয়াত২৬)
বিষয়: বিবিধ
২০৯০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন