স্বনাম ধন্য এক গরিব বাবা।
লিখেছেন লিখেছেন মোবারক ০৮ এপ্রিল, ২০১৪, ১২:১৮:৪৪ রাত
পাঁচ ভাই আর তিন বোন মোট আট ভাই বোনের বাবা কিন্তু একজনই। সংসারে আমার আবস্থান দ্বিতীয়। দ্বিতীয় সন্তান একটু চটপটে আর দুষ্টের শিরমণী হয় সেটা ভেবেই কিনা জানিনা, জন্মের পূর্বেই বাবা নিয়ত করে রেখেছিলেন আমাকে মাদ্রাসায় পড়াবেন। আমার পরিবর্তে যদি বোনদের কারো জন্ম হত তাহলে বাবার সে নিয়ত পুরা হতকিনা জানিনা তবে আমার জন্ম হওয়ায় বাবার নিয়ত পুরা করতে আর কোন বাঁধা রইলনা। আবশ্য শেষ পর্যন্ত ডানপিটে ফাঁকিবাজ এই মোবারক কাঙ্খিত আলেম না হলেও মাদ্রাসার বারান্দায় গড়াগড়ি খেয়ে বাবার আশা যতটুকু পূরণ করেছ তাইবা কম কিসে? প্রবাসী বাবার আশার কথা বুঝতে পেরে প্রার্থমিক পাঠেই বাবাকে ফাঁকি দিতে কসুর করিনি। বোঝ বাবা বোঝ মেঝ ছেলের চালাকি কাকে বলে বোঝ? বাবা কি বুঝেছে আর বুঝে নাই সেটা দেখার সময় অন্তত মোবারকের নাই। তাছাড় বাবার টাকা পয়সা নাম ডাক কি কম? এত এত পড়া লেখা করে কি হবে? সন্তানদের মানুষ করার মানষে সংসার কিভাবে চলবে সে চিন্তা না করেই প্রবাসের পাঠ চুকিয়ে চলে আসলেন আপন ভুবনে! বাবার সংসার বাবা চালাবেন তাতে আমাদের কি? সে তো মাদ্রাসায় পড়ার বাহানায় স্কুলেকে একেবারে না বলে দিয়েছি সেই কবেই? বড় ভাইকে তার ইচ্ছামত বিদেশেই পাঠিয়ে দিলেন। সংসারে এখন আমিই বড়। আমার কথা আর দাবী আমান্য করে এমন সাধ্য কার? এমন বাপের বেটা আমার দাদার ঘরে জন্মেছে নাকি? বাবা নিয়ত না করলে স্কুলের মত মাদ্রাসাকেও না বলে দিতাম। যত সমস্যার মূলে জন্মের পূর্বে করা বাবার ঐ নিয়তটা। আচ্ছা বাবা নিয়ত যখন করেছ তখন তোমাকে এর মূল্যও দিতে হবে। আমিও বাপের বেটা মোবারক। তোমার বাবার মত আমার বাবা গোবেচারা না। আমার বাবা আশির দশকের গ্রাম সরকার বুঝেছ? বিদেশ থেকে আসার পর এলাকার জনগণ মেম্বার বানিয়েছে। নাম ডাকও আছে তাছাড়া যে মাদ্রাসায় ভর্তির চিন্তা চলছে সে মাদ্রাসার মোহতামিম হুজুর আব্বার বন্ধু। অতএব, দাদার পোলা তুমি বুঝতেই পারছ যে আমি যেমন তেমন বাপের পোলা না। সুতরাং আমার দাবী হল মাদ্রাসায় ভর্তি করবা কর কিন্তু বাড়ি থেকে প্রতিদিন হেটে মাদ্রাসায় যাব তা হবেনা। মাদ্রাসার বোর্ডিং এ থাকার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। আর হ্যা বোর্ডিং এর খাবার মান ভালনা তাই হয়ত আমার কারণে আমার মা রাতে না খেয়েই ঘুমাবেন। মায়ের এমন কষ্ট আমি সহ্য করতে পারবনা তাই আমার নিজের কথা চিন্তা করে না হয় নাই দিলা কিন্তু মায়ের কথা চিন্তা করে হলেও দৈনিক আমাকে ২০টাকা করে আলাদা পকেট খরচ দিতে হবে বুঝেছ? আমার প্রাপ্য আমাকে প্রতি হাটবারে, হাটে বসেই দিতে হবে। আমি কিন্তু তাগাদা দিতে পারবনা। শত হলেও বাবার সম্মানের খ্যাতি হলেও আমার প্রেস্টিজ রক্ষা করতে হবে। হাসি মুখে বাবা আমার সকল আবদার মেনে নিয়েছেন। আর নিয়মিত জনসেবা আর সংসার খরচ চালিয়ে আমার দাবী পূরণে বাবা কোনদিন কার্পণ্য করেননি। বোর্ডিং খরচ আর পকেট খরচের জন্য কোনদিন তাগাদা দিতে হয়নি। কোনদিন ভেবেও দেখিনি যে বাবা কিভাবে এত দায়িত্ব পালন করছেন? না ভাবার বড় কারণ হয়ত এটা, যদি বাবার কোন সমস্যা হত তাহলে পকেট খরচ দেয়ার ব্যাপারে টালবাহানা করতেন। কিন্তু কোন টালবাহানা ছাড়াই যেহেতু নিয়মিত বোর্ডিং খরচ এবং পকেট খরচ পাচ্ছি তাই সবই হয়ত ঠিকই আছে। আন্যান্য হাটবারের মত পকেট খরচের টাকার জন্য বাবাকে হাটের মধ্যে খুজছিলাম। হঠাত দেখতেও পেলাম কিন্তু তিনি আজ একা নন, তার সাথে সাথে গ্রামের এক মুরুব্বিও হাটছেন! কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে তাদের মধ্যকার কথাবার্তা শোনার চেষ্টা করছিলাম। যতটুকু বুঝলাম তাতে মনে হল মুরুব্বি আর কেউ নন, তিনি একজন পাওনাদার। পাওনাদার তার পাওনার জন্য তাগাদা দিচ্ছেন কিন্তু আব্বা আরও একটু সময় চাচ্ছেন কিন্তু মুরুব্বি রাজি হতে চাচ্ছেন না। এমতাবস্থায় মনে হচ্ছিল ধরণী দ্বিধা হও আমি তোমার অভ্যন্তরে প্রবেশ করি। ঋণের বোঝা মাথায় নিয়েও যে বাবা হাসিমুখে সন্তানের আব্দার পূরণ করে সে বাবার মুখমুখি হওয়ার যোগ্যতা আমার নাই। বাবার সামনে যাওয়ার হিম্মৎ হারিয়ে চোরের মত পালিয়ে মাদ্রাসায় ফিরে এলাম। চোখের পানি কোন ভাবেই বাঁধ মানছিল না। সারা জীবনের কান্না সেদিন একত্রে কেদেছিলাম। কান্নায় ছেদ পরল মুহতামীম হুজুরের ডাক শুনে। তড়িঘড়ি করে চোখ মুছে হুজুরের কাছে গেলাম যেন কিছুই হয়নি। হুজুর কিছুটা রাগত স্বরেই জিজ্ঞেস করলেন কোথায় ছিলে? বাবা নাকি আমায় অনেক খুজেছেন, না পেয়ে পকেট খরচের টাকা হুজুরের মাধ্যমে পাঠিয়ে দিয়েছন। এবার আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না। একে বারে বিনা মেঘে নয় বরং ঘণ কালো মেঘে বজ্রপাত হল কিন্তু তা ছিল মুহতামিম হুজুরের চিন্তারও বাহিরে। চোখ দিয়ে অঝর ধারায় নেমে আসল মহা সমুদ্রের বাঁধ ভাঙ্গা জোয়াড়। হুজুর তো একেবারে থ! বুকে জড়িয়ে ধরে সব কিছু জানার চেষ্টা করলেন এবং শান্তনা দিলেন। সালাম বাবা তোমাকে সংগ্রামী সালাম। তোমার মত লোকদেরই বাবা হওয়া মানায়। তোমাদের এমন ত্যাগের কারণেই হয়ত আল্লাহ তায়ালা তাঁর পরে তোমাদের মর্যাদা দিয়েছেন। অথচ সে দায়িত্ব পালন করতে পারছি কোথায়? প্রবাস থেকে হয়ত মাঝে মধ্যে দুই চার হাজার টাকা পাঠাই যার মাধ্যমে তোমাদের ত্যাগের কানাকড়ি প্রতিদানও হয়না আর আল্লাহর দেয়া দায়িত্ব পালন তো হয়ইনা। বাবা আমাকে ক্ষমা করো। তুমি সেই ছোট বেলায়ও বাবা ছিলে আজও বাবাই আছ। ছোট বেলায় যেমন বুকে আগলে রেখে বিপদ আপদ থেকে নিরাপদে রেখেছিলে, আজও তেমনি তোমার আযোগ্য ছেলেকে দায়িত্বহীনতার জন্য আল্লাহর পাকড়াও থেকে মুক্তির উদ্দেশ্যে মাফ করে দাও। রিক্ত আমি শুণ্য আমি দেয়ার কিছু নাই শিখিয়েছিলে যে কালেমা, (‘রব্বির হামহুমা কামা রব্বায়ানী সাগীরা’) তা দিয়ে জীবনভর দোয়া করতে চাই।
বিষয়: Contest_father
১৫৪৮ বার পঠিত, ২৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
‘রব্বির হামহুমা কামা রব্বায়ানী সাগীরা’
ধন্যবাদ।
তবে ভাই লিখাটি কি প্রতিযোগিতায় দেননি।
এটা কিন্তু প্রতিযোগিতার লিষ্টে আসেনি।
"সালাম বাবা তোমাকে সংগ্রামী সালাম। তোমার মত লোকদেরই বাবা হওয়া মানায়। "
রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বাইয়ানি সাগিরা ।
জাযাকাল্লাহ খায়ের
মন্তব্য করতে লগইন করুন