এই রমযানে নিজেকে পরিবর্তন করুন
লিখেছেন লিখেছেন ফরহাদ হোসেন মিঠু ০২ জুলাই, ২০১৩, ০২:০৬:৩৭ দুপুর
[এই লেখাটা মূলত তাদের জন্য যারা ইসলামের বিধি-বিধান আরও দৃঢ়ভাবে মানতে চায়]
বিস-মিল্লাহির রহমানির রহীম
যাবতীয় প্রশংসা মহান আল্লাহ্ তা’আলার জন্য।সালাত এবং সালাম বর্ষিত হোক শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)-এর উপর এবং সমস্ত সাহাবীদের উপর।
বহু প্রতীক্ষিত রমযান মাস এসে পড়েছে।
রমযান মাস আপনার জীবনে পরিবর্তন আনতে পারে।কিন্তু আপনার অন্তরে পরিবর্তিত হওয়ার ইচ্ছা থাকতে হবে।রমযান মাস আপনার তাক্বওয়া ও ঈমান বৃদ্ধি করতে সক্ষম যদি আপনি চান।শুধু চাইলেই হবে না আপনার চাওয়ার সাথে আপমার কাজের মিল থাকতে হবে।রমযান মাসে আপনি বাহ্যিক এবং আভ্যন্তরীণভাবে নিজেকে একধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন।আমি এই লেখায় শুধুমাত্র বাহ্যিক পরিবর্তনের কথা আলোচনা করব।
১)
যেসব মুসলিম ভাইয়েরা দাড়ি রাখতে চান,টাখনুর উপর প্যান্ট পড়তে চান এবং যেসব বোন হিজাব (পর্দা) করতে চান কিন্তু পারিপার্শ্বিক কারণে করতে পারছেন না তাদের জন্য রমযান মাস এক বিশাল সুযোগ নিয়ে আসে প্রতি বছর।নিজেকে পাল্টে নেবার সুযোগ।রমযান মাসে শয়তানদের বন্দী করা হয়।তাই স্বাভাবিকভাবেই মানুষ দাড়ি-টুপি,বোরকাকে খারাপ দৃষ্টিতে দেখবে না।কারণ এই মাসে তাদের শয়তানী দৃষ্টি কাজ করবে না।অনেকে পরিবারের চাপের কারণে দাড়ি রাখতে এবং হিজাব করতে পারেন না।তাদের বলছি এই মাসে আপনি দাড়ি কিংবা হিজাব পরা সহজেই শুরু করতে পারবেন।পরিবার থেকে চাপও কম পরবে।তাছাড়া এই মাসে মুসলিমদের এক ধরনের psychological change হয় যা আপনার জন্য প্লাস পয়েন্ট হিসেবে কাজ করবে।বেশিরভাগ মুসলিমই এই সময় positive minded হয়ে যায় যদিও এটা অনেক ক্ষেত্রে এই মাসেই সীমাবদ্ধ।রমযান মাসে হিজাব পরা কিংবা দাড়ি রাখার ক্ষেত্রে আপনার পরিবারের একমত পোষণ করার সম্ভাবনা অনেক বেশি।তারা রমযান মাস শেষ হলে আপনার বিরোধিতাও করতে পারবে না কারণ তখন তারা আপনার পরিবর্তন সম্পর্কে অভ্যস্ত হয়ে যাবে সাথে সাথে আপনার আশেপাশের মানুষজনও অভ্যস্ত হয়ে পড়বে।আপনি যদি প্রতিদিন নিজেকে আয়নাতে দেখেন তাহলে আপনি আপনার চেহারার কিংবা শরীরের পরিবর্তন বুঝতে পারবেন না।কিন্তু যদি আপনাকে কেউ অনেক দিন পর দেখে তাহলে সে আপনার পরিবর্তনগুলো সহজেই ধরতে পারবে।যেমন কারো সাথে অনেক দিন পর দেখা হলে সে হয়তো বলে,”কি ব্যাপার এত শুকিয়ে গিয়েছ কেন” বা “তুমি অনেক ফর্সা হয়েছ”।এই জাতীয় মন্তব্য আমরা শুনতে পাই।মানুষের দৃষ্টির এই বৈশিষ্ট্যকে আমরা কাজে লাগাতে পারি।আপনি রসূলুল্লাহ্ (সঃ)-এর সুন্নাত অনুযায়ী চলতে শুরু করেন,হিজাব পরা শুরু করেন দেখবেন রমযান মাস শেষেও আপনার কোন সমস্যা হবে না।
২)
যারা দাড়ি রাখতে চান তারা যেন অন্তত শেভ করার অভ্যাস দূর করতে পারেন সেদিকে দৃষ্টি রাখবেন।আর অনেকেই টাখনুর উপর প্যান্ট পরেন না।টাখনুর উপর প্যান্ট/লুঙ্গি পরা ওয়াজিব।তেমনি দাড়ি রাখাও ওয়াজিব।তাই আশা করি রমযান মাসে এবং এর পরবর্তী মাসগুলোতে টাখনুর নিচে প্যান্ট পরবেন না ও মুখে ব্লেড লাগাবেন না।
আর মুসলিম বোনদের বলছি আপনি আপনার মা অথবা বাবা বা উভয়ের কাছে পর্দা না করার ফলে আপনার যেসব সমস্যা হয় তা তুলে ধরতে পারেন।যেমন আপনি বলতে পারেন যে,”ছেলেরা আমার দিকে কেমন কেমন দৃষ্টি নিয়ে যেন তাকায়।আমার তা একদম ভাল লাগে না।”এই কথাগুলো শ্রোতাকে একটা ধাক্কা দিবে যে ধাক্কার প্রয়োজন অনেক। অনেক বোনেরাই কিন্তু ছেলেদের দ্বারা টিজ হয়,বাজে মন্তব্য শুনে কিন্তু বাসায় বলতে পারে না।কিন্তু এই কথাগুলো খোলাখুলিভাবে বলে দিতে হবে।তাহলে ধাক্কাটা আরো জোরালো হবে।আপনি হিজাব পরার অনুমতিও সহজেই পেয়ে যাবেন। লক্ষ্য রাখবেন যার সাথে আপনি এইসব কথা বলবেন সে যেন আপনাকে খুব ভালবাসে এবং সে যেন আপনার পরিবারের প্রভাবশালী কেউ হয়।আর এটা নিশ্চয়ই জানেন যে পর্দা করা ফরজ।
দাড়ি রাখা কিংবা পর্দা করার ক্ষেত্রে পরিবারের অনুমতির কোন প্রয়োজন নেই।কারণ পর্দা করা ও দাড়ি রাখা হল যথাক্রমে আল্লাহ্ ও তাঁর রসূল (সঃ)-এর আদেশ।কিন্তু মানুষের মাঝে দুর্বলতা আছে।অনেকে পরিবারের চাপ সহ্য করতে পারেন না।আর মাতা-পিতার চাপ অনেক ভয়াবহ।যারা পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে দাড়ি রাখছেন কিংবা পর্দা করছেন তারা বিষয়টা খুব ভালভাবে জানেন।তাই যারা পরিবারের চাপে এই বিধানগুলো মানতে পারছেন না তাদের প্রতি আমাদের সহানুভূতিশীল হতে হবে।তাদের হাত ধরে তাদের সাহায্য করতে হবে।আমরা যেন তাদের ঘৃণার চোখে না দেখি।
আমি এখন এক কথায় আমার এই লেখার মূল বিষয়টি বলব আর তা হল–”ঝোপ বুঝে কোপ মারা”।
সময় এসে গিয়েছে।এখন শুধু আপনার অন্তরের দৃঢ়তা লাগবে।তাহলেই আপনি ইসলামের আরো নিকটে চলে আসবেন।আপনি যদি দাড়ি রাখেন,হিজাব করেন তাহলে দেখবেন আপনি রমযান মাসের পরেও ‘ইবাদত করার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারবেন।আর হ্যাঁ,অবশ্যই এই কাজ করার জন্য আপনাকে মহান আল্লাহ্ তা’আলার সাহায্য প্রয়োজন।কারণ তার সাহায্য ছাড়া জীবনেও আপনি সফল হবেন না।তাই আল্লাহ্ তা’আলার সাহায্য চান নিয়মিত।ইনশা’আল্লাহ্,আপনি সফলতা পাবেন।
সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ তা’আলা আমাদের সাহায্য করুন যাতে আমরা তাঁর এবং তাঁর রসূল (সঃ)-এর আনুগত্য করতে পারি।আমীন।
বিষয়: বিবিধ
১৮১৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন