ভারত আমাদের জাতিসত্তা নির্মূল করতে চাই
লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মদ সেলিম ২৫ নভেম্বর, ২০১৩, ০৬:১১:২০ সকাল
মুহাম্মদ সেলিম
পাল আমলে ব্রাহ্মণ্যবাদীরা বৌ্দ্ব ধর্ম-সংস্কৃতির সাথে মিল সমন্বইয়ের কথা বলে ব্রাহ্মণ্যবাদীরা বৌ্দ্ব ধর্ম, সংস্কৃতি ও জাতিসত্তার বিরুদ্বে পরিচালনা করল নিষ্ঠুরতম নির্মূল অভিযান। সে নিষ্ঠুরতার ব্যাপ্তি সম্পর্কে বলতে গিয়ে ড দীনেশ চন্দ্র সেন তাঁর ‘’ Discoveries’ of Living Buddhism in Bengal’’ গ্রন্হে বলেছিলেন ‘’যে জনপদে (পূর্ববাংলায়) এক কোটির অধিক বৌ্দ্ব এবং ১৫৫০ ঘর ভিক্ষু বাস করত সেখানে একখানি বৌ্দ্ব গ্রণ্হ ত্রিশ বছরের চেষ্টায় পাওয়া যায় নি।‘’
এ সময় ইসলাম নতুন একটি জাতিসত্তা নিয়ে আমাদের সাথে হাজির হয়েছিল, উন্নত নৈতিকতা, আদর্শ, বিশ্বাস ও প্রত্যয়ের পরশে বাংলার মানুষ একে একে ইসলামী আদর্শকেই তার জীবনের জাতিসত্তা হিসেবে গ্রহণ করে নেয়। বৌদ্ধ ধর্মের জাতিসত্তা যে ইসলামী আদর্শে পরাজিত হয়েছে তা কে এম পানিক্কর তার লেখা এ ‘’সার্ভে অব ইন্ডিয়ান হিস্ট্রিতে’’ সুন্দরভাবেই উপস্থাপন করেন তিনি বলেন,
‘’ইসলামের আগে আর্য-আগ্রাসনের মোকাবেলার যে দুটো সংস্কৃতি জনগণের সংগ্রামকে শক্তি জুগিয়েছে, প্রকৃতিগতভাবে সেগুলো কতটা আনুভূমিক ব্যাপার। ফলে আর্য-সংস্কৃতির সাথে নিজেদের পার্থক্যটাকে জৈন ও বৌদ্ধরা বেশি দিন ধরে রাখতে পারনি। এই দুটো সংস্কৃতি ক্রমশ আর্য সংস্কৃতির গ্রাসে পরিণত হয়েছে। কিন্তু ইসলাম আর্থ-সংস্কৃতির মোকাবেলায় শুধু আত্মরক্ষা করতেই সমর্থ হলো না, ভারতীয় সংস্কৃতিকে আপাদমস্তক দু’ভাগে বিভক্ত করে স্পষ্ট দু’টি জাতিতত্ত্ব¡ সৃষ্টি করলো।‘’
বর্তমানে আমরা বাংলাদেশে যে জাতিসত্তাকে দেখেতে পাচ্ছি তা ইসলাম ধর্মের জাতিসত্তার আলোকেই গঠিত। কিন্তু ব্রিটিশ ও ইউরোপীয়দের উপনিবেশের মাধ্যমে এবং ভারতের সহযোগীতায় আমাদের জাতিসত্তায় পচনশীল কিছু নৈতিকতা ও মূল্যবোধের সংযোজন হয়েছে। আমাদের জাতিসত্তা কখনোই তা গ্রহণ করতে চায়নি। কিন্তু উপনিবেশদের কৌশলগত অবস্থান ও কার্যকরণের মাধ্যমে বহু শতাব্দী, বছর পর হলেও মনে হচ্ছে আমাদের জাতিসত্তাকে তারা নাড়া দিতে সক্ষম হয়েছে। আমাদের জাতিসত্তাকে কিভাবে নাড়া দিয়েছে তা পাটমন্ত্রী এবং স্বাধীনতাযুদ্ধের সূচনাপর্বে নিজের ভাই কাদের সিদ্দিকী বীর-উত্তমসহ অনুসারীদের ফেলে কলকাতায় পালিয়ে যাওয়া ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ লতিফ সিদ্দিকীর একটি কাণ্ডের কথা উল্লেখ করতেই হবে। তার মন্ত্রণালয়ের এক অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রচলিত নিয়মে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত চলতে থাকাকালেই থামিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। হুকুম জারি করেছিলেন, তার উপস্থিতিতে কোনো অনুষ্ঠানে কোরআন তেলাওয়াত করা চলবে না। আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদক জনাব আশরাফ বলেছিলেন, তিনি হিন্দুও না মুসলিমও না প্রশ্ন হল তিনি কোন ধর্মালম্বী? দাড়ি,টুপি পরা লোক দেখলেই রাজাকার এরপর তাদের উপর নেমে আসে গ্রেপ্তার নির্যাতন।
আমি বর্তমান প্রজন্মকে তার অতীত অবস্থান ও বর্তমান অবস্থাকে বিশ্লেষণ করার জন্য অনুরোধ জানাই। যে দিকে আমরা ধাবিত হচ্ছি তা যে কত বিপজ্জনক তা থেকে আমাদের যে মূল জাতিসত্তায় আবার ফিরে আসতে হবে তা আমাদের অনুধাবন করতে হবে। আমাদের যুবসমাজকে তার জাতিসত্তা সম্পর্কে আরো বেশি সচেতন হতে হবে। ব্রিটিশ উপনিবেশদের চাপিয়ে দেয়া জাতিসত্তা, দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের পরিহার করতে হবে। যা আমাদের জাতিরা কখনোই গ্রহণ করেনি, সংগ্রাম করেছে, মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছে, তবুও নিজেদের স্বীয় জাতিসত্তাকে বিলিয়ে দেয়নি।
আজ বাংলাদেশেও ঠিক তেমনি ভাবে সংস্কৃতি আদান প্রদানের নামে ব্রাহ্মণ্যবাদী ভারতের ছবি বাংলাদেশের সিনেমা হল গুলোতে প্রচারের ব্যবস্তা করেছে আমাদের সরকার। দুঃখ জনক হলেও সত্য বাংলাদেশের সকল প্রযোজক,পরিচালক, বুদ্বিজীবি ,সংস্কৃতিক সংঘঠন জোরালো প্রতিবাধ করা সত্বেও সরকারের সহযোগীতায় আদালতের মাধম্যে ভারত ছবি প্রচারের ব্যবস্তা করে নেয়। ১৯৬৫ সালের পর ২০১১ সালের ২৩ ডিসেম্বার থেকে সারাদেশের সিনেমা হল গুলোতে ভারতীয় সিনেমা প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। যেখানে ইভ টিজিং, নারী নির্যাতন, খুন, ধর্ষণ ইত্যাদি ঠেকাতে ব্যর্থ সেখানে ঢাকা আর্মি স্টেডিয়ামে ভারতিয় ষ্টার শাহরুখ খান কে এনে লাইভ কনসার্টের নামে উদাম নাচ দেখানো হল, ঢাকা ক্লাবে ভারতিয় নর্তকী এনে উলঙ্ঘ নাচ দেখানো তা আমাদের যুব সমাজকে অনেকটা ঊচ্ছকে দেয়ার মত।
আমার দেশ আমার স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব, সংস্কৃতি ও সভ্যতা সবই আমাদের অহংকার। ভারত আমার দেশের উপর দিয়ে করিডোর ব্যবহার করে, ভারত চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে চাই, টিপাইমুখে বাধঁ দিয়ে বাংলাদেশকে মরুভূমি বানাতে চাই,ভারত আমাদের সিনেমা হল গুলো দখল করতে চাই কিন্তু কিছুই দিতে চাই না এরপর ও আওয়ামী লীগের কাছে ভারত পরমবন্দু।
ব্রাহ্মণ্যবাদীদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নিপীড়ন এবং অর্থনৈ্তিক শোষণে বাংলাদেশের মানুষের জাতীয়তাবোধই ভারতীয় আগ্রাসন প্রতিরোধ করতে পারে। ভারত ভাল করেই জানে আমাদের জাতিসত্তাকে নির্মূল করতে না পারলে আমাদেরকে নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব হবে না।
আমাদের দেশের মানুষ ৫২ সালের ভাষা আন্দোলন করেছিল, উর্দূর বিরুদ্ধে মাতৃভাষা বাংলা রক্ষার জন্য, হিন্দী শেখার জন্য নয়। ১৯৭১ সালে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি রাওয়াল পিন্ডির রাজমুক্ত হয়ে দিল্লীর অধীন হওয়ার জন্য নয়। আমাদের এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া দরকার। সুতরাং আমাদেরকে আজ এই অবস্থান সঙ্গত কারণেই নিতে হবে যে, বাঙালি তথা বাংলাদেশীদের জাতিসত্তা কোন নৈতিকতা বিবর্জিত, অনুন্নত, মর্যাদাহীন, বৈশিষ্ট্যমণ্ডিতহীন, রুচিহীন কোন জাতিসত্তা নয়। এই জাতিসত্তা উন্নত নৈতিক চরিত্র, উন্নত মূল্যবোধ, বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ও আস্থাশীলতায় মণ্ডিত।
বিষয়: বিবিধ
১৩০৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন