মজলুম জননেতা অধ্যাপক গোলাম আযম
লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মদ সেলিম ২৬ মে, ২০১৩, ০৭:০৬:৪৪ সকাল
পলাশীর বির্পযয়ের পর পূর্ব বাংলার মুসলমানদের ইসলামী আমল, আকিদা, কৃষ্টি কালচার নিয়ে বেঁচে থাকা খুব কঠিন হয়ে পড়েছিল। মুসলমানরা দাঁড়ি, টুপি রাখতে পারতো না। ইংরেজ এবং হিন্দু জমিদারের নির্যাতনে মুসলমানরা চরম অসহায় অবস্হায় পড়েছিল।ইংরেজ-হিন্দু নির্যাতনের কবল থেকে মুসলিম তথা বাংলার জনগনকে রক্ষা করার জন্য হাজি শরিয়ত উল্লাহ, তিতুমীর, ফকির মজনু শাহ,শমসের গাজি, শাহ ওয়ালিউল্লাহ,মাওলানা শাহ মুহাম্মদ ইসমাইল,সৈয়দ আহমদ বেরলভি সহ অসংখ্য সাহসী সৈনিক মুসলমানদের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক অধিকার রক্ষা এবং হারানো আজাদী পূনরুদ্বারে সর্বাত্বক সংগ্রাম ছালিয়েছিলেন। বর্ণ হিন্দুদের নির্যাতন এত বেশী বেড়ে গিয়েছিল যে পূর্ব বাংলার মুসলমানরা নিজেদের সভ্যতা, সংস্কৃতি ও ইসলামী আকিদা নিয়ে স্বাধীনভাবে বাচার জন্য ১৯৪৬-৪৭ সালে পাকিস্তান নামক আলাদা মুসলিম রাষ্ট্রের যে দাবি উঠেছিল তার পক্ষ অবলম্বন করেছিল। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে প্রত্যাশা নিয়ে মুসলমানরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্টার সংগ্রামে যোগদান করেছিল দুদশকের মাথায় তা স্বপ্ন ভগ্ন হয়। পূর্ব পাকিস্তানের জনগন আবার স্বাধিকারের জন্য সংগ্রাম শুরু করে।
যেসব রাজনৈতিক দল ও নেতা ভারতের আধিপত্যবাদী মনোভাবের দরুন আতংকিত ছিল, ১৯৭১সালে তারা মহা-সংকটে পড়ে গেল। তারা সংগত কারণেই আশাংকা করল যে, বাংলাদেশকে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন করতে সাহায্য করে ভারত একদিকে মুসলমাদের উপর ভারত মাতাকে বিভক্ত করার প্রতিশোধ নিতে চাচ্ছে, কোলকাতার একাকালের অর্থনৈতিক পশ্চাদভূমি বাংলাদেশ অঞ্চলকে পুনরায় হাতের মুঠোয় আনার মহাসুযোগ গ্রহণ করছে। এ অবস্থায় ভারতের নেতৃত্বে ও সাহায্য বাংলাদেশ কায়েম হলে ভারতের আধিপত্য থেকে আত্মরক্ষার কোন উপায় হয়তো থাকবে না। বাংলাদেশের চারদিকে ভারতের যে অবস্থান তাতে এ আশাংকাই স্বাভাবিক ছিল। অধ্যপক গোলাম আজম ভারতের আধিপত্য থেকে বাংলার মুসলমানদের রক্ষা করার জন্য মুসলিম বিশ্বের প্রতিটি দেশে চষে বেড়িয়েছেন বাংলার মানুষ যেন পাকিস্তান থেকে মুক্ত হয়ে আবার ভারতের আগ্রাসনের স্বীকার যাতে হতে না হয়। ৯ মাস রক্তক্ষয়ি সংগ্রামের পর অর্জিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশ।স্বাধীন বাংলাদেশের শাসক গোষ্টি আওয়ামী লীগ ভারতের চাপে ধর্মনিরেপেক্ষতা ও সমাজন্ত্র সংবিধানে সংযোজন করে বাংলার মুসলমানদের হ্নদয়ে চরম আঘাত হানে। মুসলিম কৃষ্টি কালচারের উপর আসে চরম আঘাত।প্রাচ্যের অক্সর্ফোড নামে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালইয়ের মনোগ্রাম থেকে ‘’রাব্বি জিদনি ইলমা’’ উঠিয়ে দেয়া হল, কবি নজরুল ইসলাম কলেজ কে ইসলাম বাদ দিয়ে শুধু নজরুল কলেজ করা হল, ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ব ঘোষণা করা হল। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে আওয়ামি লীগের সহযোগীতায় কট্টর বামপন্তীরা ইসলামীদল ও ইসলামী ব্যক্তিত্ত্বের উপরে নির্যাতনের ষ্টীম রুলার চালিয়ে দমন নীতি অবলম্বন করে। আজকে যারা দেশের খ্যাতনামা আলেম উলামা,দেশপ্রেমিক প্রবীণ রাজনীতিবিদদের রাজাকার, আলবদর, যুদ্বাপরাধী বলে গালিগালাছ করছে সে তারাই ইসলামীদলের নেতা এবং প্রতিথযশা আলেম উলামাদের খুন,গুম করেছিল। ফেনি জিলার শহীদ গাজী ইলিয়াছ তার প্রকৃষ্ট উদাহণ। আজকে যেমন দাড়ী, টুপি দেখলেই পুলিশ এরেষ্ট করে, আওয়ামীলীগ নেত্রী সাজেদা যেভাবে উদ্যত কণ্ঠে আওয়ামীলীগ,ছাত্রলীগ,যুবলীগকে নির্দেশ দিলেন ঘরে ঘরে খুজে রাজাকারদের বের কর। তখনো এই একই গোষ্টী যুদ্ব উত্তর স্বাধীন বাংলাদেশে রাজাকার, আলবদর বলে হাজার হাজার বাংলার নিরহ মানুষের উপর নির্যাতন ছালিয়েছিল। আওয়ামীলীগ চেষ্টা করেছিল ইসলামকে মসজিদের মধ্যে সীমাবদ্ব রাখতে যেমনটি ইউরোপীয় ও আমেরিকানরা সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্বের পর থেকে উসমানিয়া খেলাফতকে খতম করার মাধ্যমে।জনাব প্রফেসর গোলাম আযম এর মারাত্নক পরিনতি আঁচ করতে পেরে মানুষের ঈমান,আকিদা এবং মৌলিকঅধিকার রক্ষায় বাংলাদেশে ইসলামী আন্দোলনকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন।
ভৌগোলিক ভাবে আমাদের এ প্রিয় জন্মভূমিটি এমন একটি দেশ দ্বারা বেষ্টিত যাকে আপন মনে করা মুশকিল। তাই এদেশের আযাদীর হিফাযত করা সহজ ব্যাপার নয়। আশপাশ থেকে সামান্য সাহায্য পাওয়ারও কোন আশা করা যায় না। এ দেশবাসীকে একমাত্র আল্লাহর উপর ভরসা করে নিজেদের শক্তি নিয়েই প্রতিরক্ষার কঠিন দায়িত্ব পালন করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন আর্দশের পতাকাবাহী দেশপ্রেমিক মানুষ। কারণ কোন জাতির আদর্শ ও বিশ্বাসই তার শক্তির উৎস । সুতরাং এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জীবনাদর্শ ইসলামই স্বাধীনতার আসল গ্যারান্টি। সে সত্যকে সামনে নিয়েই অধ্যাপক গোলাম আযমের নেতৃত্বে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী বাংলার মানুষকে ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ট্রার সংগ্রামে আহবান জানানোর পাশাপাশি এই সংগ্রামে অংশগ্রহণ ঈমাণের দাবি এই দায়িত্বানুভূতিও জাগ্রত করেছেন। যার ফলে আজ বাংলার রাজপথ মূখরিত হয় ‘’নারায়ে তকবিরের শ্লোগানে’’,বাংলার অগনিত নারী, পুরুষ, যুবক পেয়েছে ঈমানের অপরিহার্য দাবি ইসলামী আন্দোলনের সঠিক নিশানা । অধ্যাপক গোলাম আযম দীর্ঘ ১২ বছরেরও বেশী সময় কারাগারে এবং দেশের বাইরে নির্বাসনে কাটিয়েছেন অপরাধ শুধু ইসলামী আন্দোলনের নেতা ছিলেন। তিউনেশিয়ার বর্তমান ক্ষমতাশীন ইসলামী দলের নেতা রাশেদ ঘৌনশী কে প্রেসিডেণ্ট বেনালী দেশ থেকে তারিয়ে দিয়েছিলেন শুধু ইসলামী আন্দোলনের নেতা হওয়ার কারনে,মিশর থেকে বের করে দিয়েছিলেন ড ইউসুফ আল কারদাবী, কামাল আল বাদায়ি সহ অনেককে সবাই লণ্ডন সহ বিশ্বের ভিবিন্ন দেশে স্থায়ি ভাবে বসবাসের সুযোগ গ্রহণ করেলও শুধুমাত্র অধ্যাপক গোলাম আযম সে সুযোগ গ্রহণ করেননি দেশ ও দেশের মানুষকে ভালবেসে। অথচ বাম বুদ্বিজিবী নামে খ্যাত আব্দুল গাফফার চৌ’রা লণ্ডনে এসেই মিথ্যা অজুহাতে রাজনৈ্তিক আশ্রয় নিয়ে সরকারি বেনিফিট খাচ্ছে এবং গোলাম আযম সহ সকল দেশপ্রেমিক ইসলামী ব্যক্ত্বিত্বের বিরুদ্বে বিষোধাগার করছে।
সম্প্রতি ১১/০১/২০১১ অধ্যপক গোলাম আযমকে গ্রেপ্তার করেছে সরকার ,এক আজব ট্রাইবুনাল যে অপরাধে বি এন পি নেতা আব্দুল আলিম জামিন পেলেন সে একিই অজুহাতে প্রফেসর গোলাম আযমকে কারাগারে পাঠালেন বিচারপ্রতি নিজামুল হক নাসিম নেতৃ্ত্বাধীন ট্রাইবুনাল। এক্ষেত্রে গোলাম আযম রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। এককালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালের সাবেক জি এস,ভাষা সৈ্নিক, বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর সাবেক আমীর বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম নেতা বর্ষীয়ান মজলুম জননেতা অধ্যাপক গোলাম আযমের সফল ও দূরর্দশী নেতৃত্বে বাংলাদেশের মাটিতে কবর রচিত হয়েছে বামপন্থীদের ।১৯৯১, ২০০১ সালের নির্বাচনে বি এন পি’র ক্ষমতায় যাওয়া এবং ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগের ক্ষমতায় যাওয়া । তাই আওয়ামিলীগের হিসাবে জামায়াতকে ধব্বংস করতে না পারলে আগামিতে ক্ষমতায় যাওয়া সম্ভব হবেনা,আর বামপন্থীরা চাই ব্যক্তিগত প্রতিশোধ নিতে।আর্দশের লড়ায়ে পরাজিত যারা জিঘাংসা তাদেরই হাতিয়ার। তাই অধ্যাপক গোলাম আযম আজ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের স্বীকার।
স্বৈরচারী এরশাদ এর নির্যাতন থেকে দেশ ও দেশের মানুষকে বাচানোর জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রুপরেখা দিয়েছিলেন গোলাম আযম।এরশাদের কাছে সর্বপ্রথম এ প্রস্তাব উপস্থাপন করেছিলেন জামায়াতের তৎকালিন ভারপ্রাপ্ত আমির জনাব আব্বাস আলী খান।১৯৯৮ সালে আওয়ামী জুলুম অত্যাচার থেকে দেশবাসিকে রক্ষায় চারদলীয় জোটের রুপরেখা দিয়াছিলেন অধ্যাপক গোলাম আযম যদিও আমাদের সংকৃণমনা রাজনীতিবিদরা এটা স্বীকার করতে চাইনা। এটি আজ আওয়ামীলীগের কাছে স্পষ্ট নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ আর জীবনে ক্ষমতায় যেতে পারবেনা। অতএব প্রতিশোধ নেয়ার এটাই সুযোগ। কিন্তু এতে কি শেষ রক্ষা হবে? তিউনেসিয়ায় বেন আলীর কি শেষ রক্ষা হয়েছিল ? মিশরে মুবারক ৭ জন বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনকে নেতাকে বিচারের নামে হত্যা করেছিল, অসংখ্য নেতাকে দেশত্যাগে বাধ্য করেছিল নিষিদ্ব করেছিল বিশ্বের সর্ব বৃহৎ ইসলামী আন্দোলন ইখুয়ানোল মুসলেমিনকে। এরপরও কি মুবারকের শেষ রক্ষা হয়েছিল?
গত কয়েক সপ্তাহ আগে মিডিয়ায় গোলাম আযম যে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তা সমগ্র জাতির জন্য মাইল ফলক বিশেষ করে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে। প্রফেসর গোলাম আযম স্যালুট তোমাই।
লণ্ডন
Share this:
বিষয়: বিবিধ
১৫৮১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন