'আশুরার দিন শোক পালন করতে হবে' এরূপ বিধান কুরআন হাদীসে কোথাও আছে কি?
লিখেছেন লিখেছেন সত্যের ডাক ০৪ নভেম্বর, ২০১৪, ০৪:৫৮:২৬ বিকাল
ইসলামের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আমরা জানতে পারি যে, শুরু থেকে আশুরার দিন সিয়াম পালনের প্রথাই ইসলামে ছিল। হিজরতের পূর্বে মক্কা শরীফে মুশরিকরাও এই দিনে সিয়াম পালন করতেন। হিজরতের পর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনা শরীফে ইহুদীদেরকে দেখলেন যে, তারাও আশুরার দিন সিয়াম পালন করছেন, তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন- তোমরা এই দিনে সিয়াম পালন করছ কেন? তারা বললঃ এই দিনে আল্লাহ তাআলা মূসা (আঃ) কে ফেরআউন ও তার সম্প্রদায় থেকে মুক্ত করেছিলেন। তখন মূসা (আঃ) আল্লাহর শোকরিয়া আদায়ের উদ্দেশ্যে সিয়াম পালন করেছিলেন। তাই আমরাও সেই দিন সিয়াম পালন করি। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ মূসার প্রতি আমাদের অধিকারই বেশী, সুতরাং মূসার নেয়ামত লাভে খুশী হয়ে আমরাও সিয়াম পালন করব। তখন তিনিও সিয়াম পালন করলেন এবং আহলে বাইত ও সাহাবীদেরকেও সিয়াম পালনের আদেশ দিলেন। মদীনা শরীফে দশ বছর পর্যন্ত মুসলিম উম্মাহ সিয়াম পালনের মাধ্যমে আশুরা পালন করে আসছেন। ইন্তেকালের পূর্বে ইহুদীদের বিরোধীতার উদ্দেশ্যে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি যদি আগামী বছর বেঁচে থাকি, তাহলে নয় তারিখেও সিয়াম পালন করব। তারপর থেকে মুসলিম উম্মাহ দুটি সিয়াম বা একটি সিয়াম পালনের মাধ্যমে আশুরা পালন করেছেন। হযরত আলী (রঃ) হযরত ফাতিমা (রঃ) হযরত হাসান (রঃ) ও হযরত হুসাইন (রঃ) সবাই একই নিয়মে আশুরা পালন করে গেছেন। ৬০ বছর পরের কোন একটি ঘটনা ইসলামী শরীয়তে কোন পরিবর্তন আনতে পারে বলে আমরা জানিনা। তাই বলি -- 'আশুরার দিন শোক পালন করতে হবে' এরূপ বিধান কুরআন হাদীসে কোথাও আছে কি? কারো জানা থাকলে আমাদের জানাবেন।
পরিশেষে একটি প্রশ্ন-- হযরত হুসাইন (রঃ) জীবনে আশুরা পালন করেছিলেন কিনা? যদি করে থাকেন তাহলে তার ধরণ কিছিল?
বিষয়: বিবিধ
২০০৬ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এই দেখুন, কুরআন হাদিসবিরোধী কাজ হচ্ছে । কারণ আপনি বলেছেন : কুরআন হাদীস অনুযায়ী শোক হচ্ছে ইবাদত বা দোয়া করা। আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া ইত্যাদি।
কোন মৃত ব্যক্তির জন্য শোক কি একবার হয়, নাকি প্রত্যেক বছর বার বার হয়্? তাও একটু জানাবেন। ধন্যবাদ।
সত্য তুলে ধরার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
বাংলা সাহিত্যে ১০ ই মহররম নিয়ে বিশাল মার্সিয়া সাহিত্য গড়ে ওঠেছে । এসব কি এমনি এমনি গড়ে ওঠেছে ।
জান্নাতের যুবকদের সর্দার শহীদ হয়েছে । তার জন্য শোক করা যাবে না । আর তিনি কীভাবে শহীদ হয়েছেন - তা আলোচনা করা যাবে না । যারা এমন কথা বলছেন তারা কি আদৌ মুসলিম কি না সন্দেহ । অথচ তারা নিজেরােই শোক দিবস পালন করেন । এমন শোক দিবস পালন করার দলীল তারা কুরআন হাদিস ঘেটে দিতে পারবেন না । যেমন : ২৮ অক্টোবর ২০০৬ সালের ঘটনা নিয়ে জামায়াত শিবিরের শোক মিছিল ও শহীদ দিবস পালন ।
নিশ্চয়ই এরা মুয়াবিয়া ইয়াজিদের জারজ বংশধর। তাই তো তাদের সেফ করতে বা সঠিক ইতিহাস ঢেকে রাখার জন্য এসব ইসলাম বিরোধী রাজতন্ত্রের দালালেরা মরিয়া হয়ে উঠে ।
মুয়াবিয়া ইসলামের খিলাফত ধংষ করে ৯০ বছরের উমাইয়া রাজতন্ত্র কায়েম করেছিল। এই সেই মুয়াবিয়া যে ইসলাম এর বৈধ খলিফা আলি (রা.)- এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ৪৫ হাজার মুসলিম দের হত্যা করেছিল।
( বৈধ খলিফার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা কুফুরি) ।
এই সেই মুয়াবিয়া যে ইমাম হাসানের সাথে চুক্তি করেছিল তার মৃত্যুর পর ইমাম. হোসেন রা.- কে খলিফা করা হবে।
অথচ তিনি (শহীদদের সর্দার আমীর হামজা রা. - এর কলিজা চিবিয়ে খাওয়া মহিলা হিন্দার পুত্র হলেন মুয়াবিয়া )ওয়াদা ভংগ করে তার পুত্র ইয়াজিদকে পরবর্তী খলিফা মনোনিত করে যায়।
এই ঘটনা ও তার পরবর্তী ইতিহাস পড়া ও পঠণ জামায়াত - শিবির , আহলে হাদিস ও ওহাবী সম্প্রদায় নিষিদ্ধ ঘোষনা করার পায়তারা করছে ।
এই মন্তব্য লেখার পর আমাকে শিয়া ঘোষনা করে গালি গালাজও করতে পারে ।
উল্লেখ্য আমি শিয়া নই । বাংলাদেশের প্রচলিত ইসলাম অনুসরণ করি । প্রচলিত ইসলাম বলতে হানাফী মাজহাবকে বুঝাচ্ছি ।
আলোচনা করতে আপনাকে কে মানা করেছে? নাকি আপনার মুখ চেপে ধরে রেখেছে? আলোচনা কি হচ্ছে না? সম্মানিত উলামায়ে কিরাম শুধু আপনাদের মতো মৌসুমি নয়, বরং সারা বছরই বিভিন্ন ভাবে এই আলোচনা গুলো চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু সেটা শোনার মতো কান থাকতে হবে তো!
হযরত হুসাইনের শাহাদাত; রাসূল (সাঃ) কি এই ঘটনার ইঙ্গিত আগে থেকেই দিয়েছিলেন কিনা? অবশ্যই দিয়েছিলেন। তথাপি, ইসলামে মৃত ব্যক্তির জন্য ৩ দিনের বেশি শোক করার অনুমতি রাসূল (সাঃ) দেননি। বরং স্বামী ব্যতিত অন্য কারো জন্য ৩ দিনের অধিক শোক পালন করা বৈধ নয়। (বুখারী-২৩৭১) পাশাপাশি জাহেলি প্রথার অনুকরণের শোক পালন, বুক চাপড়ানো ও কাপড় ছেঁড়াকে রাসূল (সাঃ)কঠোর ভাষায় বারণ করেছেন (মুত্তাফাকুন আলাই বুখারি-১২৯৪, মুসলিম-১০৩)। এরপরও যারা এরকম মাতম করে এবং সমর্থন করে তাদের উপর রাসূলের (সাঃ) লানত।
আর শোক যদি করতেই হয়, তাহলে রাসূলের (সাঃ) ওফাতের দিন কেন শোক করা হয় না? হযরত উমরের (রাযি.) শাহাদাতের কেন রোনাজারি হয় না? হযরত উসমানের (রাযি.) মর্মান্তিক শাহাদাতের দিন কেন ছাতি পেটা হয় না? এমনকি যে রাফেজি শিআরা হুসাইনের (রাযি.) জন্য তথাকথিত শোক দেখিয়ে বেড়ায়, তারা কেন তাদের প্রথম দুই ইমাম হযরত আলী (রাযি.) ও হযরত হাসান (রাযি.) এর শাহাদাতের দিন এমন মাতম মিছিল বের করে না? নাকি মাতমের ফাতওয়া শুধু হুসাইন (রাযি.) পর্যন্তই সীমাবদ্ধ? মূর্খতার বোধ হয় শেষ আছে, কিন্তু রাফেজি ও তদ্বীয় দালালদের কান্ডজ্ঞানহীনতার শেষ নেই।
তাহলে তো দোষটা উল্টো হযরত হুসাইনের (রাযি.) উপর আপতিত হবে।(আল্লাহ জানেন হযরত হুসাইন (রাযি) কখনোই এরূপ দোষে দোষি ছিলেন না। এটা পরবর্তীর কিছু রাফেজি শিআ ও তাদের ভক্তকূলের ষড়যন্ত্র) ইয়াযিদ বিন মুআবিয়ার খিলাফত লাভকে কিছু রাফেজি শিআ আর পরবর্তীকালের দু'একজন বাদে বিদগ্ধ উলামায়ে কিরামগন বৈধই মনে করেছেন। কারণ, এই মনোনয়ন পারিবারিক প্রথা বিবেচনায় নয় বরং যোগ্যতার ভিত্তিতেই নির্ধারিত হয়েছিলো। যদিও হযরত মুআবিয়ার (রাযি.) প্রথম মনোনয়ন ছিলেন হযরত হাসান বিন আলী (রাযি.); কিন্তু তার ইন্তেকালের পর যোগতার ভিত্তিতে ইয়াজিদকে মনোনিত করেন। এমনকি জুমুআর খুতবায় মুআবিয়া (রায.) প্রকাশ্য দুআ করেন, "হে আল্লাহ! খিলাফতের যোগ্য বিবেচনা করেই যদি তাকে মনোনীত করে থাকি তাহলে তুমি তার অনুকূলে আমার এ সিন্ধান্তকে পূর্ণতা দান করো। পক্ষান্তরে পুত্রের প্রতি পিতার মোহই যদি হয় এর কারণ, তাহলে তুমি তা ব্যর্থ করে দাও।" উক্ত দুআর সাথে "আমিন" বলেছিলেন উপস্থিত কয়েকশত সাহাবা। নিন্দুকদের ভেবে দেখা উচিত, তাঁর এ দুআ কবুল হয়েছে কিনা। (যাহাবী কৃত তারিখুল ইসলাম, ২/২৬৭, সূয়ূতী কৃত তারিখুল খুলাফা -১৪৯)
এছাড়াও আল্লামা ইবনে কাসিরের তা'রিখে উল্লেখ আছে, আলী (রাযি.)-এর পুত্র ও হুসাইন (রাযি.)-এর বৈমাত্রিয় ভাই মুহাম্মাদ বিন হানফিয়া কে হাররাহ এর গোলযোগ চলাকালে আবদুল্লাহ বিন মুতি বললো- "ইয়াযিদ তো মদ্যপ, বেনামাযী ও কুরআন সুন্নাহর বিরুদ্ধাচরণকারী"। তিনি উত্তর দিলেন, "কিছুদিন আমি তার সংস্পর্শে ছিলাম তখন তো তাকে নামাযে পাবন্দ ও কুরআন সুন্নাহর অনুগত দেখেছি। এমনকি ফিকাহ শাস্ত্র নিয়েও তাকে আলোচনা করতে দেখেছি।" ইবনে মুতি বললো, হয়তো সে আপনার সামনে কপটতা করেছে। তিনি উত্তর দিলেন, কিন্তু কিসের ভয়ে সে এমন করবে? পাল্টা প্রশ্ন করলেন, তুমি কি সচক্ষে তাকে এমন দেখেছ? ইবনে মুতি উত্তর দিলো- আমি নিজে দেখিনি তবে সত্য বলেই মনে হয়। তখন তিনি বললেন, "আল্লাহ এ ধরনের সাক্ষের অনুমতি দেয় না। অতএব তোমার কথা নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যথা নেই।" (আল বিদায়া ৮/২২৩)
এভাবেই ইতিহাস থেকে প্রমান করা যায়, আর অতীতে ইবনে খালদুন, ইবনে কাছির, তাবারী, শাহ ওয়ালিউল্লাহ, ইবনে তাইমিয়ার মতো আলেমগনও বলে গেছেন, ইয়াযিদ সর্বাপেক্ষা যোগ্য লোক ছিলো না বটে, কিন্তু তার খিলাফত বৈধ ছিলো। কেননা, বিরোধকারীর তুলনায় স্বীকারকারীর সংখ্যা বেশি ছিলো।
এবার নিজের কথার উত্তর বের করুন, বৈধ খলিফার বিরুদ্ধে যুদ্ধ জায়েজ নয়।
মোদ্দা কথা হলো, ইয়াযিদ সে জমানার সবচেয়ে যোগ্য লোক না হলেও অযোগ্য ছিলো না। আর হাল আমলের শিআদের কর্ণধারেরা তার বিরুদ্ধে যেভাবে দাড়িকমা ছাড়া বলে যায়, তেমন লোকও সে ছিলো না।
তথাপি বলতে দ্বিধা নেই, যদিও হযরত মুআবিয়ার (রাযি.)এই ইজতিহাদী সিদ্ধান্ত সঠিক প্রমাণিত হয়নি, কিন্তু এর বদলে তাকে দোষারোপ করাও সর্বশ্রেষ্ট মূর্খতা।
আশ্চর্যের বিষয়, যে সব মহামুর্খ বেয়াদব কাতেবে ওহী হযরত মুআবিয়ার (রাযি.) নখের সমপরিমান হওয়ার যোগ্যতাও রাখে না; তারা এই জলীল কদর সাহাবার নামে যা ইচ্ছা বলে বেড়াচ্ছে। মুর্খতার সীমা থাকা উচিত।
রাসূল (সাঃ)-কে কি আল্লাহ ভবিষ্যৎ ফেতনা সম্পর্কে অবহিত করেন নি? তিনি কি জানতেন না কে বিশস্ত আর কে মুনাফিক? আবদুল্লাহ বিন উবাইয়ের মতো মুনাফিকদের বিষয় কি তার সামনে স্পষ্ট হয় নি?
যদি হয়ে থাকে, তাহলে রাসূল (সাঃ) মুআবিয়া সম্পর্কে সতর্ক করতে কিসে আটকে রাখলো? অথচ উল্টো কিনা রাসূল (সাঃ) তার জন্য দুআ করে গেলেন ,"হে আল্লাহ! মুআবিয়াকে হিসাব ও কিতাবের জ্ঞান দ্বারা পূর্ণ করো।" (উসদুল গাবাহ ৪/৩৮৬) "হে আল্লাহ! তাকে পথ প্রদর্শক ও পথ প্রাপ্ত করে দাও এবং তার মাধ্যমে মানুষকে হেদায়েত দান করো।" (জামিউস সহীহ, ২/২৪৭। রাসূল (সাঃ) তাকে পরামর্শ দানে সক্ষম এবং বিশস্ত বলে গেলেন (মাজমাউ যাওয়ায়িদ ৯/৩৫৬)। এমনকি তাঁকে খিলাফতের ভবিষ্যৎ বানী করে বলেছিলেন, "মুআবিয়া! তোমার হাতে যদি শাসন ক্ষমতা অর্পিত হয় তাহলে তুমি আল্লাহকে ভয় করবে এবং ইনসাফ কায়েম করবে।" (আল ইসাবাহ ৪১৩) হযরত উমর (রাযি.) ইবনে আব্বাস (রাযি.)র মতো মর্যাদাবান সাহাবা, এমনি যার সাথে তার বিবাদ, সেই আলী (রাযি.) পর্যন্ত মুআবিয়ার সততা, ন্যায়পরতা, ইনসাফ, আকল ও খোদাভীরুতার প্রশংসা করে গেছেন। (বুখারী ১/৩৩১, তাবারী ৬/১৮৭, বায়হাকী ৩/১৬, আল ইসতিয়াব, ৩/৩৭৭, আল ইসাবাহ ৩/৪৪৭, আল বিদায়া ২/২৪৭, ৮/৩১, ১৩৫ ইত্যাদি)
আফসোস; মুআবিয়ার মুনাফিকী, গাদ্দারী ও ওয়াদার বরখেলাফ তথা আহলে বাইয়েতর সাথে প্রতারণা হাল আমলের রাফেজী ও সমমনা বিজ্ঞদের চোখে পড়লো, রাসূলের (সাঃ) ও তাঁর মর্যাদাবান সাহাবাদের (রাযি.) দৃষ্টিতে আসলো না! (নাউজুবিল্লাহ)
আল্লাহকে ভয় করেন। সঠিক ভাবে না জেনে আন্দাযের উপর কথা বলা থেকে বিরত থাকেন। নিরপেক্ষ ভাবে না জেনে, সত্য-মিথ্যা নির্ণয় না করে শোনা কথা প্রচার করে বেড়ানো শয়তানের কাজ, মুমিনের নয়। (আল-মুসনাদ ৩/৩৪১, মাজমাউয যাওয়াইদ ১/৯২)। বিশেষ করে সাহাবায়ে কিরামের (রাযি.) সম্পর্কে কিছু বলার আগে সাবধান হয়ে বলবেন। রাসূল (স.) বলেন, "আমার উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম তারা যারা আমার যুগে রয়েছে। অতঃপর তাদরে পরবর্তী যুগের উম্মাত (তথা তাবেয়ীগনের যুগ) অতঃপর তাদের পরবর্তী যুগের উম্মাত। (অর্থাৎ, তাবয়ে তাবেয়ীনের যুগ)" (বুখারী ৪/২৮৭- ২৮৮- মুসলিম ৪/১৯৬৪)
"সাবধান!তোমরা আমার সাহাবীগণের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। আমার পরে তোমরা তাঁদেরকে (তিরস্কারের) লক্ষ্যবস্তু বানাইও না। যে ব্যক্তি তাঁদের প্রতি ভালোবাসা পোষণ করে সে আমার প্রতি ভালোবাসা বশেই তাঁদেরকে ভালোবাসে। আর যে ব্যক্তি তাঁদের প্রতি শত্রুতা ও বিদ্বেষ পোষণ করে সে আমার প্রতি বিদ্বেষবশতঃ তাঁদের প্রতি শত্রুতা ও বিদ্বেষ পোষণ করে থাকে”।(তিরমিযী-৩৮৬১, ইবনে হিব্বান, হা. ২২৮৪, মুসনাদে আহমদ ৪/৮৭, আস-সুন্নাহ, ইবনে আবি আসেম, হা.৯৯২)
"তোমরা আমার সাহাবীদেরকে গালি দিওনা। তোমাদের মধ্যে যদি কেহ উহুদ সমপরিমাণ স্বর্ণও যদি আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে,তবেও তাঁদের এক মুদ্দ বা তার অর্ধেক পরিমাণ(এক মুদ=১ রতল। আল্লামা শামী(রাঃ)বয়ান করেছেন যে, এক মুদ্দ ২৬০ দিরহামের সমপরিমাণ।"( বুখারী,হা. ৩৭১৭)
"তোমরা আমার সাহাবীগণকে সম্মান কর। কেননা তাঁহারা তোমাদের মধ্যকার উত্তম মানব।"
[মুসনাদে আহমাদ ১/১১২, তাহকীক, আহমাদ শাকের, নাসায়ী, হাকেম, মেশকাত ৩/১৬৯৫]
যারা সাহাবীদের পুত পবিত্র চরিত্রে কলঙ্ক লেপনের চেষ্ঠা করে তাদের সম্পর্কে মুজতাহিদ ইমামগনের মন্তব্য-
ইমাম মালেক রহ. বলেন, "যারা সাহাবাদের ব্যপারে কুৎসা রটনা করে এবং তাদেরকে গালি দেয় এরা মূলত: রসূল (স.) এর বিরুদ্ধেও কুৎসা রটাতে চেয়েছিলো, কিন্তু তাদের দ্বারা তা সম্ভব হয়নি। তাই তারা সাহাবাগণের ব্যাপারে মিথ্যা রটিয়েছে এবং বলেছে, অমুক সাহাবী নিকৃষ্ট লোক ছিল, অমুকে এমন ছিল তেমন ছিল ইত্যাদি। রাসূল স. যদি নেককার ও সৎ হয়ে থাকেন, তবে তাদের নিকট তার সাহাবীরাও সৎ ও নেককার বিবেচিত হতো।"(আস-সরিমূল মাসলূল, পৃ. ৫৫৩)
ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রহ. বলেন, "যদি কাউকে রাসূল স. এর কোন সাহাবীর সমালোচনা করতে দেখো, তবে তার ইসলামের ব্যাপারে সংশয় পোষণ করো।"[আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, খ.৮, পৃ.১৪২]
আবূ যুর’আ রহ. বলেন,"তোমরা যখন কাউকে কোন সাহাবীর অবমাননা করতে দেখ, তখন বিশ্বাস করে নাও যে, সে যিন্দীক ও বির্ধমী। তা এ জন্য যে, আমাদের নিকট রাসূল স. সত্য নবী, পবিত্র কুরআন সত্য; কুরআন হাদীস তথা পুরা দ্বীন যা আমাদের পর্যন্ত পৌছেছে, তার প্রথম যোগসূত্র হলেন সম্মানিত এ জামাত। সুতরাং যে ব্যক্তি সাহাবাগণের সমলোচনা করবে, সে আমাদের বিশ্বস্ত সাক্ষীদের সমালোচনার মাধ্যমে সম্পূর্ণ দ্বীনকেঅগ্রাহ্য বলে ঘোষণা করতে চায়। অর্থাত্ ইসলামের মূলভিত্তি ধ্বংস করে দিতে চায়। সুতরাং এজাতীয় লোকদের সমালোচনা করা উত্তম বরং এরা হলো যিন্দিক।" [আল-কিফায়া, খতীব বাগদাদী, পৃ.৯৭]
ইমাম আবূ আমর ইবনুস সালাহ রহ. বলেন, "কুরআন হাদীস ও উম্মতের ইজমা হতে এ বিষয়টি সিদ্ধান্তকৃত যে, কোন সাহাবী রাযি. এর পূত- পবিত্রতা সম্পর্কে প্রশ্ন করারও সুযোগ নেই। "(উলূমুল হাদীসঃ ২৬৪)
ইমাম ইবনে হুমাম রহ. বলেন- "আহলুস-সুন্নাত ওয়াল-জামা’আতের আকীদা হল, সমস্ত সাহাবায়ে কিরাম রাযি. কে পূত ও পবিত্র মনে করা, তাঁদের উপর আপত্তি উত্থাপন থেকে বেঁচে থাকা এবং তাদের প্রশংসা করা ওয়াজিব। "(মুসায়েরা- ১৩২পৃঃ)
আমাদের অনেক ঘাটতি আছে, অনেক দোষ আছে– কাজেই অন্যদের ঘাটতি বা দোষ সম্বন্ধে বলার বা লেখার আগে একটু চিন্তা করার দরকার।
গীবাত এর সারমর্ম হল, কারো অনুপস্থিতিতে তার সম্বন্ধে এমন আলোচনা করা না করা যা সে পছন্দ করবে না। রাসূল (সঃ) এর এক হাদিসে এসেছে কথাটা। মৃত ব্যাক্তিরা তো এখন উপস্থিত নেই!
সুয়া সুন্নীর দ্বন্দ্ব এত সহজে দূরীভূত হবে বলে মনে হয় না। আমি যদি আমার ঘাটতি নিয়ে চিন্তা করি তাহলে অন্যদের ঘাটতিকে সমঝদারের মত ভাবা সহজ হবে।
কারবালার ট্রাজেডির শুরু হয়েছিল, রাসূল (সাঃ) এর পরিবারের অধস্তন সমস্ত পুরুষ বংশধরদের কতল করা আর নারীদের শিকলে বেঁধে দামেস্ক নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে। দুই পক্ষেই সাহাবা ছিলেন- আফসোসকারী লোকের কমতি ছিল না দুই দলেই । আবার আপনার আমার মতই ক্ষমতালোভী মানুষও হয়তো ছিল, পুত্র বা পরিজনের স্নেহে অন্ধ মানুষও ছিল- সেসময়েও ছিল, আজ ও আছে!
আমার এক সময় মনে হয়েছে, কেন সে সময় মানুষ একযোগে এই নৃশংস - এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় নাই।
এ জামানায় কি হচ্ছে না এমন? বাংলাদেশে হেফাজতে ইসলামের জমায়েত এর উপরে যখন হামলা হল, ১৬ কোটী মানুষের বাংলাদেশে এই জঘন্য হত্যা কাণ্ডের প্রতিবাদে কয়জন মানুষ রাস্তায় নেমেছে – প্রান দিয়েছে ?
নিজের জীবন বাঁচানো ফরয! বেশীরভাগ মানুষই এই “ইয়া নফসি”র দলে।
আজকের জামানায় কোন মন্ত্রীকে যদি দুটো পছন্দ ক্রম দেয়া হয়, ১) যোগ্যতার ভিত্তিতে একজনকে নির্বাচিত করুন অথবা ২) আপনার পরিবার বা আত্মীয়দের মধ্য থেকে একজনকে নির্বাচিত করুন, যাকে আমরা পরবর্তী মন্ত্রী বানানো । আপনার কি মনে হয়, তারা কি করবে?
মন্ত্রী যদি আপনারই বাবা হয় বা আত্মীয় হয় আপনার সহানুভূতি এক রকম হবে, আর যদি আপনার আত্মীয় দূরে থাক, দুই চারশ মাইলের মধ্যে যদি কোন মন্ত্রী না থাকে – আপনার মনোভাব হবে অন্য রকম। একটু চিন্তা করে দেখুন।
সাহাবাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস আমাদের কারো থাকার কথা নয়। তাঁরা বহু বহুদিকে আমাদের চেয়ে অনেক অনেক উচ্চ দরজার লোক। তবে সাহাবা হলেও তাঁরাতো মানুষ ছিলেন, নয় কি? যদি কোন বিষয়ে তাঁদের ক্রুটি আমাদের চোখে থেকেও থাকে, তাঁরা ইসলামের জন্য যে ত্যাগ শিকার করেছেন, আমরা কি তার শহস্রাংস ভাগের এক ভাগ ও করছি? অনেকেই দুনিয়া থেকেই বেহেশতের খোশ খবর পেয়ে গেছেন। আর সাহাবাদের তূলনায় আমাদের অবস্থা? তাঁদের জেহাদের পথে ছুটে যাওয়া ঘোড়ার পা থেকে যে ধুলা উড়েছে, তার চেয়েও অকিঞ্চিৎকর !
একটা দুর্ঘটনা যখন ঘটে যায়, বাইরে যারা থাকে তাঁরা অনেক পরামর্শ দিতে পারে,কি করলে কি হতে পারত, কিম্বা কি না করলে কি না হতে পারত ইত্যাদি। কিন্তু যার হাতে স্টিয়ারিং ছিল তার মাথাতেও এমন চিন্তা আসবে- এটা করলে এমন হত, এমন না করলে এটা হত না। সমস্যা হল, রি-ওয়াইন্ড করার কোন রাস্তা তো নেই!
সত্য জানার জন্য বা ইতিহাস এর জ্ঞান অর্জন করাটা জরুরী, এর বাইরে মৃত কারো সম্বন্ধে খারাপ কথা না বলা উত্তম। কারণ আমরাও তো ফিরিশতা নই। ঐ যুগে ফিরে গিয়ে ইতিহাসের গতিতো আর রোধ করা যাবে না । তা থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামী ট্রাজেডিগুলো যদি ঠেকানো যায়- তবে সেটাই উত্তম। তবে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সত্য এই যে ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না!! নাকি নেয়!
জাজাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন