সিয়ামের ফযীলত
লিখেছেন লিখেছেন সত্যের ডাক ২৮ জুন, ২০১৪, ০৪:০১:৩৭ রাত
সিয়ামব্রত পালনের মধ্যে রয়েছে মানসিক, দৈহিক, সামাজিক ও নৈতিক অনেক উপকার। কুরআন-হাদীসে সিয়াম সাধনার অনেক ফযীলত, তাৎপর্য এবং বিধি-বিধানের উল্লেখ আছে। এখানে তার কিছু বর্ণনা করব ইন্শা আল্লাহ।
(ক) সিয়ামের প্রতিদান অগণিতঃ
আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেনঃ নবী কারীম (সাঃ) বলেছেনঃ ‘আদম সন্তানের প্রতিটি আমল দশ গুণ থেকে সাত শতগুণ বাড়িয়ে দেয়া হয়। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ কিন্তু সওম (রোযা) আমার জন্যে এবং আমিই এর প্রতিদান দেব। কারণ সে আমারই জন্য তার কামাচার এবং পানাহার বর্জন করে। সওম পালনকারীর জন্য খুশীর বিষয় দু’টি। একটি খুশী ইফতারের সময়, আরেকটি খুশী তার প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাতের সময়। সিয়াম পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মিশ্কের সুগন্ধির চেয়েও অধিক উৎকৃষ্ট।’ {মুসলিম, হাঃ ২৫৭৪।}
(খ) সিয়াম জান্নাত লাভের অদ্বিতীয় উপায়ঃ
আবূ উমামা (রাঃ) বলেনঃ আমি নবী কারীম (সাঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন একটি রাস্তা বলে দিন যদ্ধারা আমি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারি। তিনি বললেনঃ তুমি সিয়াম পালন কর, কারণ সিয়ামের কোন নজীর নেই। রাবী (বর্ণনাকারী) বলেনঃ আবু উমামার ঘরে দিনের বেলায় আগুনের ধোঁয়া দেখা যেত না। তবে যখন কোন মেহমান আসত, তখন দেখা যেত। {সহীহুত্ তারগীব/৯৮৬।}
হুযাইফা (রাঃ) বলেনঃ নবী কারীম (সাঃ) কে আমার বুকে ঠেস দিয়ে শায়িত করলাম। তখন তিনি বললেনঃ যে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে, তার জন্য মোহর লাগানো হবে এবং সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। যে ব্যক্তি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে এক দিন সিয়াম পালন করবে, তার জন্য মোহর লাগানো হবে এবং সেও জান্নাতে যাবে। {সহীহুত তারগীব, হাঃ ৯৮৫।}
(গ) সিয়াম রোজ হাশরে বান্দার জন্য সুপারিশ করবেঃ
আব্দুল্লাহ ইবনে আ’মর (রাঃ) বলেনঃ নবী কারীম (সাঃ) বলেছেনঃ সিয়াম এবং কুরআন কিয়ামতের দিন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। সিয়াম বলবেঃ হে আমার প্রভূ! আমি তাকে দিনে পানাহার ও কামাচার থেকে বিরত রেখেছি। সুতরাং তার জন্য আমার সুপারিশ গ্রহন করুন। আর কুরআন বলবেঃ আমি তাকে রাত্রে নিদ্রা থেকে বিরত রেখেছি। সুতরাং তার জন্য আমার সুপারিশ গ্রহন করুন। অতঃপর উভয়ের সুপারিশ গ্রহন করা হবে। {মুসনাদু আহমদ, হাঃ ৬৬২৬।}
(ঘ) সিয়াম জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য ঢাল স্বরূপঃ
আবূ হুরাইরা (রাঃ) বলেন, নবী কারীম (সাঃ) বলেছেনঃ সিয়াম ঢাল স্বরূপ। সুতরাং সিয়াম পালনকারী অশ্লীল কথা বলবে না, জাহেলী আচরণ করবে না। কোন লোক তার সাথে ঝগড়া করতে উদ্যত হলে অথবা গালমন্দ করলে, সে তাকে বলবে ‘আমি সিয়াম পালন করছি’। {বুখারী, হাঃ ১৭৫৯, মুসলিম, হাঃ ২৫৭৪}
(ঙ) আল্লাহর কাছে প্রিয় সিয়ামঃ
আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বলেনঃ নবী কারীম (সাঃ) বলেছেনঃ আল্লাহর কাছে সব চেয়ে প্রিয় সিয়াম হ’ল দাঊদ (আঃ) এর সিয়াম। তিনি একদিন সিয়াম পালন করতেন আর একদিন ছেড়ে দিতেন। (আবুদাঊদ, নাসায়ী, সহীহুল জামেঃ হা/- ১৭০।)
(চ) আল্লাহর রাস্তায় একদিন সিয়াম পালনের ফযীলতঃ
আবুসাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি একদিন আল্লাহর রাস্তায় সিয়াম পালন করবে, আল্লাহ তাঅ’ালা তার বদলে তার চেহারাকে জাহান্নাম থেকে সত্তুর বছরের দুরত্ত্বে রাখবেন। (ইবনে মাজা, হাঃ/১৪০৪।)
(ছ) আরাফার দিনের সিয়ামের ফযীলতঃ
আবুকাতাদা (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ আরাফার দিন সিয়াম পালন করলে আগের পরের দু’বছরের পাপ ক্ষমা হয়ে যায়। {মুসলিম, হাঃ/২৬১৪।}
(জ) আশুরার দিনের সিয়ামের ফযীলতঃ
আবুকাতাদা (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ আশুরার সিয়াম পালন করলে বিগত এক বছরের পাপ ক্ষমা হয়ে যায়। {মুসলিম, হাঃ/২৬১৪।}
(ঝ) সোমবার এবং বৃহষ্পতিবারে সিয়ামের ফযীলতঃ
আবুকাতাদা (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে সোমবারের সিয়ামের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে, তিনি উত্তরে বলেনঃ এই দিনেই আমার জন্ম হয় এবং এই দিনেই আমার উপর ওহী অবতীর্ণ হয়েছে। {মুসলিম, হাঃ/২৬১৭।}
(ঞ) মুহাররাম মাসের সিয়ামের ফযীলতঃ
আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ রমাদানের পর সর্বোত্তম সিয়াম হ’ল, আল্লাহর মাস মুহাররামের সিয়াম। আর ফরয ছলাতের পর উত্তম ছলাত হল, তাহাজ্জুদ। (মুসলিম, হা/২৬৬২।)
(ট) শা’বান মাসের সিয়ামের ফযীলতঃ
আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে রমাদান ব্যতীত অন্য কোন মাসে পুরো মাস সিয়াম পালন করতে দেখিনি। আর শা’বান মাস ব্যতীত অন্য কোন মাসে বেশী সিয়াম পালন করতেও দেখিনি। {সহীহ বুখারীঃ ২/২৬২, হা/-১৮৩০।}
(ঠ) শাওয়াল মাসে ছয় সিয়ামের ফযীলতঃ
আবূ আইয়ুব আনছারী (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রমাদানের সিয়াম পালন করল এবং তারপর শাওয়াল মাসে ছয়টি সিয়াম পালন করল, সে যেন সারা জীবন সিয়াম পালন করল। (মুসলিমঃ/২৬২৫।)
সিয়ামে রমাদান বই থেকে সংগৃহীত
বিষয়: বিবিধ
১১২৫ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন