ইরাকের তালা'ফার শহর বিদ্রোহীদের দখলে
লিখেছেন লিখেছেন সত্যের ডাক ১৭ জুন, ২০১৪, ০৩:৫৭:৩৬ রাত
সুন্নি বিদ্রোহীরা ইরাকের উত্তরাঞ্চলের তাল আফার শহরটি গতকাল সোমবার ভোরে দখল করে নিয়েছে। শহরটির মেয়র ও বাসিন্দারা এ কথা জানান। গত এক সপ্তাহে ইরাকের শিয়া সরকার ইসলামি স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড লেভান্ত (আইএসআইএল) যোদ্ধাদের কাছে দেশের উত্তরাঞ্চলের বিরাট অঞ্চল হারিয়েছে। সর্বশেষ শহরটির পতন ইরাকের শিয়া নেতৃত্বাধীন সরকারের জন্য একটি বড় আঘাত। ইরাক পরিস্থিতির কারণে বাগদাদ থেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো দূতাবাস স্টাফদের সরিয়ে নিচ্ছে। এ দিকে আইএসআইএস গেরিলারা তাদের হাতে আটক কয়েক শ’ সরকারি সৈন্যকে হত্যা করেছে বলে ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করেছে। রয়টার্স, এপি,এএফপি।
শহরটির জনসংখ্যা প্রায় দুই লাখ। তাদের অধিকাংশ শিয়া, সুন্নি ও তুর্কমেন। মেয়র আব্দুল আল আব্দুল বলেন, ভোরের আগেই গেরিলারা শহরটি দখল করে নেয়। মিশ্র জনবসতিপূর্ণ শহরটি বাগদাদের ৪২০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত। শহরের বাসিন্দারা টেলিফোনে জানান, ট্রাকে করে মেশিনগান সজ্জিত আইএসআইএল যোদ্ধারা রাস্তায় রাস্তায় টহল দিচ্ছে। এবং গুলির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। স্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনী ভোর হওয়ার আগেই শহর থেকে চলে যায়। যুদ্ধরত স্থানীয় উপজাতি লোকেরা পরে আইএসআইএল যোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে বলে তারা জানান।
শহরটি ভীতসন্ত্রস্ত বাসিন্দাদের অধিকাংশ ইতোমধ্যে নিকটবর্তী কুর্দি নিরাপত্তা বাহিনী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় পালিয়ে গেছে।
সুন্নি যোদ্ধারা গত এক সপ্তাহে আকস্মিক হামলা চালিয়ে সিরিয়া সীমান্ত থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী মসুল ও সাদ্দামের জন্মস্থান তিকরিতসহ বিশাল এলাকা দখল করে নিয়েছে। আইএসআইএল এত দিন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ সরকারের বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিল।
ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি নিরাপত্তা বাহিনীতে যোগদানকারী শিয়া স্বেচ্ছাসেবী যোদ্ধাদের উদ্দেশে দেয়া ভাষণে দেশের প্রতি ইঞ্চি ভূখণ্ড সুন্নি বিদ্রোহীদের হাত থেকে উদ্ধার করার সঙ্কল্প ব্যক্ত করার পর এক রাতের লড়াইয়ে তাল আফার শহরটির পতন ঘটল। আইএসআইএল বাগদাদসহ দক্ষিণাঞ্চলের অন্যান্য শহরও দখল করার সঙ্কল্প ব্যক্ত করেছে।
সরিয়ে নেয়া হচ্ছে পশ্চিমা দূতাবাস স্টাফদের
ইরাক সঙ্কট প্রশ্নে দীর্ঘ দিনের শত্রু দেশ ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রত্যক্ষ আলোচনা শুরুর সম্ভাবনার মধ্যে দেশটির সঙ্ঘাতময় পরিস্থিতিতে পশ্চিমা দেশগুলো বাগদাদ থেকে তাদের দূতাবাস স্টাফদের সরিয়ে নেয়া শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া তাদের কূটনীতিকদের সরিয়ে নেয়ার কথা নিশ্চিত করেছে। বাগদাদের কঠোর প্রহরাধীন গ্রিনজোনে মার্কিন দূতাবাস অবস্থিত। তবে কত সংখ্যক মার্কিন কূটনীতিককে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে তা স্পষ্ট নয়। পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র জেন সাকি বলেছেন, তাদের অনেককে সাময়িকভাবে বন্দর নগরী বসরা মার্কিন কন্স্যুলেটে এবং উত্তরের কুর্দি শহর আরবিলে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। অন্যদের জর্দানের রাজধানী আম্মানে নেয়া হবে।
সরকারি সেনাকে হত্যার দাবি
আইএসআইএস দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় সালাহউদ্দিন প্রদেশে তাদের হাতে বন্দী অন্তত এক হাজার ৭০০ সরকারি সৈন্যকে হত্যা করার দাবি করেছে। হত্যাকাণ্ডের ভিডিওচিত্র ও ছবি অনলাইনে প্রকাশ করেছে। সালাহউদ্দিন প্রদেশের প্রধান শহর তিকরিতের একটি সেনাঘাঁটি দখল করার পর তাদের হত্যা করা হয়। আইএসআইএলের প থেকে প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, সেনাবাহিনীর পোশাকের পাশাপাশি সাদা পোশাকের শত শত যুবককে ধাক্কা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে মুখোশ পরিহিত বন্দুকধারীরা। এ সময় একজনকে বলতে শোনা যায়, ‘সেনা ঘাঁটিতে এরা আত্মসমর্পণ করেছে।’
স্থির চিত্রে দেখা যায়, শত শত যুবককে ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এসব ছবির ক্যাপশনে আইএসআইএল লিখেছে, এদের মৃত্যুর দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এরপর কিছু ছবিতে এসব সৈন্যের ওপর ব্রাশ ফায়ার করতে দেখা যায়। আরেকটি ছবিতে দেখা যায়, শত শত যুবককে একটি খোলা মাঠের মধ্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এবং দূরে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র হাতে গুলি করার জন্য দাঁড়িয়ে আছে বিদ্রোহীরা। ইরাকের সেনা মুখপাত্র লে. জেনারেল কাসিম আল-মুসাভি এসব ছবির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
( নয়া দিগন্ত ডেস্ক, ১৭ জুন ২০১৪, মঙ্গলবার)
বিষয়: বিবিধ
১০২০ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন