সিরিয়াসহ মুসলিম বিশ্বে মার্কিন মহাষড়যন্ত্র ও সেবাদাসদের ভণ্ডামি
লিখেছেন লিখেছেন হৈচৈ ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ১১:২৬:৪৯ রাত
বিশ্ব-পরিস্থিতি এখন খুবই ভয়ংকর আকার ধারণ করেছে। মিসরে এখন কার্যত: তীব্র সংকটজনক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সামরিক অভ্যুত্থানে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মুহাম্মাদ মুরসির অপসারণের পর সেদেশে সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত দমন অভিযানে এ পর্যন্ত সহস্রাধিক মিসরীয় নিহত হয়েছে। লিবিয়ার অবস্থাও ভালো না। সেখানেও গৃহযুদ্ধ লাগে লাগে অবস্থা। তিউনিসিয়ায়ও গোলযোগ লেগেই রয়েছে। বিগত দুই আড়াই মাস ধরে তুরস্কেও রাজনৈতিক গোলযোগ,বিক্ষোভ,মিছিল,সংঘর্ষ ও সহিংসতা চলেছে। গত আড়াই বছরেরও বেশি সময় ধরে সিরিয়ায় গোলযোগ চলছে।
ইরাক, পাকিস্তান আফগানিস্তানের অবস্থাও ভালো না। এদেশগুলোতে সন্ত্রাসী হামলা অহরহ সংঘটিত হচ্ছে এবং এরফলে সে দেশগুলোয় প্রচুর লোক নিহত ও আহত হচ্ছে। বাহরাইনে গণ আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। ইঙ্গ- সৌদি-মার্কিন মদদপুষ্ট আল-খলিফা সরকার বাহরাইনে দমন নীতি অব্যাহত রেখেছে। সৌদি আরবের শিয়া অধ্যুষিত পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশগুলোতে সৌদি স্বৈরাচারী রাজতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে প্রায় প্রতিদিনই গণ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বাংলাদেশের অবস্থাও তেমন একটা ভালো না। মুসলিম বিশ্বের সর্বত্রই আজ ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ হস্তক্ষেপের কারণে গোলযোগ, অস্থিরতা,সহিংসতা, রক্তপাত লেগেই রয়েছে।
আসলে গোটা মুসলিম বিশ্ব জুড়ে পাশ্চাত্যপন্থী ও ইসলামপন্থীদের মাঝে দ্বন্দ্ব-সংঘাত অন্ততঃপক্ষে বিগত ছয় দশক ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে চলে আসছে। পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদ তার আঞ্চলিক মিত্র ও ধামাধরাদের মাধ্যমে অর্থাত পাশ্চাত্যপন্থীদের মাধ্যমে সবকটি মুসলিম দেশে গণ্ডগোল জিইয়ে রাখছে। পাশ্চাত্য বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আল-কায়েদা ও তালিবানদের মত উগ্রবাদী জঙ্গি ও সন্ত্রাসী দল ও সংগঠনগুলো সৃষ্টি করে মুসলিম দেশগুলোসহ সার্বিক বিশ্ব পরিস্থিতিকে খুবই জটিল করে দিচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দাবী যে সে দেশটি আফগানিস্তানে সন্ত্রাসী আল-কায়েদা ও তালিবানদের বিরুদ্ধে লড়ছে। আবার এই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই আল-কায়েদার সন্ত্রাসীদেরকে আফগানিস্তান,পাকিস্তান ও অন্যান্য দেশ থেকে এমনকি ইউরোপ থেকে বাশার আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য সিরিয়ায় চালান দিচ্ছে। ইরাকেও সৌদি-ইঙ্গ- মার্কিন যৌথ উদ্যোগে আল-কায়েদার সন্ত্রাসীদের আমদানি এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত বাথ পার্টির সন্ত্রাসী দের পুনর্বাসিত করে ও প্রোটেকশন দিয়ে সে দেশটিতে সন্ত্রাসের বহ্নি শিখা জ্বালিয়ে দিচ্ছে। মার্কিনীদের কাছ থেকে গ্রিন সিগন্যাল পেয়েই মিয়ানমার সরকার সে দেশের নিরীহ রোহিঙ্গা মুসলমানদের হত্যা করে যাচ্ছে। সংক্ষেপে এই হচ্ছে মুসলিম বিশ্বের সাধারণ চিত্র।
সিরিয়ার স্ট্র্যাটেজিক বা কৌশলগত গুরুত্ব
লেবানন ও ফিলিস্তিনের সকল প্রতিরোধ আন্দোলনের সাথে ইরানের যোগাযোগের ব্রিজ বা সংযোগ-সেতু হচ্ছে সিরিয়া। আর এ দেশটি ( সিরিয়া ) ফিলিস্তিনি ও লেবাননী প্রতিরোধ আন্দোলনগুলো- যেমন, হামাস, জিহাদ-ই ইসলামী,পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইন এবং হিজবুল্লাহ’র আন্দোলনকে সব ধরনের সাহায্য ও সহযোগিতা দিয়ে আসছে। তাই পাশ্চাত্য বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সৌদি আরব-কাতার (আরব প্রতিক্রিয়াশীল চক্র) চাইছে বাশার আসাদ প্রশাসনকে সরিয়ে সিরিয়ায় পাশ্চাত্যের বশংবদ তাবেদার সরকারকে ক্ষমতায় বসাতে। আর তা করতে পারলে ইস্রায়েল বিরোধী প্রতিরোধ আন্দোলনগুলোর সঙ্গে ইরানের যোগাযোগ পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়বে এবং এ অবস্থায় ওইসব আন্দোলনগুলোকে নির্মূল করাও সম্ভব হবে।
অন্যদিকে সিরিয়ায় পশ্চিমাদের তাবেদার সরকার ক্ষমতায় আসলে দখলদার ইস্রায়েলের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হবে যা বর্তমানে ইরান-সিরিয়া ও ইস্রায়েল বিরোধী প্রতিরোধ আন্দোলনগুলোর হাতে বিগত কয়েক দশক ধরেই প্রত্যক্ষ হুমকির সম্মুখীন। তাই সিরিয়ায় গণতন্ত্র কায়েম করার বাহানায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র,ব্রিটেন, ফ্রান্স ও তদের বশংবদ তাবেদার ও তল্পিবাহক অত্র অঞ্চলের সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, আরব আমিরাত (কুখ্যাত আরব প্রতিক্রিয়াশীল চক্র )বিভিন্ন দেশ থেকে অস্ত্রসহ সন্ত্রাসী দের সিরিয়ায় চালান দিয়ে সেখানে ( সিরিয়ায় ) গৃহযুদ্ধ লাগিয়ে এই দেশে রক্তগঙ্গা বইয়ে দিচ্ছে।
বাশার আসাদ সরকার মূলতঃ নিজ দেশবাসীদের অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহযোগিতা পেয়েই এ সব বিদেশী সমর্থন ও মদদপুষ্ট বহিরাগত সন্ত্রাসী দের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। আড়াই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা এ যুদ্ধে বাশার আসাদ সরকার ও সিরিয় আরব সেনাবাহিনী দেশের বেশির ভাগ এলাকা থেকে ভাড়াটে বহিরাগত সন্ত্রাসী দের বিতাড়িত করে যুদ্ধের গতিধারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এনেছে। (যুদ্ধে বাশার আল আসাদ সরকারের সাফল্য ও বিজয়ের কথা কয়েক দিন আগে দৈনিক যুগান্তরেও প্রকাশিত হয়েছে)।
তুরস্কের আর্দোগান সরকার সিরিয়ায় গোলযোগ ও অস্থিরতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে পাশ্চাত্যের সাথে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করেছে ও করে যাচ্ছে। যদি তুরস্ক সরকার এ ক্ষেত্রে পাশ্চাত্যকে সাহায্য সহযোগিতা না করত তাহলে পাশ্চাত্যের পক্ষে সিরিয়ায় গোলযোগ বাধানো সম্ভব হত না। পাশ্চাত্য বহু দেশ থেকে ভাড়াটে সন্ত্রাসী দের এনে প্রধানতঃ তুরস্কের মধ্য দিয়েই তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্ত পথে সিরিয়ার ভেতরে পাঠাচ্ছে। এছাড়া পাশ্চাত্য বেশিরভাগ অস্ত্র ও রসদপত্র এ তুরস্কের মধ্য দিয়েই সিরিয়ার ভেতরে সন্ত্রাসী দের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। তাছাড়া সিরিয় সীমান্তবর্তী তুর্কী ভূখণ্ডে বিভিন্ন ট্রেনিং কেন্দ্র বসিয়ে ভাড়াটে সন্ত্রাসী দের সামরিক ট্রেনিং দিচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা।
সিরিয়ার বাশার আসাদ সরকারকে নৈতিক সমর্থন দিচ্ছে কেবল ইরান , রাশিয়া ও চীন । কার্যত: বাশার আসাদ প্রশাসন গোটা বিশ্বের বিরুদ্ধেই লড়ছে। সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, আরব আমিরাতের অর্থ, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের (CIA) প্ল্যান এবং তুরস্কের লজিস্টিক সাপোর্ট একযোগে কাজ করছে বাশার আসাদ প্রশাসনের পতন ঘটানোর লক্ষ্যে।
আল আহরামের দৃষ্টিতে আসাদের জনপ্রিয়তা ও টিকে থাকার রহস্য
গত বছর মিসরীয় দৈনিক সান্ধ্যকালীন আল-আহরাম (আল-আহরাম আল-মাসাঈয়াহ, আর এ পত্রিকা বাশার আল আসাদ বিরোধী) লিখেছিল, কেন আজও বাশার আসাদ প্রশাসন টিকে আছে? আর এ প্রশ্নের জবাব স্বয়ং এ পত্রিকাটা এভাবে দিয়েছে যে, সিরিয়ার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলো নিজেদের ভবিষ্যত নিয়ে ভীষণ শঙ্কিত এ কারণে যে, যদি আসাদ সরকারের পতন ঘটে তাহলে সে দেশে আল-ক়ায়েদা ও ওয়াহাবি-তাকফিরি উগ্রবাদী সন্ত্রাসীরা ক্ষমতা দখল করে সিরিয়ার ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলোর ওপর গণহত্যা চালাবে, তাদের অধিকারগুলো পদদলিত করবে এবং তাদের ওপর উত্পীড়ন ও অত্যাচার চালাবে।
পত্রিকাটি আরো লিখেছে, সিরিয়ার জনসংখ্যার প্রায় শতকরা ৩৫ ভাগ হচ্ছে বিভিন্ন ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। ভাষাভিত্তিক জাতিগুলোও ( কুর্দি, তুর্কমান ইত্যাদি যারা সিরিয়ার জনসংখ্যার অন্ততঃ শতকরা দশ ভাগ ) ঠিক একই আশঙ্কা করছে। তাই দেখা যাচ্ছে যে, সিরিয়ার জনসংখ্যার কমপক্ষে প্রায় শতকরা ৪৫ ভাগ এ কারণে বাশার আসাদ প্রশাসনকে সমর্থন করে অথবা সমর্থন না করলেও চায় না যে, বাশার আসাদ প্রশাসনের পতন ঘটুক এবং উগ্র জঙ্গি সন্ত্রাসীরা সিরিয়ার সরকারি ক্ষমতা দখল করুক অথবা জঙ্গিরা দেশের চূড়ান্ত ক্ষমতা দখল করতে না পারলেও সে দেশ যে সাদ্দামোত্তর ইরাকের মত এক মহাভয়ংকর অরাজকতা ও গোষ্ঠীগত,জাতিগত,সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় গোলযোগ ও দাঙ্গা-হাঙ্গামার শিকার হবে তা তারা চায় না। (আর তাদের আশঙ্কার ঠিক এর এক বছর পর অর্থাত ২০১৩সালে জঙ্গি উগ্র তাকফিরি সালাফি ওয়াহাবি সন্ত্রাসী সংগঠন জিবহাতুন নুসরা সিরিয়ার অনেক খৃষ্টান ও কুর্দিদের অত্যন্ত নৃশংস ভাবে হত্যা করেছে।) বাকি শতকরা ৫৫ ভাগ জনগোষ্ঠী প্রধানতঃ সুন্নি হলেও এদের অধিকাংশ সরকারী চাকুরীজীবী, ব্যবসায়ী, পেশাজীবী ও বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত বিধায় এদের অনেকেই চায় না বাশার আসাদ সরকারের পতন ঘটুক। কারণ বাশারের পতন ঘটলে সিরিয়ায় ব্যাপক ভয়াবহ অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা, দাঙ্গা-হাঙ্গামা,গোলযোগ, অশান্তি, রক্তপাত ও নৃশংস হত্যাযজ্ঞ লেগেই থাকবে বরং তারা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যে সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে সেগুলো সবই ভেস্তে যাবে।
মিশরের ওই পত্রিকাটি আরো জানিয়েছে, সিরিয়ার ব্যবসায়ী সম্প্রদায় যাদের অধিকাংশই হচ্ছে সুন্নি মুসলমান তারাও চায় না যে, আসাদ সরকারের পতন ঘটুক, কারণ পতন ঘটলে ব্যবসায়-বাণিজ্যের আর কোন পরিবেশই বজায় থাকবে না। এ দিকে, খোদ বাশার আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর মধ্যকার অনৈক্য , মতবিরোধ ও অন্তর্দ্বন্দ্ব তাদেরকে দুর্বল করে রাখছে। তাই দেখা যায় যে দখলকৃত এলাকা ও অঞ্চলগুলোর নিয়ন্ত্রণভার নেয়ার জন্য এই সব বিদ্রোহী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ও দলগুলো নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। যেমন, ফ্রি সিরিয়ান আর্মির (FSA) সাথে জিবহাতুন নুসরার বেশ কয়েকটি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ।
তাই বিভিন্ন বিদ্রোহী গ্রুপ ও দলগুলো এইসব কারণেই আজ (২০১২ সাল ) পর্যন্ত বাশার আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ ও কার্যকর কোন সামরিক (যুদ্ধ)কলাকৌশল ( স্ট্র্যাটেজি ) ও যৌথ সামরিক অভিযান পরিচালনা করতে পারে নি (আর এ অবস্থা আজ ২০১৩ সাল পর্যন্ত অব্যাহত আছে।)।( বিদ্রোহীরা তাদের দখলকৃত ও নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোয় জনগণের জান-মাল ও মান-ইজ্জতের নিরাপত্তা বিধান তো দুরের কথা নিজেরাই গণহত্যা,লুট-পাট ও ধর্ষণের মত জঘন্য সব অন্যায়, অপকর্ম ও দুষ্কর্মে লিপ্ত। আর এ কারণে তারা বিভিন্ন অঞ্চল দখল করেও ঐ সব এলাকার অধিবাসীদের সমর্থন লাভ করতে পারে নি। একই কারণে তারা সিরিয় সেনাবাহিনীর আক্রমণের মুখে এইসব অঞ্চল নিজেদের দখলে ধরে রাখতেও পারছে না।) এই সব ভাড়াটে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ও গ্রুপের সামরিক প্রশিক্ষণ, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা ( combat capability & experience) সিরিয় সেনাবাহিনীর তুলনায় অনেক অনেক নিম্নমানের।
মিশরের ওই পত্রিকাটি আরো জানিয়েছে, সিরিয়ার অভ্যন্তরে বাশার আসাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত গ্রুপ ও দলগুলোর মধ্যে যেমন কোনো ঐক্য নেই ঠিক তেমনি বাশার আসাদ বিরোধী প্রবাসী সিরিয় গ্রুপ ও দলগুলোর মধ্যেও কোনো ঐক্য নেই। আর আমেরিকা ও তার মিত্ররা অনেক চেষ্টা-তদবির করেও এখন পর্যন্ত প্রবাসে ও সিরিয়ার ভেতরে এইসব গ্রুপ ও দলগুলোর মাঝে ঐক্য আনতে পারে নি।
অন্যদিকে বাশার আসাদ সরকারের প্রতি লেবানন, ইরাক, ইরান ও আলজেরিয়ার মত অত্র অঞ্চলের বেশ কিছু রাষ্ট্রের সমর্থনসহ আন্তর্জাতিক পর্যায় রাশিয়া ও চীনের মত কয়েকটি শক্তিশালী দেশের অকুণ্ঠ সমর্থন এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে সিরিয় সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের ব্যাপারে অধিকাংশ জোট নিরপেক্ষ দেশের আগ্রহের সুবাদে বাশার আসাদ সরকারের অবস্থান দেশের ভেতরে ও বাইরে এখন পর্যন্ত শক্তিশালী ও সুসংহত রয়েছে।
আর জাতীয় পর্যায় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাশার আসাদের বিরুদ্ধে কার্যকর রাজনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়েছে পাশ্চাত্য ও তার বশংবদ ভাড়াটে (সন্ত্রাসী ) গ্রুপ ও দলগুলো। আজ (২০১২) পর্যন্ত দামেশকসহ সিরিয়ার প্রধান প্রধান শহর ও নগরগুলোয় বাশার আসাদ বিরোধী বড় ধরনের কোন গণ বিক্ষোভ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়নি যা হচ্ছে যে কোন স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটানোর জন্য পূর্বশর্ত স্বরূপ ( আর এখানে প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে, আজও অর্থাত ২০১৩ সালের আগস্ট মাস গত হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও দামেশকে তো দুরের কথা সিরিয়ার অন্য কোন বৃহত নগরীতেও বাশার বিরোধী কোন গণবিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয় নি।)
ঐ পত্রিকাটি আরো লিখেছে, মিসরের রাজধানী কায়রো ও অন্যান্য বৃহত নগরী যেমন আলেক্সান্দ্রিয়া, ইসমাঈলিয়া,আসিয়ুত, ফাইয়ূম ইত্যাদিতে লাগাতার গণবিক্ষোভ হওয়ার ফলে হুসনি মুবারক সরকারের পতন ঘটে। আর ঠিক এমনটি সিরিয়ার ক্ষেত্রে হয় নি। তাই বাশার আসাদ সরকার এখনও টিকে আছে। এ কথাগুলো গত বছর (২০১২ সালে) লিখেছিলো ঐ পত্রিকাটি (আল-আহরাম আল-মাসাঈয়াহ্)।
আসাদের জনপ্রিয়তা ও টিকে থাকার আরো কিছু রহস্য
বাশার আসাদ সরকার গণমুখী সরকার। তাই এ সরকারের ব্যাপক জন সমর্থন ও জনপ্রিয়তা রয়েছে। যদি এ সরকারের জনপ্রিয়তা ও জন সমর্থন নাই থাকত তাহলে এতদিন সৌদি-কাতারি-তুর্কি- ইঙ্গ-ফ্রাংক-মার্কিন-ইস্রায়েলী ষড়যন্ত্রের মুখে টিকে থাকতে পারত না। মিসর ও তিউনিসিয়ার মত কোন গণ অভ্যুত্থানও যে সিরিয়ায় হয়নি ‘আল-আহরাম আল-মাসাঈয়াহ’র মত আসাদ বিরোধী পত্রিকাও অকপটে তা স্বীকার করেছে। প্রবল গণ-জাগরণ বা গণ-অভ্যুত্থানের মুখে কোন অজনপ্রিয় সরকার তা যতই শক্তিশালী হোক না কেন, টিকে থাকতে পারে না। ১৯৭৯ সালে ইমাম খোমেনী (র.)’র নেতৃত্বে সফল ইসলামী বিপ্লবের কাছে পাশ্চাত্য বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণ-সমর্থনপুষ্ট শক্তিশালী শাহ সরকারের পতন, বাংলাদেশে ১৯৯০ সালের গণ অভ্যুত্থানের কারণে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের পতন এবং ২০১১ সালে তিউনিসিয়ায় গণ অভ্যুত্থানের ফলে জালেম স্বৈরাচারী জয়নুল আবেদীন বেন আলী সরকারের পতন ইত্যাদি এর প্রকৃষ্ট ও বাস্তব উদাহরণ।
সিরিয়ার ক্ষেত্রে আসলে বাস্তব অবস্থা হচ্ছে এই যে, সিরিয় আরব বাহিনীর সাথে একাত্ম হয়ে সিরিয়ার জনগণও বহিরাগত এ সব ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধ করছে। তারা ভালো করে জানে যে এ সব উগ্র জঙ্গি তাকফীরী সন্ত্রাসীরা হচ্ছে তাদের চিরশত্রু ইস্রায়েল, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও তাদের আঞ্চলিক বশংবদ তল্পিবাহক সৌদি-কাতারি-কুয়েতি-আমিরাতী প্রতিক্রিয়াশীল রাজতান্ত্রিক সরকারগুলো এবং ইস্রায়েল-মার্কিন প্রদত্ত চশমা চোখে এঁটে তথাকথিত ওসমানী সাম্রাজ্য পুনঃপ্রতিষ্ঠার স্বপ্নে বিভোর তুর্কী প্রধানমন্ত্রী আর্দোগান (যার অর্থ হচ্ছে বাংলায় শকুন পাখী)-তুর্কী পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাউদওগলূর চর যাদের লক্ষ্যই হচ্ছে সিরিয়ার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ধ্বংস করে সেদেশটিতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা যার ফলে ইস্রায়েলের শক্তি ও প্রভাব সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে অক্ষুণ্ণ ও অটুট থাকবে এবং এ দেশটির নিরাপত্তাও সুনিশ্চিত করা সম্পূর্ণ সম্ভব হবে। আর এরফলে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে পাশ্চাত্য বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামগ্রিক স্বার্থও কোনরূপ হুমকির সম্মুখীন হবে না।
সিরিয় জনগণ (উপরে উল্লেখিত) এইসব বাস্তবতা খুব ভালো করেই বুঝে। তারা ভালো করেই জানে যে, যে গণতন্ত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার আঞ্চলিক মিত্রদের সহায়তায় সিরিয়ায় প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে তাতে কোন কল্যাণ নেই। বাশার আসাদকে সরিয়ে সিরিয়ায় আসলে কোনদিনই আমেরিকা প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে দেবে না। বরং সিরিয়াকে সাম্রাজ্যবাদী পশ্চিমা শক্তিগুলো, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইস্রায়েলের মুকাবেলায় দুর্বল করেই রাখবে। তাই বাশার আসাদকে সরিয়ে সিরিয়ায় পাশ্চাত্যপন্থী যে সরকারকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ক্ষমতায় বসাক না কেন সিরিয়া আর কোন দিনই জাতীয় উন্নয়ন ও প্রগতির পথে অগ্রসর হতে পারবে না এবং সেখানে কোন দিন স্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে না।
সিরিয় জনগণ এটাও খুব ভালো করে বোঝে যে, যে সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, বাহরাইন, আরব আমিরাতে পাশ্চাত্য বিশেষ করে মার্কিন মদদপুষ্ট সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক টোটালিটারিয়ান স্বৈরাচারী অত্যাচারী বর্বর মধ্যযুগীয় রাজতান্ত্রিক সরকারগুলো ক্ষমতাসীন এবং এইসব দেশের স্বৈরতান্ত্রিক রাজা-বাদশাহরা নাগরিক অধিকারগুলোর প্রতি বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধা দেখায় না। তাই সেই সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত কিভাবে সিরিয়ায় বাশার আসাদকে স্বৈরাচার, একনায়কত্ব, জুলুম, অন্যায় ও অত্যাচারের ধুয়ো তূলে উত্খাত করে সেদেশে গণতন্ত্র কায়েম করার জন্য পাশ্চাত্য ও মার্কিনীদের সাথে একযোগে কাজ করে যাচ্ছে!!!?
পাশ্চাত্য ও আমেরিকার দ্বিমুখী নীতি
বাহরাইনের মজলুম ও বঞ্চিত জনগণ দীর্ঘ আড়াই বছরেরও বেশি সময় ধরে ন্যায্য গণতান্ত্রিক ও নাগরিক অধিকার আদায়ের দাবীতে বাহরাইনের স্বৈরাচারী জালেম রাজতান্ত্রিক আল-খলিফা সরকারের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ আন্দোলন করে যাচ্ছে এবং আল-খলিফা সরকারের নিরাপত্তা বাহিনী ও দখলদার সৌদি সেনাবাহিনীর হাতে প্রতিনিয়ত হতাহত ও কারাগারে বন্দী হচ্ছে। বাহরাইনে সাংবিধানিক গণতন্ত্র ও নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শান্তিপূর্ণ গণ আন্দোলন শুরু হওয়ার সাথে সাথে রাজতান্ত্রিক আল-খলিফা প্রশাসনকে গণ আন্দোলনের মুখে পতনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য সৌদি সেনাবাহিনী সেদেশটি দখল করে নিয়েছে, আর আড়াই বছর অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ার পরেও বাহরাইনে সৌদি দখলদারিত্ব আজও বহাল রয়েছে। কেন তথাকথিত গণতন্ত্রের ধ্বজাধারী পাশ্চাত্য তথা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, আরব আমিরাত, বাহরাইনে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা না করে আদাজল খেয়ে সিরিয়ায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কাজে লিপ্ত হয়ে গেছে!!?
তাহলে বোঝাই যাচ্ছে যে, ডাল মেঁ কুছ কালা হ্যায়। সিরিয়ায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা অতীব জরুরি আর কঠোর মধ্যযুগীয় টোটালিটারিয়ান সর্বময় ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের অধিকারী রাজতান্ত্রিক সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত,আরব আমিরাত ও বাহরাইনে গণতন্ত্রের প্রয়োজন নেই! আর ঠিক এটাই হচ্ছে পাশ্চাত্য তথা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডাবল স্ট্যান্ডার্ড নীতি। যে সরকার ও প্রশাসন পাশ্চাত্য তথা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবৈধ স্বার্থ রক্ষা করবে সে যতবড় অত্যাচারী-স্বৈরাচারী ও অগণতান্ত্রিক হোক না কেন যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে তার সবচেয়ে বড় মিত্র। আর এ কারণেই ১৯৫৩ সালে ইরানের নির্বাচিত মোসাদ্দেক় সরকারকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটেনের সহায়তায় সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পতন ঘটিয়ে স্বৈরাচারী শাহকে পুনরায় ক্ষমতায় বসিয়েছিলো। কারণ, মোসাদ্দেক় সরকার ইরানের তেল শিল্প জাতীয়করণ করে ব্রিটেনের জন্য ইরানী তেল সম্পদ লুটের পথ বন্ধ করে দিয়েছিলো। তাই এ কারণে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হওয়া সত্ত্বেও হতভাগ্য মোসাদ্দেক় সরকার ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র রোষানলে পড়েছিলো। (সম্প্রতি সিআইএ ষাট বছর পরে ১৯৫৩ সালে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে মোসাদ্দেক় সরকারের পতনে নিজেদের ভূমিকার কথা স্বীকার করেছে। তবে ইরানের কাছে এ জন্য ক্ষমা চায়নি বা দুঃখ প্রকাশও করেনি।)
এটা দিবালোকের মতই স্পষ্ট যে, সৌদি, কাতারি, কুয়েতি, বাহরাইনি, আমিরাতী রাজতান্ত্রিক সরকারগুলো অত্র অঞ্চলসহ গোটা মুসলিম বিশ্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবৈধ স্বার্থ সংরক্ষণ করছে বিধায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে এ সব অগণতান্ত্রিক (রাজতান্ত্রিক) সরকারগুলোর মিত্র ও রক্ষক। আর যেহেতু সিরিয়ার বাশার আসাদ সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যুনতম স্বার্থ রক্ষা করা তো দুরের কথা ইস্রায়েলের সাথে শান্তি আলোচনায়ও বসে নি বরং ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রামে লিপ্ত সকল ফিলিস্তিনি ও লেবাননী আন্দোলনগুলোকে সর্বাত্মক সাহায্য ও সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে।
স্বাধীনতা-বঞ্চিত মজলুম ফিলিস্তিনি জনগণের হৃত অধিকার পুনরুদ্ধার করার ব্যাপারে বাশার আসাদ প্রশাসন ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সাথে একমত এবং এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য ইরানের সাথে একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। আর এ কারণেই ২০০৬ সালে হিজবুল্লাহ-ইস্রায়েল যুদ্ধ, ২০০৮-৯ সালে প্রথম গাজা-ইস্রায়েল যুদ্ধ এবং ২০১২ সালে দ্বিতীয় গাজা-ইস্রায়েল যুদ্ধে ইস্রায়েল ন্যক্কারজনক পরাজয় বরণ করে। তাই, বাশার আসাদ ও তার সরকার যে পাশ্চাত্য ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চক্ষুশূল হবে তা নিতান্তই স্বাভাবিক। আর এ বিষয়টা সিরিয় জনগণ খুব ভালোভাবে বোঝে ও উপলব্ধি করে।
উল্লেখ্য, ব্রিটেন, ফ্রান্স, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন সময় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অনেক গণতান্ত্রিক সরকারের পতন ঘটিয়ে সেদেশগুলোয় অগণতান্ত্রিক-স্বৈরাচারী সরকারগুলোকে ক্ষমতায় বসিয়েছে। কারণ, ঐ সব হতভাগ্য গণতান্ত্রিক সরকারগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবৈধ স্বার্থ সংরক্ষণ করত না অথচ অগণতান্ত্রিক সরকারগুলো অবৈধ মার্কিন স্বার্থ সংরক্ষণ করতে প্রস্তুত ছিলো। তাই, তাদেরকে ক্ষমতায় বসানো হয়েছিলো। (গত জুলাই মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইশারা-ইঙ্গিতেই মিসরীয় সেনাবাহিনী অভ্যুত্থান ঘটিয়ে নির্বাচিত মুরসি সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে।)
আমেরিকা ও পাশ্চাত্য রক্তপিপাসু রয়েই গেছে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এ মনোভাবের বিন্দুমাত্র পরিবর্তন ঘটে নি। এখন পর্যন্ত পাশ্চাত্য ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অতীতের মতই বুনো, হিংস্র ও রক্তপিপাসু রয়েই গেছে। আফগানিস্তান ও ইরাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক আগ্রাসন ও সেদেশগুলো জবর-দখল করে মিলিওন মিলিওন আফগান ও ইরাকী জনগণকে হত্যা পাশ্চাত্য তথা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রক্ত পিপাসু চরিত্রকে স্পষ্ট করে দিয়েছে। সিরিয় আরব সেনাবাহিনীর হাতে পাশ্চাত্যের ভাড়াটে সন্ত্রাসী দের বার বার পরাজয় বরণ ও নাস্তা নাবুদ হওয়ার কারণে সর্বশেষ প্রচেষ্টা স্বরূপ পাশ্চাত্য এখন বাশার আসাদ সরকারকে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অপবাদ দিয়ে কলঙ্কিত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। কারণ এতে করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা ইরাক ও আফগানিস্তানের মত সিরিয়ার বিরুদ্ধেও এক সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু করার মোক্ষম সুযোগ পেয়ে যাবে। আর তখন বাশার আসাদের পতন ঘটানো সম্ভব হবে বলে তার মনে করছে।
আসলে সিরিয় সেনাবাহিনী নয় বরং মার্কিন ও পাশ্চাত্যের মদদপুষ্ট মানব হৃদপিণ্ড, কলিজা ও মাংস ভক্ষণকারী এসব উগ্রবাদী সন্ত্রাসীরা সৌদি আরব, কাতার ও জার্মানি কর্তৃক সরবরাহ করা রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করছে। গত মে মাসে বাশার আসাদ বিরোধী সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোই যে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে তা জাতিসংঘের তদন্তকারী টিম প্রদত্ত রিপোর্টে সুস্পষ্ট করে উল্লেখ করা হয়। অথচ ওয়াশিংটন এ রিপোর্টটা প্রত্যাখ্যান করেছে। এর আগে চলতি বছরের (২০১৩) ১৫ই জানুয়ারি ব্রিটেনের ডেইলি মেইল পত্রিকা লিখেছিলো যে, বিদ্রোহী গ্রুপগুলো পাশ্চাত্য ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক সরবরাহকৃত রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করে এর দায়ভার বাশার আসাদ সরকারের ঘাড়ে চাপাবে। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঠিক এ কাজটাই করতে যাচ্ছে। পাশ্চাত্যের সকল কর্পোরেট প্রচার মাধ্যমগুলোও (যাদের অধিকাংশের মালিক হচ্ছে বড় বড় ইহুদীবাদী বা যায়োনিস্ট পুঁজিপতি) এখন প্রভুদের নির্দেশে বাশার আসাদ সরকার যে নির্দ্বিধায় রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করে যাচ্ছে তা জোরেশোরে প্রচার করছে, অথচ ঘুণাক্ষরেও বলছে না যে বিদ্রোহীরা রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে।
তাই, এ ধরণের নির্জলা ডাহা মিথ্যা প্রচার-প্রোপ্যাগান্ডার কারণে বিশ্ব জনমত বহুলাংশে দারুণভাবে বিভ্রান্ত হচ্ছে। তাই প্রকৃত অবস্থাটা জানা আমাদের জন্য একান্তই জরুরি। যখন জয় লাভের পথ চূড়ান্তভাবে রুদ্ধ হয়ে যায় ঠিক তখন হারুয়া (পরাজিত) পক্ষ রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করে নিজেদেরকে বাঁচানোর লক্ষ্যে। যেখানে সিরিয় সেনাবাহিনী বিভিন্ন ফ্রন্টে জয়লাভ করছে সেখানে কেন তারা রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করে অহেতুক শত্রু পক্ষকে বাড়তি সুবিধা প্রদান করবে এবং বিরোধীদের তীব্র সমালোচনা ও প্রচার-প্রোপ্যাগান্ডা চালানোর সুযোগ করে দেবে!!!? যেহেতু বাশার আসাদের বিরোধীদের যুদ্ধে বিজয় লাভ করার সম্ভাবনা নেই অথবা অত্যন্ত ক্ষীণ সেহেতু তারা হয় প্রাণে বাঁচার জন্য অথবা যুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার জন্যে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করছে। সম্প্রতি, সিরিয় আরব সেনাবাহিনী বিদ্রোহীদের একটি ঘাঁটি থেকে বিপুল পরিমাণে সৌদি আরব, কাতার ও জার্মানির তৈরি রাসায়নিক দ্রব্য উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে যেগুলো রাসায়নিক অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
সিরিয়ার বিদ্রোহীদের কিছু বৈশিষ্ট্য
১.বিদ্রোহীদের অধিকাংশই হচ্ছে তাকফিরি বা উগ্র ওয়াহাবি-সালাফি সন্ত্রাসী গ্রুপ যেমন আল-ক়ায়েদার মত জিবহাতুন নুসরা সংগঠনের সদস্য। ২.এদের ( বিদ্রোহীদের ) অধিকাংশ বহিরাগত অর্থাত বিদেশী এবং তারা সিরিয়ার অধিবাসী নয় (প্রায় ২৮টিরও বেশি দেশ থেকে কাফিরদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার কথা বলে এদেরকে আনা হয়েছে এবং এদের কাছে সৌদি দরবারি ওয়াহাবি মুফতিরা ফতোয়া জারী করে বলেছে যে বাশার আসাদ ও তার সরকার এবং তাদের যারা সমর্থন করে তারা ও শিয়ারা সবাই কাফির এবং এদের হত্যা করা ফরজ। এদের প্রত্যেককেই প্রতি মাসে ১০০০-১৫০০ ডলার বেতন দেয়া হয়। এত বিপুল পরিমাণ অর্থ সৌদি আরব,কাতার,কুয়েত,আরব আমিরাত যোগান দিয়ে যাচ্ছে।
এইসব সন্ত্রাসীরা যে সব অঞ্চল দখল করেছে সেখানেই নৃশংস ও জঘন্য হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। নারী, শিশু, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা কাউকে এরা রেহাই দেয়নি। শুধু তাই নয়, হত্যা করে নিহতদের বুক ও পেট চিড়ে হৃদপিণ্ড, কলিজা ইত্যাদি বের করে এনে চিবিয়ে খেয়েছে এবং এ সব দৃশ্যের সচিত্র ভি়ডিও ফুটেজও এরা প্রকাশ করেছে ইন্টারনেটে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ব্রিটিশ প্রধান মন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরুনকে বলেছিলেন, তোমরা কি সিরিয়ায় নরখাদকদেরকে ( man-eaters ) অস্ত্র দিচ্ছ যারা মানুষের হৃদপিণ্ড কলিজা চিবিয়ে খায়!!!? ব্রিটিশ প্রধান মন্ত্রী পুতিনের এ প্রশ্নের কোন জবাব দিতে পারেননি।
আসলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র , ব্রিটেন, ফ্রান্স ও পাশ্চাত্যের অন্যান্য দেশের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই যে, তারা নিজ স্বার্থ হাসিল করার জন্যে রাসায়নিক ও নিষিদ্ধ অস্ত্র এমনকি নরখাদকদেরকেও ব্যবহার করতে কুণ্ঠা ও দ্বিধাবোধ করে না। তাই গণতন্ত্র অগণতন্ত্র রাজতন্ত্র স্বৈরতন্ত্র একনায়কতন্ত্র যেটা দিয়েই স্বার্থসিদ্ধি ও কাজ উদ্ধার হয় তাই তাদের জন্য সর্বোত্তম। কাজ হলেই হলো, ব্যস। সেটারই তারা সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতা করবেই। তাই পাশ্চাত্যের স্বার্থোদ্ধার করতে গিয়ে যদি জাতিগুলোর ন্যায্য স্বার্থেরও জলাঞ্জলি দিতে হয় ঠিক সেটাই তাদের করতে হবে। পাশ্চাত্য বাঁচলে পৃথিবী বাঁচবে। পাশ্চাত্যের স্বার্থ ও অধিকার অন্য সব জাতির স্বার্থ ও অধিকারের ঊর্ধ্বে। তাই পাশ্চাত্যের বেদিমূলে সব জাতির সব কিছুই উতসর্গ করতে হবে। আর ঠিক এটাই হচ্ছে পাশ্চাত্যের মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গি।
যাই হোক, এখন আমরা পুনরায় মূল আলোচনায় ফিরে যাব। ৩. এই সব তাকফিরি সন্ত্রাসী যারা নিজেদেরকে জিহাদি বা মুজাহিদ বলে দাবী করে তারা সিরিয়ার পাশেই অবস্থিত ইস্রায়েলের দিকে ভুলেও একটি গুলিও ছুঁড়েনি। একজন ইস্রায়েলী সেনাকেও হত্যা করে নি। অথচ এ সব সৌদি-কাতারি-তুর্কি-মার্কিন-ইঙ্গ-ফরাসি-জার্মান সমর্থনপুষ্ট তাকফিরি ( সালাফী ) ওয়াহাবি সন্ত্রাসীরা যেমনিভাবে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও ইরাকে (ওয়াহাবি নয় এমন) লক্ষ লক্ষ নিরীহ মুসলমানকে হত্যা করছে ঠিক সেভাবে তারা সিরিয়ায় যারা ওয়াহাবি মতাবলম্বী নয় তাদের মধ্য থেকে গত আড়াই বছর ধরে হাজার হাজার মুসলমান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীকে নৃশংসভাবে হত্যা করেই চলেছে!
৪.এইসব বিদ্রোহী ও তাকফীরী ওয়াহাবি (সালাফী) সন্ত্রাসী গ্রুপ ও সংগঠন যেমন সৌদি-কাতারি-তুর্কি- শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক সমর্থিত ও সাহায্যপ্রাপ্ত ঠিক তেমনি তারা সাম্রাজ্যবাদী বিধর্মী পাশ্চাত্য কর্তৃকও সমর্থিত ও সাহায্যপ্রাপ্ত! ৫.এরা সবাই অত্যন্ত নিষ্ঠুর, হিংস্র ও পাশবিক চরিত্রের বরং পশুর চেয়েও অধম। কারণ, এদের অনেকেই বন্দীদের হত্যা করে তাদের দেহ চিড়ে ফেড়ে হৃদপিণ্ড কলিজা ইত্যাদি চিবিয়ে খেয়েছে যা আমরা আগেও উল্লেখ করেছি। ৬.এদের প্রতি আপামর সিরিয় জনগণের কোনো সমর্থন নেই। ৭.এদের নিজেদের মধ্যেও কোন ঐক্য নেই ,আর এ কারণে এরা প্রায়ই পরস্পর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। আর খোদা না করুক বাশার আসাদ সরকারের পতন হলে এই সন্ত্রাসী দলগুলোর মধ্যে আরও সর্বাত্মক,ব্যাপক ও মারাত্মক স্থায়ী রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও গৃহযুদ্ধ চলতেই থাকবে। (সিরিয়ায় সাহাবিদের মাজার ধ্বংস করা, হযরত ইমাম হুসাইন-আ.'র বোনের মাজারে হামলা করা, তিন-চার বছরের শিয়া মুসলিম শিশুকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা, দুই কুর্দির গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগে-থেকে জ্বালানো আগুনে পুড়িয়ে মারার ভিডিও প্রচার করা, গর্ভবতী শিয়া মুসলিম নারীর পেট চিরে শিশু বের করে উভয়কে হত্যা করা, বন্দী শিশুকে দিয়ে যুবক বন্দীকে হত্যার ভিডিও প্রচার করা, কিশোরদের ধরে এনে হত্যা করা এবং বহু বেসামরিক লোককে নৃশংসভাবে হত্যা করে তাকফিরি-ওয়াহাবি ইসলামের কথিত বীরত্বের ভিডিও প্রচার সিরিয়ায় যুদ্ধরত সন্ত্রাসীদের পাশবিকতার আরো কিছু প্রমাণ।)
এরফলে যেমন আমেরিকার জবরদখলের পর আফগানিস্তান ও ইরাকে কখনো শান্তি ফিরে আসে নি এবং ইরাক এখন কার্যত: স্ব-শাসিত কুর্দিস্তান অঞ্চল ও কেন্দ্র-শাসিত আরব অঞ্চল এ দুভাগে বিভক্ত (গাদ্দাফির পতনোত্তর লিবিয়াকে কার্যত: পরস্পর বৈরী তিন অঞ্চলে বিভক্ত করে রাখা হয়েছে এবং বেশ কিছুকাল আগে থেকেই সুদানকেও উত্তর ও দক্ষিণ এ দু অংশে বিভক্ত করা হয়েছে ) ঠিক তেমনি সিরিয়াও কার্যত: ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে এবং এইসব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিভক্ত অঞ্চলের মধ্যে পাশ্চাত্য ইচ্ছা করেই দ্বন্দ্ব সংঘর্ষ ও বিবাদ লাগিয়ে রাখবে যার ফলে সেখানে আর কোনদিনই স্থায়ী শান্তি ফিরে আসবে না। আর সেই সাথে বিভক্ত সিরিয়া তখন সন্ত্রাসবাদের অভয়ারণ্য ও অবাধ চারণক্ষেত্রে পরিণত হবে যার ফলে মধ্যপ্রাচ্যসহ গোটা বিশ্বই মারাত্মক হুমকি ও নিরাপত্তাহীনতার শিকার হবে এবং এভাবে বিশ্ব-শান্তিও চরমভাবে বিপন্ন হবে।
আর সিরিয়া সংক্রান্ত মার্কিন পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে তুরস্ক, সৌদি আরব, মিসর, আলজেরিয়া, ইরান, ইয়েমেন, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানসহ এ অঞ্চলের বৃহত রাষ্ট্রগুলো ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করার বেদাত চালু করার মোক্ষম সুযোগ পেয়ে যাবে পাশ্চাত্য তথা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আর সম্ভবতঃ এটাই হচ্ছে সাবেক বুশ প্রশাসন কর্তৃক উপস্থাপিত বৃহত মধ্যপ্রাচ্য পরিকল্পনা ( GREATER MIDDLE EAST PLAN )যার আওতায় রয়েছে মরক্কো থেকে শুরু করে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত সব মুসলিম রাষ্ট্র।
একবার বৃহত রাষ্ট্র বিভক্তিকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেলে রাশিয়া,ভারত, চীনের মত বৃহত রাষ্ট্রগুলোও পাশ্চাত্যের উসকে দেয়া বিচ্ছিন্নতাবাদ ও দেশ-বিভক্তিকরণ প্রক্রিয়ার শিকার হয়ে যেতে পারে। আর এ ধরণের একটা কিছু করতে পারলে সমগ্র বিশ্বের প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদ লুণ্ঠন, বিভিন্ন জাতি ও দেশ থেকে সুলভ ও সস্তা শ্রমশক্তির ব্যবহার ইত্যাদি তখন পাশ্চাত্যের জন্য পানি পান করার চেয়েও সহজ হয়ে যাবে। অর্থাত তখন পাশ্চাত্য সমগ্র বিশ্বকে নতুন ধরণের পরাধীনতা ও দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করতে পারবে।
মধ্যপ্রাচ্য ও সিরিয়ার সর্বশেষ পরিস্থিতি
গত ২১ শে আগস্ট দামেশকের উপকণ্ঠে এক রাসায়নিক হামলায় ১৪০০ ব্যক্তির প্রাণহানি হলে সিরিয় সংকট বর্তমান পর্যায়ে উন্নীত হয়। আর এই ঘটনাকে অজুহাত করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা বাশার আসাদ সরকারের প্রতি তাদের অবস্থানকে চরম আক্রমণাত্মক করে তোলে। বস্তুনিষ্ঠ দলিল-প্রমাণ পেশ না করেই কেবল একতরফা দাবীর ভিত্তিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ফ্রান্স জাতিসংঘের তদন্তকারী দলের রিপোর্ট ও নিরাপত্তা কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার আগেই বাশার আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা ও পদক্ষেপ গ্রহণের হুমকি দিতে থাকে। এক ইস্রায়েলী সংবাদপত্র মাআরীব (গত বুধবার, ২৮ শে আগস্ট) জানিয়েছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আজ অর্থাত ২৯ শে আগস্ট বৃহস্পতিবার ,সিরিয়ায় বাশার আসাদ সরকারের সেনাবাহিনীর অস্ত্র ও গোলাবারুদের গুদাম ও ভাণ্ডারগুলোর উপর সীমিত পর্যায়ের বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ( LIMITED AIR & MISSILE STRIKES ) চালাতে পারে। উদ্দেশ্য হচ্ছে, বাশার আসাদ সরকারের অ্যালেজড্ রাসায়নিক অস্ত্র ও শক্তি ধ্বংস করা। অভিজ্ঞ পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা, এ ধরণের সীমিত আঘাত বাশার আসাদ সরকারকে ধরাশায়ী করতে পারবে না, কারণ এ ধরণের সামরিক পদক্ষেপ ফলপ্রসু ও কার্যকর হওয়ার ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। বরং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা সীমিত হামলা নয় বরং লিবিয়ায় ন্যাটোর ব্যাপক বিমান আক্রমণের অনুরূপ সিরিয়ায় ব্যাপক বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণ চালানোর পাঁয়তারা করছে যাতে করে, মার্কিন ও মিত্র শক্তির তীব্র বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ছত্রছায়ায় বিদ্রোহীরা ব্যাপক স্থলযুদ্ধ ও আক্রমণ চালিয়ে দামেশক দখল করে বাশার আসাদের পতন ঘটাতে সক্ষম হয়। আর এই প্ল্যান বাস্তবায়নের জন্যই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাশার আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের মিথ্যা অভিযোগ দাঁড় করাতে চাচ্ছে।
মার্কিন সরকার দাবি করে আসছে যে, বাশার আসাদ সরকারই বিদ্রোহীদের উপর রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে বলে তাদের কাছে সাক্ষ্য-প্রমাণ রয়েছে। কিন্তু এ পর্যন্ত মার্কিনীরা যে জাতিসংঘের কাছে তা উপস্থাপন করে নি সে কথা জাতিসংঘের সিরিয়া বিষয়ক প্রতিনিধি লাখদার ব্রাহিমী ( আখদার ইব্রাহীমী ) গত ২৮ শে আগস্ট এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দাবী করেছে যে, দামেশক অনেক দেরী করে জাতিসংঘের তদন্তকারী টিমকে সিরিয়ায় আসার অনুমতি দিয়েছে।আর এই সুযোগে দামেশক যে সব এলাকায় রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে সে সব এলাকা থেকে রাসায়নিক অস্ত্রের সমুদয় চিহ্ন ও নিদর্শনসমুহ মুছে ফেলেছে। কিন্তু জাতিসংঘের রাসায়নিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোন এলাকায় সারিন গ্যাসের মত রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করা হলে সে এলাকায় উক্ত রাসায়নিক অস্ত্রের চিহ্ন কয়েক মাস পর্যন্ত বিদ্যমান থাকে। আর দামেশক কোন ধরণের বিলম্ব না করেই সাথে সাথে জাতিসংঘের তদন্তকারী টিমকে সিরিয়ায় আসার অনুমতি দিয়েছে। বাশার আসাদ প্রশাসন এ ক্ষেত্রে সব সময় জাতিসংঘের সাথে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে আসছে। বরং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বিদ্রোহী গ্রুপগুলো ,অপরাধীকে শনাক্ত করার ব্যাপারে অতীতেও যেমন কোন ধরণের সহযোগিতা করে নি ঠিক তেমনি বর্তমানেও তা করছে না।
বর্তমানে সিরিয়ায় অবস্থানরত জাতিসংঘের তদন্তকারী দল দামেশকের উপকণ্ঠের বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় এখনো পর্যন্ত যেতে পারে নি। কারণ, বিদ্রোহীরা তদন্তকারী দলকে তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় তদন্ত করার জন্য যেতে দিচ্ছে না। উদ্দেশ্য অত্যন্ত পরিষ্কার। বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এসব এলাকায় তদন্ত সম্পন্ন করা না গেলে জাতিসংঘের তদন্তকারী টিমের রিপোর্ট হবে অস্পষ্ট ( দ্ব্যর্থতাবোধক ) ও অপূর্ণাঙ্গ। আর তখন এর গ্রহণযোগ্যতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা এবং মনগড়া যে কোন ব্যাখ্যা দাঁড় করানোর সুবর্ণ সুযোগও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাতে এসে যাবে। আর জাতিসংঘের তদন্তকারী টিমও যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র,ব্রিটেন ও ফ্রান্সের চাপে পড়ে উল্টা-পাল্টা, অবস্তুনিষ্ঠ (মিথ্যা), ভিত্তিহীন ও অমূলক রিপোর্ট পেশ করে তাহলেও তাতে বিস্মিত ও অবাক হওয়ার কিছু নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিত্তিহীন ও ডাহা মিথ্যা দাবীর ভিত্তিতে বিভিন্ন দেশে যে সামরিক আগ্রাসন চালিয়েছে তার ভুরি ভুরি নজীর ও দৃষ্টান্ত বিদ্যমান আছে। পারমাণবিক অস্ত্র আছে বলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন ২০০৩ সালে ইরাক আক্রমণ ও সে দেশ জবরদখল করে। বিবিসি বাংলা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণ সাংবাদিক জনাব সিরাজুর রহমান প্রদত্ত তথ্যানুযায়ী প্রায় ১২ থেকে ১৩ লাখ নিরীহ ইরাকীকে তারা হত্যা করেছে (এক জীবন এক ইতিহাস, ভূমিকার ৪র্থ পৃষ্ঠা দ্র.)।অথচ আজ (২০১৩ সাল) পর্যন্ত ইরাকে সেই নিষিদ্ধ পারমাণবিক অস্ত্রের সন্ধান পাওয়া যায় নি। তাই, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উক্ত দাবী যে সর্বৈব মিথ্যা ছিলো তা আজ প্রমাণিত।
ঠিক একইভাবে ১৮৯৮ সালে মিথ্যা অভিযোগ ও দাবীর ভিত্তিতে তদানীন্তন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার স্পেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছিল। গত বিংশ শতাব্দীর দীর্ঘ ১৩-১৪ বছরের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র – ভিয়েতনাম যুদ্ধও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক সাজানো সিনারিও-এর ভিত্তিতে সংঘটিত হয়েছিল যাতে প্রায় ষাট লাখ হতভাগ্য ভিয়েতনামী আগ্রাসী ও দখলদার মার্কিন সেনাবাহিনী ও মার্কিনীদের ভাড়াটে চরদের হাতে প্রাণ হারিয়েছিল। কিন্তু আজও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেই রক্ত পিপাসু ও ষড়যন্ত্রকারী স্বভাব ও চরিত্রের বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হয় নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র,ব্রিটেন ও ফ্রান্স আজ সিরিয়ার বিরুদ্ধে ইরাকের মত সেই একই সিনারিও-এর পুনরাবৃত্তি ঘটাতে যাচ্ছে। তবে পার্থক্য এতটুকু যে, এবার সিরিয়ার বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের মিথ্যা অভিযোগ ও দাবী উঠানো হয়েছে।
গত ২৯ আগস্ট বৃহস্পতিবার দামেশকে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত তেল আবিবে বলেছেন, সিরিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হামলা অবশ্যম্ভাবী। আর তা জাতিসংঘের তদন্তকারী দলের নিরাপত্তা পরিষদে রিপোর্ট পেশ করার আগেই সংঘটিত হতে পারে। তবে ব্রিটেন চাচ্ছে জাতিসংঘের তদন্তকারী দলের সিরিয়া থেকে ফিরে এসে রিপোর্ট পেশ করার পর নিরাপত্তা পরিষদ কর্তৃক সিরিয়া সংক্রান্ত গৃহীত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে সিরিয়া আক্রমণের পদক্ষেপ নিতে । ৩১ আগস্ট তদন্তকারী দলের সিরিয়া ত্যাগ করার কথা। আর যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র , ব্রিটেন, ফ্রান্স ও ন্যাটো সিরিয়ার উপর সম্মিলিত আক্রমণ পরিচালনা করে তাহলে তা হবে বারুদের স্তূপে আগুণ লাগানো যা বিস্ফোরিত হলে অত্র অঞ্চল কেন সমগ্র বিশ্ব সেই অনলে জ্বলতে থাকবে। এ পর্যন্ত গৃহযুদ্ধে এক লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার সাঙ্গ-পাঙ্গরা সিরিয়ার উপর হামলা চালালে ইরাকের মত সে দেশের আরো লাখ লাখ লোকের প্রাণহানি এবং মিলিয়ন মিলিয়ন লোক উদ্বাস্তু ও শরণার্থীতে পরিণত হবে এবং হতভাগা সিরিয় জনগণের দুঃখ-দুর্দশার যে অন্ত থাকবে না তাতে কোন সন্দেহ নেই।
সম্প্রতি ইরানের ইসলামী বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ ইমাম খামেনেয়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক সিরিয়া আক্রান্ত হলে এর ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারকে রেড লাইন হিসেবে ঘোষণা করে বলেছিল, বাশার আসাদ সরকার যদি বিদ্রোহীদের এবং সাধারণ নিরীহ জনগণের উপর রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগ করে তাহলে যুক্তরাষ্ট্র বাশার আসাদ সরকারের উপর আক্রমণ চালাবে। কারণ পাশ্চাত্যের বয়ানানুসারে ইরান-ইরাক যুদ্ধ চলাকালে ( ইরানি বাহিনী ১৯৮৮ সালের মার্চ মাসে এক সফল অভিযান চালিয়ে ইরাকী কুর্দিস্তানের হালাবজা শহর দখল করলে) সাদ্দামের সেনাবাহিনী উক্ত শহরে ব্যাপকহারে রাসায়নিক ও জীবাণু অস্ত্র ব্যবহার করলে হাজার হাজার নিরীহ কুর্দি নারী-পুরুষ ও শিশু প্রাণ হারিয়েছিল এবং উক্ত রাসায়নিক হামলায় কয়েক হাজার ইরানী সৈন্যও হতাহত হয়েছিল। কিন্তু এ অপরাধের জন্য সাদ্দামের শাস্তি না হওয়ায় বাশার আসাদ প্রশাসনের সাহস (স্পর্ধা) বেড়ে গেছে বিধায় এখন মরিয়া হয়ে তারা দেশের নিরীহ জনগণের উপর রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেই যাচ্ছে। তাই বাশার আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিলে এই বাশার আসাদ সরকার যেমন ভবিষ্যতে এর চাইতে আরো ব্যাপকহারে ও বিপুল-মাত্রায় রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগ করবে ঠিক তেমনি অন্যান্য দেশের ডিক্টেটররাও তা ব্যবহার করার সাহস পেয়ে যাবে!
অথচ অনেক প্রশ্ন এখানে উত্থাপিত হয় যেগুলোর উত্তর থেকে পাশ্চাত্যের ডাবল স্ট্যান্ডার্ড নীতি ও মোনাফেকি স্পষ্ট হয়ে যায়। আর এ প্রশ্নগুলোর একটি হচ্ছে নিম্নরূপ: কে বা কারা সাদ্দামকে রাসায়নিক অস্ত্র এবং তা উত্পাদন করার উপকরণ, প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি সাজ-সরঞ্জাম সরবরাহ করেছিল? এ প্রশ্নের উত্তর সবার জানা। পাশ্চাত্যের দেশগুলোই অর্থাত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি,বেলজিয়াম,নেদারল্যান্ড ইত্যাদি সাদ্দামকে ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র শস্ত্রে পূর্ণ সজ্জিত করেছিল। ইরান সে সময় আন্তর্জাতিক পর্যায় অগণিত সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করেও কোন সুবিচার পায় নি এবং সাদ্দামেরও কোন সাজা হয় নি। কারণ সাদ্দামের শাস্তি মানে পাশ্চাত্যেরও শাস্তি। তাই কোন অপরাধী কি নিজেকে নিজের অপরাধের শাস্তি দেবে? অথচ রাসায়নিক অস্ত্র নয় বরং গোপন পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচীর ধুয়ো তুলে ২০০৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন ইরাক আক্রমণ করে।
আর এখানে উল্লেখ্য যে, ইরান-ইরাক যুদ্ধের সূচনালগ্নেই ইস্রায়েলের বিমান হামলায় ইরাকের পারমাণবিক কর্মকাণ্ড সমূলে ধ্বংস হয়েছিল। আর সৌদি আরব ও জর্দান এ ক্ষেত্রে ইস্রায়েলকে গোপন সহায়তা প্রদান করেছিল।আর ঐ আক্রমণের পর থেকে কার্যত: ইরাকের পারমাণবিক কর্মসূচী মুখ থুবড়ে পড়ে।তাই, ইরাক জবরদখলের পর বহু বছর গত হয়ে গেলেও সে দেশে আজও কোন পারমাণবিক অস্ত্রের সন্ধান পাওয়া যায় নি।যদি গোপন রাসায়নিক অস্ত্রের কর্মসূচী থাকার অজুহাত দেখিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন ইরাক আক্রমণ করত তাহলে নিঃসন্দেহে অন্ততঃ রাসায়নিক অস্ত্রের কিছু ধ্বংসাবশেষ তো ইরাকে পাওয়া যেত। অথবা তখনই হয়তো প্রশ্ন উঠত ইরাক কিভাবে রাসায়নিক অস্ত্রের অধিকারী হয়েছে এবং কোন্ কোন্ দেশ এ ক্ষেত্রে ইরাককে সাহায্য করেছে…খোদ পাশ্চাত্যই এমতাবস্থায় ফেঁসে যেত আর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাদ্দাম ও তার পশ্চিমা প্রভুদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও মামলা দায়ের করার সুযোগ পেয়ে যেত। তাই পাশ্চাত্য কি এ ধরণের আত্মঘাতি কাজ করবে?
সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের মিথ্যা অভিযোগ এনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা বাশার আসাদ সরকারের উপর মরণ-আঘাত হানার চেষ্টা করছে অথচ কেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা সাদ্দামকে পাশ্চাত্যের যে সব দেশ ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র যোগান দিয়েছিল অথবা রাসায়নিক অস্ত্র নির্মাণের প্রযুক্তি , উপায়-উপকরণ ও সাজ-সরঞ্জামাদি সরবরাহ করেছিল তাদের সাজা দেয়ার কথা তুলছে না? যদিও সাদ্দাম নেই, কিন্তু ঐ সব দেশ তো আজও বহাল তবিয়তেই আছে। আর সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের কাছে ঐ সব দেশই রাসায়নিক অস্ত্রের সরাসরি যোগান দিয়েছে নতুবা রাসায়নিক অস্ত্র নির্মাণের প্রযুক্তি, উপকরণ ও সাজ-সরঞ্জামাদি সরবরাহ করেছে। আর বিদ্রোহীরা তা ব্যবহার করেছে এবং করে যাচ্ছে। আর এই সুযোগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার সাঙ্গ-পাঙ্গরা গ্রহণযোগ্য সাক্ষ্য-প্রমাণ ছাড়াই বাশার আসাদ সরকারকে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অপরাধে অভিযুক্ত করছে। তাই, এ সব কিছু থেকে প্রমাণিত হয় যে, সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখা, অবৈধ স্বার্থ সিদ্ধি এবং ইস্রায়েলের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্যই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ফ্রান্স লাখ লাখ সিরিয়বাসীকে হত্যা করে হলেও বাশার আসাদ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে সে দেশে নিজেদের তাবেদার পুতুল সরকারকে ক্ষমতায় বসানোর চেষ্টা করছে।
[সর্বশেষ খবর হল, আমেরিকা ও তার মিত্ররা সিরিয়ায় তাদের তড়িঘড়ি বা আসন্ন হামলার উদ্যোগ থেকে আপাততঃ পিছু হটেছে। তারা সিরিয়া ও তার মিত্রদের (বিশেষ করে ইরান ও হিজবুল্লাহর সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া আঁচ করে) ব্যাপক প্রস্তুতি দেখে সম্ভবত ভয় পেয়েছে। বিশেষ করে ইসরাইলের ব্যাপক ও ভয়াবহ ক্ষতির ব্যাপারে তারা আতঙ্কিত। পশ্চিমা মিডিয়াগুলোও বলছে যে ঠিক কারা রাসায়নিক হামলা চালিয়েছে সিরিয়ায় তা স্পষ্ট নয়। উভয়পক্ষই এ ধরনের হামলা চালিয়ে থাকতে পারে বলে মিডিয়াগুলো জাতিসংঘের তদন্ত কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এ সংক্রান্ত জটিলতার কথা তুলে ধরছে।] #
( মো. মুনীর হোসেন খান, ইসলামী চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক )
বিষয়: বিবিধ
১৬৭১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন