আয়াতুল্লাহ আল-উযমা সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ীর সংক্ষিপ্ত জীবনী

লিখেছেন লিখেছেন হৈচৈ ১৮ জুন, ২০১৩, ১২:০৮:৪০ রাত

‘আমাকে হত্যা করার জন্য যেদিন গুপ্তঘাতক হামলা চালালো ঠিক সে সময় থেকেই আমার একটি অনুভূতি হয়েছিল যে, আল্লাহ আমাকে একটি বিরাট কাজের জন্য নির্বাচন করেছেন, আর সে জন্য আমি প্রস্ত্ততও ছিলাম। তবে সে সময় আমি জানতাম না কাজটি কী হবে। যা হোক, আমার মনে কোনো সন্দেহ ছিল না যে, আমি তাঁর (আল্লাহ) পথে এক বিরাট ওজন কাঁধে তুলে নিব- বিপ্লবের জন্য, আপনাদের খেদমতের জন্য, হে জনতা!’

জন্ম ও বংশধারা

হযরত আয়াতুল্লাহ আল-উজমা সাইয়্যেদ আলী আল-হোসেইনী আল-খামেনেয়ী (আল্লাহ তাঁকে দীর্ঘজীবী করুন) ১৯৩৯ সালে ইরানের পবিত্র শহর মাশহাদে এক সম্মানিত আলেম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

তাঁর পিতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ জাওয়াদ মাশহাদের অত্যন্ত জ্ঞানী আলেমদের একজন ছিলেন। তিনি বহু বছর গোহারশাদ মসজিদে ফজরের নামাজে এবং বাসারে মাশহাদ মসজিদে যোহর, আসর, মাগরিব ও ঈশার নামাজের ইমাম ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন সুপরিচিত খতিব।

তাঁর মাতা ছিলেন মাশহাদের সুপরিচিত আলেম সাইয়্যেদ হাশিম নাজাফাবাদীর (মীরদামাদী) কন্যা। তিনি ছিলেন একজন পবিত্র ও সম্মানিত মহিলা যাঁর ধর্মীয় বিধি-নিষেধের উপর ভাল জ্ঞান ছিল। তাঁর ছিল অত্যন্ত উচ্চ নৈতিকতাসম্পন্ন নীতি।

শিশুকাল

আয়াতুল্লাহ আল-উজমা সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী শিশুকালে তাঁর পিতার তত্ত্বাবধানেই ছিলেন। তাঁর পিতা ছিলেন অত্যন্ত স্নেহবৎসল। তিনি তাঁর সন্তানদেরকে উত্তমভাবে গড়ে তুলবার বিষয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন। তিনি তাঁর সন্তানদের শিক্ষা-দীক্ষার বিষয়ে সব ধরনের প্রচেষ্টা গ্রহণ করতেন।

সেই বছরগুলো দারিদ্রে্যর কারণে সাইয়্যেদ খামেনেয়ীর ওপর অত্যন্ত কঠিন ছিল। তিনি বলেন, ‘আমার মনে পড়ে কোনো কোনো সময় আমাদের খাবার জন্য কিছুই ছিল না। রাত্রের খাবারের সময় আমার মা আমাকে ও আমার ভাই-বোনদেরকে দাদীর দেয়া টাকা নিতেন এবং রুটি দিয়ে খাবার জন্য আমাদের জন্য দুধ ও কিশমিশ কিনতেন।’

শিক্ষা ও গবেষণা

পাঁচ বছর বয়সে আয়াতুল্লাহ আল-উযমা সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী এবং তাঁর বড় ভাই সাইয়্যেদ মুহাম্মাদকে মক্তবে পাঠানো হলো। এরপর তাঁদেরকে এক ধর্মীয় প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্রে ভর্তি করে দেয়া হলো যার নাম ছিল ‘দারুত তা’লিম-ই-দিআনাতি’। তিনি প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার পর তাঁর পিতার অজান্তে এক সরকারি স্কুলের সন্ধ্যাকালীন ক্লাসে যোগ দেন এবং একটি সার্টিফিকেট লাভ করেন। এরপর তিনি উচ্চ বিদ্যালয়ে ২ বছরের জন্য ভর্তি হন এবং একটি সার্টিফিকেট লাভ করেন।

তিনি ধর্মীয় স্কুলে আরবি ব্যাকরণ শিক্ষা করেন। তিনি ‘জামি আল-মুকাদ্দামাত’ থেকে কিছু আরবিতে লেখা বই তাঁর পিতার তত্ত্বাবধানে পড়েন। চৌদ্দ বছর বয়সে তিনি সোলাইমান খান স্কুলে ভর্তি হন ধর্ম বিজ্ঞানে পড়াশোনা করার জন্য। আরবি ব্যাকরণ ও ধর্মীয় প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে তিনি উচ্চ মাধ্যমিক ধর্মীয় শিক্ষার (সুতুহ্) কিছু বিষয় অধ্যয়ন করেন এবং লুমাহ্ (ফিকাহর সব শাখার সংক্ষিপ্ত আকার) শেষ করেন। এরপর তিনি মাত্র ষোল বছর বয়সে সুতুহ স্তরের শিক্ষা শেষ করার জন্য নওয়াব মাদ্রাসায় যোগ দেন। এর ফলে বাথলিল খারিজ (গ্রাজুয়েশন) ক্লাসে আয়াতুল্লাহ আল-উযমা সাইয়্যেদ মিলানীর তত্ত্বাবধানে তিনি শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পান। আয়াতুল্লাহ আল-উযমা খামেনেয়ী ফিক্‌হ ও উসূলের পাশাপাশি ইসলামি দর্শন, রিজাল (হাদীস বর্ণনাকারীদের জীবনী), দিরায়া (হাদীস বোঝার বিজ্ঞান), মহাশূন্যবিজ্ঞান ও তাফসীর শিখতেন ও শিক্ষা দিতেন। তিনি সুবিখ্যাত আলেম ও ফকীহ, যেমন আয়াতুল্লাহ মিরযা জাওয়াদ আগা তেহরানী, আয়াতুল্লাহ হাকীম, ইমাম খোমেইনী, আয়াতুল্লাহ আল-উযমা বুরুজারদী এবং আল্লামা তাবাতাবায়ীর অধীনে শিক্ষা গ্রহণ করেন।

আয়াতুল্লাহ আল-উযমা খামেনেয়ী তাঁর ছাত্রজীবনের বেশির ভাগ সময়ই মাশহাদে ব্যয় করেন। তিনি ১৯৪৭ সালে ইরাকের পবিত্র শহর নাজাফে যান এবং সেখানে দুই বছর পড়াশোনা করেন। ১৯৫৮ সালে তিনি ক্বোমে চলে যান এবং সেখানে ৬ বছর পড়াশোনা করেন।

শিক্ষক হিসাবে জীবন

হযরত আয়াতুল্লাহ আল-উযমা সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী ছাত্র জীবনেই শিক্ষকতা শুরু করেন। আল্লাহপ্রদত্ত মেধা ও গভীর মনোযোগের মাধ্যমে তিনি যা শিখতেন তা তিনি পরিণত উস্তাদের মতোই শেখাতেন।

তিনি বলেন, ‘মাদ্রাসার ধর্মীয় প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার পর পরই আমি শিক্ষকতা শুরু করি। আমি দু’জন বয়স্ক ছাত্রের পড়াশোনার তত্ত্বাবধান শুরু করি যাঁরা ‘সারফ-এ-মীর’ বইটি পড়ছিলেন। ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত মাশহাদে বসবাসকালীন আমি আরবি গ্রামার, ফিকাহশাস্ত্রের নীতিমালা ও ফিক্‌হ শিক্ষা দিতাম। ক্বোমেও আমি পড়াশোনা ও শিক্ষকতা একত্র করে নিই। ১৯৬৪ সালে ক্বোম থেকে মাশহাদে ফেরার পর শিক্ষকতা ছিল আমার প্রধান পেশাগুলোর একটি। এই বছরগুলোতে এবং ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত আমি সুতুহর অ্যাডভান্স লেভেলের ছাত্রদের পড়ালেখা তত্ত্বাবধান করতাম। তাদেরকে শেখ আনসীর মাকাসিব (উচ্চ পর্যায়ের ও গভীর ফিক্‌হের কিতাব) উসূলের উপর ‘কিফায়াহ’ (ফিক্‌হের নীতিমালার উচ্চ পর্যায়ের বই) এবং ‘আক্বায়েদ’ (বিশ্বাসসমূহ) শিখাতাম।’

আয়াতুল্লাহ আল-উযমা সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী তাঁর উস্তাদ আয়াতুল্লাহ আল-উযমা হাইরি-র কাছ থেকে ১৯৭৪ সালে ১৫ বছর বাথউলখারিজে ইজতিহাদের অনুমতিপত্র লাভ করেন। ইসলামি বিপ্লবের বিজয়ের পর তাঁর রাজনৈতিক জীবনে কখনোই তিনি গবেষণা ও শিক্ষকতা ত্যাগ করেননি। তাঁর সহকর্মীরা যাঁরা তাঁর সাথে তাত্ত্বিক আলোচনায় বসতেন তাঁরা এর সাক্ষ্য দান করেন। তিনি অত্যন্ত কুশলতার সাথে পড়াশোনা ও গবেষণায় তাঁর সময় ব্যবহার করতেন। বিশেষ করে ফিক্হী বিষয়ে।

১৯৬২ সাল থেকে তাঁর সংগ্রাম

তাঁর জীবনের একটি বিরাট অংশ সংগ্রামের ভেতর দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে। তা কোনো সময় ছিল লেখনীর মাধ্যমে, কখনো বক্তৃতার মাধ্যমে, কখনো অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে, বিশেষ করে মরহুম ইমাম খোমেইনী (রহ.) যখন ১৯৬৩ সালে বিপ্লবের সূচনা করেন। তাঁর সংগ্রামের বিশদ বর্ণনা তুলে ধরতে বেশ কিছু খণ্ডের বই প্রয়োজন হবে। এখানে সামান্য একটু ধারণা দেয়া হলো :

১৯৬২ সালে ইমাম খোমেইনী (রহ.)-এর ডাকে ধর্মীয় শিক্ষার কেন্দ্র, জ্ঞানের সিংহাসন, জিহাদের হৃদয় ক্বোম শহর উদ্দীপনামূলক ভূমিকা পালন করে। সাহস ও উদ্দীপনার সাথে আলেম ও ছাত্ররা একযোগে ইমামের ও অন্যান্য ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের বাণীগুলো ইরানের আনাচে-কানাচে পৌঁছে দেবার দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নেন। তাঁদের আদেশসমূহ ও আহবানগুলো বিপ্লবী জনতার সাহায্য ও সমর্থনে ছাপানো হয় ও ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। এই নতুন শক্তি ও উদ্দীপনা দেশের প্রতিটি ধর্ম শিক্ষা কেন্দ্রে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে মাশহাদে।

আয়াতুল্লাহ আল-উযমা সাইয়্যেদ খামেনেয়ী (আল্লাহ তাঁকে দীর্ঘজীবী করুন) এই জাগরণে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করেন। ক্বোমে তাঁর কার্যক্রমের সাথে সাথে তিনি মাশহাদের ছাত্র ও আলেমদের সাথে সম্পর্ক মজবুত করেন। খোরাসানের আলেমগণের সমর্থনে আস্থা রেখে তিনি ধর্মীয় বিষয়ের ছাত্রদের আরো ভালভাবে সংঘবদ্ধ করতে সক্ষম হন।

সরকারের প্রতারণাসমূহ উন্মোচনকারী তাঁর ইসলামি খুতবাগুলো এবং পাহলভী শাসনের বিরুদ্ধে তাঁর ব্যাপক তৎপরতা তাঁর গ্রেফতার ডেকে আনে এবং তাঁর সাথে কঠোর আচরণ করা হয়, তাঁকে বাধ্য করা হয় কঠিন শারীরিক কাজ করতে। তাঁকে নিঃসঙ্গ প্রকোষ্ঠে রাখা হয়। অপমান করা হয় এবং অত্যন্ত খারাপভাবে সম্মানহানি করা হয়। তাঁকে মৃত্যুর ভয় দেখানো হয় এবং অন্যান্য নির্যাতনও করা হয়।

তাঁর মুক্তির পর আয়াতুল্লাহ আল-উযমা খামেনেয়ী তেহরান ও ক্বোম যাওয়ার পরিবর্তে মাশহাদে থেকে যাবার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি শিক্ষকতাকে তাঁর প্রধান কর্তব্য বলে গ্রহণ করেন। তিনি ধর্মীয় বিষয়ের ছাত্রদের জন্য উপযুক্ত করে কোরআনের তাফসীরের ক্লাস নিতেন। ক্লাস নিতেন ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের ও অন্য যুবকদেরও। তিনি ক্লাসগুলোকে বিপ্লবী চিন্তাধারা প্রচারের মঞ্চ হিসাবে ব্যবহার করতেন যা বিপ্লবীদের মিলনস্থল ও জাগরণের কেন্দ্র হয়ে উঠে। এই ক্লাসগুলো হয়ে উঠে জনতার আবেগ ও ইসলামী ভিন্ন মত প্রকাশের কেন্দ্র।

জ্ঞান, শিক্ষা, জিহাদ এবং জনগণের সেবার ক্ষেত্রে তাঁর এই সকল তৎপরতার সময়ে মাশহাদ জিহাদের দৃশ্যপটে পরিণত হয়। ইরানের দূর-দূরান্ত থেকে তখন লোকজন তাঁকে দেখতে আসত। একইভাবে সব জায়গায় জনগণের সাথে তিনি যোগাযোগ রক্ষা করতেন।

আয়াতুল্লাহ আল-উযমা খামেনেয়ী সততা, নৈতিকতা ও সাহসের কারণে ইরানী জনগণের শ্রদ্ধা অর্জন করেন। ইসফাহান, কিরমান, ইয়ায্দ ও তেহরান থেকে এ সময় বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান থেকে তাঁর কাছে ক্রমাগত দাওয়াত আসতে থাকে সেখানে গিয়ে কথা বলার জন্য বা বক্তব্য রাখার জন্য। জনগণের কাছে ইসলামী বিপ্লবী চিন্তা-ভাবনা তুলে ধরার জন্য, সরকারের অপকর্মগুলো সম্পর্কে সত্য বলার জন্য এবং জনগণকে সংগ্রাম ও বিপ্লবের রাস্তায় যোগ দেয়ার উৎসাহ দেবার জন্য তিনি প্রতিটি সুযোগের সদ্ব্যবহার করতেন।

তাঁর বক্তব্যের পাশাপাশি যেসব বই তিনি লিখেছিলেন ও অনুবাদ করেছিলেন তা বিপ্লবী চিন্তা-চেতনা ও উদ্দীপনাকে আরো জোরদার করেছিল। ‘ইমাম হাসান (আ.)-এর চুক্তি’, ‘ভবিষ্যৎ শুধু এই ধর্মেই’, ‘ভারতের জেগে উঠায় মুসলমানদের ভূমিকা’ প্রভৃতি লেখাগুলো যুবকদের শিক্ষায় ও তাদেরকে বিপ্লবের জন্য লালন করায় এক বিরাট ভূমিকা পালন করেছিল।

১৯৭০ সালে আয়াতুল্লাহ আল-উযমা বুরুজারদী (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর আয়াতুল্লাহ আল-উযমা সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী ইমাম খোমেইনী (রহ.)-এর পক্ষে ময়দানে অবতীর্ণ হন। তিনি ভাবলেন এটাই হলো এ কাজের জন্য যথার্থ সময়। এ সময় ১৯৬৮ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ বিপ্লবী সংস্কৃতি চলছিল। যুবকরা তখনও বিপ্লবী ইসলামের প্রথম ধাপে পা রাখছে। আলেমগণ হয়ে গেলেন তাদের মারাত্মক অস্ত্র। ইসলামের সুন্দর জ্ঞান ও বিজ্ঞান আলেমগণ যুবকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে কোনো সুযোগ ছেড়ে দিলেন না। তাঁরা প্রতিটি মাধ্যমকেই ব্যবহার করলেন। মসজিদের মিম্বার, প্রাইভেট ক্লাস, উন্মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠানে বই ও লিফলেট প্রকাশের মাধ্যমে। সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী এ সময়টিকে ‘গোপন তৎপরতার যুগ’ আখ্যায়িত করেছেন।

আয়াতুল্লাহ আল-উযমা সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী যেহেতু বিপ্লবী কর্মীদের শিক্ষা দেয়া, বিশ্বস্ত লোকদের তালিকা তৈরি এবং বিপ্লবীদের সাথে যোগাযোগ তৈরিতে আগ্রহী ছিলেন তাই তিনি শিক্ষকতা ও নামাযের ইমামতিকে একত্র করে নিতে সম্মত হলেন। বিশেষ করে জুমআর নামায।

ইসলামি আন্দোলন যখন শক্তি অর্জন করলো তখন ছোট ছোট ইসলামি গ্রুপকে সংগঠিত করাটাই যথাযথ বলে ভাবা হলো। যাদের নেতৃত্বে থাকলেন ফিক্‌হ ও রাজনীতিতে ভাল দখল রয়েছে এমন আলেমগণ। এই ধরনের প্রথম গ্রুপগুলো মাশহাদে তৈরি হলো এবং নেতৃত্বে থাকলেন মরহুম ইমাম খোমেইনী (রহ.) এবং দেখাশোনা করতে লাগলেন বিপ্লবী আলেমগণ।

একই সাথে মুজাহেদীন উলামা লীগ গঠিত হলো। আর তা ছিল বিপ্লব বিজয়ের পর ইসলামি রিপাবলিকান পার্টি প্রতিষ্ঠার প্রথম পদক্ষেপ।

১৯৭৭-৭৮ সাল পর্যন্ত উলামা লীগের দায়িত্ব ছিল লাখ লাখ লোককে পদযাত্রা ও বিক্ষোভ মিছিলের জন্য সংগঠিত করা। উলামা লীগ প্রতিষ্ঠায় সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ীর ছিল কেন্দ্রীয় ভূমিকা। উল্লেখ্য, ১৯৬৫ সাল থেকে দশ বছর শাহের গুপ্তপুলিশ বাহিনী সাভাক তাঁকে দেশত্যাগে বাধা দান করে। তাঁর উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ ১৯৭৮ সালে শেষ হয়ে যায়।

বিপ্লবের সময় ও তার পরে

১. আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী বিপ্লবী কমান্ড কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। ইমাম খোমেইনীর পাশাপাশি বিপ্লবী কমান্ড কাউন্সিল বিপ্লব পরিচালনা ও এর পূর্ণ বিজয় পর্যন্ত প্রধান ভূমিকা পালন করে।

২. ইমাম খোমেইনীর জন্য অভ্যর্থনা কমিটির সদস্য।

৩. প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে বিপ্লবী কাউন্সিলে ইমাম খোমেইনী (রহ.)-এর প্রতিনিধি।

৪. ইসলামী বিপ্লবী বাহিনীর কমান্ডার।

৫. তেহরানের জুমআর নামাযের ইমাম।

৬. ইসলামি পরামর্শ সভার প্রথম টার্মের সদস্য।

৭. সুপ্রিম ডিফেন্স কাউন্সিলে ইমাম খোমেইনীর প্রতিনিধি।

৮. প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট হিসাবে পর পর দুই টার্ম দায়িত্ব পালন।

৯. রাহবার (সর্বোচ্চ নেতা)।

ইসলামী বিপ্লবের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম খোমেইনী (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর ‘কাউন্সিল অব এক্সপার্টস’ ১৯৮৯ সালের ৪ জুন তাঁকে সর্বসম্মতভাবে ইসলামী বিপ্লব ও মুসলিম উম্মাহর নেতা নির্বাচন করে।

তাঁর বিজ্ঞ নেতৃত্বকালে তিনি তাঁর দায়িত্বসমূহ অত্যন্ত সফলতার সাথে পালন করেছেন এবং বিপ্লবকে ইমাম খোমেইনী (রহ.)-এর সুন্দর পথেই নিয়ে গেছেন। আশ্চর্যের কিছু নেই যে, তিনি ইমাম খোমেইনীরই একজন শিষ্য।

আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করি যেন তাঁর বিজ্ঞ ও দৃঢ় নেতৃত্ব ঐ দিন পর্যন্ত বজায় থাকে যেদিন বিশ্ব ইসলামি বিপ্লবের আসল নেতা মানবজাতির ত্রাণকর্তা ইমাম মাহদী (আ.)-এর পুনরাগমন ঘটবে।

বিষয়: আন্তর্জাতিক

১৩১৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File