ইরানে ইসলামী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ইসলামের এক মহাবিজয়ের দিন

লিখেছেন লিখেছেন হৈচৈ ০৪ জুন, ২০১৩, ০৯:২২:১১ রাত



মানুষ যদি মহান আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করে তাহলে তাকে শৃঙ্খলিত করার কোন ক্ষমতা কারও থাকে না। ইসলাম আল্লাহর সার্বভৌমত্বের প্রবক্তা। তাই ইসলামী সরকারের মূল ভিত্তি হচ্ছে ঐশী সার্বভৌমত্ব ও জনগণের ব্যক্তিস্বাধীনতা। প্রথম থেকেই এ দুটিই ছিল ইসলামী সরকারের ভিত্তি।

ইরানের ইসলামী জনতা হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্.)-এর নেতৃত্বে ১৯৭৯ সালে একটি সফল ইসলামী বিপ্লব সংঘটিত করে। এ বিপ্লবের অনিবার্য দাবিই ছিল একটি ইসলামী সরকার কায়েম করা। ইরানের ইসলামী নেতৃত্ব তাঁদের প্রতিজ্ঞা ভুলে যান নি। তাই ১৯৭৯ সালের ৩০ ও ৩১শে মার্চ দু’দিন জনমত যাচাইয়ের জন্য ইরানে এক গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। শতকরা ৯৮.২ ভাগ ভোটার ইসলামী প্রজাতন্ত্রের পক্ষে ভোট দেন। জনগণের রায়ের ভিত্তিতে পরদিন ১২ই ফারভারদীন (১লা এপ্রিল) হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্.) ইরানের নামকরণ করেন ‘ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান’ এবং উক্ত তারিখকে ‘ইসলামী প্রজাতন্ত্র দিবস’ হিসাবে ঘোষণা করেন।

ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সংবিধানই প্রমাণ করে যে, এ প্রজাতন্ত্রটি আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ও জনগণের ব্যক্তিস্বাধীনতার মূল ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। ইসলামী ইরানের সংবিধানের ২ নং ধারা মতে ইসলামী প্রজাতন্ত্র হচ্ছে নিম্নবর্ণিত ‘আক্বায়েদের ভিত্তিতে গঠিত একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা :

১. একত্ববাদ (আল্লাহ ছাড়া কোন সার্বভৌম সত্তা নেই)। তাঁর সার্বভৌমত্ব ও তাঁর বিধান তাঁরই ক্ষমতা ও অধিকারভুক্ত। তাঁর আদেশের কাছে নিজেকে সমর্পণ করতে হবে।

২. ঐশী প্রত্যাদেশ এবং আইন প্রণয়নে একে মৌলিক ভিত্তি হিসাবে গ্রহণ।

৩. পুনরুত্থান এবং আল্লাহর রাহে মানবজীবনের বিবর্তনে এর গঠনমূলক ভূমিকা।

৪. সৃষ্টির ক্ষেত্রে ঐশী বিচার ও ঐশী বিধান।

৫. ইমামত এবং ইসলামী বিপ্লব অব্যাহত রাখতে এর ইতিবাচক নেতৃত্ব ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

৬. মানুষের মর্যাদা ও মানবতার মহান মূল্য। এটা মানুষের ইচ্ছা ও দায়িত্ববোধকে অতিক্রম করে আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছায় এবং নিম্নোক্ত বিষয়াবলির সাহায্যে ন্যায়বিচার, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সমাজিক ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা ও জাতীয় অখণ্ডতা প্রতিষ্ঠা করে :

ক. কুরআন, হাদীস্ ও ইমামগণের ব্যাখ্যা অনুযায়ী অভিজ্ঞ আইনজ্ঞ (ফক্বীহ্) কর্তৃক এর অব্যাহত অনুশীলন।

খ. বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও মানুষের অন্যান্য জ্ঞানের ব্যবহার এবং এগুলোর বিকাশের প্রচেষ্টা।

গ. সকল ধরনের নিপীড়ন অস্বীকার করা ও নিপীড়নের কাছে আত্মসমর্পণ না করা এবং স্বৈরাচার বর্জন।

অন্যান্য সরকারব্যবস্থার সঙ্গে ইরানের ইসলামী প্রজাতান্ত্রিক ব্যবস্থার একটি বিরাট পার্থক্য হচ্ছে তার ‘বেলায়াতে ফক্বীহ্’ (মুজতাহিদের শাসন) নীতি। এর অর্থ সরকারের পদ্ধতি ও কার্যক্রম ইসলামী বিধানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ কিনা তা মুজতাহিদের মাধ্যমে তত্ত্বাবধানের ব্যবস্থা।

ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সরকার কাঠামো

ইরানে প্রতিষ্ঠিত ইসলামী প্রজাতন্ত্রী সরকার পদ্ধতির সাথে কাঠামো ও গঠন প্রকৃতির দিক থেকে বিশ্বের অন্যান্য প্রজাতন্ত্রের কিছু সাযুজ্য ও কিছু পার্থক্য রয়েছে। আইন, নির্বাহী ও বিচার বিভাগের স্বতন্ত্র এখতিয়ারাধীনে দেশটি পরিচালিত। এ ক্ষেত্রে অন্য অনেক দেশের সরকারের সাথে এর মিল রয়েছে। তবে ইসলামী প্রজাতন্ত্রে এ তিনটি বিভাগ ছাড়াও আরো কিছু সংস্থা আছে যেগুলো ঐ বিভাগত্রয়ের তত্ত্বাবধান করে। এ ক্ষেত্রেই অন্যান্য সরকারের সাথে এর প্রধান পার্থক্য। এ সংস্থাগুলো হচ্ছে : সংবিধানের অভিভাবক পরিষদ, সর্বোচ্চ বিচার পরিষদ ও নেতৃত্ব বা বেলায়াতে ফক্বীহ্।

সংবিধানের অভিভাবক পরিষদ

মজলিসে শূরায়ে ইসলামী (ইসলামী পরামর্শ পরিষদ বা পার্লামেন্ট)-এর কার্যাবলি তত্ত্বাবধান এবং ইসলামী বিধান, আইন ও সংবিধান অনুসারে এর কার্যক্রম নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘সংবিধানের অভিভাবক পরিষ’ নামে একটি পরিষদ রয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব (রাহবার) কর্তৃক মনোনীত ৬ জন ফক্বীহ্ এবং সর্বোচ্চ বিচার পরিষদ কর্তৃক প্রস্তাবিত ও মজলিস কর্তৃক অনুমোদিত ৬ জন সংবিধান বিশেষজ্ঞ আইনবিদ সমন্বয়ে এ পরিষদ গঠিত। প্রকৃতপক্ষে এ পরিষদই দেশের আইন প্রণয়নের তত্ত্বাবধানকারী সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ। এ কর্তৃপক্ষ ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানে গৃহীত আইনসমূহ সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সংবিধানের ৯১তম ধারায় বলা হয়েছে :

মজলিসের সিদ্ধান্তসমূহ যাতে ইসলামী বিধান ও সংবিধানের নীতিমালা লঙ্ঘন না করে তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সংবিধানের অভিভাবক পরিষদ গঠিত হবে। এ পরিষদের সদস্য হবেন :

১. ইসলামী আইন ও যুগের প্রয়োজন সম্পর্কে পুরোপুরি অবহিত ৬ জন উপযুক্ত ফক্বীহ্ (মুজতাহিদ)। এ ব্যক্তিদের নিয়োগের দায়িত্ব নেতা (রাহবার) বা নেতৃত্বপরিষদের।

২. আইনের বিভিন্ন শাখা সম্পর্কে উপযুক্ত শিক্ষিত ৬ জন মুসলমান আইনবিশারদ। বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ পরিষদ এদের নাম প্রস্তাব করবে এবং আইন পরিষদ (মজলিস) কর্তৃক অনুমোদিত হতে হবে।

সংবিধানের অভিভাবক পরিষদের কাজের মধ্যে রয়েছে : সংবিধানের ব্যাখ্যা, প্রেসিডেন্ট নির্বাচন তত্ত্বাবধান, মজলিসে শূরায়ে ইসলামীর নির্বাচন তত্ত্বাবধান, প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের যোগ্যতা অনুমোদন। এ সম্পর্কিত সংবিধানের একটি ধারায় বলা হয়েছে :

পরিষদে গৃহীত আইন ইসলামী বিধান অনুযায়ী প্রণীত হচ্ছে কিনা, সে সম্পর্কেও সিদ্ধান্ত নেয়ার মালিক অভিভাবক পরিষদের আইনজ্ঞগণ। অনুরূপভাবে সংবিধান অনুযায়ী অভিভাবক পরিষদের সদস্যগণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সকল সিদ্ধান্ত নেবেন।

সর্বোচ্চ বিচার পরিষদ

এ অধ্যায়ে ইরানে ইসলামী বিপ্লবের পর বিপ্লবী আদালতসমূহ সম্পর্কে আলোচনার সময় উল্লেখ করা হয়েছে যে, অতীতে ইরানের বিচারব্যবস্থা ছিল শাহ সরকারের বেআইনী কার্যাবলি অনুমোদনের হাতিয়ার। ঐ সব আদালতে ইসলামী ন্যায়বিচার বা মানবিক সমতার কোন চিহ্ন ছিল না। ঐ ব্যবস্থায় বিচারকরা ছিল শাহ সরকারের হাতিয়ার। ইসলামী বিধান ছাড়া অন্য সবকিছুই সেখানে বিবেচনা করা হত। বিচারব্যবস্থায় কোন মুসলমান বা আল্লাহর প্রতি ঈমান পোষণকারী লোক থাকলেও তাঁরা সব সময়ই ছিলেন এখতিয়ারবিহীন।

বস্তুতঃ ইসলামী বিপ্লবের বিজয়ের আগে বিচারব্যবস্থার প্রধান ত্রুটি ছিল ইসলামী চেতনার অভাব। এ পরিস্থিতি অনুধাবন করে সংবিধানে ‘সর্বোচ্চ বিচার পরিষদ’ নামে একটি পরিষদ গঠন করা হয়। সর্বোচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন এ পরিষদ ইসলামী বিধান অনুসারে বিচার প্রতিষ্ঠানসমূহ গঠনের দায়িত্ব পায। ৫ সদস্যের সমন্বয়ে এ পরিষদ গঠিত। এদের প্রত্যেকেই মুজতাহিদ। এদের মধ্যে দু’জন হলেন সর্বোচ্চ বিচার পরিষদের প্রধান ও দেশের প্রসিকিউটর জেনারেল – যারা নেতা বা নেতৃত্বপরিষদ দ্বারা মনোনীত হন। অপর ৩ জন সদস্য বিচারকদের দ্বারা নির্বাচিত হন।

তাই ইরানের বিচারব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে এবং এ ব্যবস্থাকে বিশুদ্ধ ইসলামী ব্যবস্থায় রূপান্তর করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বিচার পরিষদই হচ্ছে সর্বোত্তম ও সর্বাপেক্ষা নির্ভরযোগ্য কর্তৃপক্ষ। দেশে ইসলামী বিধান প্রবর্তনে অসম্মত ব্যক্তিদের সৃষ্ট বাধা-বিঘœ সত্ত্বেও সর্বোচ্চ বিচার পরিষদ বহু লক্ষ্য অর্জন করেছে এবং ইরানের বিচারব্যবস্থায় ইসলামী বিধান রূপায়নে প্রশংসনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। সংবিধান অনুমোদনের সময় থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত এ পরিষদের প্রথম কার্যকাল ছিল এবং এরপর নিয়মিত তা পুনর্গঠন হতে থাকে।

সর্বোচ্চ বিচার পরিষদ দেশের বিচারব্যবস্থার ইসলামীকরণ করে এবং জনগণ ইসলামী বিচারব্যবস্থার আওতায় পূর্ণাঙ্গ বিচার বিভাগীয় নিরাপত্তা অনুভব করে।

এটা উল্লেখ করতে হয় যে, বর্তমান বিশ্বে ইরানের সর্বোচ্চ বিচার পরিষদের মতো কোন প্রতিষ্ঠান নেই। মুসলিমপ্রধান অন্যান্য দেশেও এরকম প্রতিষ্ঠান পাওয়া যাবে না। কেবল ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের জনগণই এ ধরনের বিচার বিভাগীয় ক্ষমতার সুযোগ ভোগ করছে।

বেলায়াতে ফক্বীহ্

বিশ্বের বর্তমান প্রজাতান্ত্রিক সরকারসমূহের সাথে ইসলামী প্রজাতন্ত্রী সরকারের অন্যতম প্রধান পার্থক্য হচ্ছে ইরানে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রনেতৃত্বের ধরনের ক্ষেত্রে। অর্থাৎ এ নেতৃত্বকে বলা হয় বেলায়াতে ফক্বীহ্ (মুজতাহিদের শাসনকর্তৃত্ব)।

ইসলামী প্রজাতন্ত্রী ব্যবস্থায় সরকারের ধরন হচ্ছে ইসলামী উম্মাহ ও নেতৃত্বের (অর্থাৎ ইসলামী উন্মাহ এবং সমাজের সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় নেতৃত্ব) মধ্যকার সম্পর্কভিত্তিক। এ ব্যবস্থার দু’টি ভিত্তি রয়েছে : জনগণের ভোট এবং ইসলামী বিধান ও ঐশী আইন। প্রথম ভিত্তিটির অভিভাবক জনগণ নিজেরাই। কারণ, জনগণই বিভিন্ন আইন-কানুন বাস্তবায়নে প্রার্থীদের ভোট দেয় এবং বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম ও আইন অনুসারে দায়িত্ব পালন পর্যালোচনা করে। জনগণ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তাদের নির্বাচিত বা ক্ষমতাচ্যুত করে। প্রথম প্রেসিডেন্টের অপসারণের ক্ষেত্রে এমনটিই ঘটেছিল।

সংবিধানের ১১০ ধারা অনুসারে সুপ্রীম কোর্টের রায় বা মজলিসের রায় অনুযায়ী প্রেসিডেন্টকে অপসারণ করা যায়। তবে এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ নেতার (রাহবার) অনুমোদনের পরই প্রেসিডেন্টের অপসারণ কার্যকর হবে। প্রকৃতপক্ষে এটা জনগণের পরোক্ষ ভোট প্রদান। প্রথম প্রেসিডেন্টের অপসারণের ক্ষেত্রে ১৯৮১ সালের ২১শে জুন তৎকালীন রাহবার ইমাম খোমেইনীর অনুমোদনক্রমে এতদসংক্রান্ত মজলিসের রায় কার্যকর হয়।

এ ব্যবস্থার দ্বিতীয় ভিত্তি ইসলামী বিধান ও ঐশী আদেশসমূহ বলবৎকরণ তত্ত্বাবধানের জন্য একজন নেতার (রাহবার) প্রয়োজন রয়েছে। জনগণের আস্থাভাজন কাউকে এ দায়িত্ব দিতে হবে। দ্বিতীয়তঃ সে ব্যক্তিকে ঐশী আদেশসমূহ ও ইজতিহাদী পর্যায়ে ইসলামের মৌল বিষয় সম্পর্কে পুরোপুরি অবহিত থাকতে হবে। তৃতীয়তঃ যুগ সম্পর্কে সচেতন হওয়া ছাড়াও তাঁর মধ্যে থাকতে হবে পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার যোগ্যতা ও দেশের নেতৃত্বদানের ক্ষমতা। সংবিধানের ৫ম ধারায় এসব মৌলিক বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে বর্ণিত হয়েছে। তাই নেতা বা বেলায়াতে ফক্বীহ্ হচ্ছেন সেই ব্যক্তি, যিনি ঐশী আদেশ ও ইসলামী বিধানসমূহের সাথে সরকারী নীতিমালার সমন্বয় সাধন ও তত্ত্বাবধান করেন। এজন্য তিনি আল্লাহ ও জনগণের কাছে দায়ী থাকেন।

নেতা বা নেতৃত্বপরিষদের নির্বাচন পদ্ধতি, তাঁদের বা তাঁর গুণাবলি, তাঁর বা তাঁদের ক্ষমতা ও এখতিয়ার সম্পর্কে সংবিধানে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে। নেতৃত্ব-পরিষদ নির্বাচন সম্পর্কে সংবিধানের ১০৭ ধারায় বলা হয়েছে : যখন কোন ধর্মতত্ত্ব জ্ঞানী সংবিধানের ৫ম ধারায় উল্লিখিত শর্তসমূহ পূরণ করেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের দ্বারা মার্জা ও নেতা হিসেবে স্বীকৃত হন – যেমন হয়েছেন বিশিষ্ট মার্জা ও ইসলামী বিপ্লবের প্রতিষ্ঠাতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেইনী – এ নেতার সকল নির্দেশ দানের ক্ষমতা থাকবে। জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত বিশেষজ্ঞগণ (নেতানির্বাচনী বিশেষজ্ঞ পরিষদের সদস্যগণ) নেতৃত্বপদের জন্য সম্ভাব্য ব্যক্তিদের যোগ্যতা নিয়ে নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করবেন। সর্বোত্তম কাউকে পাওয়া গেলে তাঁকেই জনতার সামনে নেতা হিসাবে তুলে ধরা হবে, না হলে নেতৃত্বের যোগ্যতাসম্পন্ন তিন থেকে পাঁচজন উপযুক্ত ধর্মীয় নেতাকে নিয়ে গঠিত হবে নেতৃত্বপরিষদ এবং তাঁদেরকে জনগণের সামনে তুলে ধরা হবে। ১৯৮৯ সালে হযরত ইমাম খোমেইনীর ওফাতের পর পরই নেতানির্বাচনী বিশেষজ্ঞ পরিষদের সদস্যগণ পরামর্শ সভায় বসেন এবং সংবিধানের নির্দেশনা ও বিশেষজ্ঞ পরিষদের অভিজ্ঞ সদস্যদের যোগ্যতা পর্যালোচনা করে হযরত আয়াতুল্লাহ ওয্মা সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ীকে রাহবার বা সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে নির্বাচন করেন এবং আজ অবধি তিনিই ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের রাহবার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

নেতা বা নেতৃত্বপরিষদ সদস্যদের যেসব যোগ্যতা থাকতে হবে সংবিধানের ১০৯ ধারায় তার উল্লেখ রয়েছে :

১. ধর্মীয় নেতৃত্ব ও ধর্মীয় আদেশ প্রদানের জন্য আবশ্যকীয় জ্ঞান ও গুণাবলি।

২. রাজনৈতিক ও সামাজিক অন্তর্দৃষ্টি, সাহস, যোগ্যতা ও ব্যবস্থাপনার পর্যাপ্ত ক্ষমতা।

সংবিধানের ১১০ ধারায় নেতার দায়িত্ব ও এখতিয়ার সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে।

এ নিবন্ধে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যার অবকাশ নেই বলে ইসলামী ইরান কর্তৃক প্রবর্তিত প্রজাতান্ত্রিক ব্যবস্থার একটি রেখচিত্র তুলে ধরা হলো।

উপরোক্ত অধ্যায়সমূহে ইরানের ‘ইসলামী প্রজাতান্ত্রিক’ পদ্ধতির সরকার কাঠামো সম্বন্ধে আলোচিত হয়েছে। ইসলামী প্রজাতান্ত্রিক ব্যবস্থার উদ্দেশ্য হচ্ছে : ইসলামী ঐক্য এবং ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি করা ও বজায় রাখা; জনসাধারণের, সংখ্যালঘুদের এবং নারীর অধিকার রক্ষা করার বিষয় এ ব্যবস্থা নিশ্চয়তা বিধান করে। সংবিধানের ১১, ১৩, ১৪, ১৬, ১৭, ১৯, ২০, ২১ ও ২২ ধারায় এগুলো প্রতিফলিত হয়েছে। শাসনতন্ত্রের ৪৪, ৪৫, ৪৭, ৪৯ ধারা বিশ্লেষণ করে এটাই ধারণা হয় যে, ইসলামের অর্থব্যবস্থার ক্ষেত্রে পূর্ণতায় পৌঁছানো এ সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। সংবিধানের ১৫২, ১৫৩ ও ১৫৪ ধারায় যা প্রতিফলিত হয়েছে তা হচ্ছে এই যে, ইরানের লক্ষ্য হচ্ছে ইসলামের বৃহত্তর স্বার্থ সংরক্ষণ করা। ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান যে সামরিক নীতি নির্ধারণ করেছে তা কুরআন মজীদে বিধৃত এ বিষয়ক লক্ষ্যেরই প্রতিফলন।

এক কথায়, ইরান যে ‘ইসলামী প্রজাতান্ত্রিক’ ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছে তার ভিত্তি হল ইসলাম। (আল্লাহ পাক এ ব্যবস্থার উন্নতি উত্তরোত্তর প্রদান করুন এবং ধীরে ধীরে একে পূর্ণতার দিকে এগিয়ে দিন!)

বিষয়: রাজনীতি

১৩৩৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File