অগ্রগতির পথে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান ও বিশ্বব্যাপী ইসলামী জাগরণ

লিখেছেন লিখেছেন হৈচৈ ১৬ মে, ২০১৩, ০৭:২২:৫৮ সন্ধ্যা

অগ্রগতির পথে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান ও বিশ্বব্যাপী ইসলামী জাগরণ

ড. জহির উদ্দিন মাহমুদ

ইতিহাসের এক চরম সন্ধিক্ষণে আইয়ামে জাহেলিয়াতের শত দেবতার নিষ্পেষণ থেকে মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) নিপীড়িত মানবতাকে মুক্তি দিয়েছিলেন। মানবজাতি প্রত্যক্ষ করেছিল এক অকৃত্রিম শাশ্বত ভারসাম্যপূর্ণ জীবনব্যবস্থা। কিন্তু দীর্ঘ পথপরিক্রমায় ইসলামের সে অবিকৃত রূপ থেকে মানুষ দূরে সরে গিয়েছিল। বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষের পাশাপাশি নৈতিক চরিত্রের চরম অধঃপতন, সাম্রাজ্যবাদী শোষক শ্রেণির হিংস্র আগ্রাসন, দেশে দেশে মুক্তিকামী মজলুম জনতার করুণ আহাজারি যখন পৃথিবীকে ভারাক্রান্ত করে তুলেছিল তখনই পারস্যের শাহী লৌহপ্রাচীর ভেদ করে মহান নেতা ইমাম খোমেইনী (রহ.)-এর নেতৃত্বে সংঘটিত ইসলামী বিপ্লব মানবজাতির সামনে আবারো সেই চিরন্তন সত্যবাণী ঘোষণা করল – ‘সত্য এসেছে, মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে, মিথ্যা তো বিলুপ্ত হবারই’। (সূরা বনি ইসরাইল : ৮১)

বিশ্ব-যায়নবাদী চক্রের হাতে বন্দি পৃথিবীর মানুষগুলো আবার নতুন করে ভাবতে শিখল। অভ্যন্তরীণ শত্রুদের অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতা ও বহিঃশত্রুর কুটনৈতিক, রাজনৈতিক, সামরিক আগ্রাসন আর অব্যাহত অপপ্রচারের প্রবল লড়াই মোকাবিলা করে বিগত ৩৩ বছর ধরে ইসলামী বিপ্লব বিশ্ব-মুসলমানের জন্য এক অনুকরণীয় আদর্শ রূপে অটল থেকে ৩৪তম বছরে প্রবেশ করেছে।

সমকালীন বিশ্বে সংঘটিত এত বড় ঘটনার পরবর্তী তিন দশক খুব একটা দীর্ঘ সময় নয়। এ অল্প সময়েই সাম্রাজ্যবাদী বিশ্ব-শয়তানি চক্র এ ইসলামী বিপ্লবের প্রতি নানাভাবে তাদের মাত্রাতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। এর কারণ হিসেবে অনেকে মনে করেন, শত শত বছর ধরে এই শোষক পুঁজিবাদী গোষ্ঠী বিশ্বের তাবৎ জনগোষ্ঠীর চোখে ধুলা দিয়ে বিশ্বকে একচেটিয়াভাবে শোষণ করে আসছিল; ইরানের ইসলামী বিপ্লবের বিজয়ের কারণে যেন তাতে ছেদ পড়ল। বিশেষ করে বিপ্লবের নেতা ইমাম খোমেইনী (রহ্.)-এর সময়োপযোগী, জাগরণী ও সুনির্দিষ্ট তথ্যবহুল বক্তৃতাসমূহ ধীরে ধীরে যখন মানুষের চোখ খুলে দিচ্ছিল তখনই এই বিশ্বলুটেরা গোষ্ঠী এ বিপ্লব ও তার নেতার প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল। বিশ্বব্যাপী তাদের নিয়ন্ত্রিত সকল মিডিয়া ও তাদের দোসরদের মাধ্যমে ইসলামী বিপ্লব ও ইসলামী প্রজাতন্ত্রকে তারা পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার প্রচেষ্টা চালালো। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদীদের সকল হিসাবকে ভুল প্রমাণ করে এ বিপ্লব স্ব মহিমায় এগিয়ে যাচ্ছে।

ইরানে ইসলামী বিপ্লব সংঘটনের পর থেকে যেসব বাধার সম্মুখীন হয় তার মধ্য থেকে কয়েকটি এখানে তুলে ধরা হল :

১. অপপ্রচার : ইসলামী বিপ্লব ও তার নেতৃবৃন্দ সম্পর্কে অপপ্রচার চালিয়ে বিকৃত চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। যেমন :

ক. ইসলামী বিপ্লব ইরানকে একটি পশ্চাদপদ দেশে পরিণত করেছে;

খ. বিপ্লবী ইরান ইসলামের উদারনীতির বিপরীত একটি উগ্র ধারা গড়ে তুলেছে;

গ. ইরান (রাজা-বাদশাহ শাসিত তথাকথিত আধুনিক) আরব দেশগুলোতে আগ্রাসন চালিয়ে এ দেশগুলোকে দখল করবে;

ঘ. ইরানের পরমাণু সক্ষমতা অর্জন ও মিসাইল প্রযুক্তির অগ্রগতি প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য হুমকি (যদিও ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি কেবল শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে নিবেদিত);

ঙ. ইরান পুরাতন পারস্য সাম্রাজ্যের পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাবে;

চ. ইরানের বিপ্লব একটি শিয়া বিপ্লব যার লক্ষ্য বিশ্বব্যাপী শিয়া সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা;

ছ. শিয়ারা মুসলমান নয়; বরং তারা একটি ভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠী, একটি বিভ্রান্ত সম্প্রদায়; শিয়ারা ইহুদিদের দোসর;

জ. এ বিপ্লব নারী অধিকার পদদলিত করছে;

ঝ. এ বিপ্লব গণতন্ত্র, মানবতা ও বাক-স্বাধীনতার বিরোধী।

২. অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতা : ইরানের বিপ্লববিরোধী অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠীকে ব্যবহার করে বিপ্লবের প্রতি নিবেদিত অসংখ্য দেশপ্রেমিক নেতাকে গুপ্তহত্যা করা হয়। গুপ্ত হামলায় ১৯৭৯ সালের ১ মে আয়াতুল্লাহ মোতাহ্হারীর শাহাদাত, ১৯৮১ সালের ২৮ জুন ড. বেহেশতী সহ ৭২ জন নেতার শাহাদাত, ১৯৮১ সালের ৩০ আগস্ট প্রেসিডেন্ট রাজাই ও প্রধানমন্ত্রী বাহোনারের শাহাদাত এ ষড়যন্ত্রেরই অংশবিশেষ। বিপ্লবের প্রথম দশকে বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. মোস্তফা চামরান (১৯৮১) ও সাম্প্রতিককালে চারজন পরমাণু বিজ্ঞানী গুপ্তহত্যার শিকার হন। জুন্দুল্লাহ বাহিনীর গুপ্তঘাতকের পেতে রাখা বোমায় শহীদ হন জেনারেল নূর আলী শুশ্তারী। ইরানের ইসলামী বিপ্লবের পূর্বে ও পরে এ বিপ্লবের সফলতার জন্য প্রাণ দেন লক্ষাধিক মানুষ।

৩. হত্যা ও আগ্রাসন : বাথপন্থী জল্লাদ চরিত্রের সাদ্দামকে দিয়ে ইরানের ওপর আগ্রাসন চালিয়ে আট বছর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ অব্যাহত রাখা হয়। ইরানের বাইরে অনেক ইরানী নেতাকে হত্যা ও গুম করা হয়। এ যুদ্ধে প্রায় দুই লক্ষ ইরানী দেশপ্রেমিক শহীদ হন। ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে পারস্য উপসাগরে ইরানী এয়ারবাস বিধ্বস্তকরণ (১৯৯০) – যে হামলায় ২৯২ জন যাত্রী নিহত হন, মার্কিন গুপ্তচরদের উদ্ধার করার জন্য ইরানের তাবাস মরুভূমিতে অভিযান (২৫ এপ্রিল, ১৯৮০) এবং মক্কায় হারাম এলাকায় তিন শতাধিক হাজীকে শহীদ করা (১৯৮৭) এসব আগ্রাসনেরই অংশ ছিল।

৪. বিপ্লবের নেতৃবৃন্দের মাঝে দ্বন্দ্ব সৃষ্টির প্রয়াস : ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের বিভিন্ন নেতার মাঝে কাউকে কট্টরপন্থী, কাউকে উদারপন্থী বলে প্রচার করে তাঁদের মাঝে বিরোধ সৃষ্টির চেষ্টা চালানো এবং বহির্বিশ্বে তা ফলাও করে প্রচার করা হয়।

৫. পণ্য আমদানিতে বাধা : বিজ্ঞান ও প্রকৌশলগত গবেষণার জন্য অতীব প্রয়োজনীয় সামগ্রী, বিমান ও অন্যান্য বাহন ও যন্ত্রপাতির স্পেয়ার পার্টস ইত্যাদি (যখন ইরান এসবে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয় নি) ইরানে আমদানি করতে বাধা দেয়া হয়। একইভাবে বাণিজ্যিক লেনদেনেও বাধা দেয়া হয়।

৬. শিয়া-সুন্নি বিরোধ উস্কে দেয়া : দেশে দেশে শিয়া-সুন্নি বিষয়টিকে ইস্যু বানানো হয়। এমনকি বিভিন্ন দেশে শিয়াদের ও ইরানী কুটনীতিকদের গুপ্তহত্যা করা হয়। যেসব দেশে ৭০ : ৩০, ৬০ : ৪০, ৮০ : ২০ অনুপাতে শিয়া-সুন্নি জনসংখ্যা বিরাজ করছে সেখানে সুন্নি জনগোষ্ঠী ও নেতৃবৃন্দকে শিয়াদের সাথে শত শত বছর ধরে চলে আসা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও যৌথ ব্যবসায়ে বাধা দেয়া হয়। শিয়াদের সাথে না মিশতে ভীতি প্রদর্শন করা হয়, এমনকি শিয়াদের সাথে যৌথ সরকারে বা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করলে হুমকি প্রদান ও তাদের ওপর হত্যাকাণ্ডও চালানো হয় (ইরাক, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে)।

৭. বৈজ্ঞানিক কর্মকাণ্ডে বাধা প্রদান : পারমাণবিক ও অন্যান্য বৈজ্ঞানিক সক্ষমতা অর্জনে বাধা দেয়া হয়। এতে সফল না হওয়ায় ‘ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরি করছে’ এই মিথ্যা অভিযোগের ধুয়া তুলে ইরানের প্রতি অব্যাহত অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করা হয় এবং ইরানে আগ্রাসন চালানোর হুমকি দেয়া হয়। ড্রোন গোয়েন্দা বিমান পাঠিয়ে ইরানের প্রতিরক্ষা ও অন্যান্য সক্ষমতা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের জন্য ইরানের সীমানা অতিক্রমের চেষ্টা করা হয়। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পক্ষ থেকে নিয়মিত পরিদর্শনে আগত পরিদর্শকদলের কাছ থেকে ইরানের বিভিন্ন কৌশলগত স্থানের চিত্র ও তথ্য হস্তগত করার চেষ্টা করা হয়- যে সম্পর্কে ইরান অনেক বার অভিযোগ করেছে।

৮. সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য ইরান ও ইসলামপন্থীদের দায়ী করা : বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন জনপদে সামা্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী তাদের ভাড়াটে লোকদের দিয়ে বোমা হামলা চালিয়ে কাজটি ইরান করেছে বলে প্রচার করে এবং এজন্য ইরানকে অভিযুক্ত করার চেষ্টা চালায়। নাইন-ইলেভেনের ঘটনা এবং এর ধারাবাহিকতায় ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা এর সবচেয়ে বড় ঘটনা।

৯. বিশ্বে ইসলামকে কদর্য রূপে তুলে ধরা : সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী ও তাদের বাদশাহী দোসরদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে মুসলমানদের স্বল্পজ্ঞানী ও স্বল্প তথ্যজ্ঞানসম্পন্ন মোটা বুদ্ধির মোল্লাদের দিয়ে আল-কায়েদা, তালেবান, সিপাহে সাহাবা ইত্যাদি বিভিন্ন নাম দিয়ে বিভিন্ন জঙ্গীবাদী গ্রুপ তৈরি করা হয়। এসব গ্রুপের নামে বিভিন্ন দেশে (প্রায় সবগুলোই মুসলিম দেশে) নিরীহ মানুষদের হত্যা করা, ঐতিহাসিক নিদর্শন ধ্বংস করা, ইসলাম ও মহানবী (সা.)-এর স্মৃতি বিজড়িত স্থানসমূহের চিহ্ন ধ্বংস করা, নারীশিক্ষা বন্ধ করা, টেলিভিশন দেখা বন্ধ করা ও অনুরূপ কাজ করে ইসলাম ও মুসলমানদের সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী এক বিকৃত চিত্র প্রকাশ করা হয় এবং ভীতি সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়। এসব উদ্দেশ্যমূলক জঙ্গী ঘটনার ডামাডোলে বেছে বেছে মেধাবী ইসলামী ব্যক্তিত্বদের হত্যা করা হয়।

১০. তথ্যের অবাধ প্রবাহে বাধা দান : ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের নেতৃবৃন্দের বাণী, বক্তব্য, বিভিন্ন ডকুমেন্ট অন্যান্য দেশে বিশেষ করে গণমাধ্যমসমূহে প্রচারে বাধা দেয়া হয়। নিতান্তই কিছুটা প্রচার করলেও তা বিকৃতভাবে প্রচার করা হয়।

১১. তথাকথিত নেতৃত্বের প্রচারণা : ইরানের ইসলামী বিপ্লবের নেতৃত্বের আবহ যেন অন্যান্য মুসলিম দেশে না পড়ে সেজন্য সাদ্দাম, গাদ্দাফী, মাহাথির মোহাম্মদ, লাদেন, মোল্লা ওমর, আইমান আল-জাওয়াহিরি প্রমুখ ব্যক্তিদের নিয়ে সারা বছর ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে মিডিয়া কভারেজ দেয়া হয় এবং তাদের বক্তব্য হিসেবে সর্বদা রণহুঙ্কারের তথ্য প্রচার, অন্যান্য ধর্মের লোকদের হত্যা করার ঘোষণা, অন্যান্য দেশের স্থাপনায় হামলার ঘোষণা মিডিয়ায় ফলাও করে আসতে থাকে। অথচ আজ পর্যন্ত ঐসব ব্যক্তির কোনো কর্মসূচি, মেনিফেস্টো, ফলো-আপ বিশ্ববাসী দেখে নি। এরা সবসময়ই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের তথাকথিত ছায়াশত্রু। এদের হুমকি ও আক্রমণের ছুতা দেখিয়ে মুসলমানদের বিভিন্ন স্থান ও সম্পদ দখল করাই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের চিরাচরিত কর্মপদ্ধতি।

১২. ইরান-বিরোধী চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা : ইতিমধ্যে হলিউড সহ পাশ্চাত্যের বিভিন্ন চলচ্চিত্রধারায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ চরিত্র চিত্রায়িত করে প্রচুর ইরান-বিরোধী চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়েছে। এর সর্বশেষ উদাহরণ হল হলিউড নির্মিত চলচ্চিত্র অজএঙ। একইভাবে প্রচুর পুস্তক-সাময়িকীর মাধ্যমে, এমনকি উচ্চতর অ্যাকাডেমিক গবেষণা (চয.উ) থিসিসের মাধ্যমেও ইরানের ইসলামী বিপ্লব ও এর নেতৃবৃন্দ সম্পর্কে বিকৃত ও ভুল তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে।

ইরানের ইসলামী বিপ্লবের বিরুদ্ধে উপরিউক্ত পদ্ধতিতে বাধার প্রাচীর সৃষ্টি করা ছাড়াও আরো বহুমুখী পদ্ধতিতে ইরানের এ বিপ্লবের প্রতি নেতিবাচক আচরণ করা হয়।

এবার আমরা ইসলামী বিপ্লব সংঘটনের পর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বলয়ে যে মৌলিক সাফল্যগুলো অর্জন করেছে সেগুলো সংক্ষেপে তুলে ধরছি :

১. ইসলামী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা : ১৯৭৯ সালে মহান আল্লাহর সার্বভৌমত্বের মূলনীতির ভিত্তিতে প্রত্যক্ষ গণভোটে ৯৮% ভোট পেয়ে ইসলামী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় এবং গত ৩৩ বছরে বিভিন্ন পর্যায়ে ৩০টি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থার আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগ সহ সব ধরনের Infrastructure-ই আধুনিক ইসলামী প্রজাতন্ত্রে বিদ্যমান। ইরানে বিচার বিভাগ সম্পূর্ণই স্বাধীন। ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান কুরআন-সুন্নাহ ও আহলে বাইতের শিক্ষার ওপর প্রতিষ্ঠিত।

২. নাগরিক সুবিধা প্রদান : ইসলামী ইরানে সকল মানুষ সকল মৌলিক নাগরিক সুবিধা – খাদ্য, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, মত প্রকাশের সুবিধাদি ভোগ করছে। বর্তমানে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্রত্যেক নাগরিক মাসিক ৪৫,০০০ তুমান করে নিয়মিত ভাতা পাচ্ছে। স্বল্প আয়ের জনগণ কম খরচে ও ঋণসুবিধা পেয়ে গৃহের মালিক হচ্ছে। নববিবাহিতরা গৃহায়ণ ঋণ পাচ্ছে। বিপ্লবের পর পরই প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ, পানি, স্কুল-কলেজ ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করে তাৎক্ষণিক নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দেয়া হয়েছে।

৩. সামাজিক নিরাপত্তা ও ইসলামী পরিবেশ : ইরান বর্তমান বিশ্বে একটি বিরল রাষ্ট্র যেখানে জনগণ বিশেষ সামাজিক নিরাপত্তা ভোগ করছে। দিনে-রাতে সর্বক্ষণ সকল নারী-পুরুষ নিরাপদে রাস্তাঘাটে চলাচল করতে পারে। শালীন পোশাক, নারীর হিজাব মেনে চলা ও প্রচারমাধ্যমে অশ্লীলতার চিহ্ন না থাকায় অপরাধপ্রবণতা সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে।

৪. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অসামান্য সাফল্য : একের পর এক যুদ্ধ, অবরোধ, পাশ্চাত্যের অসহযোগিতা, হুমকি ও সর্বশেষ সাম্প্রতিক বিশেষ অর্থনৈতিক অবরোধের মুখে দেশের সর্বোচ্চ ধর্মীয়-রাজনৈতিক নেতার নির্দেশে ইরানের বিজ্ঞানীরা চরম আত্মত্যাগ ও সাধনার পরিচয় দেয়ায় দেশটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে শনৈ শনৈ উন্নতি করছে (যার সংক্ষিপ্ত খতিয়ান এ নিবন্ধের শেষে সংযুক্ত করা হয়েছে)। বিজ্ঞান গবেষণার ক্ষেত্রে ইরানের বিজ্ঞানীদের অগ্রগতি বর্তমানে সমগ্র বিশ্বের বিজ্ঞানীদের গড় অগ্রগতির ১১ গুণ দ্রুততর। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে স্বল্পতম সময়ে তারা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বিশ্বের প্রথম ৫টি দেশের মাঝে স্থান করে নেবে। (শান্তিপূর্ণ কাজে ইরানের বিজ্ঞান গবেষণা কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে Iranian Technology for Peace and Human Prosperity সংস্থার রয়েছে ওয়েবসাইট http://diplotech.isti.ir/)

৫. দ্বীনের আলোকে সাংস্কৃতিক বিপ্লব : ইরানের ইসলামী বিপ্লবের পর অনেক ইসলামপন্থী ও সেকুলার জনগণ মনে করেছিল যে, ইরান বোধ হয় ইসলামের প্রথম যুগের উমাইয়্যা ও আববাসী খলিফাদের মতো রাজ্যজয় ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করবে এবং একের পর এক অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন ভূখণ্ডে ইসলামী হুকুমত কায়েম করবে। কিন্তু ইরানীরা, তাদের ভাষায়, প্রকৃত মুহাম্মাদী ইসলাম-তারা মহানবী (সা.)-এর আহলে বাইতের ইমামদের রেওয়াইয়াত ও জীবন থেকে যার শিক্ষা নিয়েছে-সে ধারায় বিশ্বাসী। তারা রাজ্যজয় ধরনের কোনো জবরদস্তিমূলক হুকুমত কায়েমের ধারায় বিশ্বাস করে না। তারা মহানবী (সা.) ও তার আহলে বাইতের শিক্ষা ও কুরআনের সংস্কৃতির বিকাশ করতে চায় এবং প্রকৃত ইমাম ও রাহবারের নেতৃত্বে জীবনকে ঢেলে সাজাতে চায়, আর সে আলোকে একটি সমাজ যদি সত্যিই পরিপুষ্টতা (maturity) লাভ করে তাহলে স্বাভাবিক গতিতে জনগণের মাধ্যমে রাষ্ট্রব্যবস্থায় ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। আর একবার যদি সঠিক যোগ্যতাসম্পন্ন মুজতাহিদের অধীনে ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলে অভ্যন্তরীণ শত্রু (মুনাফিক) ও বহিঃশত্রুর হাত থেকে তার প্রতিরক্ষা করা তাদের দৃষ্টিতে ফরয হয়ে দাঁড়ায়।

ইরানে ইসামী বিপ্লব সংঘটনের পর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান ধর্মের আলোকে রাষ্ট্রব্যবস্থাকে গঠন করতে যেসব নিয়মিত কার্যক্রম চালু করে তার কয়েকটি হল-

ক. এ ধারায় ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান সারা দেশে ও বহির্বিশ্বে সকল বয়সী ও সকল পেশার মানুষের মাঝে কুরআন শিক্ষা প্রোগ্রাম ছড়িয়ে দিয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে কুরআন তেলাওয়াত ও হিফ্য প্রতিযোগিতার আয়োজন ও অংশগ্রহণ ব্যাপক করেছে। কুরআনের বিভিন্ন কাহিনীনির্ভর চলচ্চিত্র ও সিরিয়াল তৈরি করেছে। যেমন : মারইয়াম মুকাদ্দাসা, মুল্‌কে সুলায়মান, হযরত ইউসুফ, মারদানে আনজালোস (আসহাবে কাহাফ এর ঘটনা অবলম্বনে) ইত্যাদি। ইরান প্রতি রমযানে আন্তর্জাতিক কুরআন প্রদর্শনীর আয়োজন করে যাতে কুরআনবিষয়ক গবেষক, লেখক, ক্যালিগ্রাফি-শিল্পী ও হাফেয-ক্বারীগণের সরব উপস্থিতি থাকে। এছাড়া বিষয়ভিত্তিক, কাহিনীভিত্তিক, শব্দভিত্তিক কুরআনিক সফ্টওয়্যার তৈরি করেছে।

খ. সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ কার্যক্রম : রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে ও প্রতিটি প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি পর্যায়ে এ কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এজন্য প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে বাসিজ (গণসংগঠন) রয়েছে – যারা সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রমের পাশাপাশি বিনোদন, চলচ্চিত্র, ডকুমেন্টারী প্রদর্শন ইত্যাদির মাধ্যমে সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ কার্যক্রম চালিয়ে থাকে। জাতির ক্রান্তিকালে তারা গণসংযোগের মাধ্যমে নাগরিকদের কর্তব্য নির্ধারণে পরামর্শ দিয়ে থাকে।

গ. হিজাবের সংস্কৃতি : ইরানী নারীদের হিজাবের মডেলটি এখন বিশ্বব্যাপী মুসলিম নারীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি অনেক দেশে কিছুসংখ্যক অমুসলিম নারীও আজকাল এ ধরনের হিজাব পরছেন। এটি নারীদের মাঝে এক সাংস্কৃতিক বিপ্লব। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস-আদালত, খেলাধুলা – সর্বত্র হিজাব পরে নারীর স্বচ্ছন্দ গতিময় চলাফেরা বিশ্বব্যাপী নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় এক উন্নত মডেল উপস্থাপন করেছে।

ঘ ইরানী চলচ্চিত্র, পেইন্টিং, ফটোগ্রাফি, ভাস্কর্য ইত্যাদি : মানুষের সুকৃতি আচরণকে বিকশিত করার জন্য ইরান সকল শিল্পমাধ্যমকেই ব্যবহার করছে। আর ইরানীরা এসব ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা ও প্রদর্শনীসমূহে অংশগ্রহণ করে শুধু স্বদেশের জন্য সম্মানই বয়ে আনছে না; বরং সকল মুসলমানের পক্ষ থেকে এক শক্তিশালী প্রতিনিধিত্ব করছে। ইসলাম সুস্থ ও মানবিক চিন্তার বিকাশের পথে সাংস্কৃতিক চর্চার বিরোধী তো নয়ই, বরং সংস্কৃতির উন্নত সংস্করণ উপহার দিতে সক্ষম – এটাই প্রমাণ করেছে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান। অশ্লীলতা ও উগ্রতাবর্জিত ইরানী আর্ট ফিল্ম ও অ্যাকশন ফিল্ম আজ বিশ্ববিখ্যাত।

৬. প্রতিরক্ষায় স্বনির্ভরতা ও স্বয়ংসম্পূর্ণতা : ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান অত্যাধুনিক প্রযুক্তির প্রতিরক্ষা সামগ্রী তৈরি করে তার জল, স্থল, আকাশপথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। ইরানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আত্মরক্ষামূলক, আক্রমণাত্মক নয়। আজ পর্যন্ত ইরান তার প্রতিবেশী বা দূরবর্তী কোনো দেশে নিজ থেকে আক্রমণ করেছে এমন কোন নজির নেই। ইরানের প্রচলিত ও অপ্রচলিত অনেক যুদ্ধকৌশল রয়েছে যা বহিঃশত্রু আক্রমণ করলেই টের পাবে। ইরানের প্রতিরক্ষা ও সামরিক সক্ষমতা সম্পর্কে পশ্চিমা শক্তির অনেকটা ধারণা রয়েছে। এ কারণেই বিগত ৩৩ বছরে শত বার হুমকি দিয়েও তারা ইরানকে আক্রমণের সাহস করে নি। পাশ্চাত্য ইরানের সাথে অর্থনৈতিক, কৌশলগত, মিডিয়াগত ইত্যাদি এককথায় একটি soft war-এ লিপ্ত রয়েছে।

৭. ইসলাম ও মানবতার বড় শত্রু চিহ্নিত করা : ইসলামী ইরান বিপ্লবের শুরু থেকেই তার নিজস্ব গণমাধ্যম, সাময়িকী ও আন্তর্জাতিক ফোরাম ও আন্তর্জাতিক সম্মেলনসমূহে ইসলাম ও মানবতার অভিন্ন শত্রুকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, সাম্রাজ্যবাদী, পুঁজিবাদী, যায়নবাদী ও বর্ণবাদী আগ্রাসী শক্তিসমূহের অপরাধের খতিয়ান ইরান জাতিসঙ্ঘের অধিবেশনসমূহে ও আন্তর্জাতিক আদালতে (হেগে) লিখিতভাবে ডকুমেন্টেড করেছে। ইরান কোনো আন্তর্জাতিক ফোরাম বর্জন করে নি। বরং জাতিসঙ্ঘ, ওআইসি, জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন, ডি-৮ সম্মেলন, ওপেক ও ECO সহ সকল ফোরামে ইরান সক্রিয় ও গঠনমূলক ভূমিকা পালন করে স্বীয় ন্যায্য অধিকার আদায়ের ও মানবতার উন্নয়নের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

৮. বিশ্বে মার্কিন নিয়ন্ত্রিত একমেরু (Unipolar) রাজনীতি রুখে দেয়া : মার্কিন-ব্রিটেন যায়নবাদী গোষ্ঠীর একমেরুভিত্তিক রাজনৈতিক হিসাবকে ইরান ভুল প্রমাণ করেছে। অবশ্য এ অবস্থাটি অর্জন করতে ইরানকে অনেক প্রচেষ্টা চালাতে হয়েছে। মৌলিক আদর্শের বিতর্কে না জড়িয়ে মানবতা, সুস্থ সংস্কৃতি, সমানাধিকার, ন্যায়বিচার ও বাণিজ্যিক লেনদেনের বিষয়গুলোকে ভিত্তি করে ভারত, চীন, রাশিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকার বামপন্থী সরকারগুলোর সাথে ইরান ব্যাপক কৌশলগত সম্পর্ক গড়ে তুলেছে যার ফলে ঐ সব দেশ স্ব স্ব অবস্থানে ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফেরামে আমেরিকার একক পরাশক্তি হওয়ার খায়েশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে এবং তার Unipolar প্রভাবকে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে।

৯. অন্যান্য দেশের সাথে সম্পর্কোন্নয়ন : ইরান মধ্যপ্রাচ্যের ও আফ্রিকার আরব দেশসমূহ ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর সাথে ব্যাপক সাংস্কৃতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। এর ফলে সেসব দেশ আজ আন্তর্জাতিক কোনো ফোরামেই ইসলামী প্রজাতন্ত্রের বিরোধিতায় অবতীর্ণ হচ্ছে না। এসব সম্পর্কের ব্যাপক সুফল রয়েছে। সুদান, গাম্বিয়া ও লেবানন সহ বেশ কয়েকটি দেশের সাথে ইরানের রয়েছে ব্যাপক ও দীর্ঘমেয়াদী বাণিজ্যিক, সমাজকল্যাণমূলক ও প্রতিরক্ষা চুক্তি। সুদান ও লেবানন তো হিজাব সহ সামাজিক অনেক বিষয়ে ইসলামী প্রজাতন্ত্রকে অনুসরণ করছে।

১০. ইরাক, ফিলিস্তিন, লেবানন ও আফগানিস্তানের শরণার্থীদের আশ্রয় প্রদান ও এর সুফল : আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসন ও ইরাকে সাদ্দামের নির্যাতনে সব মিলিয়ে প্রায় ৫০ লক্ষ শরণার্থী বছরের পর বছর ধরে ইরানে অবস্থান করেছে। ইসলামের মানবিক সাহায্যের শিক্ষা অনুসরণ করে ইরান তাদের আশ্রয় দিয়েছে। আর তারা অন্যান্য দেশের শরণার্থীদের মতো কোনো শরণার্থী শিবিরে আটক ছিল না; বরং তারা সর্বত্র বিচরণ, শিক্ষা, ব্যবসা, কর্মসংস্থানেরও ব্যাপক সুযোগ পেয়েছে। আর সেই সাথে হয়েছে ইরানের বিপ্লবীদের সাথে তাদের চিন্তাগত বিনিময়। বর্তমানে এদেরই বিরাট অংশ ইরাক ও আফগানিস্তানে ব্যাপক প্রভাবশালী ভূমিকায় রয়েছে। ফিলিস্তিনি ও লেবাননি বহু নেতা দীর্ঘদিন ইরানে থাকাকালে ইরানের ইসলামী বিপ্লব থেকে অনেক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন। ইরানের ধর্মীয় আধ্যাত্মিক নেতৃবৃন্দের সাথে তাঁদের সখ্য গড়ে উঠেছে।

১১. আল্-কুদ্‌স ও ফিলিস্তিন প্রসঙ্গে ইরানের ভূমিকা : ইরানে ইসলামী বিপ্লব সংঘটনের পর এ বিপ্লবের নেতৃবৃন্দ যে আন্তর্জাতিক ও ধর্মীয় ইস্যুতে তাঁদের চিন্তা ও প্রচেষ্টাকে সর্বাধিক পরিমাণে নিয়োজিত করেছেন তা হচ্ছে ফিলিস্তিন ইস্যু। বিপ্লবের পর থেকেই ফিলিস্তিনিদের মানবিক ও অন্যান্য কৌশলগত ক্ষেত্রে ইরানই সর্বাধিক সাহায্য প্রদান করেছে। ইরানের বিপ্লবী নেতাদের অনুপ্রেরণায়ই ফিলিস্তিনি নেতৃত্বের বিরাট অংশ আপোসের পথ পরিহার করে শক্তিশালী ইন্তিফাদা গড়ে তোলে; গড়ে ওঠে বিপ্লবী সংগঠন হামাস। ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ইরানের পাশাপাশি শক্তিশালী সাহায্যে এগিয়ে আসে লেবাননের হিজবুল্লাহ ও সিরিয়ার সরকার। ফিলিস্তিনিরা শক্তি ও সাহস পুনঃসঞ্চয় করে যায়নবাদী ইসরাইলের মোকাবিলায় টিকে আছে ও শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। ২০০৬ সালে ইসরাইল দক্ষিণ লেবানন থেকে হাত গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়। পরবর্তীকালে লেবাননের হিজবুল্লাহর সাথে (২০০৬) ৩৩ দিনের যুদ্ধে, হামাসের সাথে ২২ দিনের (২০০৮-২০০৯) যুদ্ধে ও সর্বশেষ গাজায় হামলা চালিয়ে ৮ দিনের (২০১২) বেশি টিকে থাকতে পারে নি। আর এ কথা কে না জানে যে, ফিলিস্তিনি ও লেবাননিরা এক্ষেত্রে ইরান থেকে নৈতিক, আধ্যাত্মিক, মানবিক, রাজনৈতিক ও বস্ত্তগত ব্যাপক সাহায্য লাভ করে থাকে। আর এটি ফিলিস্তিন ও লেবাননের নেতারা অকপটে স্বীকার করেন। ফিলিস্তিন ও আল্-কুদ্‌স মুক্তির জন্য ইমাম খোমেইনী রমযানের শেষ শুক্রবারকে বিশ্ব আল্-কুদ্‌স দিবস ঘোষণা করেছেন এবং কুদ্‌স দিবসের বিশেষ কর্মসূচি দিয়েছেন। এ কথা আজ দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে, ইরানের ইসলামী বিপ্লবের সাফল্য ও ফিলিস্তিনিদের জন্য এ বিপ্লবের সর্বাত্মক সাহায্যের জন্যই এ বিপ্লবের পর ইসরাইল তার সীমানা একটুও সম্প্রসারিত করতে পারে নি। অথচ ইসরাইলের নীল থেকে ফোরাত পর্যন্ত সম্প্রসারিত ইহুদিবাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা ছিল।

১২. ধর্মের মূলে ফিরে আসার জন্য ইসলামী বিপ্লবের অবদান : ইরানে ইসলামী বিপ্লবের বিজয়ের পর থেকেই বিপ্লবের মহান নেতা ইমাম খোমেইনী (রহ্.) বিশ্ববাসীকে কুরআন, সুন্নাহ ও আহলে বাইতের প্রদর্শিত প্রকৃত ইসলামে ফিরে আসার জন্য উদাত্ত আহবান জানান। ইমাম খোমেইনী তাঁর ইন্তেকালের আগেও তাঁর অসিয়তনামায় এ আবেদন জানান। এ প্রসঙ্গে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ দিবস ও উপলক্ষগুলোকে বিশ্বব্যাপী উদ্‌যাপন কার্যক্রমের উজ্জীবন ঘটান। এ উপলক্ষে ইরানে ও বহির্বিশ্বে আন্তর্জাতিক সম্মেলন, সফর বিনিময়, স্মারক ও সাময়িকী প্রকাশনার আয়োজন করা হয়। যেসব উপলক্ষকে কেন্দ্র করে ইসলামী ইরান ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করে তা হল :

ক. হজ : হজ বিশ্ব-মুসলিমের সর্ববৃহৎ আধ্যাত্মিক ও রাজনৈতিক সম্মেলন। হজের সময় কা‘বায় তাওয়াফ, আরাফাতে অবস্থান, মীনায় কুরবানী, পাথর নিক্ষেপ, মদীনায় মহানবী (সা.)-এর রওজা মুবারক যিয়ারত ইত্যাদি কার্যক্রমকে জীবন্ত করতে, নিছক যিকিরের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রাখতে ও প্রকৃত চেতনার স্ফুরণ ঘটাতে ইসলামী বিপ্লবের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা হাজীদের উদ্দেশে প্রতি বছর সময়োপযোগী গুরুত্বপূর্ণ বাণী প্রদান করেন। ইরানের হজ মিশনের উদ্যোগে আন্তর্জাতিকভাবে মক্কায় বারাআত-এর (মুশরিকদের সাথে সম্পর্কোচ্ছেদ সম্পর্কিত কুরআনের আয়াতের) চেতনা উজ্জীবনের সমাবেশ করা হয়। মহানবী (সা.) কর্তৃক মদীনায় আনসার ও মুহাজিরদের ভ্রাতৃত্ববন্ধনের স্মরণে ওয়াহ্দাত বা ঐক্য সম্মেলন আয়োজন করা হয়। বিশ্বের সব মুসলমানকে সচেতন করতে তাঁরা সুশৃঙ্খলভাবে এসব কার্যক্রম চালিয়ে থাকেন।

খ. ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদ্‌যাপন উপলক্ষে ১২-১৭ রবিউল আউয়াল সপ্তাহব্যাপী ইসলামী ঐক্য সপ্তাহ উদ্‌যাপন করে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান বিশ্বব্যাপী ইসলামী ঐক্য সুদৃঢ় করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এ উপলক্ষে মহানবী (সা.)-কে কেন্দ্র করে সকল মুসলমানের মাঝে ঐক্য গড়ে তোলার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সম্মেলনেরও আয়োজন করা হয় এবং বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার মধ্য দিয়ে ঈদে মিলাদুন্নবী উদ্‌যাপন করা হয়।

গ. আশুরা উদ্‌যাপন : মুসলমানদের প্রকৃত ইসলামী সত্তায় ফিরে আসার চেতনা জাগ্রতকারী সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হচ্ছে কারবালায় নবী-দৌহিত্র হযরত ইমাম হুসাইন (আ.) ও তাঁর সঙ্গীদের শাহাদাত। ইমাম খোমেইনী (রহ.) বলেন : ‘আমাদের যা কিছু অর্জন তার সবই মুহররম ও সফর থেকে।’ ইরানের ইসলামী বিপ্লবে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের চালিকাশক্তিও ছিল এই কারবালার হুসাইনী চেতনা। তাই ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান স্বদেশে ও বিদেশে সর্বত্র মুহররমের ১-১২ তারিখ পর্যন্ত আশুরার শাহাদাতের প্রেক্ষাপট, ঘটনাপ্রবাহ ও শিক্ষা সম্পর্কে আলোচনা ও শোকানুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে।

ঘ. রমযান মাসে বিশ্বব্যাপী ইরানী ক্বারীগণ সফর করেন ও দেশে দেশে কুরআন প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।

ঙ. এসব দিবস ও ধর্মীয় উপলক্ষগুলোকে যথাযথ মর্যাদা সহকারে উদ্যাপনের পাশাপাশি পবিত্র কুরআন, মহানবী (সা.) ও অন্যান্য নবীর মর্যাদায় ও ইসলামের ভিত্তিমূলে আঘাতকারী বইপুস্তক, চলচ্চিত্র ও অন্যান্য ষড়যন্ত্রমূলক তৎপরতার বিরুদ্ধে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান সর্বদাই সোচ্চার ভূমিকা পালন করে থাকে। সালমান রুশদীর ‘শয়তানের পদাবলি’ (Satanic Verses) উপন্যাসের জন্য ইমাম খোমেইনী কর্তৃক (১৯৮৯) তাকে মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া বিশ্ব-মুসলিমকে জাগরিত ও ঐক্যবদ্ধ করেছিল।

১৩. ইসলামী জাগরণ বনাম আরব বসন্ত : ইসলামী বিপ্লব বিজয়ের পর থেকে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান এ বিপ্লবের নেতৃবৃন্দ ও বিশ্বব্যাপী এর সমর্থক ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা ইসলামী প্রজাতন্ত্রের আহবানে উপরিউক্ত কর্মসূচিগুলো অব্যাহত রাখেন। ধীরে ধীরে এসব চেতনা বিশ্ব-মুসলমানের চোখ খুলে দেয়, চেতনা জাগ্রত করে, দেশে দেশে গড়ে ওঠে ইসলামের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও জনকল্যাণমূলক কার্যক্রম। এরই ফলশ্রুতিতে মানুষের মাঝে মূল ইসলামে ফিরে যাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা এবং জালেম, ভণ্ড ও পাশ্চাত্যের সেবাদাস সরকারগুলোর প্রতি ঘৃণা ছড়িয়ে পড়তে থাকে। মুসলমানরা ইসলামের চেতনায় জেগে ওঠে। কিছু কিছু আরব দেশে যে নামকাওয়াস্তে পার্লামেন্ট রয়েছে সেসব প্রতিকী পার্লামেন্টেও ইসলামপন্থীরা ব্যাপক আসন পায়, কোথাও কোথাও স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে গণ-অভ্যুত্থান দানা বাঁধে। অবশেষে তিউনিসিয়া, মিসর, ইয়েমেন ও লিবিয়ায় স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে জনগণ মাঠে নামে। পাশ্চাত্য যায়নবাদী পক্ষ ও তাদের প্রচারমাধ্যমসমূহ আরব জনগণের এহেন ইসলামী চেতনাসমৃদ্ধ জাগরণকে তাৎক্ষণিকভাবে ‘আরব বসন্ত’ বলে অভিহিত করে প্রচার চালায় এবং পাশ্চাত্য মাধ্যমগুলো তড়িঘড়ি করে প্রচেষ্টা চালায় যাতে সেসব দেশে তাদের দোসর ব্যক্তিরাই ভোল পাল্টিয়ে বিপ্লবী সেজে নির্বাচনের মাধ্যমে বা জোট গঠনের নামে ক্ষমতা দখল করতে পারে। তবে এ প্রসঙ্গে বলা যায় যে, ভণ্ড স্বৈরশাসকদের প্রতি জনগণের ঘৃণা প্রকাশ, অভ্যুত্থানকারীদের অধিকাংশেরই ইসলামপন্থী হওয়া, স্বৈরাচারীদের ইতিমধ্যে অনেকেরই পতন হওয়া – এসব মিলিয়ে ইসলামী জাগরণ একটি পর্যায় অতিক্রম করেছে। আশা করা যায় যে, পরবর্তী ভণ্ডরাও মুনাফিকী করে বেশিদিন পার পাবে না। তবে অনেক ভাল নেতাকেও ভণ্ড আখ্যায়িত করে কলঙ্কিত করার প্রয়াস চালানো হবে বলে আশঙ্কা রয়েছে। অবশেষে অনেক ধাপ পার হয়ে প্রকৃত ইসলামী জাগরণ পরিণতি পাবে ইনশাআল্লাহ। ইসলামী জাগরণকে ছিনতাই করে আরব জাগরণ আখ্যা দিয়ে তারা বেশিদূর এগুতে পারবে না।

ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার আরব দেশগুলোতে ইসলামী জাগরণকে ইতিবাচক ধাপ হিসেবে গ্রহণ করেছে, ইসলামী বিপ্লবের রাহবার হযরত আয়াতুল্লাহ্ ওযমা সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী এসব দেশের ইসলামী নেতৃবৃন্দকে ইসলামী নেযাম বা রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করে বিপ্লব ও জাগরণকে সুসংহত রূপদান করার আহবান জানিয়েছেন। ইতিমধ্যে গত দুই বছরে রাহবারের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আলী আকবর বেলায়াতীর আহবানে ইরানে ইসলামী জাগরণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক কবি সম্মেলন, নারী সম্মেলন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষকদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ( ওয়েবসাইটে এসব সম্মেলনের Proceedings ও গবেষণাপত্রসমূহ পাওয়া যাচ্ছে।)

১৪. সফল ন্যাম সম্মেলন : গত আগস্ট ২০১২ ইরানের রাজধানী তেহরানে সফলভাবে অনুষ্ঠিত হলো জোট নিরপেক্ষ দেশগুলোর ষোড়শ শীর্ষ সম্মেলন। পাশ্চাত্যের প্রতিক্রিয়াশীল সাম্রাজ্যবাদী কতক দেশের অপপ্রচার ও বাধার মুখেও জাতিসঙ্ঘের মহাসচিবসহ ২৭টি দেশের প্রেসিডেন্ট, ২ জন বাদশাহ, ৮ জন প্রধানমন্ত্রী, ২ জন পার্লামেন্ট স্পীকার, ৯ জন ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ১০টি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। এ সম্মেলনের অন্যতম বিষয় ছিল ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবি, পরমাণুমুক্ত বিশ্বব্যবস্থা গড়ার আহবান, সন্ত্রাসবাদের শিকড় উপড়ে ফেলা ও ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কার্যক্রমের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন ঘোষণা। যায়নবাদী ইসরাইল ও তার দোসররা এ সম্মেলনের সফলতার বিরুদ্ধে কাজ করেও কিছুই করতে পারে নি।

১৫. ইরানের পরমাণু সক্ষমতা প্রসঙ্গে পাশ্চাত্যের ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা : ২০০৯ সালে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান পারমাণবিক ক্ষেত্রে সক্ষমতা অর্জন করে পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হিসেবে নিজেদের অবস্থান গড়ে তোলে। এক্ষেত্রে ইরানের বিজ্ঞানীরা আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (IAEA) সকল প্রটোকল মেনেই তাদের কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। ইসফাহান, বুশেহ্র ও কোমের পরমাণু কেন্দ্রগুলোতে IAEA-এর পরিদর্শকদল তাদের রুটিন মাফিক পরিদর্শন অব্যাহত রেখেছেন। উপরন্তু ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (NPT)-তে স্বাক্ষরকারী একটি দেশ। ইরান বিদ্যুৎ উৎপাদন, চিকিৎসা ও কৃষি গবেষণার কাজে এ পারমাণবিক শক্তিকে কাজে লাগাচ্ছে। ইরান শুরু থেকেই বলে আসছে যে, তার এ পারমাণবিক প্রযুক্তির জ্ঞান অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে মুসলিম ও শান্তিপ্রিয় দেশগুলোর সাথে ব্যবহার করতে প্রস্ত্তত। এক্ষেত্রে ইরান পরমাণু প্রযুক্তি কাজে লাগাতে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে একটি ক্লাব গঠনেরও প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু শুরু থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কয়েকটি দেশ ইরানের এ শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কার্যক্রমের বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে। তারা কল্পিত অভিযোগ এনে প্রচার চালাচ্ছে যে, ইরান পারমাণবিক গবেষণার অন্তরালে পারমাণবিক বোমা বানানোর লক্ষ্যে কাজ করছে। এসব চিৎকারে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার হলো NPT-তে স্বাক্ষর করতে অস্বীকারকারী ২ শতাধিক পারমাণবিক বোমার অধিকারী ইসরাইল ও হিরোসিমা-নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপকারী আমেরিকা।

যা-ই হোক, এ কল্পিত অভিযোগের ধুয়া তুলে আমেরিকা ইরানের ওপর একের পর এক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে এবং হামলার হুমকি দিচ্ছে। আমেরিকা তার মিত্র সকল দেশকে ইরানের সাথে বাণিজ্যিক লেনদেনে বাধা দিচ্ছে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এ কল্পিত অভিযোগ যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও অন্তঃসারশূন্য তা বিশ্বের অধিকাংশ পর্যবেক্ষক মহলই আজ বুঝতে পারছেন। আবার অনেক অতি উৎসাহী ইসলামপন্থীদের বলতে শোনা যায় যে, প্রতিপক্ষের সাথে শক্তির ভারসাম্য আনার জন্য ইরানের পারমাণবিক বোমা বানানো দরকার। কিন্তু তাদের জবাবে বলতে হয় যে, ইরান তো পারমাণবিক বোমার অধিকারী না হয়েও গত ৩৩ বছর দুশমনের হুমকির মুখে টিকে আছে। আর পারমাণবিক বোমার অধিকারী পাকিস্তানের জনগণ নিজ দেশেই প্রতিদিন মার্কিন ড্রোন হামলার শিকার হচ্ছে। তাই পারমাণবিক বোমার অধিকারী হওয়াই নিরাপত্তার গ্যারান্টি নয়। সর্বোপরি ইসলামী বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতা পারমাণবিক বোমা বানানোর বিরুদ্ধে ফতোয়া দিয়েছেন। আর ইসলামী প্রজাতন্ত্রের রাহবারের ফতোয়া যে কোনো ফাঁকা বুলি নয় তা সবারই জানা আছে। আরেকটি বিষয় হলো, আমেরিকা ও তার দোসররা এ পর্যন্ত বহু বার চাপ প্রদান করে চেষ্টা করেছে IAEA-এর প্রধানের মাধ্যমে এ মর্মে রিপোর্ট দেয়ার জন্য যে, ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম সন্দেহজনক ও পারমাণবিক বোমা তৈরি করা যেতেও পারে ইত্যাদি। কিন্তু আজ পর্যন্ত তারা সে রকম সুনির্দিষ্ট কোনো বিৃবতি লাভ করতে পারে নি। এদিকে বিগত দুটি জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন সম্মেলন ও ওআইসি সম্মেলনে সদস্যরাষ্ট্রগুলো ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কার্যক্রমের প্রতি তাদের সমর্থন ব্যক্ত করেছে। ইরানের পরমাণু কার্যক্রমের স্লোগান হলো : ‘Nuclear energy for all, Nuclear weapon for none.’ (ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য রয়েছে ইরানের পরমাণু শক্তি কমিশনের ওয়েবসাইট http://www.aeoi.org.ir/Portal/Home/)

১৬. প্রচারযুদ্ধে ইরান : দীর্ঘদিন ধরে সারা বিশ্বের প্রতিষ্ঠিত সব প্রচারমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল বিশ্ব-যায়নবাদী চক্র নিয়ন্ত্রিত পাশ্চাত্য সাম্রাজ্যবাদ। তাই স্বাভাবিকভাবেই এসব সংবাদমাধ্যমে ইরানের প্রকৃত সংবাদগুলো ইতিবাচক কভারেজ পায় নি। তাই বিপ্লবের পর থেকেই ইরান এ সংকটে ভুগছিল। ইরানের IRIB-এর বহির্বিশ্ব সম্প্রচার কার্যক্রমে বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় রেডিওর সম্প্রচার এর অভাব কিছুটা পূরণ করে। পরবর্তীকালে ইরানের ইংরেজি ভাষায় Press TV, স্পেনিশ ভাষায় হিসপান টিভি ও আরবি ভাষায় আল-‘আলাম টিভি চ্যানেল শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে। সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর প্রবল বাধার মুখে গত ৩০ বছরে ইরান তার নিজস্ব প্রচারমাধ্যম ও দেশে দেশে বন্ধুত্বের বিনিময়ে, এ নিবন্ধের শুরুতে ইসলামী ইরান সম্পর্কে বর্ণিত অপপ্রচারগুলো যে মিথ্যা তা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। দিনদিন বিশ্বব্যাপী বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বে ইসলামী প্রজাতন্ত্রের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হচ্ছে। মাযহাব নির্বিশেষে মুসলমানগণ ইসলামী ইরানকে তাদের সহযোদ্ধা ও সত্যের পথে নিশানবরদার হিসেবে ভাবতে শুরু করেছে। এরই ফলশ্রুতিতে বিশ্বের বিভিন্ন জনপদে ইসলামী জাগরণ জোরদার হচ্ছে। সাম্রাজ্যবাদের জন্য এ অবস্থাটি সহ্য করা কঠিন হয়ে উঠেছে। তাই বর্তমানে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় যায়নবাদী ইন্ধনে কয়েকটি দেশ ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান পরিচালিত প্রেস টিভিসহ অন্যান্য চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করলেও বিশ্বের অনেক গণমাধ্যম তাদের ওয়েবসাইট থেকে সংবাদ সংগ্রহ করছে। আজ ইসলামী বিপ্লব দীর্ঘ সংগ্রামের পর এমন একটি নতুন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, ইসলামী বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতা ও ইরানের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বদের কথাগুলো, উন্নয়ন ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের অগ্রগতির সংবাদগুলো বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম নিজ উদ্যোগেই সংগ্রহ করছে। যেসব ওয়েবসাইট থেকে ইরানের সংবাদগুলো বেশি সংগৃহীত হচ্ছে সেগুলো হলো Iran Supreme Leader : http://www.leader.ir/, President : http://www.president.ir, Judiciary : http://www.judiciary.ir; Parliament: http://www.majlis.ir; Ministry of Culture : http://www.farhang.gov.ir; Foreign Ministry: http://www.mfa.gov.ir; Iran Broadcasting: http://www.irib.ir/, Organization of Islamic Culture and Relations: http://www.icro.ir/; Iran Tourism and International Tourism: http://www.ittic.com/; Iran News : http://www.irna.ir/, Iran Students News Agency: http://www.isna.ir/; Other News Agencies: http://www.farsnews.com/, http://www.presstv.com; Centre for Strategic Studies in Iran: http://www.csr.ir/, Information on Islam: http://www.itf.org.ir, , http://www.iqna.ir/bn, http://www.islamonline.com, http://www.tebyan.com, www. crescent-online.net, http://islamica.ir; About Imam Khomeini: http://www.imam-khomeini.com; Women Magazine: http://www.raihaneh.com; Mahjubah:

কয়েকটি ক্ষেত্রে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের অবস্থান

 সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার : প্রত্নতত্ত্ব, ভাস্কর্য, হস্তশিল্প ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক নিদর্শনাদির সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের দিক থেকে UNESCO-এর তালিকাভুক্তিতে ইরানের অবস্থান বিশ্বে সপ্তম।

 কর্মসংস্থান : ২০০৭ সালের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী ইরানের কর্মক্ষম জনসংখ্যার ৯২.২৫% অর্থাৎ ২,১৭,৬৯,০০০ ব্যক্তির কর্মসংস্থান হয়েছে এবং বেকার রয়েছে ৭.৭৫%।

 তেল ও গ্যাসসম্পদ : ভূগর্ভস্থ রিজার্ভ তেলের পরিমাণের দিক থেকে ইরানের অবস্থান বিশ্বে পঞ্চম। রিজার্ভ গ্যাসের পরিমাণের দিক থেকে ইরান বিশ্বে দ্বিতীয় (প্রথম রাশিয়া)।

 দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য গ্যাস সরবরাহ : ১১২৯টি শহরে।

 বিদ্যুৎ উৎপাদন (২০০৬ সাল) : ২০০ মিলিয়ন কিলোওয়াট আওয়ার।

 বাঁধের সংখ্যা : ১৮৬টি সুবৃহৎ ও ৩২০টি ছোট আকারের বাঁধ। ৯১টি বৃহৎ বাঁধের মাধ্যমে ১০ বিলিয়ন কিউব মিটার পানি সরবরাহ হয়। বিশ্বে এর র‌্যাঙ্কিং তৃতীয় (প্রথম চীন, দ্বিতীয় তুরস্ক)।

 রেলপথ : প্রধান রেলপথ ৮,৮৩৭ কিলোমিটার, দ্বিতীয় স্তরে ১,৮৩৩ কিলোমিটার, বাণিজ্যিক রেলপথ (স্বতন্ত্র) ১,০০০ কিলোমিটার।

 ইন্টারনেটের ব্যবহার : ইন্টারনেট ব্যবহারের দিক থেকে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার মধ্যে ইরানের অবস্থান প্রথম।

কৃষি উৎপাদন (২০০৭)

 GNP (Gross National Production) : কৃষি থেকে ১৫%।

 তেল-বহির্ভূত রফতানি সামগ্রী : কৃষি থেকে ২২%।

 কৃষিজ দ্রব্য উৎপাদন ৮৫ মিলিয়ন টন (৬২.৫ মিলিয়ন দানাশস্য, ১৩.৫ মিলিয়ন টন ফল, ৮.৬ মিলিয়ন টন গবাদিজাত ও ৪,৫৫,০০০ টন মৎস উৎপাদন।

 বৈচিত্র্যময় বাগানজাত উৎপাদনের দিক থেকে ইরানের অবস্থান বিশ্বে তৃতীয়।

 পেস্তা, জাফরান, খেজুর, ডালিম ও এপ্রিকট উৎপাদনের ক্ষেত্রে ইরানের অবস্থান বিশ্বে প্রথম।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণায় ইরানের অগ্রগতি বিশ্বে দ্রুততম (Fastest) [Canadia.htmail]। বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষত মহাকাশ গবেষণা, পরমাণু চিকিৎসা ও ন্যানো টেকনোলজি গবেষণায় ইরানের অগ্রগতি ব্যাপক। [presstv.com, ২১ অক্টোবর, ২০১১]

 ক. ন্যানো টেকনোলজি (Nanotechnology) : পঞ্চাশের অধিক ন্যানো টেকনোলজি কোম্পানি কাজ করছে। Nanotechnology সংশ্লিষ্ট বৈজ্ঞানিক গবেষণা নিবন্ধের ক্ষেত্রে বিশ্বে ইরানের অবস্থান ২৫তম এবং মধ্যপ্রাচ্যে সর্বোচ্চ। সর্বশেষ রিপোর্ট প্রকাশসাপেক্ষে, ২০১২-এর মধ্যে ন্যানো টেকনোলজিতে বিশ্বে ইরানের দশম অবস্থানে আসার সম্ভাবনা। [En.nano.ir.retrieve, 21 Oct, 2011]

 খ. মহাকাশ গবেষণা (Space and Aerospace) : মহাশূন্যে নিজস্ব প্রযুক্তিতে নির্মিত স্যাটেলাইট পাঠানোর ক্ষেত্রে ইরানের অবস্থান বিশ্বে নবম এবং মহাকাশ যানে প্রাণী পাঠানোর ক্ষেত্রে ইরানের অবস্থান ষষ্ঠ। ২০০৮ সালে Iranian Space Agency একটি তিন স্তরের স্যাটেলাইট ‘সাফির’ (Ambassador)-এর পরীক্ষা চালায় এবং ২০০৯ সালে Omid (আশা) নামের ক্যারিয়ার কক্ষপথে উৎক্ষেপণ করে। ২০১৫ সালের মধ্যে ইরান মহাশূন্যে মানুষবাহী স্যাটেলাইট পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে।

ইসলামী বিপ্লব বিজয়ের পর ইরানের ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ গবেষকদের প্রতি ইসলাম ও আধুনিক বিজ্ঞানের সমন্বয়ের মাধ্যমে জাতীয় অগ্রগতির ও স্বয়ংসম্পূর্ণতার আহবান জানান। এরই ফলে সাম্প্রতিককালে ইরানে বিজ্ঞান গবেষণায় প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছে।

[1. Quarks and the Koran : Iran’s Islamic Embrace of Science- The Daily Beast, 22 May, 2009

2. Science and Technology and the Future Development of Soceities: International Workshop Proceedings. Nap.edu. 11 February, 2007, retrieved 21 Oct, 2011]

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণায় ইরানের দ্রুততম অগ্রগতির রিপোর্ট : এ সম্পর্কে ইরানের সর্বোচ্চ দ্রুত অগ্রগতির স্বীকৃতি (1996-2004) দিয়েছে ISI (Institute of Scientific Information), Canadian Research Firm Science-Matrix and Engineering Indicators: 2010, 2012’, Science Watch Report (2008), International Comperative Performance of UK Research Base (2009), Ges ‘Knowledge, networks and nations’ by Britain Leading Academic Institution, the Royal Society in Collaboration with Elsevier.

ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান ৫১,০০০ পৃষ্ঠাসমৃদ্ধ ব্যাপক বিজ্ঞানগবেষণা সংক্রান্ত প্রকল্পপত্রে বর্ণিত ২২৪টি প্রকল্প ২০২৫ সালের মধ্যে সম্পন্ন করতে বদ্ধপরিকর। [Iran Unveils Comprehensive Scientific Plan. payvand.com. 4 Jan, 2011, retrieved 21 Oct, 2011] UNESCO-এর রিপোর্ট অনুযায়ী (২০১০) ইরানের বিজ্ঞান গবেষণার ৭৫% বাজেটই সরকার বহন করে।

 চিকিৎসাবিজ্ঞান গবেষণা : চিকিৎসাবিজ্ঞান গবেষণার ক্ষেত্রে ইরানের অবস্থান বিশ্বে ১৯তম এবং সর্বশেষ রিপোর্ট প্রকাশসাপেক্ষে, ২০১২ সালের মধ্যে ১০ম অবস্থানে আসার কথা। [presstv.ir, 20 Jan, 2012]

 বায়ো টেকনোলজি : স্টেমসেল গবেষণার ক্ষেত্রে ইরান প্রথম সারির ১০টি দেশের মাঝে অবস্থান করছে। স্টেমসেল রিপ্লেস করার ক্ষেত্রে বিশ্বে ইরানের অবস্থান দ্বিতীয়। হাড়, হার্টভাল্ভ ও ট্যানডন রিপ্লেস করা ও Bio-tech drug উৎপাদনের ক্ষেত্রে ইরান প্রথম ১২টি দেশের মাঝে অবস্থান করছে।

 কম্পিউটার সায়েন্স ও রোবোটিক্স : ২০১০ সালে তেহরান বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব প্রযুক্তিতে Sorena-2 নামক রোবট তৈরি করে যা IEEE কর্তৃক বিশ্বের ৫টি সর্বোচ্চ প্রযুক্তির রোবটের মাঝে স্থান পায়। একই ধারাবাহিকতায় ইরানের automotive industry দশটি রোবট তৈরি করে। তেহরানের আমির কাবীর প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ২০০৭ সালে একটি সুপার কম্পিউটার তৈরি করে যার প্রতি সেকেন্ডের কর্মক্ষমতা ৮৬০ বিলিয়ন, যদিও ইরান ২০০১ সালেই প্রথম সুপার কম্পিউটার তৈরি করে। পরবর্তীকালে ইরান তৈরি করেছে RAHYAB-৩০০ যার সক্ষমতা ৪০ Gbit/s। ২০১১ সালে আমির কাবীর ও ইসফাহান বিশ্ববিদ্যালয় ২টি সুপার কম্পিউটার তৈরি করে যার প্রসেসিং ক্ষমতা প্রতি সেকেন্ডে ৩৪০০০ বিলিয়ন – যা বিশ্বের প্রথম সারির ৫০০টি কম্পিউটারের মাঝে রয়েছে।

 এনার্জি (Energy) : ইরান বিশ্বের প্রথম সারির চারটি দেশের মধ্যে রয়েছে যারা V 94.2 গ্যাস টারবাইন তৈরি করার সক্ষমতা অর্জন করেছে। গ্যাস রিফাইনারির সব পার্টসই ইরান নিজেই তৈরি করছে। তরল গ্যাস তৈরির (GTL) প্রযুক্তি অর্জনে ইরান প্রথম তিনটি দেশের মাঝে রয়েছে। ইরান দেশীয়ভাবে রিফাইনারি, তেল-ট্যাংকার, তেলকূপ খনন, Offshore platform এবং তেল উত্তোলনের ৭০ ভাগ সক্ষমতা অর্জন করেছে। গভীর পানিতে তেলকূপ খনন প্রযুক্তিতে ইরান বিশ্বের অল্প কয়েকটি দেশের মাঝে রয়েছে। দেশীয় প্রযুক্তিতে ডিজাইনকৃত ইরানের Darkhovin Nuclear Power Plant কার্যক্ষম হবে ২০১৬ সালে।

 সমরবিজ্ঞান : ইরান সুপারফাস্ট এন্টি সাবমেরিন তৈরি করেছে যা পানির তলদেশ দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে ১০০ মিটার গতিতে চলে; আর এ প্রযুক্তিটি বিশ্বে রয়েছে একমাত্র রাশিযার হাতে। লেজার টার্গেটিং প্রযুক্তিতে অস্ত্রের ক্ষেত্রে ইরান বিশ্বের পাঁচটি দেশের অন্যতম – যাদের চালকবিহীন বিমান (ড্রোন) নির্মাণ সক্ষমতা রয়েছে। ১৯৯২ সাল থেকেই ইরান নিজস্ব প্রযুক্তিতে ট্যাংক, মিসাইল, সাবমেরিন, ফাইটার প্লেন ও যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার্য সামরিক যান তৈরি করছে।

ইরানের বিজ্ঞান গবেষণার আরো কতক সাফল্য

 কয়েক ধরনের অত্যাধুনিক চালকবিহীন বিমান (ড্রোন) তৈরি;

 সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে সমুদ্রগামী তেল-ট্যাঙ্কার তৈরি;

 মহাশূন্যে ‘পিশগাম’ বা ‘অভিযাত্রী’ নামের বায়ো-ক্যাপসুল প্রেরণ;

 রাডার ফাঁকি দিতে সক্ষম স্টিল্থ ধরনের অত্যাধুনিক জঙ্গী বিমান ‘কাহের-৩১৩’ তৈরি।

 সৌরশক্তিচালিত মোটরগাড়ি তৈরি।

পরিশেষে বলা যায় যে, শক্তিশালী মুজতাহিদ নেতৃত্বের অধীন ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান পুরো জাতির বিভিন্ন পর্যায়ে জ্ঞান-বিজ্ঞানে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিত্বদের পরিচালনায় সুসংবদ্ধ রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠন করেছে; বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে চরম অগ্রগতি অর্জন করেছে, স্বনির্ভর অর্থনীতির একটি শক্তিশালী ভিত তৈরি করেছে, সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে, স্বীয় ভূখণ্ডের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে, ফিলিস্তিন সহ মুক্তিকামী মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে, বিশ্ব-সাম্রাজ্যবাদী শক্তির মুখোশ উন্মোচন করে দিয়েছে, বিশ্বমানবতা ও বিশ্ব-মুসলিমকে ঐক্যের ও উন্নত সংস্কৃতি গ্রহণের আহবান জানিয়েছে। এসবই ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানকে বিশ্ববাসীর সামনে একটি অনন্য মডেল হিসেবে উপস্থাপন করেছে। বিশ্বব্যাপী ইসলামী জাগরণে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান আরো সুদূরপ্রসারী প্রভাব রাখবে এতে সন্দেহ নেই।

বিষয়: আন্তর্জাতিক

২৯৫৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File