এর নাম কি বিনোদন কেন্দ্র?
লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মাদ রুবেল ১৮ মে, ২০১৩, ০৮:২৩:৩৫ সকাল
যান্ত্রিক এই ঢাকা শহরে বসবাস এক রকম বন্দী জীবনযাপন আজ এ কথা অনেকেই বলে থাকেন। ইট-পাথরের আকাশচুম্বী দালানের মধ্যে থাকতে থাকতে বিষন্ন হয়ে ওঠে আমাদের জীবন। আবার নিজেকে নিয়ে আমরা এমন ব্যস্ত থাকি যে, পরিবার পরিজনকে একটু সময় দিব তাও হয় না। কেউ অফিস-আদালতে ব্যস্ত, কেউ বা আবার ব্যাবসায়িক কাজে। এভাবে কেটে যায় দিন-মাস-বছর। আসলেই কি ঢাকা এমন? যা হোক শত ব্যস্ততার মাঝেও মানুষ নিজের এবং পরিবারের প্রশান্তির জন্য, একটু শান্তি খুজে পাওয়ার জন্য, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি নানা পশু-পাখি দেখার জন্য ছুটে আসে শহরের পার্ক এবং বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে। নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে উচ্চবিত্তের কাছে পর্যন্ত এক অফুরন্ত আনন্দের নাম এই বিনোদন কেন্দ্র গুলো। সেখানে এসে মানুষ খুজে পেতে চায় নতুন কিছু। চায় মনের শান্তি, ফুরফুরে করতে চায় মেজাজকে। ফ্রেশ করতে চায় শরীর, মন, দেহকে। কিন্তু এসব বিনোদন কেন্দ্রে এসে বিপাকে পড়তে হয় পরিবার-পরিজন নিয়ে আসা অনেক অবিভাবকগণকে। ঢাকার অনেক বিনোদন কেন্দ্রের (কিছু নাম করা শপিং মল, বিশ্ববিদ্যালয়, লেক এবং উন্মুক্ত উদ্যানও আছে) এমন অবস্থা যে কেউ যদি স্বচক্ষে না দেখে তাহলে বিশ্বাসই করবেন না যে এখানে কি হচ্ছে এসব! বিশেষ করে যারা গ্রাম থেকে আসেন বা সচরাচর ঘুরতে বের হন না, বা ছেলে মেয়ে কোথায় যায় তার খবর অবিভাবকরা রাখেন না। যদি দেখতেন স্বচক্ষে বাস্তব অবস্থা, তাহলে আপনিও বলতেন এর নাম কি বিনোদন কেন্দ্র?
ঢাকা আসার পর তেমন বেশী ঘুরতে যাওয়া হয়নি আমার। কারন সহপাঠী ছিলনা। কিন্তু এখন আমার ঘনিষ্ঠ ক’জন বন্ধু থাকায় মাঝে মধেই বের হই কর্ম ব্যস্ততার ক্লান্তি মুছতে ঢাকার বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে। নগরীর যাবার যায়গা বলতে-ধানমন্ডি লেক, রমনা পার্ক, জিয়া উদ্যান, বলদা গার্ডেন, আহসান মঞ্জিল, শিশু পার্ক, বোটানিকাল গার্ডেন, লালবাগ কেল্লা, ফ্যান্টাসি কিংডম, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ওয়াটার কিংডম, নন্দন পার্ক, শ্যামলী শিশু মেলা, চিরিয়াখানা এবং সংসদ ভবনকেই বুঝায়। আড্ডা, উৎসব, আনন্দ আর একটু মুক্ত, নির্মল, প্রাকৃতিক বাতাস, নিরিবিলি পরিবেশ পাওয়ার প্রত্যাশায় ছুটে আসি এই বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে। আর এই বিনোদন কেন্দ্রেগুলো যখন দেখতে পাই মাদকসেবী ও বখাটেদের পদচারণা, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, নির্জ্জলতা আর নোংড়ামী (যারা এত সুন্দর পরিবেশকে নষ্ট করছে) তখন মনে প্রশ্ন জাগে এর নাম কি বিনোদন কেন্দ্র?
অনেকের কাছে শুনেছি পুরান ঢাকার ওয়ারীতে রয়েছে বলদা গার্ডেন। সেখানে অনেক প্রকারের গাছ রয়েছে, রয়েছে বৃক্ষের মাঝখানে দৃষ্টি নন্দন পুকুর। নগর মানুষের অবসর কালীন সময় কাটাতে রাজধানী শহরের এই স্থানে আসেন অনেক বিনোদনপ্রেমী। বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে সাহিত্যমোদী ভাওয়াল জমিদার নরেন্দ্র নারায়াণ চৌধুরী আপন সৌন্দর্যে গড়ে তোলেন এ উদ্যানটি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ঘুরে তিনি নানা রকম ফুল, উদ্ভিদ আর গাছ-গাছড়া এনে রোপণ করেন এ গার্ডেনে। বিরল প্রজাতির দেশি বিদেশি ক্যাকটাস, অর্কিড, অ্যানথুরিয়াম, ভুজুপত গাছ, বিচিত্র বকুল, আমাজন লিলি, কৃত্তিম সুড়ঙ্গসহ একটি ছায়া তরু। বলধা গার্ডেনকে অভিহিত করা হয় ফুল ও উদ্ভিদের মিউজিয়াম বা যাদুঘর হিসেবে। তাছাড়া দেশ বিদেশের গাছ-গছড়া যেমন রয়েছে, তেমনি দেশ বিদেশের বহু নামীদামী ব্যক্তি এটি পরিদর্শনে আসতেন, এখন আসেন কি-না বা আসতে চান কি-না বলতে পারব না, কারন এখানে এসে যা দেখবেন তা দেখে কোন শিক্ষিত, ভদ্র রুচীশীল মানুষ আর আসতে ইচ্ছে করবে বলে আমি সন্দেহ করছি। আমি নিজেও এখানে আমার মামাকে নিয়ে এসে বিব্রত অবস্থায় পড়েছি। অবস্থা এমন যে,কারো গালে ঠুটে মিলে আছে কারো দুই ঠোট একত্রে, কেউবা আবার গাছের চিপিতে আবার কেউ এমন সব অঙ্গ-ভঙ্গিতে এমন সব দৃশ্যে আছেন তা এখানে প্রকাশ করতে আমারও লজ্জা লাগছে। সাধারন মানুষদের লজ্জা লাগলেও তাদের লজ্জার কোন বালাই নেই। যদিও গার্ডেনের ভিতর লেখা আছে “এখানে এমন কিছু করবেন না, যাতে কেউ বিব্রত হয়” দুষ্ট প্রকৃতির লোকেরা না শব্দটি মুছে ফেলেছে। লেখা লেখেই বা আর কি হবে যেখানে চলছে অবাধে এসব দৃষ্টিকটু কাজ। আপনারাই বলেন এর নাম কি বিনোদন কেন্দ্র?
ঢাকার উত্তর প্রান্ত মিরপুরে অবস্থিত জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান বোটানিক্যাল গার্ডেন। আঁকাবাঁকা মেঠো পথ, অর্কিড ও ক্যাকটাসের ছাউনি, বেত ও দেবদারু বাগান, বাঁশঝাড় এবং আরও আকর্ষণীয় গাছপালা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে গার্ডেনের চারদিকে। বাগানে ছড়িয়ে থাকা জলাধারে রয়েছে বিচিত্র শাপলার সংগ্রহ। পদ্মপুকুর দর্শন তো থাকছেই। ফুলদানি ও ঝুড়ি সাজানোর চমৎকার গোলাপ ডাবল-ডিলাইট, আইসবার্জ, ইয়েলো ডল দর্শকদের মুগ্ধ করে দিতে যথেষ্ট। বন-বাদাড়ে পাখির গান শুনতে শুনতে পৌঁছে অনেকে যান কৃত্রিম জলপ্রপাতে। আহা কত আনন্দ! ঘুরে বেড়াতে, নানান কাজের টেনশন থেকে মুক্তি পেতে, ক্লান্ত মনকে উজ্জীবিত করতে, যাদের শৈশব শুধু ইট পাথরের চার দেয়ালের মধ্য তারাও আসেন এই নান্দনিক গার্ডেনে। বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণে মূলত উদ্ভিদ সংরক্ষণের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল উদ্যানটি আজ সেখানে হচ্ছে? যদি কেউ এখানে এসে থাকেন তবে সেই বুঝতে পারবে এই গার্ডেনের কি অবস্থা। সমস্ত এলাকা জুড়ে একশেণীর বাজে দালাল লোকদের আনা গোনা। উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েদের অবাধ মেলামেশার হার বেড়ে গেছে এখানে। তারা ঘুরে দেখানোর চেয়ে ঝোপ-ঝাড়েই সময় কাটাতে ব্যস্ত। যেখানে গাছপালা একটু বেশি সেখানেই দিনদুপুরে চলে নানা অসামাজিক কার্যকলাপ। রাত যত গড়াতে থাকে, ততই এ ধরনের ঘটনা বাড়তে থাকে। বেড়ে যায় যৌনকর্মীদের আনাগোনাও। একই অবস্থা শাপলা পুকুর ও ঔষধি বাগানসহ আশপাশের সব জায়গায়। নষ্ট হচ্ছে উদ্যানের পরিবেশ। এসব জায়গায় ছোট ছেলে-মেয়েরা তাদের পরিবারের সাথে বেড়াতে আসে আর পরিবারের বড়রা রীতিমত বিব্রত হয়। সেখানে এখন যা হচ্ছে তা অশালীন ছাড়া আর কিছুই নয়। আমার মনে হয় এখানে দিনে দুপুরে যা হয় তা রাত্রেও হয় না! আর এই নাকি আমাদের জাতীয় উদ্যান? এর পরও কি বলবেন এর নাম বিনোদন কেন্দ্র?
রাজধানীর রমনা পার্ক যেখানে রয়েছে নাগলিঙ্গম, অর্জুন, মহুয়া, তেলসুর, অশোক, কর্পূর, রিটা, নাগেশ্বর, স্বর্ণচাঁপাসহ নানা প্রজাতির বৃক্ষ। আছে লেক, ব্যায়ামের অফুরন্ত সুযোগ-সুবিধা, যা শরীর ও মনের জন্য খুবই জরুরি। হাজার হাজার লোক পার্কে আসে। পাখির গুঞ্জন, স্নিগ্ধ বাতাস আর নির্মল অক্সিজেনের জন্য বহু দূর-দূরান্ত থেকে আবালবৃদ্ধবণিতা দিনভর এখানে আসে। এই ঐতিহ্যবাহী রমনা পার্ক মহানগরবাসীর কাছে নানা কারণে গুরুত্ববহ একটি ক্ষেত্র হলেও এর দুরবস্থা ক্রমেই প্রকট হয়ে উঠছে। প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে রমনার গুরুত্ব ও আকর্ষণ একসময় দুটোই অনেক বেশি থাকলেও ক্রমেই তা ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে। সান্ধ্যভ্রমণ, প্রাতঃভ্রমণকারীরাও বাধ্য হয়ে রমনা ত্যাগ করতে চলেছেন। যেসব পথচারী ওদিকে গেলেই রমনাকে বেছে নিতেন খানিক সময়ের জন্য বিশ্রামের ক্ষেত্র হিসেবে, এখন তাঁরাও সংগত কারণেই সে চিন্তা বাদ দিতে বাধ্য হচ্ছেন। কারন ছিনতাইকারী, মাদকসেবী, স্কুল, কলেজ পড়ুয়া ছাত্র ছাত্রীরা চুম্বকের মত ওখানে লেগে থাকা। যা দেখে লজ্জা পায় অবিভাবকগণ। এমন রির্পোটও প্রকাশ হয়েছে যে টাকায় এখানে প্রেম হয়। গাছের নিচে তো লেকের পাড়ে আরো কত কি! তাই বলতে হয় এর নাম কি বিনোদন কেন্দ্র?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত একটি সুপরিসর নগর। সর্বস্তরের মানুষের চিত্তবিনোদনের একটি স্থান। এটি সময় কাটানো, গল্প করা, প্রেমিক যুগলের কতকথন (তারা আবার প্রেমলীলায়ও মত্ত), হাঁটাহাটিঁ প্রভৃতির জন্য উপযুক্ত। অনেকে আবার খেলাধুলাও করেন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খনন করা হয়েছে একটি কৃত্রিম জলাশয় বা লেক, রয়েছে শিখা চিরন্তন। এখানে চলে চটপটির আড়ালে প্রেম ব্যবসা, রমণী ব্যবসা নামক অবৈধ কাজ। বাইরে অনিরাপদ বলে উদ্যানের ভাসমান পতিতাদের নিয়েও এসব জায়গায় ফুর্তি করেন একশ্রেণীর মানুষ। সন্ধ্যার পরেই বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত প্রেমিক জুটির প্রেমের নিরাপদ আশ্রয় হয়ে ওঠে এ স্থানটি। এখানে আবার টাকা দিয়েও প্রেম করা যায়। বিভিন্ন স্কুল কলেজের ছেলেমেয়েদেরও দেখা যায় অনেক রাত পর্যন্ত এখানে আড্ডা দিতে। কেউ কারে কোলে শুয়ে ইয়ে...। বাবা-মা জানেন আমার সন্তান পড়তে, কোচিং করতে না হয় বন্ধু/বান্ধীদের সাথে দেখা করতে গেছে। এখন বলুন এর নাম কি বিনোদন কেন্দ্র?
লালবাগ কেল্লা পুরাতন ঢাকার লালবাগে অবস্থিত একটি দূর্গ। সম্রাট আওরঙ্গজেব তার শাসনামলে লালবাগ কেল্লা নির্মাণের ব্যবস্থা করেন। এটি মোগল আমল এর একটি চমৎকার নিদর্শন। এই ভবনটি মুঘল সুবেদার শায়েস্তা খানের প্রিয় কন্যা পরীবিবির সমাধি নামেও পরিচিত। এটি বাংলাদেশের একটি পর্যটনস্থল। ভেতরে প্রবেশ করলেই বাগান ঘেরা পরিবেশ দর্শনার্থীদের মনে আনন্দ দেয়। কয়েকটি ফোয়ারা, পাহাড়ি উচু টিলা, সুরঙ্গ পথ এবং কেল্লার দক্ষিণ এবং পশ্চিম দূর্গ প্রাচীরের নির্দিষ্ট দূরত্ব পর পর একটি করে পলকাটা তোপমঞ্চ। চারিদিক ঘাট বাঁধানো সিড়ির মত পুকুরটি বর্গাকৃতির দৃশ্য দেখলে মনটা পুলকিত হয়ে ওঠে। আবার দেখা যায় অনেকে দখল করে ঘরবাড়ি করছে। কিন্তু যখন দেখা যায় একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে সিনেমার মত মত দৃশ্যের সৃষ্টি করছে, ফুল গাছের নিচে কি সব করছে, ফাঁকে জোকে লোকজনের আড়ালে জড়িয়ে পড়ে বেহায়পনায়, অশ্লীলতায় আচ্ছাদিত হয়ে পড়ছে তখন জানতে ইচ্ছে করে এর নাম কি বিনোদন কেন্দ্র?
সাভারের নবীনগর-চন্দ্রা হাইওয়ের বাড়ইপাড়া এলাকায় অবস্থিত সবুজে সমারোহ নন্দন পার্ক। ঢাকার কর্মব্যস্ত নাগরিক জীবনের মাঝে নন্দন পার্ক সবুজে ঘেরা এক টুকরো স্বর্গোদ্যান। আকর্ষনীয় রাইড রয়েছে এখানে যেগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্যাবল কার, ওয়েব পুল, জিপ স্লাইড, রক ক্লাইমরিং, রিপলিং, মুন রেকার, কাটার পিলার, ওয়াটার কোস্টার, আইসল্যান্ড, প্যাডেল বোট, ওয়াটার ওয়ার্ল্ড নতুন ভাবে সংযোজন করা হয়েছে ফাইভ-ডি মোশন চেয়ার থিয়েটার প্রযুক্তি। বর্তমান যুগের উদ্যমী ও প্রাণচঞ্চল তরুণ-তরুণীদের কাছে এক আনন্দপূর্ণ ও আকর্ষণীয় (বুঝতেই পারছেন কেন এত আনন্দপূর্ণ)। হাটতে হাটতে ক্লান্ত হলে/জিরিয়ে নিতে বসবেন এখানে, কিছু দৃশ্য দেখলে ক্লান্ত আরো বাড়তে পারে কারন......। গরমে অতিষ্ঠ হয়ে বা না হয়ে বা ঘুরতে পানি খেলা খেলতে এখানে আসেন অনেক মানুষ। অনেকের সাঁতার কাটা আর পানিতে দাপাদাপির যে দৃশ্য, হাউজে প্রেমিক প্রেমিকারা গলা পর্যন্ত ডুবে .....। কটসার্ট অনুষ্ঠানে তরুন-তরুনীদের নাচানাচি থাক আর বলতে চাই না। সাধারণ মানুষদের লজ্জাবোধ থাকলেও, এদের লাজ্জ-লজ্জার কোন বালাই নেই। ওয়াটার কিংডম, ফ্যান্টাসি কিংডম প্রায় একই। এমনও খবর বেরিয়েছে যে, ফ্যান্টাসি কিংডমে উদ্দাম নৃত্য মদ-বিয়ার উদ্ধার। এখনও কি বলবেন এর নাম বিনোদন কেন্দ্র?
“জিয়া উদ্যান”- এলাকাটা বেশ চমৎকার। এর পাশে ক্রিসেন্ট লেকে বসার দারুণ এক স্থান। কিছুটা সময় ব্যস্ততাকে পেছনে ফেলে এমন স্থানে হাঁটতে-বসতে পারলে যেন প্রশান্তি লাগে। “সংসদ ভবন”- সম্পূর্ন ভবনটিকে একটি কৃত্রিম জলাধারে বসানো হয়েছে সম্মুখে পাম ও বকুল গাছের সারি, দুপাশে রাধাচুড়া,দেবদারু আর পিছনে কৃষ্ণচূড়ার বিন্যাস। “ধানমন্ডিলেক”- বিভিন্ন উৎসবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মুখর হয়ে ওঠে এ লেকটি। লেকে নৌকায় চড়ে বেড়ানোর ব্যবস্থাও রয়েছে। শরীর সচেতন মানুষ হাঁটা-চলা করে এখানে। অনেককে আবার চোখের পানিও ফেলতেও দেখা যায়। “শিশু পার্ক”- উন্মুক্ত আকাশের নিচে সবুজ ঘাসের বসে গা-এলিয়ে কতো আড্ডা কত কথা, কতো গল্প হয় এখানে। রয়েছে রোমাঞ্চ চক্র, আনন্দ ঘূর্ণি, উড়ন্ত বিমান, উড়ন্ত নভোযান, ফুলদানি আমেজ, ঝুলন্ত চেয়ায়। এই সব বিনোদনকেন্দ্রগুলোয় ছুটে বেড়াচ্ছে রাজধানীর ভ্রমণপিয়াসি মানুষ এসব জায়গায় তাদের পরিবারের সাথে বেড়াতে আসেন, বলতে গেলে সব শ্রেণীর মানুষই আসে। প্রেমিক-প্রেমিকারা তাদের ভালোবাসার নিদর্শন প্রদর্শনের জন্য এসব জায়গাই বেছে নিচ্ছে। তরুণ-তরুণীদের পার্কের নির্জন স্থানে প্রেমলীলার সুযোগ করে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে হাজার হাজার টাকা। বখাটে, দেহ ব্যবসায়ী এবং ভঘুরেদের সেবন করা মাদকের গন্ধে এখানকার পরিবেশ করা হচ্ছে দূষিত। দিনের আলোতেও যে কালোদেরই দৌরাত্ম্য চলে এখানে। রয়েছে হকারদের বিড়ম্বনা। আছে দুগর্ন্ধ আর অপরিস্কাক-অপরিচ্ছন্নতা। তবে কি পার্ক মানে ডার্ক! এখনও কি বলবেন এর নাম বিনোদন কেন্দ্র?
হয়ত বা আমাকে কেউ বলতে পারেন এখানে ভাল কিছুও তো হয়, সবাইতো আর ঐ রকম নয়, হ্যা সেটা তো অবশ্যই প্রশংসনীয় আর ভালতো ভালই। তাই বাস্তব অবস্থা তুলে ধরে কিছুটা হলেও অবিভাবকদের, বিনোদনপ্রিয় মানুষদের, ভ্রমণপিপাসুদের সচেতন করার চেষ্টা করছি। আমরা সবাই জানি যে, সুন্দর পরিবেশ, সুন্দর সমাজ গঠনে সহায়তা করে। তবে কেন এসব স্থানে পরিবেশটা দূষিত। যদিও অনেক বিনোদন কেন্দ্রের অবস্থা কিছুটা ভাল। তাছাড়া সমস্যা শুধু এক জায়গায় নেই। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আকাশ সংস্কৃতির অবাধ বিচরণ, পর্ণ ম্যাগাজিন, ওয়েবসাইট এগুলোতে ছেয়ে গেছে সমাজ। আর লাগামহীন সাইটে নিয়মিত ঢু মারছে উঠটি বয়ষের তরূণ-তরূণীরা। শিখছে বেহায়াপনা আর অশ্লীলতা। করছে সেগুলোর প্রয়োগ। আর এরই সূত্র ধরে কেউ হচ্ছে প্রতারিত, ধর্ষিত, কেউ করছে আত্মহত্যা, কেউ বা অগোচরে মজা লুটছে, করছে ব্যাবসা, সমাজে বাড়ছে ব্যাভিচার, পরকীয়া, কখনো বা ভালোবাসা হয়ে যাচ্ছে নবজাতকের লাশ। জাতির বিবেক হয়ে যায় প্রশ্নবিদ্ধ, চোখের পানি যায় শুকিয়ে। এককথায় বলব-নৈতিকতার অভাব। যার দায়িত্ব পরিবারের উপর বর্তায়। আর এসব বিষয়ে আমি সচেতন আর আপনি?
বিষয়: বিবিধ
২৬৫৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন