৭৮৬ এবং হারাম
লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মাদ রুবেল ১৭ মে, ২০১৩, ১০:৪২:৫২ সকাল
আমরা আগে চিঠি-পত্র বা কোন কাগজে কিছু লিখলে উপরে প্রায়ই ৭৮৬ লিখতাম। ভাবতাম এটিতে বিসমিল্লাহ হয়। এমন ধারনা আমাদের অনেকেরই আছে কিন্তু এটি সত্য নয়। একবার ভেবে দেখুন যদি ৭৮৬তে বিসমিল্লাহ হয় তাহলে গরু,মুরগী,ছাগল জবাই করার সময় যদি বিসমিল্লাহ না বলে ৭৮৬ বলা হয় তাহলে কি কেউ তা মেনে নেবে বা সেই গোশত খাবে? সিটি হালাল না হারাম হবে? খাবারের সময়, কোথাও বের হবার সময়, কোন কাজ আরম্ভ করার সময় বিসমিল্লাহ না বলে ৭৮৬ বলে কি বিসমিল্লাহর বরকত হবে? বা কেউ কি ৭৮৬ বলবে? আমার মনে হয় কেউ এমটি করবে না। যদি না করে থাকে তাহলে কেন আমরা বিসমিল্লাহর পরিবর্তে ৭৮৬ ব্যবহার করি।৭৮৬ কোটি কোটি বার বলা হলেও একবার বিসমিল্লাহর বরকত হবে না। যদি কেউ সন্দেহ পোষন করে থাকেন তাহলে পবিত্র কুরআন-হাদিস তন্ন তন্ন করে খুজুন কোথাও ৭৮৬এর পরিবর্তে বিসমিল্লাহ পাবেন না।
এবার আসি মূল কথায় ৭৮৬ বলে উপরিউক্ত কাজগুলো করলে তা হালাল বা সুন্নতিভাবে হবে না এখন এই কথা সবাই মানবেন। পশু জবাই করার সময় হারাম হবার ভয়ে যেমন কেউ ৭৮৬ বলে না বা বিসমিল্লাহ না বলে জবাইও করে না কারন হারামের ভয়ে। এবার একটু ভাবুন প্রতিদিন যে, নেতা-কর্মীরা, সরকারী-বেসরকারী অফিসাররা বা যে কেউ ঘুস বা অবৈধ পথে আয় করে ভক্ষন করে, সুন্দর সুন্দর গাড়ীতে চড়ে, নামি-দামি সুন্দর পোষাক পড়ে সেগুলো কি? অবশ্যই অবশ্যই হারাম। তাহলে গরু, মুরগী,ছাগল জবাই করার সময় আর বিসমিল্লাহ বলার দরকার কি। কিন্তু কেউই বিসমিল্লাহ না বলে জবাই করবে না আর যে করবে তার তো খবর হয়ে যাবে। হারাম তো হারামই তাহলে কেন সুদ, ঘুস, অবৈধ পথে আয় করে সেগুলো দিয়ে আবার কেন বিলাসী জীবন। আবার মসজিদেও যায় তারা কি জানে না যে, ইবাদত কবুল হবার পূর্বশর্তই হল হালাল খাবার।
শুধু তা-ই নয়, কোনো ধরনের বাছ-বিচার ছাড়াই অবৈধ ধন-সম্পদ অর্জনের যে প্রতিযোগিতা বর্তমানে আমাদের ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে পরিলক্ষিত হচ্ছে, তা ক্রমেই মহামারীর আকার ধারণ করছে। ব্যবসায়ীরা মাপে কম দিয়ে, খাদ্যে ভেজাল মিশিয়ে, সুযোগ বুঝে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দিয়ে ভোক্তাদের প্রতারিত ও নিষ্পেষিত করছেন। অফিস-আদালতে আমলারা ফাইল আটকে রেখে উেকাচ গ্রহণ করে ফাইলের চাকা সচল করছেন। বিচার-সালিশে, তদবির বাণিজ্যের নামে দেদারসে ঘুষ লেনদেন হচ্ছে। গ্যামলিং করে শেয়ারবাজারের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের নিঃস্ব করে দেয়া হচ্ছে। দুর্নীতির মাধ্যমে ব্যাংক থেকে হাজার কোটি টাকা আত্মসাত্ হয়ে যাচ্ছে। এমনকি সামান্য একজন রিকশাচালককে পর্যন্ত সুযোগ বুঝে দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া হাঁকতে দেখা যাচ্ছে। জণগণের চলাচলের ফুটপাত তাও আজ...। টপ টু বটম—সর্বোচ্চ স্তর থেকে সর্বনিম্ন স্তর পর্যন্ত। বাদ নেই কোনো ক্ষেত্রই। এগুলোই আমাদের বর্তমান সমাজ ও রাষ্ট্রের বাস্তব চিত্র। অথচ আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে সুস্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছেন, ‘তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না এবং মানুষের ধন-সম্পদের কিয়দাংশও জেনেশুনে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে তা বিচারকদের কাছে পেশ করো না।’ —সূরা বাকারা : ১৮৮
আমরা মুসলমান হিসেবে একটি বারের জন্যও কি চিন্তা করতে পারি না যে, অন্যায় কাজ পরিত্যাগের জন্য মানুষের সামান্য সদিচ্ছাই যথেষ্ট।
বিষয়: সাহিত্য
১৩২০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন