শিবির সভাপতির রিমান্ডঃ একটি মানবাধিকারের প্রশ্ন

লিখেছেন লিখেছেন রায়হান আহমেদ ১৫ মে, ২০১৩, ১২:৪২:৪৭ দুপুর

বাংলাদেশে ফৌজদারী আইনানুযায়ী অপরাধী সন্দেহে যে কাউকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারে। কথিত অপরাধের সহিত গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা প্রমানের জন্য পুলিশ তাকে আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন করতে পারে এবং আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে রিমান্ডে নিতে পারে। তবে রিমান্ড আবেদন মঞ্জুরের ক্ষেত্রে অপরাধের গুরুত্ব ও অপরাধের ধরণ, অপরাধের সহিত গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতার সম্ভাবনা, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির বয়স, স্বাস্থ্য ইত্যাদি বিবেচনায় রেখেই সাধারনত বিজ্ঞ আদালত রিমান্ডের স্থান ও সময় উল্লেখ করে অনুমতি দিয়ে থাকেন। বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা, সঠিকতা এবং অধিকতর তদন্তের স্বার্থেই রিমান্ডের বিধান রাখা হয়েছে। রিমান্ডে নিয়ে গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির উপর কোন রকম শারীরিক নির্যাতন আইন সম্মত নয়। তাছাড়া এ ব্যপারে উচ্চ আদালতের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্বেও আমাদের দেশে প্রায় ক্ষেত্রেই এ আইন মানা হয় না। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই পুলিশী হেফাজতে আসামীর অঙ্গহানি, স্থায়ী ভাবে শারীরিক/মানষিক প্রতিবন্দী হওয়া, এমনকি মৃত্যুর মত মত ঘটনাও ঘটে থাকে। প্রায় ক্ষেত্রেই মানবাধিকারের বিষয়টি চরম ভাবে উপেক্ষিত হয়। রিমান্ডে থাকাকালীন সময়ে গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্থ হলেও তার প্রতিকার পাওয়া যায় না। আইন চায় প্রমান। আর পুলিশের বিরুদ্ধে পুলিশী নির্যাতনে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তির পক্ষে এটা প্রমান করা সহজ হয় না বিধায় এর কোন প্রতিকার পাওয়া যায় না। শারীরিক ও মানসিক ভাবে নির্যাতন করে কথিত অপরাধের ব্যপারে যে কোন ভাবে স্বীকারোক্তি আদায় করাটাই যেন রিমান্ডে নেওয়ার উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। যতক্ষন পর্যন্ত গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি পুলিশী চাহিদা মাফিক অপরাধ স্বীকার না করছে ততক্ষন ততদিন পর্যন্ত তাকে ইচ্ছেমত শারীরিক, মানসিক নির্যাতন করাটাই যেন অলিখিত আইন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ব্যপারে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনকেও খুব একটা সরব হতে কেউ কখনো দেখেনি। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের সভাপতি দেলোয়ার হোসাইনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করার পর আদালতের অনুমতিক্রমে দুদফায় প্রায় এক মাসের রিমান্ডে নিয়েছে এবং এখনও তিনি রিমান্ডে আছেন। প্রথম দফা রিমান্ড শেষে তাঁকে যেদিন আদালতে হাজির করা হয়েছিল সেদিন তিনি সোজা হয়ে দঁড়াতে পারছিলেন না। তাঁর শরীরে সুস্পষ্ট নির্যাতনের চিহ্ন দেখা গেছে। তারপরেও বিজ্ঞ আদালত তাকে পুনরায় রিমান্ডের অনুমতি দিয়েছেন। সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ শিবির সভাপতির উপর পুলিশের এ যাবত আবিষ্কৃত সমস্ত রকম অত্যাচারই চালানো হলেও পুলিশের চাহিদা মাফিক স্বীকারোক্তি এখনও আদায় করা সম্ভব হয় নাই বিধায় তাঁকে বারবার রিমান্ডের নামে অত্যাচার করা হচ্ছে। এতে একজন নাগরিকের মানবাধিকার চরম ভাবে লঙ্ঘিত হলেও এ দেশের মানবাধিকার সংস্থা গুলো রেওয়াজ মাফিক নীরব। শিবির সভাপতি বলেই হয়ত তাঁর উপর রিমান্ডের নামে অমানষিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে। কি অপরাধ করেছে এই দেলোয়ার হোসাইন? তাঁর বিরুদ্ধে কি চুরি ডাকাতি অথবা ছিনতাইর মামলা আছে? তিনি কি টেন্ডারবাজীর সঙ্গে জড়িত ছিলেন? তাঁর বিরুদ্ধে কি কোন ধর্ষনের অভিযোগ আছে? রিমান্ডে নিয়ে পুলিশ তাঁর কাছ থেকে কি জানতে চায়? তিনি কি রাজাকার ছিলেন? তিনি কি স্বাধীনতা বিরোধী কোন কাজে জড়িত ছিলেন? তিনি কি মানবতা বিরোধী কোন অপরাধে জড়িত ছিলেন? না- তিনি উপরোক্ত কোন অপরাধই করেন নাই। তাঁর অপরাধ একটাই। একজন অত্যান্ত মেধাবী ছাত্র হয়েও নিজের নিশ্চিত উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে না তাকিয়ে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের সভাপতির

দায়িত্ব পালন করছিলেন। বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষিতে এর চাইতে ঝুঁকিপূর্ণ্ আর বড় অপরাধ আর কি হতে পারে? শিবিরের লক্ষ লক্ষ কর্মীর প্রিয় ভাজন সভাপতিকে দিনের পর দিন রিমান্ডের নামে নির্যাতন করে পৃথিবী থেকে চিরতরে সরিয়ে দেওয়ার হীন চক্রান্ত তারা কি এত সহজে মেনে নিতে পারে? কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকলেও প্রতিদিনই শুধু শিবির কর্মী হওয়া অথবা শিবির সন্দেহে ঘুম থেকে ডেকে নিয়ে গুম, হত্যা, গ্রেপ্তার করে রিমান্ডের নামে দিনের পর দিন নির্যাতন অতীতের সমস্ত রেকর্ড ভেঙ্গে সহনশীলতার মাত্রা ছাড়িয়েছে। পাইকারী হারে শিবির কর্মীদেরকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করার কারণে হাজার হাজার শিবির কর্মীর শিক্ষা জীবন আজ ধ্বংসের সন্মুখীন। ন্যায় সঙ্গত দাবী দাওয়া আদায়ের সমস্ত পথ যেখানে রুদ্ধ, রাস্তায় নামলে পুলিশী এ্যাকশনের শিকার হতে হয়, ঘুমিয়ে থাকলেও যেখানে গুম, হত্যা কিংবা গ্রেপ্তার আতঙ্কে ভুগতে হয় সেখানে দিনে দিনে অসহিষ্ণু হয়ে উঠা ছাড়া কিইবা করার থাকে। একটি কুচক্রী মহল সুকৌশলে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের শত সহস্র কর্মীকে দেশের জনগনের সামনে একটি জঙ্গীবাদী, সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে পরিচিতি দেওয়ার জন্য সব রকম অপচেষ্টাই করে যাচ্ছে। কিন্তু কুচক্রী মহল জানেনা বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের মত একটি আদর্শবাদী সংগঠনের একজন সদস্য বেঁচে থাকতেও এ সংগঠনকে পুলিশী নির্যাতনে নিঃশেষ করে দেওয়া সম্ভব না।

বিষয়: বিবিধ

১৫৬৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File