ধারাবাহিক বড়গল্পঃ যখন রাত্রি আধার (১ম পর্ব)

লিখেছেন লিখেছেন খালেদ সাইফুল্লাহ ০৫ এপ্রিল, ২০১৫, ০১:০৩:৫১ রাত

(হটাত করেই লিখে ফেললাম গল্পটি। তবে এক পর্বে শেষ হবে না। কয়েক পর্বে শেষ হবে ইনশাআল্লাহ। কেমন হয়েছে মন্তব্য করবেন সবাই আশা করি।)

যখন রাত্রি আধার

=============

(১)

ক্রিং ক্রিং ক্রিং ক্রিং........................

সন্ধ্যা সাতটা। মাগরিবের পর মনের অবসন্নতা দূর করতে একটু ঘুমানোর চিন্তা করছিলো সে।

টেবিলের উপর ফোন টা বাজছে।

চমকে উঠে লাফ দিয়ে খাট থেকে নামলো ফাতিমা ফারহানা। ছো মেরে ফোন টা হাতে নিয়ে দেখলো অপর প্রান্তের ব্যক্তিটি কে। মূহুর্তে চোখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠলো তার। অজান্তেই আঙ্গুল চলে গেলো রিসিভ বাটনে।

-আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছো, কোথায় আছো তুমি?

-(অপর প্রান্তে মৃদু হাসির শব্দ) তুমি যে প্রশ্নের ট্রেন চালাচ্ছো, আমি কোনটার উত্তর দেবো?

-(কপট অভিমানে) সব গুলোর উত্তর দেবে। একটার পর একটা। এটা আমার হুকুম।

-জো হুকুম মহারানী। ওয়ালাইকুম আসসালাম। আলহামদুলিল্লাহ, আমি ভালো আছি। কিন্তু কোথায় আছি বলা যাবে না।

মূহুর্তের জন্য মুখটা ভার হয়ে গেলো ফারহানার, কিন্তু বাস্তবতা বুঝে পরক্ষনে সামলে নিলো নিজেকে। বললো,

-কোথায় তো বলবে না জানি। অন্তত এতটুকু বলো দুপুরে কি খেয়েছো?

-আলহামদুলিল্লাহ, চিন্তার কোন কারন নেই। আল্লাহ তার বান্দা কে উত্তম ভাবেই মেহমানদারী করিয়েছেন। কিন্তু তুমি কেমন আছো তাতো বললে না?

-সেটা জানার কি সময় তোমার আছে? যাই হোক, তোমার পেরেশানী বাড়াতে চাইনা। আমি ভালো আছি, আলহামদুলিল্লাহ।

মনটা খারাপ হয়ে গেল অপর প্রান্তে থাকা মানুষটার। আসলেই বর্তমান পরিস্থিতি তাদের স্বাভাবিক সময়টুকু কেড়ে নিয়েছে। ইচ্ছা থাকলেও আপনজনের খোজ খবর নেয়া হচ্ছেনা ঠিক মত। যখন থাকারই জায়গা নেই তখন অন্য সব কিছু গৌন হয়ে যায় সময়ের কাছে। চমকে উঠলো সে। কি সব চিন্তা করছে? অপর প্রান্তে একজন মানবী তার কথা শোনার জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছে। তার মুখটা মনে করার চেষ্টা করলো। ব্যর্থ হলো। কোন এক বিখ্যাত ব্যক্তি বলেছিলেন, কোন মানুষ তার পরিচিত সব মানুষের চেহারা মনে করতে পারলেও প্রিয়জনের চেহারা মনের পর্দায় আনতে পারে না। তার ক্ষেত্রে হয়তো সেরকম হচ্ছে। কিছু বলা দরকার। কিন্তু তার চিন্তার জাল ছিড়ে অপর প্রান্ত থেকে ফারহানার গলা শোনা গেলো আবার,

-কি হল কথা বলছোনা কেনো? তুমি কবে আসবে? (একটা করুন মিনতি ঝরে পড়লো সে কথায়)

চিন্তা করলো একটা কিছু বলা দরকার যাতে তার মন ভালো হয়। কোন চিন্তা ভাবনা না করেই দুম করে বলে ফেললো,

-তোমার জন্য একটা সুখবর আছে, শুনবে?

-(আগ্রহ ও আশার আলোয় মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠলো ফারহানার) শুনবো না মানে, একশো বার শুনবো। বল প্লিজ, কি সুখবর?

মুখে শোনার ইচ্ছা ব্যক্ত করলেও মনটা দুরু দুরু করতে লাগলো তার। তার আশা পুরন হবে তো? সে যা আশা করছে তাই হবে তো, নাকি অন্য কিছু? অন্য যাই হোক না কেনো তাকে এখন খুশি করতে পারবে না।

-রাতে আসবো ইনশাআল্লাহ।

-সত্যিইইইইই, আলহামদুলিল্লাহ। কখন আসবে?

-আসবো, দেখো আবার বেশি রান্না বান্না করতে যেও না। তোমার কষ্ট হবে।

-মেয়েরা রান্না ঘরে কি করবে না করবে তা কি তোমার ঠিক করে দিতে হবে? (কৃত্রিম রাগের সাথে ধমকালো তাকে)

হাসলো সে। মনটা অনাবিল প্রশান্তিতে ভরে গেলো। এমন ভালবাসা মাখা শাসন তার ভালোই লাগে।

-আচ্ছা ঠিক আচ্ছে, গোস্তাখি মাফ হয় মহারানী।

-সাবধানে এসো, রাস্তা ঘাটের দিকে খেয়াল রেখো।

-ঠিক আছে, রাখি তাহলে। আল্লাহ হাফেজ।

-ফি আমানিল্লাহ।

(২)

তিনটা ঘন্টা কিভাবে কেটে গেলো বুঝতেই পারলোনা ফারহানা। সে আসছে। কত দিন পর, কত দীর্ঘ প্রতীক্ষা, কত আয়োজন তার মনের অলিতে গলিতে। চুলার আচে তার ফর্সা মুখটা রক্ত বর্ণ ধারন করেছে। সে যদি এখন পাশে থাকতো কি করতো তাহলে? মনে করার চেষ্টা করলো ডিমের টকের পাত্রে পেয়াজ ভাজি ছড়াতে ছড়াতে। হয়তো রাগ দেখাতো, “এতো কি রান্নার আছে? তোমাকে না বলেছি রান্না ঘরে এতো পরিশ্রম দেবে না? আমি কি রাক্ষস, এতো খাবার কে খাবে?”

অথবা বলতো, “তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে, আমার লাল সুন্দরী!”

কিন্তু সেই দিন গুলি কোথায়? চরম বাস্তবতা কেড়ে নিয়েছে তার সোনালী মূহুর্ত গুলো। ছিনিয়ে নিয়েছে জীবনের সুখ আহ্লাদ কে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচচ ডিগ্রী নেয়ার পর তার অনুমতি থাকা সত্ত্বেও কোন চাকরীতে যোগদান করেনি সে। অনেক অফার এসেছিলো। ছিল বিলাসী জীবনের হাতছানী। কিন্তু সব কিছুকে পিছনে ঠেলে সে প্রাধান্য দিয়েছে তার সংসার কে, তার ছোট্ট পৃথিবীকে। সে বিশ্বাস করে নারীর সার্থকতা ঘরের বাইরে যেয়ে পুরুষের সাথে ঢলাঢলি করে সমান থাকার কৃত্রিম চেষ্টার মধ্যে নয়। কেননা সে বিশ্বাস করে এই ঘর থেকেই এক সময় জন্ম হয়েছিল স্পেন জয়ী তারিক বিন জিয়াদের অথবা সিন্ধু জয়ী মুহাম্মাদ ইবনে কাসিমের। যদি তাদের মহীয়সী মায়েরা সন্তান কে সুশিক্ষায় মানুষ করার দিকে খেয়াল না রেখে সম অধিকারের দাবীতে রাস্তায় মিছিল করতেন তাহলে আজকে এই বাংলাদেশে হয়তো মুসলমান পরিচয়ে না থেকে তার অন্য কোন পরিচয় হতে পারতো।

টিং টং টিং টং

কলিং বেলের শব্দে স্মৃতি আচ্ছন্নতা থেকে বাস্তবে ফিরে এলো ফারহানা। বুকটা ধড়াস করে উঠলো তার। বেল দেয়ার ধরন শুনে সে বুঝে নিয়েছে কে এসেছে।

সে এসেছে,তার বহুল প্রতিক্ষীত আপনার জন। দ্রুত পা চালালো দরজার দিকে, থামলো আবার। অদৃশ্য জড়তা ঘিরে ধরেছে তাকে। আবার পা চালালো। কাপা কাপা হাতে খুললো ছিটকিনি।

“আসসালামু আলাইকুম। আমি তারিক ওমায়ের, ভিতরে আসতে পারি?” কৌতুক মাখা হাসি মুখে বললো সে, তার স্বামী। সালামের উত্তর দেয়া প্রয়োজন, কিন্তু কেউ যেনো কন্ঠ রোধ করেছে তার। পল পল করে বয়ে চলেছে সময়। অজান্তেই সালামের জবাব হিসেবে দু ফোটা অশ্রু ঝরে পড়লো তার শুভ্র গন্ড থেকে। কোন রকম বললো, “এসো”।

ভিতরে প্রবেশ করলেন তারিক ওমায়ের। ফারহানার ইচ্ছা করছিল তার বুকে ঝাপিয়ে পড়তে, দীর্ঘ দিনের জমানো অভিযোগ গুলো এক নিমিষে জানিয়ে দিতে। কিন্তু তা কি হয়? না জানি কত দূর থেকে এসেছে, কত ক্লান্ত। কিছু করতে না পেরে এক পাশে দাঁড়িয়ে অশ্রু ঝরাচ্ছিলো সে। ওমায়ের এগিয়ে গেলেন তার দিকে, কাছে টেনে অশ্রু মুছে দিয়ে বললেন, “পাগলী, কান্না কিসের? এইতো আমি ভালো আছি”।

ওমনি কান্না বাধ ভাংলো তার। ফুপিয়ে কেদে উঠলো তাকে জড়িয়ে ধরে। ওমায়ের ভাবলো তাকে সময় দেয়া উচিত, কষ্ট গুলো কেদে কেদে ঝরিয়ে ফেলার জন্য। তাই চুপ করে থাকলো। কিছুক্ষন পর হুশে আসলো ফারহানা। কি করছে সে? এমনিতেই তার স্বামী অনেক দূর থেকে এসেছে অনেক চড়াই উতরাই পার হয়ে। সে বললো, “তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি টেবিলে খাবার দিচ্ছি”। বলে তার হাত থেকে হ্যান্ড ব্যাগটি নিয়ে টাওয়েল এগিয়ে দিলো। টাওয়েল টি নিয়ে ওমায়ের এগিয়ে গেলো ওয়াশ রুমের দিকে।

(চলবে)

বিষয়: সাহিত্য

১৭২১ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

312991
০৫ এপ্রিল ২০১৫ রাত ০৩:০৫
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম !

গল্পটি আসলেই বেশ চমৎকার লিখেছেন! মাশা আল্লাহ!

ভাইয়া ডিমের আবার টক হয়? আমরা কোনদিন খাইনি?

ফারহানা ওমায়ের এর জীবনকাহিনী খুব ভালো লাগলো! আপানর লিখার হাত আরো শানিত হোক এই দোআ রইলো! Good Luck
০৬ এপ্রিল ২০১৫ রাত ১২:২৪
254163
খালেদ সাইফুল্লাহ লিখেছেন : আমাদের দক্ষিন বঙ্গে ডিম টক হয়।Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor আপনি কোন বঙ্গের মানুস তা জানা নেই। পাশে থাকবেন আশা করি। পরবর্তী পর্ব পড়ার আমন্ত্রন।
312992
০৫ এপ্রিল ২০১৫ রাত ০৩:০৭
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : মাশ-আল্লাহ খুব ভালো লিখেছেন, খুবই ভালো লাগলো! আপনাকে অনেক ধন্যবাদ! চলুক সাথেই আছি! নিয়মিত লিখতে ভুলবেন না যেন!
০৬ এপ্রিল ২০১৫ রাত ১২:২৪
254164
খালেদ সাইফুল্লাহ লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনাকে। পরবর্তী পর্ব পড়ার আমন্ত্রন। Happy Happy Happy Happy
369324
১৬ মে ২০১৬ রাত ১০:০৯
borhan লিখেছেন : অনেক ভাল লাগল

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File