মাতৃভাষা ও ইসলাম
লিখেছেন লিখেছেন বিলাল হোসাইন নূরী ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ১১:৩৩:৫১ রাত
ভাষা। মানুষের প্রতি মহান আল্লাহ’র এক অনন্য উপহার। ভাষার মাধ্যমেই মানুষ প্রকাশ করে হৃদয়ের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস, আনন্দ-বেদনার আবেগময় অনুভূতি। কিন্তু পৃথিবীর সকল মানুষ একই ভাষায় কথা বলে না; তাদের একেকজনের ভাব প্রকাশের শব্দমালা অন্যজন থেকে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম ! বিস্ময়ের বিষয় হলো, একই ভাষায় যারা কথা বলে, তাদের বিভিন্ন শহর ও জনপদের ভাষাও আলাদা। তাছাড়া, প্রত্যেকের বলার রীতি, উচ্চারণ ও বাচনভঙ্গীর বিভিন্নতা তো আছেই। এ বিষয়টিকে আল্লাহ তায়ালা তার নিদর্শন হিসেবে উল্লেখ করেছেন এভাবে- وَمِنْ آيَاتِهِ خَلْقُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافُ أَلْسِنَتِكُمْ وَأَلْوَانِكُمْ ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّلْعَالِمِينَ অর্থাৎ, আর তার নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র। অবশ্যই এর মধ্যে অনেক নিদর্শন রয়েছে জ্ঞানীদের জন্য। (সূরা রূম : ৩২)
আল্লাহই ভাষার প্রথম শিক্ষক :
আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করে প্রথমেই তাকে ভাষা শিখিয়েছেন, শিখিয়েছেন কথা বলার নান্দনিক শৈলী। কুরআনের ভাষ্য, خَلَقَ الْإِنسَانَ. عَلَّمَهُ الْبَيَانَ অর্থাৎ, তিনিই মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে কথা বলা শিখিয়েছেন। (সূরা আর-রাহমান : ৩-৪)
এখানে, ‘আল-ইনসান’ তথা ‘মানুষ’ বলতে আদম (আ)-কে বুঝানো হয়েছে। ইবনে আব্বাস (রা)-এর মতে, ‘বায়ান’ তথা ‘কথা’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, “সকল কিছুর নাম”। (যেমন অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, وَعَلَّمَ آدَمَ الْأَسْمَاءَ كُلَّهَا অর্থাৎ, আর আল্লাহ আদমকে শেখালেন সকল কিছুর নাম। সুরা বাক্বারাহ : ৩১)। বলা হয়ে থাকে, আল্লাহ আদম (আ)-কে সকল ভাষা শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি সাতশত ভাষায় কথা বলতে পারতেন, যার মধ্যে শ্রেষ্ঠতম হচ্ছে ‘আরবী’। (তাফসীর আল খাযেন, মাযহারী)
নবী-রসুলদের ভাষা :
যুগে যুগে আল্লাহর সকল নবী ও রাসুল তাদের স্বজাতির ভাষায় প্রেরিত হয়েছেন। এর কারণও ব্যাখ্যা করা হয়েছে কুরআনে। বলা হয়েছে, وَمَا أَرْسَلْنَا مِن رَّسُولٍ إِلَّا بِلِسَانِ قَوْمِهِ لِيُبَيِّنَ لَهُمْ ۖ فَيُضِلُّ اللَّهُ مَن يَشَاءُ وَيَهْدِي مَن يَشَاءُ ۚ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ অর্থাৎ, আর আমি প্রত্যেক রাসুলকেই তার স্ব-জাতির ভাষায় প্রেরণ করেছি। যেন সে তাদেরকে সুস্পষ্টভাবে বুঝাতে পারে। অত:পর আল্লাহ যাকে চান তাকে পথভ্রষ্ট করেন, আর যাকে চান তাকে হেদায়াত দান করেন। তিনি প্রবল পরাক্রান্ত ও মহাজ্ঞানী। (সূরা ইবরাহীম : ০৪)
এ কথার সমর্থনে হাদীসেও বর্ণনা এসেছে, عَنْ أَبِي ذَرٍّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: "لَمْ يَبْعَثِ اللَّهُ، عَزَّوَجَلَّ، نَبِيًّا إِلَّا بِلُغَةِ قَوْمِهِ". অর্থাৎ, আবু যার (রা) থেকে বর্ণিত। রাসুল (সা) বলেছেন, আল্লাহ প্রত্যেক নবীকে তার স্ব-জাতির ভাষায় প্রেরণ করেছেন। (আহমদ)
আল্লামা ইবনে কাসীর (রহ) বলেন, هَذَا مِنْ لُطْفِهِ تَعَالَى بِخَلْقِهِ: أَنَّهُ يُرْسِلُ إِلَيْهِمْ رُسُلًا مِنْهُمْ بِلُغَاتِهِمْ لِيَفْهَمُوا عَنْهُمْ مَا يُرِيدُونَ وَمَا أُرْسِلُوا بِهِ إِلَيْهِمْ রাসুলরা মাতৃভাষা-ভাষী হওয়ার কারণ হচ্ছে, যেন তাদের জাতি রাসূল প্রেরণের উদ্দেশ্য এবং তারা কী নিয়ে প্রেরিত হয়েছেন তা বুঝতে পারে। (তাফসীরুল কুরআনিল আযীম)
আরবদের জন্য যেমন অনারব রাসুল প্রেরণ সংগত নয়;, তেমনি সংগত নয় অনারবদের জন্য আরবীভাষী রাসুল প্রেরণও। এ কারণে, সকল ভাষায় কুরআনের অনুবাদ করা আবশ্যক। (আওদাহুত্ তাফাসীর)
আসমানী কিতাবের ভাষা :
নবী-রাসুলরা যেমন স্ব-জাতীয় ভাষা-ভাষী ছিলেন, তাদের ওপর প্রেরিত আসমানী কিতাবও ছিল একই ভাষায়। ঈসা (আ) এর মাতৃভাষা ছিল সুরিয়ানি, এ ভাষায়ই তার ওপর ইনজিল অবতীর্ণ হয়। মূসা (আ) এর মাতৃভাষা ইবরানি হওয়ায় এ ভাষায়ই তাওরাত নাযিল হয়। যাবুর নাযিল হয় ইউনানি ভাষায়, কারণ তা-ই ছিল দাঊদ (আ) এর ভাষা। আর মহাগ্রন্থ আল-কুরআন অবতীর্ণ হয় রাসুল মুহাম্মদ (স)-এর মাতৃভাষা আরবিতে।
কুরআনের ভাষা আরবি কেন ?
কুরআনের ভাষা আরবি হওয়ার একমাত্র কারণ, রাসুল (সা) এর মাতৃভাষা ছিল আরবি। তিনি যাদের কাছে প্রেরিত হয়েছেন তাদের ভাষাও আরবি। সূতরাং সংগত কারণেই কুরআনকে আল্লাহ আরবি ভাষায় নাযিল করেছেন। মূলত: নবী-রাসুল ও কিতাব নাযিলের উদ্দেশ্যই হল মানুষের কাছে হেদায়াতের বাণী তুলে ধরা। যা মাতৃভাষা ছাড়া অন্য কোন ভাষায় কখনোই সম্ভব নয়। কুরআনের নিন্মোক্ত আয়াতগুলোতে মাতৃভাষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তার বিষয়টিই ব্যাখ্যা করা হয়েছে সুদৃঢ়ভাবে। ইরশাদ হচ্ছে-
فَإِنَّمَا يَسَّرْنَاهُ بِلِسَانِكَ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُونَ
০ আমি আপনার ভাষায় কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি, যাতে তারা স্মরণ রাখে। (সূরা দুখান : ১৮)
وَكَذَٰلِكَ أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ قُرْآنًا عَرَبِيًّا لِّتُنذِرَ أُمَّ الْقُرَىٰ وَمَنْ حَوْلَهَا وَتُنذِرَ يَوْمَ الْجَمْعِ لَا رَيْبَ فِيهِ ۚ فَرِيقٌ فِي الْجَنَّةِ وَفَرِيقٌ فِي السَّعِيرِ .
০ আর এভাবেই আমি আপনার প্রতি আরবী ভাষায় কুরআন নাযিল করেছি, যাতে আপনি জনপদসমূহের কেন্দ্র (মক্কানগরী) ও তার আশ-পাশের লোকদের সতর্ক করেন এবং সতর্ক করেন সমাবেশের দিন সম্পর্কে, যাতে কোন সন্দেহ নেই। একদল জান্নাতে এবং একদল জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (সূরা শুরা : ০৭)
إِنَّا أَنزَلْنَاهُ قُرْآنًا عَرَبِيًّا لَّعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ
০ আমি একে আরবী ভাষায় কুরআন রূপে অবতীর্ণ করেছি, যাতে তোমরা বুঝতে পার। (সূরা ইউসুফ : ০২)
فَإِنَّمَا يَسَّرْنَاهُ بِلِسَانِكَ لِتُبَشِّرَ بِهِ الْمُتَّقِينَ وَتُنذِرَ بِهِ قَوْمًا لُّدًّا
০ আমি কুরআনকে আপনার ভাষায় সহজ করে দিয়েছি, যাতে আপনি এর দ্বারা মুত্তাকীদের সুসংবাদ দেন এবং কলহকারী সম্প্রদায়কে সতর্ক করেন। (সূরা মারইয়াম : ৯৭)
إِنَّا جَعَلْنَاهُ قُرْآنًا عَرَبِيًّا لَّعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ
০ আমি একে করেছি কুরআন - আরবী ভাষায়, যাতে তোমরা বুঝতে পারো। (সূরা যুখরূফ : ০৩)
وَلَوْ جَعَلْنَاهُ قُرْآنًا أَعْجَمِيًّا لَّقَالُوا لَوْلَا فُصِّلَتْ آيَاتُهُ ۖ أَأَعْجَمِيٌّ وَعَرَبِيٌّ ۗ قُلْ هُوَ لِلَّذِينَ آمَنُوا هُدًى وَشِفَاءٌ ۖ وَالَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ فِي آذَانِهِمْ وَقْرٌ وَهُوَ عَلَيْهِمْ عَمًى ۚ أُولَٰئِكَ يُنَادَوْنَ مِن مَّكَانٍ بَعِيدٍ .
০ আমি যদি একে অনারব ভাষায় কুরআন করতাম, তবে অবশ্যই তারা বলত, এর আয়াতসমূহ পরিস্কার ভাষায় বিবৃত হয় নি কেন ? কি আশ্চর্য যে, কিতাব অনারব ভাষায় আর রসূল আরবী ভাষী ! বলুন, এটা বিশ্বাসীদের জন্য হেদায়েত ও রোগের প্রতিকার স্বরূপ। যারা মুমিন নয়, তাদের কানে আছে ছিপি, আর কুরআন তাদের জন্যে অন্ধত্ব। তাদেরকে যেন দূরবর্তী স্থান থেকে আহবান করা হয়। (সূরা হা-মীম আস্ সাজদাহ্ : ৪৪)
ইসলাম প্রচারের মাধ্যম মাতৃভাষা :
কোন ভাষার সাথে বিদ্বেষ পোষণ করা ইসলামের আলোকে সংগত নয়। বরং কুরআন-হাদীসের ভাষা অপরিহার্যভাবে শেখার পাশাপাশি মাতৃভাষাকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। তা না হলে দাওয়াত দানের উদ্দেশ্য ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে বাধ্য।
নবী (সা) আরব গোত্রে জন্ম নিয়েছেন। তাঁর ভাষা আরবি। পার্শ্ববর্তী অনারবীয় অঞ্চলে যখন তিনি দূত পাঠাতেন, তাদেরকে তাদের নিজ নিজ ভাষায় অনুবাদ করে কুরআন বুঝানো হতো। (মায়ালিমুত্ তানযিল : ইমাম বাগভী)
ভাষার সহজবোধ্যতার জন্য কুরআন সাতটি পঠনরীতিতে নাযিল হয়েছে। রাসুল (সা) বলেছেন, إِنَّ هَذَا الْقُرْآنَ أُنْزِلَ عَلَى سَبْعَةِ أَحْرُفٍ فَاقْرَءُوا مَا تَيَسَّرَ مِنْهُ “কুরআন সাতটি পঠনরীতিতে নাযিল হয়েছে। সূতরাং তা থেকে যা সহজ মনে হয়, তা-ই পড়।” (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযি, নাসায়ী)
এ থেকে একটা বিষয় সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হলো যে, যাদের কাছে যে ভাষায় দাওয়াত উপস্থাপন করলে তারা সহজেই বুঝতে পারবে, তাদের কাছে তা সে ভাষায়ই উপস্থাপন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে আঞ্চলিকতার আশ্রয় নেয়াও দূষণীয় নয়, বরং তা প্রশংসনীয় ও দা‘য়ীর প্রজ্ঞার বহি:প্রকাশই বটে।
নির্ভুল শব্দচয়ন ও বিশুদ্ধ উচ্চারণ :
ভাষাশৈলী ও সাহিত্য-অলংকারের বিশুদ্ধতম উদাহরণ হচ্ছে পবিত্র কুরআন। এর পরপরই রাসুল (সা) এর অমীয় বাণীসমূহ উৎকর্ষতার মানদণ্ডে কালোত্তীর্ণ হয়ে আছে। রাসুল (সা) এর ভাষা ছিল হৃদয়গ্রাহী, শব্দচয়ন ছিল আকর্ষণীয়। তিনি বলেছেন, আরবদের মধ্যে আমিই সবচেয়ে বিশুদ্ধভাষী।
একবার এক সাহাবী রাসুল (সা)-এর নিকট এসে বললেন, ‘আ-আলিজু ?’ (ঢোকা অর্থে এই শব্দের ব্যবহার আরবী ভাষায় থাকলেও অনুমতি প্রার্থনার ক্ষেত্রে তা যথেষ্ট নয়।) তখন রাসুল (সা) তার দাসীকে বললেন, বাইরে গিয়ে তাকে একথা বলতে বল, “আসসালামু আলাইকুম, আ-আদখুলু ?” কারণ সে সুন্দরভাবে অনুমতি প্রার্থনা করে নি। (আল-আদাবুল মুফরাদ, আবু দাঊদ)
সহীহ্ মুসলিমে “আল-আলফাযূ মিনাল আদাব” শিরোনামে উপযুক্ত শব্দচয়ন সংক্রান্ত একটি অধ্যায়ই আছে। সেখানে বর্ণিত হাদীসসমূহে রাসুল (সা) ভুল শব্দপ্রয়োগের সংশোধনী এনেছেন এভাবে : ‘আঙুর’কে ‘কারম’ বলো না, ‘ইনাব’ কিংবা ‘হাবালাহ’ বলো। কাউকে ‘দাস’ না বলে ‘চাকর’ বলো, কারণ সবাই আল্লাহর দাস ও দাসী; মনিবকে ‘প্রভু’ বলো না, ‘নেতা’ বলো। ‘আমার আত্মা খারাপ হয়ে গেছে’ একথা বলো না; বলো, ‘আমার আত্মা অনুতাপশূন্য হয়ে গেছে’।
রাসুল (সা) এর পরেই অলংকারপূর্ণ ভাষা প্রয়োগের দিক থেকে আলী (রা) এর স্থান। তার পাণ্ডিত্যপূর্ণ কথা ও বক্তৃতার একটি সংকলনও রয়েছে। যার নাম ‘নাহ্জুল বালাগাহ্’।
সঠিক উচ্চারণের ক্ষেত্রেও, রাসুল (সা) তো বটেই, সাহাবায়ে কেরামও অত্যধিক সতর্ক ও সিরিয়াস ছিলেন। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) তার ছেলেকে ভুল উচ্চারণের কারণে প্রহার করতেন। عن عبيد الله عن نافع قال : كان بن عمر يضرب اللحن قال الشيخ الألباني : صحيح ولده على (আল-আদাবুল মুফরাদ, মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বাহ)
উমর (রা) একবার তীর নিক্ষেপরত দুই ব্যক্তিকে অতিক্রম করছিলেন। তাদের একজন অন্যজনকে বলল, ‘আসাবতা’ অর্থাৎ তুমি নির্ভুলভাবে তীর ছুঁড়েছো। (ঐ ব্যক্তির উচ্চারণে ভুল ছিল; সে ‘সোয়াদ’ এর উচ্চারণ করল ‘সীন’ এর মত) তখন উমর (রা) বললেন, উচ্চারণের ভুল তীর নিক্ষেপের ভুলের চেয়েও মারাত্মক। مر عمر بن الخطاب رضي الله عنه برجلين يرميان فقال أحدهما للآخر أسبت فقال عمر سوء اللحن أشد من سوء الرمي (আল-আদাবুল মুফরাদ)
মানুষের সাথে সুন্দরভাবে কথা বলো :
একটি সুন্দর কথা মানুষের হৃদয়ে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যরে বীজ বপন করতে পারে। দু:খ- ক্রোধ ও হিংসার ক্লান্তি মুছে দিয়ে ছড়াতে পারে প্রশান্তি ও বিশ্বাসের সজীবতা। এ জন্যই আল্লাহ বলেছেন, وَقُولُواْ لِلنَّاسِ حُسْناً আর তোমরা মানুষের সাথে সুন্দরভাবে কথা বলো। (সূরা বাক্বারাহ : ৮৩)
এমন কি, কারো সাথে সংগত কারণে বিতর্ক করতে হলেও তা সুন্দর ভাষায় উপস্থাপন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে এভাবে : ادْعُ إِلَىٰ سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُم بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ হে নবী (সা)! আপনার রবের পথে আহবান করুন প্রজ্ঞা ও সদুপদেশের মাধ্যমে। আর তাদের সাথে বিতর্ক করুন সর্বোত্তম পন্থায়। (সূরা নাহল : ১২৫)
কুরআনুল কারীমে আল্লাহ ‘কথা’কে ‘পবিত্র’ ও ‘অপবিত্র’ এ দুই শ্রেণিতে বিভক্ত করে তাদের চমৎকার উপমা প্রদান করেছেন। যেমন :
أَلَمْ تَرَ كَيْفَ ضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا كَلِمَةً طَيِّبَةً كَشَجَرَةٍ طَيِّبَةٍ أَصْلُهَا ثَابِتٌ وَفَرْعُهَا فِي السَّمَاءِ تُؤْتِي أُكُلَهَا كُلَّ حِينٍ بِإِذْنِ رَبِّهَا ۗ وَيَضْرِبُ اللَّهُ الْأَمْثَالَ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُونَ. وَمَثَلُ كَلِمَةٍ خَبِيثَةٍ كَشَجَرَةٍ خَبِيثَةٍ اجْتُثَّتْ مِن فَوْقِ الْأَرْضِ مَا لَهَا مِن قَرَارٍ
তুমি কি লক্ষ্য কর না, আল্লাহ কিভাবে উপমা দিয়ে থাকেন ? পবিত্র বাক্য হলো পবিত্র বৃক্ষের মত। যার মূল সুদৃঢ় এবং শাখা-প্রশাখা আকাশে বিস্তৃত। সে তার পালনকর্তার অনুমতিক্রমে প্রতিনিয়ত ফল দান করে। আর আল্লাহ মানুষের জন্যে উপমা বর্ণনা করেন, যাতে তারা শিক্ষা লাভ করে। এবং মন্দ-বাক্যের উপমা একটি মন্দ-বৃক্ষের মত। যার মূল ভূ-পৃষ্ঠ হতে বিচ্ছিন্ন । যার কোন স্থায়িত্ব নেই। (সূরা ইবরাহীম ২৪-২৬)
এখানে পবিত্র বাক্যের অর্থ হচ্ছে তাওহীদের বাণী - লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। অথবা এর দ্বারা সব ধরণের ভাল কথাকেই বুঝানো হয়েছে, যা মানুষ পরস্পর বলে থাকে। যে কথা ভয়-ভীতি দূর করে এবং ভালবাসা বৃদ্ধি করে। অপরদিকে, মন্দ-বাক্য হচ্ছে কুফরী কথা-বার্তা। অথবা সকল প্রকার অশ্লীল-দুর্বল শব্দ, যা আত্মার মধ্যে মন্দ প্রভাব ও প্রচ্ছন্ন বিদ্বেষ ছড়ায়। (আওদাহুত তাফাসীর)
أَلَمْ تَرَ كَيْفَ ضَرَبَ اللَّهُ مَثَلاً كَلِمَةً طَيِّبَةً} هي كلمة التوحيد، أو هي كل كلمة طيبة يقولها الإنسان لأخيه الإنسان؛ فتهدىء من روعه، وتزيد في حبه {وَمَثلُ كَلِمَةٍ خَبِيثَةٍ} هي كلمة الكفر، أو كل كلمة رديئة بذيئة؛ تترك أثراً سيئاً في النفوس، وضغناً كامناً في القلوب "
উপসংহার :
মাতৃভাষা চর্চার প্রতি ইসলাম যে গুরুত্বারোপ করেছে, তা এককথায় অতুলনীয় ! যার ভাষা যা-ই হোক, তা উচ্চারণ, শব্দচয়ন, বাক্যবিন্যাস ও উপস্থাপনায় আকর্ষণীয় হওয়া বাঞ্ছনীয়। আর মুসলিম হিসেবে সবারই দায়িত্ব হচ্ছে, ইসলামের বাণীকে অন্যের সামনে তার মাতৃভাষায় উপস্থাপন করা। এ উপমহাদেশের মুসলমানরা একসময় ইংরেজী শেখা হারাম মনে করত, বাংলাকে বলত হিন্দুর ভাষা। আরবী-ঊর্দু-ফার্সীকেই তথাকথিত ‘ইসলামী ভাষা’ মনে করত তারা। অজ্ঞতার কারণেই এসব হয়েছিল। কবি সত্যই বলেছেন, “যেই দেশে যেই বাক্য কহে নরগণ/সেই বাক্য বোঝে প্রভু আপে নিরঞ্জন”। (আবদুল হাকিম/বঙ্গবাণী)
লেখক : এমফিল (গবেষক), ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
বিষয়: বিবিধ
১৪২৮ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন