পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাবা- আমার বাবা
লিখেছেন লিখেছেন নীলীমা ২৫ মার্চ, ২০১৪, ০৫:৪৩:৫৮ বিকাল
ভালোবাসি তোমায় ‘বাবা’ দিয়ে মন প্রাণ
তাইতো এখন তোমায় মিস করি ভীষণ
তোমার থেকে অনেক দুরে আছি এখন
হৃদয়টা থাকে তোমর কাছে সারাক্ষণ।
এখন খুব মিস করছি তোমাকে- বাবা। মাথার উপর হাত বুলানো আদর, শাসনের মাঝে অকৃত্রিম ভালোবাসা। যেদিন থেকে একটু একটু বুঝতে শিখেছি সেদিন থেকেই দেখে আসছিলাম বাবা সংসার নামক এক পরিমাপহীন বোঝা নিজে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে। মনে পড়ে যায় সাইকেলের প্যাডেল ঘুরিয়ে টুং টাং শব্দের করে স্কুলে নিয়ে যাওয়ার দিনগুলো। খুব মনে পড়ে...
বাবার পরিচয়ঃ-
আমার বাবার নাম মুহাম্মদ আলী, ডাকনাম- নীল। তার নাম থেকেই আমার নাম নীলীমা হওয়া। তার শিক্ষকতা যোগ্যতা - কামিল পাশ, পেশাগত যোগ্যতা- একজন শিক্ষক, পাশাপাশি একটি মসজিদের ইমাম। বাবার একটি সাইকেল ছিল সেটা চালিয়ে সে প্রতিদিন স্কুলে যেত। ভালো মানুষ হিসেবে এলাকায় তার যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। এটুকুই তার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।
ছোট থেকেই আমি ছিলাম চঞ্চল প্রকৃতির। গাছে উঠা, ছেলেদের সাথে ক্রিকেট খেলা, লাটিম খেলা ইত্যাদি খেলতাম। মেয়েদের সাথে তো ছিলই। আবার সবার সাথেই দুষ্টমি, ফাজলামী করতাম, কেউ হাসতো আবার কেউ রেগে যেতো।
আজ আমি বাবার সাথে ঘটে যাওয়া দু’টি মজার ঘটনা উল্লেখ করব-
আদরের ঘটনাঃ-
একটু বড় যখন হলাম তখন বাবা আমাকে নিয়ে গেল স্কুলে ভর্তি করার জন্য। প্রথম স্কুলে যাওয়া তাই মা চুলগুলো ঠিক করে সুন্দর জামা পরিয়ে দেয়। আর বাবার সাথে সাথে হাটা শুরু করলাম। স্কুলে গেলাম দেখলাম একজন স্যার বসে আছে। তার অনেক বড় টুপি, লম্বা লম্বা দাঁড়ি। আমি আর আমার বাবা তাকে সালাম দিলাম, আমার মাঝে একটা অন্য রকম ফিলিংস কাজ করতেছে- স্কুলে যাবো, কি হবে? সেখানে অনেক স্যার থাকবে, ম্যাডামরা থাকবে, পড়া না পারলে মাইর দিবে এই সেই আরো কত কি....
কিছুক্ষণ পর স্যার চক দিয়ে ব্লাক বোর্ডে একটি ‘অ’ এবং ‘আ’ লিখে আমাকে বলতে বলল আমি বললাম (ভর্তি পরীক্ষা নিচ্ছে)। এবার স্যার বলল চক দিয়ে তুমি ‘অ’ এবং ‘আ’ লিখ। এখানে ঘটে গেল একটা কাহিনী আমি ‘অ’ লিখতে গিয়ে ‘অ’ টা উল্টা লিখে ফেললাম! দুই/তিন বার চেষ্টা করলাম তারপরও উল্টাই হয় (আমার কাছে মনে হলো উল্টাটাই ঠিক)। স্যার আর বাবা হাসতে হাসতে বলে আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে!!!
তারপর থেকে শুরু হলো স্কুলে যাওয়া, প্রতিদিন যেতে হতো। মাঝে মাঝে হেঁটে হেঁটে আবার কখনও বাবার সাইকেলে করে (কারণ বাবার স্কুল একদিকে আমার স্কুল একদিকে)। সাইকেলের কথা যখন আসলো তখন একটি মজার কাহিনী মনে পড়ে গেল- একদিন বাবার সাইকেলে চড়ে স্কুলে যাচ্ছিলাম (গ্রামের রাস্তা, পাকা ছিল না রাস্তার মাঝখানে ছোট ছোট টিলা, গর্ত এগুলো থাকতো) একটি টিলার উপর দিয়ে সাইকেল যাওয়ার সময় লাফিয়ে উঠল অমনি ভয়ে আমি আব্বাকে ছেড়ে দিই! তারপর যা হবার তাই হলো। আমি উল্টা হয়ে পিছন দিকে পড়ে চিত হয়ে আছি! বাবা তাড়াতাড়ি গাড়ি স্ট্যান্ড দিয়ে আমাকে মাটি থেকে টেনে তুলল। আমার স্কুলের ড্রেস ময়লা হয়ে গেছে সেগুলো আব্বা আস্তে আস্তে পরিষ্কার করে সাইকেলের সামনে বসিয়ে স্কুলে নিয়ে গেল। এইসব মনে পড়লে প্রচুর হাসি পায়, ছোটবেলার বাবার স্মৃতিমাখা দিনগুলো মনে পড়ে যায়। মাঝে মাঝে স্মৃতিগুলো আনন্দ দেয় আবার মাঝে মাঝে কাঁদায়ও।
শাস্তিমূলক কাহিনী !
তখন ফাল্গুন মাস চারদিকে গাছে গাছে আম, জাম, কাঁঠালের মুকুলগুলো একটু একটু বড় হয়েছে। আমার ঘরের পাশের ঘরের চাচির উঠানে একটি আম গাছ ছিল। সেখানে প্রচুর আম ধরেছিল। সকালে প্রতিদিন অনেক আমের মুকুল হলদে রং হয়ে ঝরে যায়, আমরা মনে করতাম সেগুলো ফাঁকা আম। তাই বড় বড় গুলো কুড়িয়ে নিতাম (চাচি না দেখে মত)! দেখলে শেষ! একদিন হলো কি আমি ঐ আমা গাছের নিচ দিয়ে যাচ্ছিলাম দেখলাম বড় একটা হলুদ আমের মুকুল মাটিতে পড়ে আছে। আমি মাটি থেকে মুকুলটিকে তুলে নিলাম অমনি আমার চাচি ঘর থেকে বের হলো! চাচি চেঁচামেচি শুরু করল, গালি-গালাজও শুরু করে দিল। সেটা বাবা শুনতে পেল, আমাকে ধরে এনে মাথার উপর তুলে শুকনো খড়ের স্তুপের উপর দুই দুইটা আচাঁড়!! আর পিটের উপর তো উত্তম-মাধ্যম ছিলই। মাইর খেয়ে আমি তো দৌড়ে পালালাম। দুপুরে যখন ভাত খেতে আসলাম বাবা তখন চুপচাপ (বাবা অবশ্যই জানত যে আমি আমটি চুরি করিনি) তবু মারল। এরপর থেকে আমাদের জিনিস ছাড়া অন্য কারো জিনিস চোখে দেখলেও না দেখার ভান করে চলে যেতাম- কারণ বারবার বাবার মাইর কে খাবে।
এখন আমি বাবার কাছেও নাই শাসনও পাই না। জীবন তরীটি এক ঘাট থেকে অন্য একটা ঘাটে এসে ভীড় করেছে। বাবা-মা কাছে নাই, মাঝে মাঝে ফোনে কথা হয়। কিন্তু বাস্তবের সাথে ফোনের কথার তুলনা চলে! কোথায় সরাসরি অন্তরের ভাষা আর কোথায় তরঙ্গের মাধ্যমে বলা কথা!
বাবা-মা কে নিয়ে কিছু লিখতে বা ভাবতে বসলেই কালবৈশাখীর ঘন কালো মেঘে ঢাকা আকাশের মত চেহারাটা কালো হয়ে যায়। মাথার ব্রেইনগুলো ১০০ সার্কেল/সেকেন্ডে ফ্লাসবেকে ঘুরে আর একটা একটা করে সব স্মৃতি মনে করে দেয়। আর চোখে শ্রাবণের বৃষ্টি ধারার মত অঝোরে নোনা জল ঝরতে থাকে। তাই এখানেই ইতি টানতে হলো।
আর লিখতে পারলাম না, শুধু বলি হে আল্লাহ তুমি আমার বাবাকে হায়াতে তায়্যিবা দান করুন, সব সময় তাকে সুস্থ্য রাখুন।
আর বাবাকে বলি তোমাকে অনেক ভালোবাসি, আর তুমিই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাবা।
বিষয়: Contest_father
৩১৬০ বার পঠিত, ২৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আর হ্যা, আপনি কি চিটাগাংয়ের মানুষ?
আপনার উপরের লিখাটি পড়ে হাসি ধরে রাখতে পারলাম না। এসব ঘটনা কদাচিৎ ঘটে এবং মানুষের জীবনে সংগৃহীত হয়। পড়াটি খুবই ভাল লাগল। আপনার আব্বাকে আল্লাহ মর্যাদা, সম্মান ও স্বচ্ছলতা সবই দান করুন। আমিন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন