দৃশ্য ভ্রম
লিখেছেন লিখেছেন কালো অনল ১৪ মে, ২০১৩, ০৬:৪৪:৪৬ সকাল
ভ্রম
যখন দৃশ্যত কোনও অল্পপরিচিতা
উলঙ্গ শিশুকে কোলে নিয়ে মহালব্ধ
রণক্ষেত্রে
ধাবমান অশ্বারোহীদের
দিকে সংকোচে বাড়িয়ে দ্যায় হাত
অন্য হাতে ধরে রাখে প্রাণের সম্পদ,
উদ্ভিন্ন আঁচল থাকে বাতাসে উড্ডীন—
শোকাবহ
প্রেক্ষাপটজুড়ে বিরামহীন
উড়তে থাকে কালো পায়রার দল:
দাও, বাবা, যাই দয়া হয়
কিছু দাও, কিছু দাও, কিছু;
খুব ভয় লাগে। মনে হয় কেউ তাকে কিছুই
দেবে না।
নিরঙ্কুশ উপেক্ষায় পার
করে চলে যাবে তাকে। কেউ
যদি বলে বসে, তোমার চিতায় আমাকেও
ছাই করে নাও
তেমন অনল অবশিষ্ট নেই জানি, যেটুকু
অঙ্গার আছে
তাই গায়ে মেখে ছাই হতে চাই,
দয়ার অধিক দানে ঋদ্ধ করে নেব
যৌথ বাহুমূল, একবার জ্বালো শুধু উদাত্ত
আগুন।
ভয়ে ভয়ে পার হয়ে যাই সুষমাবিহীন
মুখ
তীব্র উপেক্ষায়,
অথবা পকেটে করতল রেখে সম্পূর্ণ
উদাস;
যেন তার কোলে বসে থাকা শিশুটির
প্রশান্ত স্বপ্নের নিচে
কোনও প্রত্যাশার মৃদু আলো জ্বলে নেই।
শোকাবহ প্রেক্ষাপটে জিরজিরে সেই
মাতৃমুখ
কোনও কোনও স্বপ্নে কেন প্রাণের
মালিনী হয়ে যায়?
শিশু সন্তানের মুখে কেন
বেজে ওঠে আত্মজের করুণ সংগীত?
সন্তান জড়িয়ে বুকে কোনও ভিখারিনী
যখনই আমার দিকে প্রসারিত করে দ্যায়
হাত,
আমি দেখি হাওয়ার তাণ্ডবে উড়ছে
মালিনীর এলোচুল, বাতাস
দুলিয়ে দিচ্ছে শীর্ণ
আত্মজের দু’পা।
প্রলয়ের মরূদ্যানে একা পরিত্যক্ত মাছ
হয়ে
অবিরাম খাবি খাই জলো প্রার্থনায়!
উৎসব
নদীর ওপাশে বুঝি জ্বলে দাবানল।
আলো হয়। সমবেত জনসাধারণ।
সবিশেষ
স্বর্ণতিথি ফেটে পড়ছে উদযাপনে।
বহুদূর থেকে বোঝা যায় আনন্দের ছটা,
নাচের বাহার। আলো হয়, শব্দ হয়।
সংগীতের তালে তালে বাতাসে পুড়ছে
দ্যাখো আতশবাজীর লেজ, মাথা, মুণ্ডু;
দুলে
ওঠে নিতম্ব প্রদেশ। প্রদর্শিত দাঁত—
ঝকঝকে, দ্যুতিময়।
তাবৎ উৎসবের
মধ্যমণি কি শেষাবধি আলো, শব্দকীট?
আলোহীন, মৌন উৎসবের গল্প
কখনো শুনেছো নাকি কেউ?
জীবাশ্মের যে আদিম অন্ধকার থেকেই
উদয়,
পৃথিবী দেখার পূর্বমুহূর্ত
অব্দি যে নির্মল অন্ধকারে
লালিত বর্ধন আমাদের,
চিন্তাহীন, জলমায়াসুশোভিত সেই সরল
অধ্যায় ভুলে
যাবার জন্যই কি আমরা আজীবন তাড়িত
পতঙ্গ হয়ে
দৌড়ে যেতে চাই আলো-উৎস, শব্দ-
বিবাদের দিকে?
কেবল গোপন
যে উৎসবে ভাগ্যলিপি লেখা হয়
তা-ই বাক্যহীন। প্রাকৃত বিরোধ।
আঁধারে পালিত আর কোলাহল
বিবর্জনে জমে ওঠা
প্রকৃত বিধান।
হাঁস
জগতের সকল প্রাণিরই শীত
সংবেদনা আছে।
কেবল হাঁসের নেই। কেননা হাঁসের
মাংস সর্বদাই উষ্ণ।
প্রচণ্ড শীতেও। ব্যাঞ্জন শীতল হলেও
প্রতিটি
পেশীর ভেতর বিরামহীন
উড়তে থাকে প্রলয়ংকরী
প্রচ্ছন্ন হলকা। ছুঁলে বোঝা যায়
না হয়তো।
খেলে বোঝা যায়। কারণ তখন রক্তে
সংক্রমিত হয় হাঁসের অনল।
জ্বলতে আরম্ভ
করে শিরা ও ধমণী। সর্বোপরি চোখ।
কুয়াশার মায়াজাল ছিঁড়ে ক্রমশ
পুড়িয়ে দিতে
ইচ্ছা হয় দহনশীলা যা আছে মধ্যম
রাত্রির।
মূর্খ বালক
সমধিক বেদনায়
তুমি হেসে ওঠো বন্ধুবর,
আমিও হাসিতে ফাটি। তারমানে এই নয়
বন্ধু
ক্রন্দনশীলা সময় আমাদের চলে গেছে।
অথবা সহাস্য মুখ আসলে কান্নার
মূর্তায়ন।
হয়তো আমরা বেশ বুঝে গেছি এই
পাকা দাড়ি
টাক পড়া মাথার ঘিলুতে
এক নির্বোধ বালক তার বেভুল আঙুল
দিয়ে
ক্রমাগত টিপে যাচ্ছে পিয়ানোর রিড,
কান্নার মুহূর্তে ভুল
করে তুলে ফেলছে সহাস্যকলতান।
তাহলে নিশ্চয়ই প্রকৃত হাসির দিনে
সে বাজাবে বেদন বরিষণের সুর—
ঝরোঝরো বিলাপের।
আমরা কি সেই ভ্রান্ত দুপুরের অপেক্ষায়
আছি?
গুহা
স্বপ্নের জগত নিয়ে কোনও কথা নেই।
স্বপ্নের পেছনে যে হালকা নাট্য, মৃদু
উচ্চারণ,
ছিন্ন অঙ্ক নিয়ত মঞ্চস্থ হয়— তাই
নিয়ে ভাবি।
জানি না রঙিন কিনা, অথবা নিপাট
শুভ্রশাদাকালো।
ঘুমানোর আগে যেভাবে নিবিষ্ট হই,
সারাদিন লেজমোটা বিড়ালের পিছুপথ
ধরে
মাতৃবিচ্যুতির হাহাকার যতটা জমাই,
সেই মৃদুরাগ থেকে স্বপ্নের গুহায়
নেমে যাই।
বহুলব্ধ অচেনা জগত।
মায়া মর্মরিত।
দেয়ালে চিত্রিত শত্রু দেবতার মুখ,
আকর্ণবিস্তৃত হাসি, মাথার উইগ,
ভয়াবহ সোয়েটার।
কতিপয় বন্ধুও থাকেন। প্রদানে অভ্যস্ত
শুধু গ্রহণে মোটেও নন।
দু’হাত বাড়িয়ে আমি শীতবিদ্ধ কামাল
কব্রেজ হয়ে যাই
কখনো উলঙ্গ মনতোষ।
বলি— দাও, দাও, যা কিছু তোমার
আছে অন্তিম সঞ্চয়;
উত্তাপের কারবারী আমি,
ছেঁড়া পাতা জড়ো করে পার্বণ জ্বালাই
পাশে রাখি মদের গিলাস
বুনো ডাহুকের মদ— অস্থিচর্মহীন
গ্রাস ভরে নিতে পারো তুমি সারাৎসার
— পরাণের আস্ফালন।
চুম্বনদৃশ্যের ঘনিষ্ঠতা নিয়ে কোনও
কথা নেই।
কথা নেই উত্তেজনা নিয়ে যা বিরাজ
করে দর্শকের চোখে,
হৃদপিণ্ডে। সব কথা শুধু দৃশ্যকুশীলবের
মাথার উপরে
বিরতিহীন উড়তে থাকা কৃত্রিম চোখের
বিষয়ে
যার মধ্যে অনূদিত হয় উষ্ণতর
প্রতিক্রিয়া।
নেপথ্যের কৌশল লুকিয়ে রাখে অজ্ঞাত
শুঁড়িখানায়।
দান
দুই হাত প্রসারিত নয়, তোমার সকল দান
তাই নিতে পারি নাই। মুঠো, আঙুলের
ফাঁক গলে
ঝরে গেছে জলের বিরল দান। তখন
দিবস
বর্ষণের। সারাদিন সারারাত কেবলই
বর্ষণ।
আকাশে তাকিয়ে দেখেছি মেঘের
করতালি— বজ্রের উল্লাস;
কানে বেজেছে শুধুই খড়ের গাদায়
পতনের মূখ্যশব্দ।
এসকল দৃশ্য,
এসকল প্রাণের সঞ্চার
এতটা মহার্ঘ্য কোনওদিন ভাবি নাই।
অবোধ বালক যেরকম নির্বোধ আঙুল তার
মুঠো করে ভাবে বাড়ির আঁধার কোণে
ছেড়ে দেবে রোদ— মাঠের সমস্ত রোদ,
কালাই ক্ষেতের স্বাদ
ততটা বিভ্রান্ত বুঝি আমিও ছিলাম।
এখন দুর্যোগ।
পকেট উন্মুক্ত করে দেখি
সেইসব বারিধারা বর্ষণের কোনও
চিহ্নমাত্র
অবশিষ্ট নেই আমার সঞ্চয়ে।
সব ঝরে গেছে।
কাকের বাসায় ছিলো কোকিল শাবক
ডানায় উদ্যম পেয়ে ফিরে গেছে নিজ
অক্ষপথে।
সাথে নিয়ে গেছে বাৎসল্যের নীরব
বেদনা।
ওই সর্বশান্ত কাক আমি
আমার সন্তান ওড়ে কোকিলের সাথে
কোকিলের ডালে বসে খায়, ঘুম যায়।
একাকি ঘুমাই। জাগি দিবসের আগে।
অমোঘ প্রস্তাবনায় দুই হাত প্রসারিত
রাখি
যেন আমি জেনে গেছি— বিরল মুহূর্ত
কারো বিগত হয় না।
বার বার ফিরে ফিরে আসে। যদি চোখ
খোলা থাকে
তাহলে নিশ্চয়ই
দু’চোখে আবার দৃশ্যমান হবে সেই
বজ্রউল্লম্ফন
বিষয়: বিবিধ
১০২২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন