বেনামাজি মুসলিম কতটুকু মুসলিম
লিখেছেন লিখেছেন আদার ব্যাবসায়ী ১৫ মে, ২০১৩, ০৬:৫৩:২৯ সন্ধ্যা
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
ইসলামের ৫ টি স্তম্ভের মাঝে ঈমান আনয়নের পরই যেই ভিত্তিটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেটি হল সালাত বা নামাজ।
" ইসলাম ৫ টি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত।এক আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে এক আল্লাহ ছাড়া আর কোন মাবূদ নেই এবং সাক্ষী দিচ্ছি মোহাম্মদ (স) আল্লাহর রাসুল , নামাজ কায়েম করা, যাকাত আদায় করা, হজ্ব করা এবং রমাজান মাসে রোজা রাখা, "-(মুত্তাফিকুন আলাইহি)
পবিত্র কোরআনে সবচেয়ে বেশিবার যেই কথাটি আল্লাহ গুরুত্ব দিয়ে বলেছেন তা হচ্ছে
"আক্বিমুস সালাত" অর্থাৎ নামাজ কায়েম করো।
কিয়ামতের দিন যেই জিনিসের হিসাব সবার আগে নেয়া হবে তা হল নামাজ।নামাজ ছাড়া জান্নাতে যাওয়া যাবে না।রাসুল (স) বলেন-
"নামাজ হল বেহেশতের চাবি"
কিন্তু এই চাবিকাঠিকে আমরা কতটুকু কাজে লাগাচ্ছি??উপরের আয়াত এবং হাদিস এমন কোন মুসলিম নেই জানে না।তারপরেও কয়জন মুসলিম ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে??বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের একজন বিশিষ্ট অধ্যাপকের জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশে ৫ ওয়াক্ত নামাযী ব্যক্তির সংখ্যা শতকরা ২ জন (মাত্র)!!!!!!!! বাকী ৯৮ শতাংশের মাঝে কেউ শুধু ঈদের সালাত পড়ে, কেউ জুম'আ পড়ে, কেউ সপ্তাহে ২/৩ দিন পড়ে, কেউ আবার দিনে ১/২/৩/৪ ওয়াক্ত পড়ে!!!!!!!
আল্লাহ প্রত্যেক মুসলিম নর নারীর উপর ৫ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন।
অতএব, তোমরা আল্লাহর পবিত্রতা স্মরণ কর সন্ধ্যায় ও সকালে,এবং অপরাহ্নে ও মধ্য দুপুর ও রাতের প্রথম অংশে। নভোমন্ডল ও ভূমণ্ডলে, তাঁরই প্রশংসা। ( সূরা রোম, আয়াত-১৭-১৮)
এছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নামাজের ওয়াক্ত কখন তা ঠিক করে দিয়েছেন।
যেমনঃ
১/ ফজর- আয়াত নং (১৭:৭৮), (১১:১১৪), (০৭:২০৫), (৩০:১৭) ও (৩৮:১৮)
২/ জহুর- আয়াত নং (১৭:৭৮) ও (৩০:১৮)
৩/ আছর- আয়াত নং (১১:১১৪), (০২:২৩৮), (৩০:১৭) ও (৩৮:১৮)
৪/ মাগরিব- আয়াত নং (১৭:৭৮), (১১:১১৪) ও (০৭:২০৫)
৫/ ইশা- আয়াত নং (১৭:৭৮), (১১:১১৪) ও (৩০:১৮)
যেই ব্যাক্তি ঠিকমত নামাজ আদায় করবে না তাকে বেনামাজি বলেই আখ্যায়িত করা হয়। আমি এখানে নামাজের ফজিলত নিয়ে কোন কথা বলবো না। এই বেনামাজিদেরকে কোরআন হাদিস কি বলেছে সে সম্পর্কে কিছু তুলে ধরবো ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ তা'আলা বলেন:
"তোমরা নামায প্রতিষ্ঠা করো এবং কখনও মোশরেকদের দলভুক্ত হয়ো না।" ( সূরা আর-রুম: ৩১ )
আল্লাহ রাব্বুল কোরআনের আরেক জায়গায় বলেনঃ
"অত:পর এদের পর এল অপদার্থ লোকেরা। তারা নামায নষ্ট করল এবং কুপ্রবৃত্তির অনুবর্তী হল। সুতরাং তারা অচিরেই পথভ্রষ্টতায় পতিত হবে। কিন্তু তারা ব্যতীত যারা তওবা করেছে এবং ঈমান এনেছে।" ( সূরা মারইয়াম: ৫৯-৬০ )
আল্লাহ তা'আলা আরো বলেন:
"যদি তারা তওবা করে ও নামায আদায় করে এবং যাকাত প্রদান করে তবে তারা তোমাদের দ্বীনী ভাই।" ( সূরা তওবা: ১১ )
"পরস্তু, তাদের পর সেই অযোগ্য, অবাঞ্ছিত লোকেরা তাদের স্থলাভিষিক্ত হল যারা নামাজকে বিনষ্ট করলো আর নাফসের লালসা বাসনার অনুসরণ করলো"-(মারইয়াম-৫৯)
অর্থাৎ কেউ যদি তওবা করে নামাজের দিকে ফিরে আসে তবে সে আমাদের দ্বীনি ভাই। নতুবা দ্বীনি ভাই নয়।
অন্য একটি আয়াতে এসেছে
"পরস্তু, তাদের পর সেই অযোগ্য, অবাঞ্ছিত লোকেরা তাদের স্থলাভিষিক্ত হল যারা নামাজকে বিনষ্ট করলো আর নাফসের লালসা বাসনার অনুসরণ করলো"-(মারইয়াম-৫৯)
এবার আসুন দেখি হাদিসে কি বলা আছে বেনামাজিদের কে নিয়ে।
জাবের বিন আবদুল্লাহ ( রা: ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি শুনেছি, নবী ( সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) বলেন, " মুসলিম বান্দা এবং কাফের ও মুশরিকের মধ্যে পার্থক্য হল নামায পরিত্যাগ করা।" ( সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ঈমান )
তার মানে রাসুল (স) একজন কাফির ও একজন ঈমানদারকে চিহ্নিত করার একটা উপায় হিসেবে নামাজকে বলেছেন।
একই ধরনের আরেকটি হাদিস পাওয়া যায়
"বান্দা , কুফর আর শিরকের মাঝে ফারাক হচ্ছে নামাজ ত্যাগ করা ।"
আসুন এ সম্পর্কে আরও কিছু হাদিস পর্যালোচনা করি।
বুরায়দা বিন সুহাইব ( রা: ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি শুনেছি, নবী ( সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) বলেন, " তাদের মাঝে এবং আমাদের মাঝে চুক্তি হচ্ছে নামাযের, যে ব্যক্তি নামায পরিত্যাগ করবে সে কাফের হয়ে যাবে।" ( মুসনাদে আহমাদ, তিরমিযী, কিতাবুল ঈমান। নাসাঈ, কিতাবুস সালাত। ইবনু মাজাহ, কিতাবুস সালাত ওয়াস সুন্নাহ্ ফীহা )
উবাদা বিন সামেত ( রা: ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ( সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) আমাদেরকে নসীহত করেছেন, " তোমরা কোন কিছুকে আল্লাহর সাথে শরীক করবে না। ইচ্ছাকৃত ভাবে নামায পরিত্যাগ করবে না। কেননা যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত ভাবে নামায পরিত্যাগ করবে সে মিল্লাতে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে।" ( সুনানে ইবনু আবী হাতেম, হায়ছামী মাজমাউয যাওয়ায়েদ। মুসতাদরাকে হাকীম )
উপরে যতোগুলো কোরআনের আয়াত ও হাদিস তুলে ধরলাম তাতে ওইসব মুসলিম দাবিকারি মুসলিম যাদের কাছে নামাজের গুরুত্ব শুধু জুম্মাবারে বা দুই ঈদে তাদের কাছে আমার প্রশ্ন এরপরেও নিজেকে মুসলিম দাবি করাটা কতটুকু যুক্তিযুক্ত???আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সকলকে ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করার তৌফিক দিন এবং ওই সকল মুসলিম যারা নিজেদেরকে মুসলিম বলে দাবি করে অথচ নামাজ আদায় করে না তাদেরকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন হেদায়াত দান করুন।আমিন
বিষয়: বিবিধ
১৯৩৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন