নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী কীর্তি নিধি বিস্তার সাাৎকার।

লিখেছেন লিখেছেন মাজহারুল ইসলাম ২৮ অক্টোবর, ২০১৫, ০৫:৫৬:২৪ বিকাল

প্রশ্ন : ১৯৬৯ সালে ভারত যখন প্রথম অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করেছিল, তখন আপনি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এটি নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?

কীর্তি নিধি বিস্তা : আমার সরকার নেপালে ভারতের সামরিক মিশন সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর ওই অবরোধ আরোপ করা হয়েছিল। উত্তরে তিব্বত সীমান্ত চেকপোস্টে ভারতীয় সেনা মোতায়েন ছিল। জাওয়ালাখেলে প্রধান চিড়িয়াখানার (বর্তমানে যেখানে স্টাফ কলেজ) ঠিক সামনেও ছিল একটি ভারতীয় সামরিক মিশন। আমি সেসব সরিয়ে দেই। আমি রাজা মহেন্দ্রর কাছ থেকে দৃঢ় সমর্থন পেয়েছিলাম। তবে অবরোধটি খুব কঠিন ছিল না। সেটি ছিল নেপালকে একটি শিা দিতে এবং এটি প্রমাণ করতে যে, ভারত এমন একটি শক্তি যাকে হিসাব করে চলতে হবে। এর আগে চীনের সাথে আমাদের ভালো সম্পর্ক ছিল না। ফলে অবরোধটি কঠিন ছিল। তবে সেটি এখনকারটার মতো এত কঠোর ছিল না।

প্রশ্ন : আপনার সরকার ওই সঙ্কট কিভাবে মোকাবেলা করেছিলেন?

কীর্তি নিধি বিস্তা : ১৯৬৯ সালের অবরোধটি নেপাল-ভারত সম্পর্ককে নস্যাৎ করেনি। পরে ১৯৭২ সালে আমি যখন ভারত সফরে যাই, তত দিনে আমরা ভালো বন্ধুতে পরিণত হয়ে গেছি। আমি ইন্দিরা গান্ধীকে নেপালে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম, তিনি পরে আমাকে দিল্লি আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তিনি আমাকে সর্বোত্তম আতেথিয়তা দিয়েছিলেন। তিনি আমাদের ১৯৭২ সালের বৈঠকে তার গভীর উদ্বেগের কথা জানিয়েছিলেন। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী, আপনি কেন এমন প্রকাশ্যভাবে ভারতীয় সামরিক মিশনগুলো সরিয়ে দিলেন? আমরা কূটনীতিকভাবেও কাজটি করতে পারতাম।’

আমি জবাব দিয়েছিলাম, এটি দিয়ে কখনো ভারতকে অপমান করা বোঝায়নি। নেপালি জনগণ চেকপোস্ট আর সামরিক মিশনগুলোর অপসারণ চেয়েছিল। তারা যা চেয়েছিল আমরা তা-ই করেছি। এর মানে এই ছিল না যে আমরা ভারতের বিরুদ্ধে বৈরী হয়ে পড়েছি, চীনের সাথে বন্ধুত্ব করেছি। আমি তাকে বোঝাতে পেরেছিলাম, এই অপসারণের ফলে নেপাল-ভারত সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় উপনীত হয়েছে। আমি তাকে এটিও বলেছিলাম, চীনের সাথে আমাদের সম্পর্ক নিয়ে ভারতের ভয় পাওয়ার কিছু নেই।

আমি বলেছিলাম, চীন আমাদের প্রতিবেশী ঠিক যেমন ভারত। ফলে চীনের সাথে আমাদের সম্পর্ক পারস্পরিক বোঝাপড়া বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। তিনি একমত হয়েছিলেন। এরপর ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্ক সাবলীল হয়েছিল। ভারতে আমাদের দূতাবাস একটি সংবর্ধনার আয়োজন করেছিল, এমনকি মিসেস গান্ধী মন্ত্রিসভার বৈঠক বাদ দিয়েও তাতে উপস্থিত হয়েছিলেন। তিনি আমাকে বলেছিলেন, বন্ধুত্বের নতুন একটি যুগের সূচনা হলো। তাই ১৯৬৯ সালের অবরোধ আসলে ভারত-নেপাল সম্পর্কে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেনি।

প্রশ্ন : রাজা মহেন্দ্র কিভাবে অবশিষ্ট বিশ্বের সাথে নেপালের সম্পর্ক নতুন করে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন?

কীর্তি নিধি বিস্তা : সম্ভবত রাজা মহেন্দ্র ছিলেন এ যাবৎকালের সবচেয়ে সাহসী এবং সবচেয়ে প্রাজ্ঞ রাজা। তার দৃঢ়সঙ্কল্প না থাকলে অরানিকো হাইওয়ে নির্মাণ কখনো হতো না, আমরা চীনের মতো অন্য দেশগুলোর সাথেও কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে পারতাম না। এমন অনেক প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, যারা বলতেন, দিল্লি ছাড়া অন্য কোথাও দূতাবাস স্থাপনের দরকার নেই। মহেন্দ্র তাদের কথা শোনেননি। তিনি দুনিয়ার বাকি অংশের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক সৃষ্টির নতুন যুগের সূচনা করেন। এখনকার সমস্যা হচ্ছে, ভারতের অসন্তুষ্টির ভয়ে আমাদের নেতারা চীনের কাছে যেতে পারছেন না। আমরা চীনের কাছে সাহায্য চাইলে, আমি নিশ্চিত, তারা সবধরনের সহায়তা দেবে। আমরা এখন ভয়াবহ ধরনের অবরোধের শিকার হয়েছি। তারা কেন এটিকে আন্তর্জাতিকীকরণ করছে না। সীমান্ত থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে চীনের রেলওয়ে রয়েছে।

প্রশ্ন : ১৯৮৯ সালের অবরোধ সম্পর্ক কিছু বলুন। কেন এটি হয়েছিল?

কীর্তি নিধি বিস্তা : ওই সময় আমি প্রধানমন্ত্রী ছিলাম না। ফলে আমি বিস্তারিত জানি না। যতটুকু জানি তা হলো, চীনের কাছ থেকে নেপাল অস্ত্র আমদানি করলে ভারত-নেপাল সম্পর্ক তিক্ত হয়। এটা ভারতকে ক্রুদ্ধ করেছিল। রাজা বীরেন্দ্র সম্ভবত কারো পরামর্শে এটি করেছিলেন।

প্রশ্ন : ১৯৮৯ সালের অবরোধ নেপাল কিভাবে মোকাবেলা করেছিল?

কীর্তি নিধি বিস্তা : ১৯৮৯ সালের অবরোধ ছিল বিপর্যয়কর, সম্ভবত এখনকারটির চেয়েও খারাপ। রাজা বীরেন্দ্র দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করা সত্ত্বেও তিনি পরাজয় মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। আজ আমাদের অনেক কিছু আছে, যা ১৯৮৯ সালে ছিল না। এই যেমন অবকাঠামো, টেলিযোগাযোগ, বেসরকারি খাতের শিল্প ইত্যাদি। তবে তখন আমরা এখনকার মতো খাদ্যশস্যের জন্য ভারতের ওপর এত নির্ভরশীল ছিলাম না। চীন আমাদের উদারভাবে সহায়তা করেছিল। তারা তিব্বত দিয়ে আমাদের জ্বালানি দিয়েছিল। অন্যান্য দেশও সহায়তা করেছিল। চীন সবসময়ই নেপালের ভালো বন্ধু। চীন সবসময় আমাদের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে শ্রদ্ধা করে। একমাত্র ভুল চীন এবং সেই সাথে নেপাল করেছিল তা ছিল লিপুলেখ-বিষয়ক। আমি আপনাদের পত্রিকায় বিষয়টি নিয়ে লিখেছি। আমি আশা করছি চীন লিপুলেখ চুক্তি বাতিল করবে।

প্রশ্ন : নেপালের কাছ থেকে ভারত কী চায় বলে আপনার মনে হয়? কেন কয়েক দশক পরপরই অবরোধ আসে?

কীর্তি নিধি বিস্তা : ১৯৫০ সাল থেকে ভারত আমাদের সাথে সমান মর্যাদার আচরণ করছে না। ভারত প্রায় ২০০ বছর ব্রিটেনের উপনিবেশ ছিল। আমরা সবসময় ছিলাম স্বাধীন দেশ। ভারত এখন মুক্ত, কিন্তু সে চায় নেপালকে উপনিবেশ বানাতে। তাকে এই ঔপনিবেশিক মানসিকতা ঝেড়ে ফেলতে হবে। আমার আশঙ্কা হচ্ছে, নেপালি নেতারা তাদের আত্মা বিক্রি করে দিয়েছেন। তাই তারা ভারতের দাদাগিরির বিরুদ্ধে কথা বলতে পারছেন না। তারা ভারতের সাথে বৈরিতা না বাড়িয়েই নেপালের স্বাধীনতা প্রশ্নে দৃঢ় থাকতে পারেন।

ভারত চায় আমাদের নিরাপত্তাব্যবস্থা তার নিয়ন্ত্রণে নিতে, আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ তার কাজে ব্যবহার করতে। তরাই অঞ্চলে চলমান উত্তেজনা অনেক প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। আমাদের ভুলে যাওয়া চলবে না যে, মাধেসিরা নেপালি। হয়তো গুটিকতেক বদখেয়ালি নেতা আছেন, যারা এই দেশের তি করতে চান। তবে সাধারণভাবে মাধেসিরা নেপালকে ভালোবাসেন। অনেক সন্দেহ করলেও সত্যিকার অর্থে তারা মাধেসিকে ভারতের সাথে বিলীন করতে চান না। এ কারণে ভারতের নেপালে সম্প্রসারণের ভয়টি অমূলক। বর্তমান কাল ও সময়ে কোনো দেশ অন্য কোনো দেশ দখল করতে পারে না। ভারত যদি তেমন কিছু করার চেষ্টা করে, তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নীরব থাকবে না।

ভারত চায় নেপালের পুরো নিরাপত্তাব্যবস্থা এবং পানিসম্পদের ওপর নিরঙ্কুশ প্রাধান্য। আমার মনে হয়, সপ্তকোশির ওপর তার নজর রয়েছে। এই অবরোধ হলো এই দু’টি ল্য অর্জনের একটি কৌশল। আমার ভয় হচ্ছে, ভারত তা পেয়ে যাবে। ভারত চায় নেপালের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব কেবল নামেই থাকুক, আর প্রতিটি খাতের নিয়ন্ত্রণ থাকুক তার হাতে।

প্রশ্ন : বর্তমান সঙ্কট মোকাবেলায় আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের কী করা উচিত বলে আপনার মনে হয়?

কীর্তি নিধি বিস্তা : নেপালি নেতৃত্বকে দেশের প্রতি আনুগত্য প্রমাণের এটাই সর্বোত্তম সময়। তাদের উচিত হবে না ভারতীয় ও ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে নেপালিদের পাঠানো। অন্য দেশের স্বার্থ পূরণের জন্য কোনো নেপালির রক্তরণ করা উচিত নয়। ভারত ও যুক্তরাজ্যের জন্য আমরা হাজার হাজার নেপালি সৈন্যকে হারিয়েছি। এটা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। আমাদের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা রার জন্য নেপালিদের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই করা দরকার। দেখুন, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ভারত রণাঙ্গনে আমাদের সৈন্যদের ব্যবহার করছে। আর বিনিময়ে তারা নেপালের ওপর অবরোধ আরোপ করেছে। তাই আমি নেপালি নেতাদের অনুরোধ করব, তারা যেন ভারতের কাছে নতি স্বীকার না করেন। আত্মসমর্পণের চেয়ে মৃত্যু অনেক মর্যাদার।

তবে এখনো পথ খোলা আছে। নেপালের উচিত চীনের কাছে যাওয়া। প্রয়োজনের সময় চীন সবসময় আমাদের সহায়তা করে। ১৯৮৯ সালের অবরোধে তারা আমাদের বিপুলভাবে সহায়তা করেছে। নেপালে চীনের একমাত্র ভুল ছিল লিপুলেখ নিয়ে, আমি আশা করব, তারা এটি সংশোধন করবে। চীন আমাদেরকে কয়েকটি চিনি ও কাগজকল স্থাপনে সহায়তা করেছে। এখন তারা সবাই চলে গেছে। আমরা যদি চীনের এই সহায়তাকে পুঁজি করে বাণিজ্যকে বহুমুখী করতাম, তবে আজকে আমাদেরকে এ অবস্থায় পড়তে হতো না। আমি পত্রিকায় পড়েছি, নেপালের সাথে আরো রুট খুলতে চীন তৈরি। কিন্তু আমি শুনছি, নেপালি নেতারা ভারতের চাপের কারণে তাতে সাড়া দিচ্ছে না।

এখন চীনের কাছে যাওয়ার জন্য তাদের দরকার কিছু সাহস দেখানো। ইঁদুরের মতো তাদের কোনায় লুকিয়ে থাকা বন্ধ করা দরকার। এখন সময় হলো সিংহের মতো গর্জন করার। হ্যাঁ, ভারতের সাথে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার চেষ্টাও করা উচিত আমাদের। কিন্তু যদি তারা দাদাগিরি ফলানো অব্যাহত রাখে আর আমাদের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ চালাতে থাকে তবে আমাদের উচিত সেটির বিরুদ্ধে লড়াই করা।

প্রশ্ন : ভারত দাবি করছে, নতুন সংবিধান মাধেসি লোকজনের সমস্যা দূর করবে না।

কীর্তি নিধি বিস্তা : সংবিধান হলো ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এই সংবিধান কেমন হবে তা নিয়ে নেপালকে পরামর্শ দেয়ার দায়িত্ব ভারতের নয়। মাধেসি জনগণের কিছু দাবি (যেমন আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব এবং অন্তর্ভুক্তি) যথাযথ। ওই পর্যন্ত ঠিক আছে। কিন্তু কিছু নেতা ভারতের অনুগত হয়ে তরাই প্রান্তর এবং আমাদের সব সম্পদের ওপর পুরো নিয়ন্ত্রণ চাচ্ছে। নেপালিদের এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে, এই নোংরা ষড়যন্ত্রের কাছে নত হওয়া যাবে না।

প্রশ্ন : ইতঃপূর্বে আপনি বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নেপালকে উদ্ধারে আসবে। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মোটামুটিভাবে নীরব রয়ে গেছে।

কীর্তি নিধি বিস্তা : আপনার প্রথমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া উপলব্ধি করতে হবে। ভারত ছাড়া অন্য সবাইÑ জাতিসঙ্ঘ, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য সবাই নেপালি সংবিধানকে স্বাগত জানিয়েছে। এর মানে হলো, তারা এটিকে স্বীকৃতি দিয়েছে। তারা যখন বলছে যে তারা নেপালের সংবিধানকে স্বীকৃতি দিয়েছে, তখন তারা পরোভাবে ভারতীয় অবরোধের বিরোধিতা করছে। কূটনীতিতে সব কিছু খোলাখুলি বলা যায় না। তারা এটি স্বীকার করে নিয়েছে, সংবিধান প্রণয়ন সম্পূর্ণভাবে নেপালের অভ্যন্তরীণ বিষয়। ভারত যদি আমাদের দুর্ভোগ বাড়িয়েই চলে, তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নীরবে বসে থাকবে না। আমাদের এই বেদনা সহ্য করতে হবে, আমাদের এটিকে প্রতিরোধ করতে হবে। আমরা ভূমিকম্পের দুর্ভোগ সহ্য করেছি। আমাদেরকে ভারতের দাদাগিরিও সহ্য করতে হবে। শেষ পর্যন্ত বিশ্ব আমাদের কথা বলবে।

প্রশ্ন : আগামীতে নেপাল-ভারত সম্পর্ক কেমন হবে বলে আপনি মনে করেন?

কীর্তি নিধি বিস্তা : চূড়ান্তপর্যায়ে ভারত ও চীন উভয়ের সাথেই নেপাল সুসম্পর্ক বজায় রাখবে। তবে প্রতিটি দেশকেই আমাদের সাথে সমান মর্যাদা দিতে হবে। ভারতের সাথে সম্পর্ক রার সময় আমাদেরকে অবশ্যই আমাদের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার সাথে আপস করা চলবে না। এখন নেপালিদের ওপর ভারত অকল্পনীয় দুর্ভোগ চাপিয়ে দিয়েছে। নেপালের উচিত হবে ভারতের সাথে সম্পর্ক সংশোধন করা। নেপালের ভারতকে বোঝাতে হবে যে, নেপালের সাথে ভালো সম্পর্ক রা করা উচিত ভারতের স্বার্থেই। আর উচিত নেপালকে স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসেবে থাকতে দেয়া। স্বাধীন দেশ হিসেবে নেপালের গৌরবময় ইতিহাসের কারণে আমাদের উচিত হবে মৃত্যুবরণের জন্যও প্রস্তুত থাকা।

একই সাথে, চীনের সহায়তাও চাওয়া উচিত নেপালের। আমি নিশ্চিত চীনারা ‘না’ বলবে না। তবে আমরা প্রায়ই চীনা সহায়তা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হই। ১৯৭২ সালে ফিরে যাই। আমি প্রধানমন্ত্রী চৌ এন-লাইয়ের আমন্ত্রণে তার দেশ সফরে গিয়েছিলাম। রাজা মহেন্দ্র ইস্ট-ওয়েস্ট হাইওয়ে নির্মাণ করেছিলেন। রাজা বীরেন্দ্র মধ্য পাহাড়ি এলাকাতেও একই ধরনের রাস্তা বানাতে চেয়েছিলেন। এ কারণে আমার মাধ্যমে রাজা চীনকে একটি প্রস্তাব পাঠালেন। আমি চৌ এন-লাইয়ের সাথে প্রস্তাবটি নিয়ে আলোচনা করি।

তিনি বিষয়টি ভালোভাবে গ্রহণ করলেন, আমাকে আশ্বস্ত করলেন যে চীন এই হাইওয়ে নির্মাণে সহায়তা করবে। কিন্তু আমাদের দৃঢ় পদপে গ্রহণে অমতার কারণে পরে পরিস্থিতি বদলে যায়। আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে চীন চুক্তিটি পেয়েছিল। সব কিছুরই ফয়সালা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু যখন চুক্তি হওয়ার সময় এলো, তখন ভারতীয় চাপের কারণে আমরা পিছু হটলাম। এতে চীন খুবই কষ্ট পেয়েছিল। ওই দায়িত্বে থাকা নেপালি মন্ত্রীও ব্যথা পেয়েছিলেন। তিনি এ নিয়ে পদত্যাগ করেছিলেন। অর্থাৎ আমরা যত দিন ভীরু থাকব, আমাদের দুর্ভোগ পোহাতেই হবে।

আজকের নয়া দিগন্ত থেকে সংগ্রহীত

বিষয়: আন্তর্জাতিক

১৪০১ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

347566
২৮ অক্টোবর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:১০
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File