বাংলাদেশ কি অকার্যকর রাষ্ট্র হওয়ার পথে?
লিখেছেন লিখেছেন মাজহারুল ইসলাম ২১ এপ্রিল, ২০১৫, ০৪:২২:৪৭ বিকাল
মাঝিবিহীন তরী যেমন শাসকবিহীন রাষ্ট্র তেমন। আবার মাঝি ও তরী থাকলেও সেই মাঝি ও তরী নদী পারাপারে অথবা নদীপথে ঝড়-ঝাপটা মোকাবেলায় যদি কোনো ভূমিকা না থাকে সেই মাঝি ও তরী থাকা-না-থাকা সমান। ঠিক একটি রাষ্ট্রের শাসক থাকলেও রাষ্ট্র পরিচালনার গতিপ্রকৃতি রাষ্ট্রচালনা পদ্ধতিমাফিক পরিচালিত করতে না পারলে সে শাসক থাকা অনর্থক। প্রিয় স্বদেশের স্বাধীনতার ৪৪ বছর পরও একজন নাগরিক হিসেবে ভেবে আঁতকে উঠি- আমার দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে, আমার বাকস্বাধীনতা নেই, আমার নিরাপত্তা নেই, নেই সুষ্ঠু ভোটপ্রয়োগের অধিকার! এখনো শাসকরা হতে পারেন না নাগরিকদের একজন। এখানে যারা দেশ শাসন করেন তাদের নিজের পক্ষের সাত খুন মাফ, যেখানে সরকারি দলের সাথে বিরোধী মতের গরমিলের অভিযোগে দিনদুপুরে রাস্তায়, নদী-নালা-ডোবায়, খালে-বিলে বিরোধী মতের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের লাশের পর লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়, প্রচারমাধ্যমগুলো যখন সত্য প্রকাশ করতে না পেরে শাসকগোষ্ঠীর সাথে হাত মিলিয়ে মিথ্যাকে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে উঠে পড়ে লাগে, নাগরিকরা গুম-নিখোঁজের পর রাষ্ট্র নিখোঁজের সন্ধান দেয়ার পরিবর্তে সন্ধানার্থীদের সাথে তামাশা করে, যাকে বলে ‘বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে’; তখন অত্যাচারিত জনগণ বাঁচার তাগিদে নতুন কোনো ফন্দি-ফিকির করে যা কারো জন্য কল্যাণ বয়ে আনে না। তখনই শুরু হয় রাষ্ট্রের অকার্যকারিতা। যে রাষ্ট্র থেকেও নেই। এর পরও দেশের অনেক সমস্যার মাঝে, অধিকাংশ মানুষের জীবন-মরণ সন্ধিক্ষণেও যখন দেখি আগামীর অজস্র সম্ভাবনা, তখন নিজেকে স্থির করি। মনে একবুক আশা নিয়ে সামনে এগোতে সাহস পাই। আমাদের তরুণরাই আমাদের আগামীর সম্ভাবনা, এই প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশই আমার ঠিকানা। স্বদেশ যেভাবে অকার্যকর রাষ্ট্র হওয়ার পথে চলছে এর লাগাম টেনে ধরতে হবে এখনই। কারণ অনেক কিছু স্বল্পসময়ে ভেঙে চুরমার করে দেয়া যায় কিন্তু অনেক কিছু গড়া চাট্টিখানি কথা নয়। একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রের সারসংক্ষেপ ও কিভাবে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে ক্ষমতান্ধরা টেনেহিঁচড়ে অকার্যকর রাষ্ট্র বানাতে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে তার সংক্ষিপ্ত লিখছি মাত্র।
ব্যর্থ রাষ্ট্রের তেমন সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই। নানান সরকারি এজেন্সি ও থিংকট্যাংক এ বিষয়ে তাদের মত করে সূচক নির্ধারণ করেন। কোন কোন পণ্ডিত সরকারের সক্ষমতা ও দক্ষতার (capacity and effectiveness of the government) পরিপ্রেক্ষিত রাষ্ট্রের ব্যর্থতা পরিমাপ করেন। ফান্ড ফর পিস রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের গণতান্ত্রিক বৈশিষ্ট্যের (democratic character of state institutions) ভিত্তিতে ব্যর্থ রাষ্ট্রের সূচক নির্ধারণ করে থাকে। কেউবা আবার রাষ্ট্রের বৈধতার (legitimacy of the state) ওপর গুরত্ব দিয়েছেন। এভাবে নানান সূচকের মাধ্যমে কোন রাষ্ট্রের ব্যর্থতা ও তার সফলতা পরিমাপ করা হয়ে থাকে। ব্যর্থ রাষ্ট্রের প্রয়োগ সূচনার ভিত্তি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালীন সময়ের রাষ্ট্রগুলোর ব্যর্থতায় নিহিত। এর ব্যবহারপ্রয়োগ লক্ষণীয়, বিশেষত সত্তর ও আশির দশকের সমাজতান্ত্রিক ও পুঁজিবাদী ব্লকভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর দ্বন্দ্ব, আফ্রিকা, এশিয়া ও ল্যাটিন আমেরিকার নানান দেশ তাদের অভ্যন্তরীণ ও নৃগোষ্ঠীগত গৃহযুদ্ধের ভারে আক্রান্ত। এ রাষ্ট্রগুলো রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনয়নে এক দিকে যেমন রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বপূর্ণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে, অন্য দিকে নাগরিকদের সেবা প্রদানে ব্যর্থ হয়। ব্যর্থ রাষ্ট্রগুলো সার্বভৌমত্বের সঙ্কটে ভুগতে থাকে, ফলে বৈধতা, নিরাপত্তা, বলপ্রয়োগের কর্তৃত্বপূর্ণ ইত্যাদি আবশ্যক উপাদান এই রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে অনুপস্থিত থাকে। রাষ্ট্রের ব্যর্থতা পরিমাপের জন্য নানান সূচক ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ব্যর্থতার তাত্ত্বিক পরিমাপে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের গুণগত ও সংখ্যাগত দু’টি পদ্ধতি অনুসরণ করতে দেখা যায়।
ম্যাক্স ওয়েবার (Max Weber)-এর মতে কোন রাষ্ট্র যখন তার সীমানার মধ্যে বৈধ কর্তৃত্বের একচ্ছত্র প্রয়োগ করতে ও ধরে রাখতে সক্ষম হয় তখন সেটি একটি সফল রাষ্ট্র, পক্ষান্তরে যুদ্ধ, বিদ্রোহ ও সন্ত্রাস প্রভৃতি সহিংস চাপে যখন কোন রাষ্ট্র তার বৈধ কর্তৃত্ব প্রয়োগ ও রক্ষা করতে অক্ষম হয় তখন তাকে ব্যর্থ রাষ্ট্র বলে। ম্যাক্স ওয়েবারের মতে, A state could be said to ‘succeed’ if it maintains a monopoly on the legitimate use of physical force within its borders. When this is broken (e.g. through the dominant presence of warlords, paramilitary groups, or terrorism), the very existence of the state becomes dubious, and the state becomes a failed state.
ম্যাক্স ওয়েবার মনে করেন যখন রাষ্ট্র অকার্যকর হয়ে ওঠে, আইন প্রয়োগে অক্ষম থাকে, ঊর্ধ্বমুখী অপরাধ মাত্রা, চরম রাজনৈতিক দুর্নীতি, অনিয়ন্ত্রণযোগ্য ও অকর্মণ্য আমলাতন্ত্র, বিচারিক অকার্যকারিতা, রাজনীতিতে সামরিক হস্তক্ষেপসহ রাষ্ট্রীয় সংস্কৃতির পরিবর্তে যখন স্থানীয় বা সনাতনী সাংস্কৃতিক নেতৃত্বের প্রাধান্য বৃদ্ধি পায় তখন একটি রাষ্ট্র ব্যর্থতায় পর্যবশিত হয়।
চার্ল টি. কল Charles T. Call (2010) ব্যর্থ রাষ্ট্রের একটি তাত্ত্বিক ফ্রেমওয়ার্ক উন্নয়ন করেন যার নাম করেন “gap framework” বা শূন্য কাঠামো। এই গ্যাপ ফ্রেমওয়ার্কে তিনি তিনটি প্রপঞ্চের শ্রেণিবিন্যাস করে বর্ণনা করেন : এক. সক্ষমতা, (capacity), দুই. নিরাপত্তা ( security), ও তিন. বৈধতার (legitimacy) ইত্যাদির অনুপস্থিতির প্রেক্ষিতে তিনি ব্যর্থ রাষ্ট্রের সংজ্ঞায়ন করেছেন। তিনি সক্ষমতা বলতে বুঝান কোন রাষ্ট্রের তার নাগরিকদের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেয়ার ক্ষমতা। নিরাপত্তা বলতে বলেন, যখন কোন রাষ্ট্রের সশস্ত্র গ্রুপের আক্রমণ ও ভয় হতে নাগরিকদের রক্ষা করার সামর্থ্য। বৈধতার অনুপস্থিতি বলতে বোঝান যখন কোন রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক অংশ, রাজনৈতিক এলিট কিংবা সমাজ সরকারের নিয়ন্ত্রণমূলক ক্ষমতা ও সেবা বণ্টন প্রত্যাখ্যান করেন। এভাবে যখন কোন রাষ্ট্রের মধ্যে উপরোক্ত তিনটি বিষয়ে শূন্যতা তৈরি হবে তখন ধরে নিতে হবে সেই রাষ্ট্রটি একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র। এ সম্পর্কে কল বলেন :It unpacks the concept of “state failure” focusing on three gaps that the state is not able to provide when it is in the process of failure: capacity, when state institutions lack the ability to effectively deliver basic goods and services to its population; security, when the state is unable to provide security to its population under the threat of armed groups; and legitimacy, when a “significant portion of its political elites and society reject the rules regulating power and the accumulation and distribution of wealth.”
জে. গোল্ডস্টোন (J. Goldstone) তার Pathways to State Failure প্রবন্ধে শীর্ষক ব্যর্থ রাষ্ট্রের সংজ্ঞায়ন করেছেন কার্যকারিতা ও বৈধতার ভিত্তিতে। তিনি বলেন, একটি রাষ্ট্র তখন ব্যর্থ হবে যখন এটি তার কার্যকারিতা ও বৈধশক্তি হারিয়ে ফেলবে। তিনি আরো বলেন, কার্যকারিতা বলতে রাষ্ট্রের দৈনন্দিন কার্যপরিচালনা করার সক্ষমতাকে বোঝায়। যেমন নিরাপত্তা প্রদান ও কর ধার্য ও আদায় করার ক্ষমতা। অন্য দিকে বৈধতা হচ্ছে জনসংখ্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশের সমর্থন যা ব্যতীত গণতন্ত্র থাকতে পারে না। তার মতে ‘A state is failed if it lost both its effectiveness and legitimacy. Effectiveness means the capability to carry out state functions such as providing security or levying taxes. Legitimacy means the support of important groups of the population, it is dissociated from democracy as a government/leader can be legitimate in the eyes of his people without being elected.’
তিনি আরো বলেন, যদি কোন রাষ্ট্র এই দু’টি শর্ত সম্পন্ন করতে পারে তাহলে তাকে ব্যর্থ বলা যাবে না। জে. গোল্ডস্টোন তার Pathways to State Failure প্রবন্ধে একটি রাষ্ট্রের ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাব্য পাঁচটি উপায়ের কথা বলেছেন।
Five possible pathways to state failure are:
১. ক্রমান্বয়ে সাম্প্রদায়িক সংঘাত বৃদ্ধি পাওয়া।
২. সম্পদের লুণ্ঠন বা আত্মসাৎকরণ।
৩. আঞ্চলিক বা গেরিলা বিদ্রোহ সংঘটিত হওয়া
৪. গণতান্ত্রির ধস, গৃহযুদ্ধ কিংবা সামরিক অভ্যুত্থান।
৫. উত্তরাধিকার কিংবা গভর্ন্যান্স সংস্কার সঙ্কট।
ব্যর্থ রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্যাবলি (Common characteristics of a failing state):
১. ব্যর্থ রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্যাবলি এর সূচক দ্বারা পরিমাপযোগ্য। নানান প্রতিষ্ঠানের সূচক নির্ধারণ করে থাকে। যেমন Fragile States Index (FSI) যা পূর্বে Failed States Index, বা State Fragility Index (SFI) বলা হতো। Freedom House Index (FHI), World Bank Governance Indicators, the Conflict Assessment System Tool (CAST) of the Fund for Peace. এ ছাড়াও বিভিন্ন আঞ্চলিক প্রতিবেদনানুসারেও এই সূচক তৈরি করা হয়ে থাকে। যেমন- Report of Democratic Development in Latin America .
২. Fund for Peace: এর মতে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র বলতে বোঝায় এমন একটি রাষ্ট্রকে যা একটি সার্বভৌম সরকারের মৌলিক দায়িত্ব-কর্তব্য ও শর্তাবলি পালনের ব্যর্থ হয়। তবে এই ব্যর্থতার কোনো সার্বজনীন সংজ্ঞায়ন নেই। A failed state is a state perceived as having failed at some of the basic conditions and responsibilities of a sovereign government. There is no general consensus on the definition of a failed state.
ফান্ড ফর পিস (Fund for Peace) : ব্যর্থ রাষ্ট্রের চারটি শ্রেণিবিন্যাস করেছেন। যথা :
১. নিজ ভূখন্ডের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারান কিংবা উক্ত ভূখন্ডের মধ্যে শক্তি প্রয়োগের বৈধ কর্তৃত্বপূর্ণ একচ্ছত্র ক্ষমতা হারান। (loss of control of its territory, or of the monopoly on the legitimate use of physical force therein)
২. যৌথ বা সর্বসম্মতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যর্থতা (erosion of legitimate authority to make collective decisions)
৩. নাগরিক সেবা প্রদানে অক্ষমতা (an inability to provide public services)
৪. আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পূর্ণ সদস্য হিসেবে অন্যান্য রাষ্ট্রগুলোর সাথে পারস্পরিক যোগাযোগে অক্ষমতা। (an inability to interact with other states as a full member of the international community)
এ ছাড়াও নিম্নোক্ত সাধারণ বৈশিষ্ট্যাবলি এর অন্তর্ভুক্ত করেছেন। যথা-
১. এতটা দুর্বল অথবা অক্ষম যে নিজ ভূখন্ডের ওপর কদাচিৎ নিয়ন্ত্রণ থাকে।
২. নাগরিকদের চাহিদানুসারে সেবা প্রদান করতে পারে না।
৩. দুর্নীতি ও অপরাধ রাষ্ট্রের সর্বত্র বিদ্যমান থাকে।
৪. রাষ্ট্রের নাগরিকগণ শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেয় কিংবা অনিচ্ছা সত্ত্বেও দেশ ত্যাগ করে।
৫. চরম নিম্নমুখী অর্থনীতি বা অতি প্রান্তিক হ্রাসমান অর্থনীতি।
সাধারণত সরকারের নিয়ন্ত্রণের ওপর নির্ভর করে রাষ্ট্রের ব্যর্থতা বোঝা যায় কিন্তু যখন কোন রাষ্ট্রীয় কর্র্র্তৃপক্ষ নিজেরাই ঘোষণা দেয় যে রাষ্ট্র ব্যর্থ হয়েছে তখন বুঝতে হবে সেখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূ-রাজনৈতিক ফলাফল বিদ্যমান আছে।
Failed State Index (FSI) বা ব্যর্থ রাষ্ট্রে সূচক অনুসারে “একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র বলতে একটি জাতি বা আধা-জাতিকে বোঝায় যখন তারা তার নাগরিকদের ন্যূনতম সরকারি সুবিধা দিতে পারে না। এমনকি তার একটি স্বীকৃত সীমানা থাকলেও কোন স্বীকৃত সরকার থাকে না। অধিকন্তু একটি অকার্যকর রাষ্ট্র তার মানবাধিকার লঙ্ঘন, দুর্বলতা ও ব্যর্থতার কারণে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক তৈরিতে স্থিতিশীলতা আনয়নেও ব্যর্থ হয়। ‘A failed state is a nation or quasi-nation that is unable to deliver minimum governmental services to its citizens. It may not even have a recognizable government, although it has recognized boundaries. Besides human tragedy, failed and weak states destabilize international relations.’
Failed State Index (FSI)-এর বার্ষিক প্রতিবেদনForeign Policy I Fund for Peace-এর যৌথ প্রকল্পে তৈরি হয়ে থাকে। নিম্মে এর সূচকগুলো উল্লেখ করা হলো। এই সূচকগুলোর মাধ্যমে কোন রাষ্ট্রের সফলতা ও ব্যর্থতা পরিমাপ করা হয়। ইতিবাচক গুণাবলি যেমন সফলতার ইঙ্গিত করে তদ্রƒপ নেতিবাচক প্রপ্রঞ্চ ব্যর্থতার নির্দেশ করে।
১. জনসংখ্যাগত চাপ (Demographic pressures)
২. শরণার্থী বা অভ্যন্তরীণ বাস্তুহারা মানুষ (Refugees and internally displaced persons)
৩. গোষ্ঠীগত দুঃখ-দুর্দশা (Group grievances)
৪. মানবপাচার (Human flight)
৫. অসম উন্নয়ন (Unequal development)
৬. অর্থনৈতিক হ্রাস/ অনুন্নয়ন (Economic decline)
৭. বৈধতার সঙ্কট (Lack of legitimacy of the state)
৮. নাগরিক সেবার অপ্রতুলতা (Public services)
৯. মানবাধিকার লঙ্ঘন (Human rights)
১০. নিরাপত্তার শৃঙ্খলা বা স্বাভাবিকতা (Security apparatus)
১১. বিভক্ত এলিট (Factionalized elites)
১২. বৈদেশিক হস্তক্ষেপ (Foreign interventions)
The Fragile States Index
The Fragile States Index (formerly the Failed States Index) তিনটি ক্যাটাগোরিতে এর সূচকগুলো বর্ণনা করেছেন। যথা-
এক. সামাজিক (Social indicators),
দুই. অর্থনৈতিক (Economic indicators),
তিন. রাজনৈতিক (Political indicators)।
নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
এক. সামাজিক (Social indicators) : সামাজিক উল্লেখযোগ্য সূচকগুলো নিম্নরূপ :
জনসংখ্যাগত চাপ (Demographic pressures): স্ফীত জনসংখ্যা, জনসংখ্যার ঘনত্ব সৃষ্ট খাদ্য সরবরাহ ও অন্যান্য জীবন বাঁচান সম্পদ। জনসংখ্যা সেটেলমেন্ট-কেন্দ্রিক চাপ, সীমান্ত বিরোধ, ভূমি বিরোধ ও দখল, যোগাযোগ সুবিধার প্রাপ্ততা, ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক স্থানের নিয়ন্ত্রণ, পরিবেশের ওপর চাপ প্রভৃতি এর অন্তর্ভুক্ত।
উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত প্রতিহিংসাপরায়ণতা (Legacy of vengeance-seeking group grievance): এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে বর্তমান কিংবা আগের কোন অবিচারের শিকার হলে। এমনটি এক শত বছর আগের কোনো ঘটনাও হতে পারে। এটা মূলত ঘটে যখন কোন সম্প্রদায়কে বিনাশ করা হয় কিংবা তাদের প্রতি দমন-পীড়ন চালানো হয় তখন। আবার যখন রাজনৈতিক প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের মাধ্যমেও এমনটি করা হয়। বিরোধীদের অধস্তন বা ক্ষমতার বাইরে রাখা হয়। কখন অন্যের সম্পদ ও সম্পন লুণ্ঠনের জন্য তাকে বলির পাঁঠা বানালেও পরবর্তীতে এমনটি ঘটতে পারে।
মেধা পাচার: মেধা পাচার বলতে পেশাজীবী, বুদ্ধিজীবী রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বী, মধ্য শ্রেণীর স্বেচ্ছায় দেশত্যাগ, নির্বাসন ও প্রবাসী সম্প্রদায়ের সংখ্যা বৃদ্ধি এই সূচকের অন্তর্ভুক্ত।
দুই. অর্থনৈতিক (Economic indicators)
গ্রুপপর্যায়ে অসম অর্থনৈতিক উন্নয়ন (Uneven economic development along group lines) : গ্রুপভিত্তিক অসমতা, শিক্ষা, চাকরি, অর্থনৈতিক মর্যাদা ইত্যাদি বিষয়ে অসমতা। এ ছাড়াও দারিদ্র্যসীমা, শিশু মৃত্যুহার, শিক্ষার লেভেলও এর অন্তর্ভুক্ত।
মারাত্মক অর্থনৈতিক হ্রাস (Sharp and/or severe economic decline এটি পরিমাপ করা হয় কোন সমাজের সামগ্রিক অর্থনৈতিক পতনের পরিমাপের মাধ্যমে। যেমন মাথাপিছু আয়, জিএনপি., ঋণ, শিশু মৃত্যুহার, দারিদ্র্য স্তর, ব্যবসায়িক ব্যর্থতা প্রভৃতির মাধ্যমে। এ ছাড়াও হঠাৎ পণ্যের, ব্যবসায়ী রাজস্ব, বৈদেশিক বিনিয়োগ অথবা ঋণ পরিশোধ ইত্যাদি দাম পড়ে যাওয়া। জাতীয় মুদ্রার পতন বা দরপতন, অথবা গোপন অর্থনীতির বৃদ্ধি যেমন মাদক ব্যবসা, চোরাচালান, পুঁজি পাচার। সরকারি কর্মকর্তা, সেনাবাহিনীসহ পেনশন না দিতে পারা ইত্যাদির মাধ্যমে।
তিন. রাজনৈতিক (Political indicators) :
অপরাধসংঘটন বা রাষ্ট্রের অবৈধ প্রক্রিয়া গ্রহণ (Criminalization and/or delegitimisation of the state): শাসক এলিট কর্তৃক সর্বগ্রাসী দুর্নীতিপরায়ণ হওয়া, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বের প্রতি বাধা সৃষ্টি করা। এমনকি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বা প্রক্রিয়ায় নাগরিকদের আস্থা হারান-এর অন্তর্ভুক্ত।
জনসেবার ক্রমাবনতি (Progressive deterioration of public services): রাষ্ট্র নাগরিকদের যেসব সেবা প্রদান করে তার অনুপস্থিতি। যেমন সন্ত্রাসী ও সহিংসতা থেকে নাগরিকদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হওয়া। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পয়ঃনিষ্কাশন, গণপরিবহনের মতো জরুরি সেবা প্রদান করতে না পারা। পক্ষান্তরে শাসক শ্রেণীর সেবা বৃদ্ধি করা। যেমন নিরাপত্তা বাহিনী, রাষ্ট্রপতির স্টাফ, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, কূটনীতিক সেবা, কাস্টম্স ও রাজস্ব আহরণ প্রভৃতি এজেন্সি এর অন্তর্ভুক্ত।
মানবাধিকারের বিস্তৃত লঙ্ঘন (Widespread violation of human rights): কর্তৃত্বপরায়ণ, একনায়কতান্ত্রিক বা সামরিক শাসনের আবির্ভাব ঘটা যেখানে সাবিধানিক ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও প্রক্রিয়াগুলো হয় বাতিল করা হয় নয়তো দূষিত করা হয়। নির্দোষ সাধারণ নাগরিকদের ওপর রাজনৈতিক স্বার্থপুষ্ট সহিংসতা বৃদ্ধি পায়। রাজনৈতিক কয়েদির সংখ্যা বেড়ে যায়। আইনি, রাজনৈতিক ও সামাজিক অধিকারের অপব্যবহার করা হয়। ব্যক্তি, গ্রুপ এমনকি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানও বাদ যায় না। ফলে মিডিয়া আক্রান্ত হয়, বিচার বিভাগের রাজনীতিকরণ করা হয়, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সামরিক বাহিনীর অভ্যন্তরীণ ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। বিরোধী রাজনৈতিক পতিপক্ষকে নির্যাতন করা হয়। ধর্মীয় কিংবা সাংস্কৃতিক নিপীড়ন করা হয়।
রাষ্ট্রের মধ্যে আর একটি রাষ্ট্র তৈরি : নিরাপত্তা যন্ত্র (Security apparatus as state within a state) শর্তহীনভাবে নতুন সামরিক এলিট বা প্রিটোরিয়ান গার্ড গড়ে তোলা যারা রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে, রাষ্ট্র সমর্থিত গোপন সামরিক বাহিনী হিসেবে কাজ করে। এদের কাজ হচ্ছে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মাধ্যমে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করা। শত্রু সন্দেহ করা কিংবা সাধারণ নাগরিকদের বিরোধী মনে করা। সেনাবাহিনীর মধ্যে আর একটি সেনাবাহিনী যারা নিয়ন্ত্রণকারী প্রধান সেনাবাহিনী বা রাজনৈতিক স্বার্থে কাজ করে থাকে। এমতাবস্থায় রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বী সেনাবাহিনী, গেরিলা শক্তি বা সশস্ত্র সংগ্রামের আবির্ভাব হয়।
বিভক্ত এলিটের উত্থান (Rise of factionalised elites): শাসকশ্রেণীর এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের গ্রুপ পর্যায়সহ ভঙ্গুর অবস্থা তৈরি হয়। আক্রমণাত্মক জাতীয়তাবোধ ব্যবহার করে। বিশেষত সাম্প্রদায়িক সংহতি নষ্ট করে থাকে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের নিশ্চিহ্ন করে থাকে।
বিদেশী শক্তির হস্তক্ষেপ ( Intervention of other states or external factors): সামরিক অথবা আধা সামরিক বাহিনী রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নিয়োজিত থাকে কোন বিদেশী আর্মি, রাষ্ট্র কিংবা পরিচিত গ্রুপ কিবাং সংগঠন কর্তৃক আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায়। উদ্দেশ্য থাকে অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখা বা দ্বন্দ্ব নিরসন করা। এমতাবস্থায় দাতাদের হস্তক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়। বিশেষত এমতাবস্থায় বৈদেশিক সাহায্য ও শান্তিরক্ষাকারী বাহিনীর ওপর নির্ভরতা বৃদ্ধি পায়।
ব্যর্থ রাষ্ট্রের পরিণতি (Consequences of a Failed States) :
একটি রাষ্ট্র যখন ব্যর্থ হয়ে যায় তখন সেখানে নিম্মাক্ত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অনুপস্থিতি ঘটে। যথা-
মানুষ বৈষম্যের শিকার হয়।
জান-মাল-সম্মানের কোন নিরাপত্তা থাকে না।
মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকে না।
গণতান্ত্রিক চর্চা পক্ষপাতদুষ্ট স্বার্থকেন্দ্রিক হয়ে যায়।
সাংস্কৃতিক বহুত্ব বিলুপ্তির হুমকির মুখ থাকে।
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের নিরাপত্তা বিপদাপন্ন হয়।
গৃহযুদ্ধ ও বিশৃঙ্খলায় রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন ধসে পড়ে।
মেধার মূল্যায়ন হয় না বলে মেধাবীরা সম্মানজনক অবস্থার অনুসন্ধানে থাকে।
নাগরিক সেবা পৌঁছানোর জন্য কোন কর্তৃপক্ষ থাকে না।
সামাজিক নিরাপত্তা বিশেষত পুষ্টি, শিশুমৃত্যু, মাতৃমৃত্যু, শিক্ষা, পয়ঃনিষ্কাশন, স্বাস্থ্যব্যবস্থায় মহামারীর রূপ গ্রহণ করে।
এমতাবস্থায় শোষণ, বঞ্চনা, অসম্মান চেপে বসে।
জাতির স্বাধীনতা বা সার্বভৌম অহংবোধ বলে কিছু থাকে না। কারণ কিছু অংশ থাকে তাদের স্বার্থে, কিছু অংশ থাকে প্রতিবাদে আবার কিছু অংশ থাকে উভয়সঙ্কটে।
Kilcullen’s Pillars বলেন, কোন রাষ্ট্র যদি ব্যর্থ হতে না চায় তাহলে তাকে অবশ্যই তিনটি গ্যাপ (GAP) বা শূন্যতা পূরণ করতে হবে। প্রথমত, security gap পূর্ণতা দানের জন্য অভ্যন্তরীণ ও বহিঃস্থ সব ধরনের সহিংসতা ও বিদ্রোহ হতে রাষ্ট্র নিরাপদ থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত, capacity gap, নাগরিকদের প্রদেয় ও আদায়যোগ্য সবধরনের সেবা ও ধার্য প্রদান ও আদায়ের সামর্থ্য থাকতে হবে। তৃতীয়ত, legitimacy gap এর জন্য জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে, অপরাধ ও দুর্নীতি গ্রহণযোগ্য মাত্রায় কমিয়ে আনতে হবে গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচন বিদ্যমান থাকতে হবে। কিলকুলেন পিলার্স মনে করেন, কোনো অক্ষম রাষ্ট্র উপরোক্ত গ্যাপগুলো পূরণ করতে সক্ষম নয়। এ জন্য রাষ্ট্রকে তার মৌল উপাদানের ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে। কোন রাষ্ট্রের সফলতা তার নাগরিকদের অংশগ্রহণ ও সাড়া প্রদানের ওপরও নির্ভর করে। সার্বজনীন ব্যবস্থা প্রত্যাখ্যান করা কিংবা বৈদেশিক ষড়যন্ত্রের ক্রীড়নকগণ একটি সফল ব্যবস্থা ব্যর্থ করতে পারে।
উপরে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রের সংজ্ঞা, ব্যর্থ রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য, ব্যর্থ রাষ্ট্রের সূচক ও ব্যর্থ রাষ্ট্রের পরিণতি সম্পর্কে যৎ সামান্য আলোকপাত করেছি। আমাদের দেশের চলমান অস্থির অবস্থার এ সময়কালকে আপনি, আমি বা একজন সাধারণ মানুষ কিভাবে মূল্যায়ন করবেন? একজন নাগরিক ন্যূনতম অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও নিরাপত্তার অধিকার পাওয়ার নিশ্চয়তা যদি রাষ্ট্র দিতে না পারে তাহলে সেই রাষ্ট্রকে কি হিসেবে বিবেচনা করবেন? যে দেশে আইনের ভয়াবহ অপপ্রয়োগ হচ্ছে, বিচারিক অকার্যকারিতা দিন দিন বেড়েই চলছে, রাজনৈতিক দমন-পীড়ন রোধ করতে গিয়ে উর্ধ্বমুখী অপরাধ মাত্রা বাড়ছে, দলীয় বিবেচনায় অগ্রহণযোগ্য, অদক্ষও অকর্মণ্য আমলা নিয়োগ ও অহরহ পদোন্নতি চলছে, সে দেশের যাত্রা অকার্যকর রাষ্ট্রের পথে হাঁটা শুরু করেছে বলা মোটেও অবান্তর নয়।
যে দেশে সালাহউদ্দিন, ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম, আল-মুকাদ্দাস, ওলিউল্লারা নিখোঁজ হয়ে যায় না ফেরার দেশে, পুলিশ-র্যাবের সোর্স ও সরকারি দলের নেতার সহযোগিতায় সিলেটে চতুর্থ শ্রেণীর নিষ্পাপ আবু সাঈদকে নির্মমভাবে খুন হতে হয়, রাষ্ট্র আইন আদালতের কোন তোয়াক্কা না করে কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে পাখির মতো গুলি করে নাগরিকের জীবন সংহার করে, সংবিধানের দোহায় দিয়ে নিয়ম রক্ষার নামে ৫ জানুয়ারি ’১৫-এর মত হাস্যকর নির্বাচন করে সংবিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে সবাইকে টেনেহিঁচড়ে জঙ্গি বা সন্ত্রাসী বানিয়ে জঙ্গি-সন্ত্রাসী বা সাধারণের মধ্যে কোন পার্থক্য রেখা না রেখে দেশে-বিদেশে জঙ্গিনামা উপাখ্যানের উপস্থাপন করে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারে, প্রচারযন্ত্রসমূহকে বিধিনিষেধ আরোপ করে সত্য প্রচার ব্যাহত করে, জনগণের প্রয়োজনের পরিবর্তে নিজেদের প্রয়োজনে সংবিধানকে উলট-পালট করে আত্মতুষ্টির ঢেঁকুর তোলে, এমন ব্যর্থতার সমালোচনা করে বহিঃরাষ্ট্রসমূহ সংশোধনের পরামর্শ প্রদানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনের কারণে পররাষ্ট্রনীতি যখন সঙ্কটাবর্তে তখন প্রিয় স্বদেশের গতিপ্রকৃতিকে কোন নাগরিক স্বাভাবিক বলতে পারেন?
সরকার যখন জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে ব্যর্থ ঠিক তখন ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার নিমিত্তে আমলাদের নানামুখী সুযোগ সুবিধা ও পে-স্কেল ঘোষণা করেছে, অর্থনীতিতে চরম সঙ্কট চলছে। দেশের সিংহভাগ মানুষ সরকারের বিপক্ষে। অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠানগুলো রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়ার পরিবর্তে রাষ্ট্রের ব্যয় বহন করতে করতে দেউলিয়া হওয়ার পথে, ব্যবসা বাণিজ্যে চরম অবনতিশীল, রাষ্ট্রের নানামুখী অস্থিরতার কারণে কেউ এখন বিনিয়োগে সাহস পাচ্ছে না, দেশের রফতানি পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার ফলে বিদেশীরা এখন উল্লেখযোগ্য কোন পণ্যের চুক্তি-অর্ডার করছেন না। মাদক, চোরাকারবারি বেড়েই চলছে। কোটি কোটি নাগরিক বেকার সমস্যায় জর্জরিত। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ঘাটতির কারণে এলিট শ্রেণীর বড় অংশ এবং রাজনৈতিক নিপীড়নের ভয়ে বহুসংখ্যক নাগরিক বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে। সমাজে সরকারি তোষামুদে হাতেগোনা কিছু বর্জুয়া শ্রেণী ব্যক্তি পুঁজিপতি বনে যাচ্ছে, গরিবদের সব শোষণ করে পথে বসাচ্ছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার নামে রাষ্ট্রই যখন আড়াল থেকে উসকানি দিয়ে দাঙ্গা বাধাতে সিদ্ধহস্ত! এসব অভিনয় জনগণ সহজে বুঝতে পারে। দেশের একটি ভূখন্ডকে যখন বহিঃশত্রু করায়ত্তে আনতে প্রকাশ্যে তৎপরতা চলছে। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় যখন বিরোধী মতের অফিস-আদালত বন্ধ থাকে, সভা-সমাবেশ ও মানববন্ধন প্রজাতির নিরীহ নিরামিশ কর্মসূচিও যখন সরকারের সহ্য হয় না, মাসের পর মাস ও বছরের পর বছর বিরোধী মতের হাজার হাজার ব্যক্তিকে শত শত মিথ্যা ও রাজনৈতিক মামলায় কারান্তরীণ করা হয়, আসলে সে দেশের ভবিষ্যৎ কোন দিকে? এসব ফ্যাসিস্ট কর্মযজ্ঞ শাসকগোষ্ঠী ঠিক তখনি শুরু করে যখন ক্ষমতাকে চিরতরে কুক্ষিগত করতে চায় অথবা জনগণকে নিজের শত্রু ভাবতে থাকে। আমাদের রাষ্ট্রচালকদের মতিগতি ঠিক সে পথে চলছে। সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির বাইরে কারো টুঁশব্দ অগ্রহণযোগ্য। এমনিভাবে চলতে থাকলে প্রিয় স্বদেশের পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ, যা সহজে অনুমেয়।
অনেক সমস্যার মাঝে একজন আশাবাদী মানুষ হিসেবে বলতে পারি আমাদের সমস্যার চেয়ে সম্ভাবনা অনেক বেশি। কোটি কোটি তরুণ-যুবকই আমাদের সম্ভাবনা। আমাদের যুবকরা যদি সততা, দক্ষতা ও জবাবদিহিতার সাথে সামনে এগিয়ে যেতে পারে কোন সমস্যা আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে অকার্যকর করতে পারবে না। তাই সকল অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে, ন্যায়সঙ্গত দাবি ছিনিয়ে নিতে হবে। দেশকে নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেখে কোনো নাগরিক নির্বাক থাকে, শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়নের ভয়ে কুঁকড়ে থাকে সেই নাগরিক মৃত্যুর আগেই মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকে। এমন ব্যক্তিদের বিশ্বাসঘাতক বললে অত্যুক্তি হবে না। কারণ তাদের নীরবতাই ফ্যাসিস্ট ও ক্ষমতান্ধদের আরো বেপরোয়া করে তুলে। আসুন আমরা আমাদের দেশের বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিই। ছিনিয়ে আনি মুক্তির লাল টুকটুকে সূর্য। সেখানে সবাই শান্তি ফিরে পাবে। আমরা মাথা উঁচু করে সগৌরবে দাঁড়াব বিশ্ব দরবারে
লেখকঃ- কেন্দ্রীয় সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।
বিষয়: রাজনীতি
১৩১৫ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন